Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Soumi Goswami

Inspirational

3  

Soumi Goswami

Inspirational

একবার মন থেকে ভালবেসে দেখো

একবার মন থেকে ভালবেসে দেখো

5 mins
869


কিছু একটা রান্না পুড়ছে। পোড়া গন্ধটা নাকে আসতেই অর্নবের কেমন মাথা ধরে গেল। কি যে করে না নীলাটা। কিছু বলার নেই ওকে। কত বারই তো নীলাকে বলেছি কিচেন থেকে বেরোরার আগে গ্যাসটা অফ করে যেতে। নীলা অর্নবের কথা যদি শোনেন তাহলে তো সমস্যাটাই তৈরি হয় না। কিন্তু নীলা শুনলে তো...

পোড়া গন্ধটা যত বাড়ছে অর্নবের মাথাও গরম হচ্ছে তত। একবার নীলাকে হাঁক দিল। আসছি বলল বটে নীলা কিন্তু এখনও আসার তার সময় হল না। কি করছে কে জানে। আবার অর্নব হাঁক পাড়তে যাবে নীলা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে অর্নবের মুখ চেপে ধরে।নীলা অর্নবকে বলে একটু আস্তে কথা বলো পরিকে বহু কষ্ট করে ঘুম পাড়িয়েছি।

নিজের মুখের ওপর থেকে নীলার হাত সরিয়ে নিয়ে অর্নব ওকে বলে যাও যাও রান্নাঘরে গিয়ে দেখো কোন খাবার পোড়ালে। নীলা একছুটে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রান্নাটা একেবারে জ্বলে গেছে। নীলার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আজ অর্নবের ছুটি ছিল। তাই নীলা ওর পছন্দের এই পদটা বানাচ্ছিলো। হঠাৎ মেয়েটার ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো আর নীলাকেও ছুটে আসতে হল। তাড়াতাড়িতে গ্যাসটাও অফ করা হয়নি।

বেলাও অনেক হল। আবার নতুন করে রান্নাটা করাও সম্ভব নয়। এদিকে পরিকে উঠিয়ে স্নান করিয়ে খাওয়াতে হবে। ততক্ষনে অর্নবের ও খেতে বসার সময় হয়ে যাবে। শেষে নীলা ঠিক করে আজ না হয় দুপুরে পরিকে ঘুম পাড়িয়ে অর্নবের পছন্দের ডিনার বানিয়ে রাখবে।

দিনের বেলা খাবার পর্ব মিটতে মিটতে অনেক দেরি হয়ে গেল। আর কিছুক্ষন পরেই পরি উঠে পড়বে। মেয়েটা একবার উঠে গেলেই আর নীলাকে কাছছাড়া করতে চাইবে না। নীলা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাত চালিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।

বসার ঘরে ফোনটা বাজছে। অর্নব আজ অফিসে ছুটি পেয়েছে তাই এই দুপুরে একটু গড়িয়ে নিচ্ছে। আসলে অন্য দিন গুলোতে বড্ড খাটনি যায় ওর। ফোনটা একটানা বেজেই চলেছে। ফোনের শব্দেই না মেয়েটা উঠে যায়। হাতের কাজ ফেলে নীলা পড়িমরি করে এসে ফোনটা ধরে। ওপাশ থেকে যে গলাটা ভেসে আসে তাকে নীলা চেনে। অর্নবের অফিস কলিগ সুপ্রিয়। আসলে কিছুদিন আগেই সুপ্রিয়র বিয়ে হয়েছে। অর্নব ওকে ইনভাইট করেছিল ওদের বাড়ি আসার জন্য। তাই সুপ্রিয়রা আজ আসবে অর্নবদের বাড়ি। সুপ্রিয় প্রথম বার আসছে ওর নতুন বউকে নিয়ে তাই ডিনার না করালে চলে না। কিন্তু এখন অর্নবকে বলে বাজার করাতে গেলে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভালো নিজে গিয়েই বাজারটা সেরে আসে।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ। নীলা, পরি আর অর্নবের ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাজার শেষ করে ফিরে এসে রান্না শুরু করে। এদিকে অর্নব ঘুম থেকে উঠে অবাক।নীলাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে আজ ওদের বাড়িতে সুপ্রিয়রা আসছে ।তাই এত আয়োজন।

ঘুম থেকে উঠে নীলার হাতে এককাপ চা না খেলে অর্নবের ঘুম ঠিক কাটেনা। নীলাকে চায়ের অর্ডার দিতে যাবার ঠিক আগেই নীলা উপস্থিত অর্নবের সামনে। ওর হাতে সাজানো কি সব। ঘুমের ঘোরটাকে কাটিয়ে ফেলার জন্য এই সব খাবারের মনকাড়া পাগল করা গন্ধই যথেষ্ট। আসলে নীলা আজ অর্নবের জন্য ফিশফ্রাই, কবিরাজি সঙ্গে চিকেন কিমা দিয়ে চাউমিন বানিয়ে ছিল। এই খাবারগুলো ও এখনই অর্নবকে খেতে দেয়। আসলে শুধু ওদের দুজনের মতই ছিল তাই নীলা আর দেরি না করে ওকে বলে তুমি এগুলো খাও আমি আসছি চা নিয়ে।

ঘড়ির কাঁটা ছটা ছুঁতে না ছুঁতে সুপ্রিয়রা হাজির হয়। ওদের আপ্যায়ন করা সঙ্গে ছোট্ট পরিকে দেখা। পরিকে কোলে নিয়ে নীলা সুপ্রিয়র স্ত্রী রানীকে সঙ্গে করে ভিতরে এল। ছেলেদের মাঝে বসে মেয়েদের গল্প ঠিক জমে না।

নীলা রানীর গল্পর মাঝেই ছোট্ট পরি খিদেতে কাদতে শুরু করে।

গল্প থামিয়ে নীলা বিছানা থেকে নামতে যাবার সময় হঠাৎ ওর মাথা ঘুরে যায়। নিজেকে মুহূর্তে সামলে নিলেও ঘটনাটা রানীর চোখ এড়ায় না। রানী নীলাকে হাত ধরে বিছানায় বসাতে গেলে নীলা রানীকে বলে সত্যি ঠিক আছি। ও কিছু নয় গো। তুমি বরং একটু বসো আমি পরির খাবারটা এখানেই নিয়ে আসছি তারপর আবার গল্প হবে।

সেদিন সুপ্রিয়রা চলে যাবার পর অর্নব খুব ক্লান্ত বলে শুতে চলে গেল। পাহাড় প্রমাণ বাসন নীলা ধুতে গেল। কাল আবার অর্নবের অফিস। কাজ ফেলে রেখে লাভ নেই।

নীলা কাজ গুটিয়ে যখন বিছানায় এল তখন ঘড়ির কাঁটা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে। হঠাৎ মাঝ রাতে শরীরে একটা কষ্টতে নীলার ঘুমটা ভেঙে যায়। বুকে ব্যথা সঙ্গে মাথাটাও বালিশ থেকে তোলা যাচ্ছে না। কি যে কষ্ট তা বর্ণনা করা যায় না। নীলা এহেন অবস্থায় পরিকে একবার ছোঁবার চেষ্টা করে। বারবার মনে হয় যেন বোধহয় আজ সব শেষ। নিজের সন্তানের সাথে আর বোধহয় দেখা হবে না।

       বোধহয় এত তাড়াতাড়ি নীলার যাওয়া ছিল না। হঠাৎ অর্নব ঘুম থেকে উঠে জল খেতে এসে বিছানায় নীলাকে কষ্ট পেতে দেখে ছুটে আসে ওর কাছে। কি করবে এত রাতে কি করবে বুঝতে পারে না। নীলা অর্নবকে কিছু বলার আগেই অজ্ঞান হয়ে যায়। পরি রাতে বারবার কেঁদে কেঁদে উঠে পড়ে তাই অর্নব পাশের রুমে শোয়। তা নাহলে অফিসে ফ্রেশ হয়ে কাজ করা যাবে না।

দিশেহারা অর্নব ফ্ল্যাটের কিছু মানুষকে ডেকে আনে। পাশের বাড়ির বউদির কাছে পরিকে রেখে ওরা নীলাকে নিয়ে যায় নার্সিংহোমে।

নিয়মিত ফ্ল্যাটের সবাই আসা যাওয়া করছেন ওদের বাড়ি আর নার্সিংহোমে। আজ পাঁচদিন হল নীলা বাড়িতে নেই। এত দিন অর্নব ছুটি নিয়ে ছিল কিন্তু আজ অফিস যেতেই হবে। বাড়ির অমতে নীলা অর্নবকে বিয়েটা করেছিল তাই ওদের বিয়ের পর থেকে নীলার বাপের বাড়ি আর রইল না। আর অর্নবের বাবা মা গত হয়েছেন বহুদিন। তাই পরিবারে এমন কেউ নেই যে এসে এই বিপদের সময় পাশে দাঁড়াতে পারে।

    জীবনের এই সাতদিন অর্নব কোনদিন ভুলবে না। বোধ হয় খারাপ দিন মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে যায়। সংসারের সব কিছু সামলে ছোট্ট পরিকে খাইয়ে পটি, স্নান করিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের বউদির হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত এক যুদ্ধ। অর্নব এই সময়ে উপলব্ধি করে নিজের ভুল। সত্যি তো মেয়েটা কোনদিন মুখ ফুটে কিছু বলেনি আর তাই বলে অর্নব ও কেন কোনদিন শোনার চেষ্টা করেনি নীলার না বলা কথাগুলো। সত্যি তো নীলা সারাটা সময় অর্নবকে সব কাজ থেকেই ছুটি দিয়ে এসেছে শুধুমাত্র অর্নব অফিসে খাটে বলে। কিন্তু অর্নব কেন একবারের জন্য ও ভাবেনি নীলাও সংসারের সব দায়, পরির সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে বলেই আজ অর্নব অফিসে বসে শান্তিতে কাজ করেছে। তাহলে নীলার ও কিছু প্র্যাপ্য ছিল না।

     আজ অর্নবের বিয়ের এতগুলো বছর পর অর্নব বৈবাহিক জীবনের মর্ম যেন বুঝতে পারে। আজ অর্নবের নীলার জন্য ভালোবাসা নয় সম্মানটাও অনেক বেড়ে গেছে। অর্নব বুঝেছে নীলার ভালোবাসা সার্থক। অর্নব যে বড় দেরি করে ফেলেছে। আজ নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে কি করে ও। কিন্তু নীলার কাছে ক্ষমা যে ওকে চাইতেই হবে। নাহলে যে কোনদিন ও নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাই বলতে পারবে না।

পরেরদিন ছিল নীলার বাড়ি আসার দিন। ডিসচার্জ ফর্মালিটি শেষ হলে অর্নব নীলাকে নিয়ে বাড়ি এসেই নীলার কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে এলে নীলা ওর হাত ধরে বলে

             "একবার মন থেকে ভালবেসেই দেখ"...


Rate this content
Log in

More bengali story from Soumi Goswami

Similar bengali story from Inspirational