ভাগ্যের দরজা
ভাগ্যের দরজা


বাবা তোমাকে না কতদিন বলেছি, মদ খাবে না। ফেলে দাও বোতলটা।
-আমার ইচ্ছা হয়েছে খেয়েছি,বেশ করেছি আরো খাব বলে রতনের বাবা দেশি মদের বোতলটা দুবারেই শেষ করল।
.....কিন্তু বাবা..
...কোন কথা বলবি না, আমি কিনি আমি খাই তাতে তোর কি?
বেশি বলবি তো মারব টেনে এক চড়..
বলেই....
টাল সামলাতে না পেরে সোজা বিছানায় চিতপটাং,ওঠায় সাধ্য কার।
ধুর আর ভাল্লাগে না , কোনদিন তো আসেনি না আর আসলে মদ খেয়ে.....
বিছানায় আর জায়গা না থাকায় মাটিতেই শুয়ে পড়ল রতন।
শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল রতন....
কি ছিল না তাদের কিন্তু কালের ঘুর্নিপাকে এখন তারা নিম্বল বলতে একটা চারহাতি জমি আর একটা পাটকাঠি দিয়ে ঘেরা ঘর ।বৃষ্টির জল চালের ফুটো দিয়ে এসে খবর করে যায় এমনই অবস্থা।
রতনের বয়স আন্দাজ পনের, রোগাপাতলা ক্লাস ফাইভের পর পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে, যদিও পড়াশুরনায় ভালই ছিল, এখন পাড়ার চায়ের দোকানে কাজ করে।
দিনকয়েক আগে জমানো টাকা দিয়ে চারখানা টিন এনে ঘরের চাল ঠিক করেছে এখন আর বৃষ্টির জল আসেনা বটে কিন্তু আর একটা সমস্যা হাজির হয়েছে। সমস্যা অনেকটা পিপড়ের দলের মত একটা শেষ হতে না হতে আর একটা ঢুকে পড়ে নিঃশব্দে।
রতন সকালে ভাত রান্না করে, রেখে যায় কিন্তু দুদিন ধরে বেড়াল বা কুকুরে ভাত খেয়ে নিচ্ছে, আসলে দরজাটা লাগানো হয় নি বলে ওদের ঘরটা কুকুর বেড়ালের আস্তানা হয়ে উঠেছে । ঘরের টিনের টাকা জোগাড় করতেই তিনমাস লেগেছে দরজার খরচ জোগাড় করতে যে কতদিন লাগবে কি জানি? ততদিন হয়ত এভাবেই কাটাতে হবে কুকুর বেড়াল তাড়িয়ে....
এইসব ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপ নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে রতন..হঠাৎ
একটা মারুতি এসে সজোরে ধাক্কা মারল রতনকে.....ছিটকে পড়ল মাঝ রাস্তায়, হাত পা দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে মুখটাও খানিকটা ছুলে গেছে।প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেছে রতন। পাশের দোকানের ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিল।
গাড়ির ড্রাইভার ক্ষতিপূরণবাবদ হাজার টাকা দিল।
কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সেই টাকা দিয়ে মাত্র দশটাকার ওষুধ নিল রতন , বাকি টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।একটু দুর্বল লাগছে, বুকটা চিন চিন করছে কিন্তু সে খুশি।
আজ হাটবার হাজার টাকা দিলে ভালই একখানা দরজা পাওয়া যাবে..কুকুরের আসা যাওয়া বন্ধ হবে।
...
বিকেলবেলা
ভালই একখানা দরজা পেয়েছে রতন
ঘরের দরজা লাগাতে লাগাতে এগারোটা বেজে গেল।তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে নইলে কালকে আবার বকা খেতে হবে দোকানির।
বন্ধ দরজার ভিতরে রতনের মনে হচ্ছে যেন মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কতদিন সে এভাবে ঘুমোয় নি ...
সকাল হল সুয্যিমামা সবাইকে ওঠার আহবান দিচ্ছে। আজকে একটু বেশি দেরি হয়ে গেল,তাড়াতাড়ি বেরুতে বেরুতে রতনের চোখ পড়ল বাড়িটার উপর সুর্যের আলোকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন নববধূ হাসছে, দরজাটা যেন নববধুর কপালের টিপ ।
হয়ত মায়ের কথা মনে করাচ্ছে, ও তো দেখে নি ওর মাকে..
রতন করজোড়ে একটা প্রনাম করে বেরিয়ে এল..
বুকের ভেতরটা কেমন যেন চিনচিন করছে....