Soumi Goswami

Romance

3  

Soumi Goswami

Romance

অপেক্ষা

অপেক্ষা

5 mins
1.0K


নিশা ওর দিদির বিয়ে নিয়ে খুব এক্সাইটেড আর হবে নাই বা কেন।একমাত্র দিদির বিয়ে বলে কথা।বিয়ের এক সপ্তাহ আগে নিশা মামাবাড়ি এসে পৌঁছলে বাড়ি যেন জমজমাট হয়ে যায়।মামাবাবু নিশাকে দেখেই বলেন–বিয়ের আসর জমাতে নিশা এসে গেছে আর কোন চিন্তা নেই।

নিশাও ওর মামাবাবুকে নিশ্চিত করে বলে-তুমি চিন্তা করোনা মামু,আমি এসে গেছি। এবার দেখ দিদির বিয়ের প্রতিটা ফাংশন কেমন জমে যায়।এ কথা সত্যি যে নিশা দিদি তৃষার বিয়ের আগের অনুষ্ঠানগুলোয় রং জমাতে কোন ত্রুটি রাখেনি।

সেদিন যখন মেহেন্দি আর সংগীতের ফ্যাংশান চলছে হঠাৎ করেই বাড়িতে আসে মোহিত।না,নিশা তখনই নামটা জানত না,জেনেছে অনেক পরে।কিন্তু সেই প্রথম নিশা মোহিতকে দেখে।মোহিতের উপস্থিতি নিশাকে চঞ্চল করে।মোহিত নিশাদের এইসব মেয়েলি অনুষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে সোজা মামাবাবুর কাছে ওপরের ঘরে চলে যায়।মোহিত টেরও পেলনা একজোড়া চোখ ওর পিছু নিয়েছে।কিন্তু নিশার বন্ধু পিঙ্কি ব্যপারটা আঁচ করতে পারে।অনুষ্ঠানের মাঝেই পিঙ্কি নিশাকে অন্য জায়গায় টেনে নিয়ে যায়।পিঙ্কির জোরাজুরিতে নিশা ওর মনের কথা পিঙ্কিকে খুলে বলে।

পিঙ্কিই নিশাকে বলে ও যেন মোহিতকে ওর মনের কথাটা বলে দেয়।তা না হলে দেরি হয়ে যাবে।নিশা মোহিতকে একবার দেখেই প্রেমে পড়ে গেছে কিন্তু ও মোহিতের সম্পর্কে কিছুই জানেনা।পিঙ্কি শুধু নিশাকে জানিয়েছে যে মোহিত তৃষাদির বিয়ের পুরোটাই নিজে অর্গানাইজ করছে কিন্তু পিঙ্কি মোহিতের লাভ লাইফের কিছুই জানে না।তাই পিঙ্কি নিশাকে বলে মনের কথা মনে না রেখে মোহিতের কাছে সব খোলাখুলি বলতে।

নিশা বাড়ির বড়দের কাছে নিজের মনের হাল গোপন করে মোহিত সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেয়।মোহিত উচ্চ শিক্ষিত ।কিন্তু যে চাকরির অফার ও পাচ্ছে তা শহর থেকে অনেক দূরে যা মোহিতের মনঃপুত হচ্ছে না।আসলে মোহিতের দুনিয়া বলতে একটা অনাথ বাচ্চা যার মোহিত ছাড়া আর কেউ নেই।

মোহিত নিজে অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছে বলে ও জানে অনাথ হবার কষ্টটা।তাই এখানে মোহিত যখন যেমন কাজ পায় সেগুলোকেই মন দিয়ে করে।

নিশা এখানে আসার পর থেকেই দেখেছে মোহিত ছেলেটা শুধু কাজই বোঝে।এই বিয়ে বাড়িতে ওর চারপাশে কত রঙিন প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে সেদিকে ওর খেয়ালই নেই।এমনকি বিয়ের রাতে যখন নিশা মেকআপের ফাইনাল টাচ নিজের মুখে ছুঁইয়ে দোতলার ঘর থেকে নিচে নেমে এলো তখন সত্যিই ওর দিক থেকে নজর ফেরান যাচ্ছিল না।নিশা নেমে আসতেই সবাই নিশাকে ঘিরে ধরে।ওর দিম্মা তো ওকে দেখেই বলে-কি রে আজ দিদির সাথে একই চাদনা তলায় তোর বিয়রটাও দিয়েদি।কি বলিস।দিম্মার কথায় নিশা লজ্জা পেলেও কথাটা যে ওর মনে ধরেনি তা কিন্তু নয়।এই বিয়ের মন্ডপে না হলেও মোহিতের সাথে বিয়ের ইচ্ছেটা তো মনে আছেই।মনের ইচ্ছে মনে দাবিয়ে নিশা দিম্মার ওপর নকল রাগ দেখিয়ে ওখান থেকে সরে গিয়ে মোহিতকে খুঁজতে থাকে।

দিদিকে এর মধ্যে চাদনা তলায় নিয়ে আসা হয়েছে।শুভ দৃষ্টিও হয়ে গেল।কিন্তু নিশা ওর মানুষটাকে একবার চোখের দেখাও দেখতে পেলনা।অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিশা মোহিতকে দেখতে পেয়ে ও মোহিতকে হাত ধরে লনে নিয়ে এসে কোন ভনিতা ছাড়াই ওর মনের কথা মোহিতকে জানায়।কথাগুলো শুনে মোহিত নিশার সামনে থেকে চলে যেতে গেলে নিশা মোহিতের হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে ওকে যেতে দেয়না।মোহিত নিশার হাতে নিজের উষ্ণতা চারিয়ে দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নেয়।নিশা কিছু বলার আগেই মোহিত ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।

  মোহিতের এই আচরণে নিশা অভিমানী হয়।মোহিতের শরীরের ক্ষণিকের উষ্ণতা ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে প্রেমের আগুন মোহিতের শরীরেও আছে।কিন্তু এমন কি কারণে মোহিত নিশাকে দূরে ঠেলে দিল তা নিশা তখন বোঝেনা।

দিদির 'বিদায়ী'র অনুষ্ঠান হয়ে গেলে দুপুরে খাবার টেবিলে মামাবাবু সবাইকে চমকে দিয়ে একটা খবর দিলেন।উনি সবাইকে জানান উনার বন্ধু সতিনাথ বাবুর ছেলে সমরের সাথে উনি নিশার বিয়ে পাকা করে ফেলেছেন।নিশা কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়।বুঝে উঠতে পারে না ভাগ্য কি খেলাই খেলছে ওর সাথে।ও যাকে ভালবেসে ছিল ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে ও নিশাকে ছেড়ে চলে গেল আর ঠিক এমন সময়ে মামাবাবু সম্পর্কটা নিয়ে এসেছে।নিশা এ মুহূর্তে কিছুতেই অন্য কারুর কথা ভাবতে পারবেনা।আগে ওকে জানতেই হবে কেন মোহিত ওকে প্রত্যাখ্যান করল।

পরদিন সকালে নিশার ঘুম ভাঙে মামাবাবুর গলার আওয়াজে।নিচে নেমে এসে নিশা জানতে পারে মামাবাবু নিশার বিয়ের সব দায়িত্ব মোহিতকে দিয়ে নিশ্চিত ছিলেন।কিন্তু আজ সকালে মোহিত মামাবাবুকে ফোনে জানিয়েছে ও একটা ভাল চাকরি পেয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে।নিশার মামাবাবু মোহিতের এ হেন আচরণের মানে বুঝতে না পারলেও নিশা বোঝে মোহিত ওকে এড়িয়ে যাবার জন্যই চলে যাচ্ছে।

নিশা আর দেরি করে না।ও জানে ও এখনও গেলে হয়তো ও মোহিতকে আটকাতে পারবে।তাই ও মোহিতের সাথে দেখা করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।

নিশা দেখাও পায় মোহিতের।নিশা লোকলাজ ভুলে মোহিতের দু হাত নিজের হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।ওকে এভাবে ছেড়ে যাবার কারণ জিজ্ঞাসা করলে মোহিত শুধু ওকে বলে -নিশা তুমি বাড়ি ফিরে যাও।বাড়ির লোকেরা যেখানে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে সেখানেই বিয়ে কর।তুমি সুখী হবে।মোহিতের এই কথায় নিশার সহ্যের বাঁধ ভাঙে।ও স্থান কাল ভুলে চিৎকার করে বলে যদি সত্যিই মোহিত নিশার সুখের জন্য চিন্তা করত তবে ও নিশাকে এভাবে ফেলে যেতে পারত না।

এদিকে মোহিতের ফাইনাল কল হয়ে গেছে।মোহিত যাবার আগে নিশার হাতে একটা চিঠি দেয়।নিশা ফিরে এসে চিঠি খুলে বোঝে মোহিত কেন ওকে এড়িয়ে যেত।মোহিতও আসলে নিশাকে প্রথম দেখেই ওর প্রেমে পড়েছিল।কিন্তু নিশার বিয়ের কথা মামাবাবু সব চেয়ে আগে ওকেই জানায়।উনি আসলে চেয়েছিলেন এই বিয়ের মত নিশার বিয়ের সব কিছু মোহিত দেখুক।কিন্তু নিশা যখন মোহিতকে পাবার আশায় ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে তখন মোহিত বোঝে ও নিশার জীবন থেকে দূরে সরে না গেলে নিশা ওকে ভুলতে পারবেনা।মোহিত এই কিছু দিনে মামাবাবুর খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিল।তাই ওঁর সম্মানে আঘাত দিয়ে মোহিত কিছু করতে চায়নি।তাই ও নিশার জীবন থেকে সরে গেছে।

মোহিতের লেখা চিঠি পরে নিশার মনের সব সংশয় দূর হয়।নিশা বাড়িতেও জানিয়ে দেয় ও এই বিয়ে করতে পারবে না।বাড়ির লোকজন ওকে অনেক বার করে জিজ্ঞাসা করলে ও কোন উত্তর দেয় না।নিশা ঠিক করে ও যখন মোহিতকে পেল না তখন নিশা ওর দেখানো আদর্শেই চলবে।

সেদিনের পর থেকে নিশা একটা অনাথ আশ্রমের সাথে যুক্ত হয়ে দিন রাত ওদের সাহায্য করেছে।এখন ওর দুনিয়াই এটা।

কথায় বলে না উপরওয়ালা যদি জোড়া বানিয়ে থাকেন তবে তা কেউ ভাঙতে পারে না।তাই বোধ হয় হঠাৎ একদিন ওই অনাথ আশ্রমে মোহিত ফিরে আসে।সামনে নিশাকে দেখে প্রথমে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও ও মুখে কিছু বলে না।কিন্তু ওর মনে প্রশ্ন অনেক।আশ্রমের ইন চার্জের থেকে কিছু কথা জানতে পারলেও সবটা জানা যায়নি।মোহিত থাকতে না পেরে নিশাকে একা পেয়ে ও সব ঘটনা জানতে চায়।

নিশার মুখ থেকে সব কথা শুনে মোহিত বোঝে ও কত ভুল ছিল।মোহিতের সাথে নিশার দূরত্ব কখনোই কমে নি।নিশা অজান্তেই যেন অপেক্ষা করে গেছে মোহিতের।তাই আজ আর দেরি না করে মোহিত নিশাকে জড়িয়ে ধরে ওর ভালোবাসা স্বীকার করে নিশার ঠোঁটে নিজের ভালবাসা এঁকে দেয়।।।।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance