Soumi Goswami

Romance

1  

Soumi Goswami

Romance

ভালবাসা কারে কয়

ভালবাসা কারে কয়

3 mins
753


আজ শততম দিন পূর্ন হতে চলেছে। রূপসা আজ ওর মনের কথা বলেই দেবে অর্ণবকে। ছেলেটার ভালোবাসার কাছে শেষে হার মানতেই হল রূপসাকও। অর্ণব ওর ভালোবাসার কথা রূপসাকে জানাতেই রূপসা বলেছিল –ভালোবাসা তো আজকের দিনে হুজুক। কিন্তু কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই প্রেম উধাও। অর্ণব কথার বিরোধিতা করলে রূপসা ওকে ওর ভালোবাসা প্রমাণ করতে বলে। অর্ণব ভেবে পায় না কিভাবে রূপসাকে তার ভালোবাসা বুঝিয়ে দেবে। এ ব্যাপারে রূপসাই ওকে সাহায্য করে। রূপসা ওকে বলে একশটা দিন সকাল থেকে অর্ণবকে রূপসাদের বাড়ির নিচে সামনের মাঠটায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে রোদ বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে।এভাবে একশ দিন পার হলে রূপসা ব্যাপারটা ভেবে দেখতে পারে।

রূপসা অর্ণবকে চুপ থাকতে দেখে হেসে বলে এতই যখন ভয় তখন প্রেমটা না করলেই পারতে। কাউকে ভালোবাসি বলাটা কঠিন নয় কিন্তু সত্যি করে ভালবাসতে পারাটা সহজ নয়। যায় হোক আমার শর্ত না মানতে পারলে অসুবিধা নেই শুধু আমাকে ভুলে যেও।

রূপসা বাড়ি ফিরে আসার পর অর্ণবের সাথে বলা কথাগুলো মন থেকে সরিয়ে ফেলে। রূপসা জানে আজকের দিনে প্রেম করাটা নেহাতই একটা ছেলেখেলার ব্যাপার। এখনকার প্রেম শুধু বোঝে শরীরী ভাষা। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রূপসা ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরে জল খাবার জন্য যেতে গেলে ওর ব্যাপারটা নজরে আসে। রূপসা দেখে ওদের বাড়ির সামনের বড় মাঠটায় অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে। রূপসা প্রথমটায় একটু ভয় পেয়ে যায়। মনে হয় সত্যি অর্ণব রূপসার কথা মতো রোজ সকাল থেকে এসে দাঁড়িয়ে থাকবে না তো। কিন্তু ওর এই ভয়টা বেশিক্ষণ টেকে না। রূপসা জানে একদিন অর্ণব ওর প্রেমে মেতে যা করছে তা ও বেশিদিন ধরে রাখতে পারবেনা। শেষে ওকে হার মানতেই হবে। একের পর এক দিন কেটে গেছে। অর্নব কিন্তু ওর দেওয়া কথা থেকে বিন্দুমাত্র টলেনি। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে ও পুড়েছে আবার প্রবল বার্ষাতে ভিজেছে। রূপসা ঘরের ভেতর থেকে অর্ণবকে শুধু দেখেছে। দিন যত এগিয়েছে রূপসার প্রেম নিয়ে ধারণাও তত বদলেছে। শততম দিনের ঠিক আগের দিন রূপসার মনে হচ্ছিল সময় যেন পার হচ্ছে না। ঘড়ির কাঁটাগুল যেন স্ত্বব্ধ হয়ে সবকিছু দাঁডিয়ে দেখছে।

আগামী দিনে রূপসা কিভাবে ওর মনের কথা অর্ণবকে জানাবে তারই পরিকল্পনা চলছিল। কিন্তু শেষ দিন অর্ণবকে ওই জায়গায় দেখতে না পেয়ে রূপসা অস্থির হয়ে ওঠে।শেষে থাকতে না পেরে সে ওই মাঠটায় ছুটে যায়। সেখানে অর্ণবের বদলে পায় একটা চিঠি। রূপসাকেই লেখা অর্ণবের চিঠি। অর্ণব রূপসাকে জানায় ও রূপসাকে পাবার মোহে অন্ধ হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থেকেছে দিনের পর দিন। কিন্তু শেষে ও হার মানলো ওই মেয়েটার কাছে যে অর্ণবের সাথে ওর এই কষ্টের সাথী হতো। ওই মেয়েটা অর্ণবের সাথে নির্জন দুপুরগুলোতে ওর সাথে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছে আবার প্রবল বর্ষণে ওর মাথায় ছাতা ধরেছে। সে সময়গুলোতে রূপসা অর্ণবকে দেখে ও চলে গেছে কতবার। কিন্তু ওই মেয়েটা কোন শর্ত ছাড়াই অর্ণবের সাথে ওর সাথী হয়েছিল। অর্ণব ওই দিনগুলোতে বুঝে ছিল ওই মেঘনা নামের মেয়েটাও ওকে ভালোবাসে কিন্তু ওর ভালোবাসায় কোন শর্ত ছিলনা আর ছিলোনা কোনো প্রত্যাশা। মেঘনা জানতো অর্ণব ওর প্রেমের পরীক্ষা দিতে ওখানে রয়েছে কিন্তু তার পরেও মেঘনা ওর সঙ্গী হয়। নিজের ভালোবাসা একতরফা জেনেও ও অর্ণবকে মনে মনে ভালোবেসে গেছে। দূর থেকে ও সঙ্গী হয়েছে ওর ভালোবাসার। কিন্তু কোনদিন মুখে কিছু বলে নি।

অর্ণব জানেনা তার এতদিন করা কষ্টের কি ফল সে পাবে। আদপে কি সত্যিই সে কোনোদিন রূপসার মনের মানুষ হয়ে উঠতে পারবে। সে জানেনা সত্যিই কি সে রূপসার ভালোবাসা হতে পারবে। অর্ণব বোঝে নিজে যাকে ভালোবাসে তার জন্য না ছুটে যে মানুষটা ওকে কোন শর্ত ছাড়াই এত ভালোবসেছে ওকে নিয়ে অর্ণব রূপসার জীবন থেকে পুরোপুরিভাবে দূরে চলে যায়। অর্ণবের লেখা চিঠি পড়তে পড়তে রূপসা কান্নাটাকে ধরে রাখতে পারে না।ও র চোখের জল হাথে ধরা চিঠিটাকে ভিজিয়ে দেয়।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance