বেহুলা ( পর্ব 2)
বেহুলা ( পর্ব 2)
অভির বাবা সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কমিশন গ্রেড আফিসার। দিদি,ডাক্তার স্বামীর সাথে থাকে কনাডায় , মা অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারকের কন্যা। সচ্ছল ধনী বনেদী পরিবারে, অভি কেমন আলাদা, ইতিহাসে এম এ পাশ করে, বি সি এসের জন্য কলকাতায় একটা কোচিং সেন্টারে সে ভর্তি হয়। মেসে থাকত, সপ্তাহে এক দুদিন, বর্ধমানে বাড়ী আসত।
ঠাকুরমার দীর্ঘদিনের পক্ষঘাতে শয্যাশায়ী,চব্বিশ ঘণ্টার আয়া, নিকট বস্তির মেয়ে তিলোত্তমা রাত দশটা থেকে সকাল আটটা তার সেবা করত। তার বাবার সব্জি ফেরী করত,আর তার মা অন্যের গৃহে পরিচালিকার কাজ করলেও বুদ্ধিমতী আর পরমা সুন্দরী মেয়েকে, পড়াশোনা শেখায়।
বিএ অনার্স পড়ার সময় মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হল । তার চিকিৎসা খরচ বাবার একার আয়ে হত না, তাই তিলোত্তমা স্থানীয় এক নার্সিংহোমে আয়া আর সেবিকার কাজ নিল। এর ক'মাস পর হঠাৎই বাবা এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। সংসারে এত খরচ, ,নার্সিংহোমের যা পেতো তাতে চলত না। অসুস্থ মাকে একা রেখে, দীর্ঘ সময় দিনের ডিউটি করাও সমস্যার। ঐ নার্সিংহোমের মাধ্যমেই, সে অভির ঠাকুরমার রাতের আয়ার কাজটা পেয়েছিল।
ভালো মজুরি, দৈনিক আটশো টাকা, মায়ের খরচ বহুল চিকিৎসা সম্ভব না হলেও,তার যন্ত্রণার ওষুধ , আর মা মেয়ের খাবার খরচ চলে যেত।বস্তি থেকে অভিদের বাড়ী বেশ নিকটে। রাতে মাকে ঘুমালে দশটায় অভিদের বাড়ী হেঁটে যেতে সমস্যা হতো না।
সমস্যা হল তার রূপে অভি পাগল। রাতে মায়ের গভীর নিদ্রাকালে,চুপি চুপি উঠে তিলোত্তমার কাছে আসত। দুচোখ ভরে দেখত। ঠাকুরমা তো অক্ষম কথা বলার নড়াচড়ার করার সাধ্য নেই।
তিলোত্তমা লজ্জা পেতো। কিন্তু অভি তো সপ্তাহে একদুদিন রাতে তাকে দেখে, এ দেখা আকাঙ্খার পাগলামী, খারাপ কিছু করে না।
অভির চোখে কালীদাসের কাল্পনিক রূপসী নারীর মেয়েলী গঠনের বর্ণনা, তিলোত্তমা যেন বাস্তব রূপ বা আরও দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয়।
তিলোত্তমার নির্জন রাতে মাঝে মধ্যেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসত,চেয়ারে বসেই ঝিমুত, শাড়ি সড়ে যেত, দেহ থেকে খসে পরত। সেদিন তার শাড়ির আঁচল দেহের উপর অংশ থেকে সম্পূর্ণ খসেই পড়েছিল,উর্দ্ধাঙ্গের ঢিলেঢালা ব্লাউজ উপচে অর্দ্ধ অনাবৃত উন্নত সুডৌল স্তনের ভাঁজ, সুগভীর নাভী, মেদহীন কটি, স্ফীত নিতম্ব, গভীর রাতে ঘুম ভাঙ্গা চোখে দেখতে দেখতে অভির কেমন এক অনুভুতি হচ্ছিল। সারা শরীরের সব রক্ত যেন বুকে এসে জমেছে, ঠোঁট আঙ্গুলের অগ্রভাগ কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে, অনিয়ন্ত্রিত দ্রুত তার শ্বাসপ্রশ্বাসে তোলপাড় করা বুকটা কেমন ধরাস ধরাস করছে।
সহসা তিলোত্তমার ঘুম ভেঙ্গে জেগে যায়। অভিকে এত কাছে দেখে চমকে ওঠে । লজ্জায় আলুথালু শরীর কাপড়ে ঢেকে ঠিকঠাক করে।
বিব্রত অভি একটু লজ্জিত হয়, কিন্ত পরক্ষণেই বলে "তুমি কী ভীষণ সুন্দর ! এত দারিদ্র্য, রাত জাগার পরিশ্রম, উদ্বেগ দুশ্চিন্তার তবু যেন ঈশ্বরের তুমি সেরা সৃষ্টি! সুস্থ সচ্ছল সুখী জীবন পেলে তুমি নিশ্চিত স্বর্গের অপ্সরা কে লজ্জা দেবে ।"
তিলোত্তমা কোন উত্তর না দিয়ে অভির ঠাকুরমার সেবাযত্নে মন দিল।মনে মনে ভাবে ধনী সচ্ছল ঘরের আভিজাত্য রক্তে আবেগ ক্ষনস্বায়ী। নীরবে অভি দেখছিল ,নোংরা পায়খানা পেচ্ছাপ দুহাতে সড়িয়ে নতুন পোশাক চাদর পাল্টে,ঠাকুমার মাথায় হাত বুলিয়ে, পা হাতে ম্যাসেজ করে আরাম দিচ্ছে।
অভি এসব দেখে দরদী মনে বলল, "তোমার না ঘুমিয়ে রাত কাটাতে কষ্ট হয় না! নোংরা পায়খানা পেচ্ছাপ হাত দিতে ঘৃনা করে না!"
তিলোত্তমা এবার বলে "দুপুরে একটু ঘুমাই, আর পায়খানা পেচ্ছাপ হাত দিতে ঘৃনা হয় না! আমার মা অসুস্থ, অনেক টাকার দরকার, আমি এসব করে টাকা পাই ।দিনে মায়ের সেবাযত্ন করতে পারি,সঙ্গ দি। চলে যাচ্ছে। "
আবেগঘন অভি বলে, " তুমি যেমন ভীষণ সুন্দরী, আবার মনটাও খুব ভালো, সেবাযত্ন এত কর্তব্য দায়িত্ব, এ যুগে এমন কোন মেয়ে পাওয়া যাবে না। তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে, স্বপ্নে যেন সব সময় দেখি, কলকাতায় থাকার সময় তোমার কথা ভীষণ মনে হয়। "
একটু লাজুক হেসে, তিলোত্তমা বলে, "কিন্ত বাবু আপনি এভাবে কেন জীবন নষ্ট করছেন ! আমি সামান্য বস্তির মেয়ে, আপনি কত বড় ফ্যামিলির ছেলে।আপনাদের এখনকার বস্তির মানুষ সম্মান করে।আপনার বাবা বড় সেনা অফিসার, পুরোন বনেদী জমিদার বাড়ি বলতে এই বাড়িটাই সবাই জানে।"
অভিকের জেদের কাছে তিলোত্তমা একসময় হার মানে,তার মনে হয়, ইনি অন্য রকম, সত্যি তাকে ভালোবাসে।সপ্তাহে দুটো রাতের জন্য তারা গভীর প্রতিক্ষায় থাকত।
শারীরিক দুরত্বের আবেগঘন এ প্রেম সবে তখন একমাস, তিলোত্তমার মা মারা যায়। রায় চৌধুরী গিন্নি তিলোত্তমাকে স্নেহ করত,একজন মনিব বা মালকিন, অনুগত দায়িত্বশীল ভৃত্য বা দাসীকে যতটা করে । বললেন,"ঐ বস্তি ছেড়ে আমার নিচে তলা সিঁড়ির পাশে ঘরে থাক। টাকা সমান পাবি, সঙ্গে তিনবেলা খাবার, তার জন্য, আমায় রান্নায় সাহায্য, আর ঘরগুলো মুছবি, পরিস্কার করবি,বড় জোর তিন চার ঘণ্টার কাজ, বাকী সময় দিনে ঘুমোবি, রাত জাগতে তাহলে তোর কষ্ট কম হবে।"
তিনদিন পর অভি বাড়ি এল ,তখন সন্ধ্যা ,দেখল সিড়ির পাশের ঘরে তাদের পুরোন বাতিল খাটে, তিলোত্তমা ঘুমুচ্ছে। মায়ের মুখে শুনল ,তিলোত্তমার মা মারা যাবার পর, তিলোত্তমা এখানে থাকবে। যুবতী মেয়ে, রূপ যৌবন আছে একা তাই বস্তিতে নিরাপদ নয়, কেউ ফুসলে নিয়ে পালালে, রাতে এমন একজন শাশুড়ির জন্য বিশ্বাসী আয়া পাওয়া সমস্যার।সেইসঙ্গে রান্নার সাহায্যকারী তাকে পেলে কষ্ট কমবে।
রাতে অভি তিলোত্তমার অভিসারে এল।তিলোত্তমা মাথা ঝুঁকিয়ে মনমরা হয়ে টুলে বসেছিল, ঠাকুমার শয্যার পাশে।ঠাকুরমা ঘুমে অচেতন ।অভি একটু কাছে গিয়ে মাথায় স্নেহে হাত ঠেকিয়ে, ওর মায়ের মৃত্যুর জন্য দঃখ ও সমবেদনা জানালে, নিঃসঙ্গ অনিশ্চয়তা ভরা তিলোত্তমা দুঃখে ফুঁপিয়ে কেঁদে অভির পা দুটো জড়িয়ে ধরে।
অভি তাকে তুলে বুকে টেনে নেয়, "তুমি এত ভেঙ্গে পরো না! "
তিলোত্তমার কান্নাভেজা চোখ হতাশাভরা মুখ ,ধরা গলায় বলে "আমি একা হয়ে গেলাম ,তবু তো মাকে কাছে পেতাম, অসুস্থ হলেও আমার কথা ভাবত, একটু সাহস পেতাম," বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
অভি শান্ত্বনা দিয়ে বলে"আমি তোমার সঙ্গে থাকব, ঠাকুরমার সামনে কথা দিচ্ছি। "
তিলোত্তমা কাতর ভাবে বলে" তুমি সত্যিই আমায় ভালোবাসো অভি দা! তোমার পায়ে একটু আশ্রয় দেবে! আমি ভীষণ একা, খুব ভয় করে, মনে হয় আমার আর কোন ভবিষ্যত নেই! "
অভি তাকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে বলে" আমি কাপুরুষ নয়।এই বংশের পুরুষরা সাহসী, কথা দিলে কথা রাখে। "
তারপর অসহায় তিলোত্তমা কেমন যেন দিন দিন নিজেকে অভির কাছে সঁপে দিল। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।একতলায় সিঁড়ির পাশের ঘরে সেদিন গভীর নির্জন রাতে তাদের ঘনিষ্ঠ ভাবে, অভির মায়ের নজরে এল! সন্দেহ তার দুতিন দিন হয়েছে।
তিলোত্তমার মায়ের মৃত্যুর তখন মাস খানেক অতিক্রম করেছিল। অভির ঘন ঘন বাড়ি আসা ,তাকে হঠাৎই ভাবায়, সঙ্গে কেমন চুপ চাপ, আর তার স্বভাব আচরণ মায়ের মনে খটকা লাগে।
বড় মাছ ধরার আগে রীতিমত আয়োজনের মত, রাতে এদিন ভারতী না ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমুলে তার গাড় নিদ্রা তাকে কেমন অচেতন করে, এক ঘুমেই সকাল।
রাতে অভির খিল খুলে বের হওয়ার শব্দের,একটু পর ভারতী ঘর থেকে বের হয়ে দেখে দোতলায় কেউ নেই।কিন্তু শাশুড়ির কাছে তো তিলোত্তমার থাকার কথা! ধীরে ধীরে নিচের সিড়ির পাশের ঘরে দরজা লাগানো। আচমকা দরজা খুলতেই এমন দৃশ্য নজরে এল! তার মাথায় আগুন জ্বলে যায়। তীব্র ভৎসনায়,বলে "হারামজাদী নচ্ছার !"
ইতিমধ্যেই অভি , তিলোত্তমা চমকে ঠিকঠাক পোষাকে হলেও, লজ্জা আর ভয়ে কথা বলতেই পারে না।
শেষ রাত ,তখন সাড়ে তিনটে কী চারটে ,ফাল্গুনের মাঝামাঝি, হাল্কা শীত,রাস্তার সদরের দরজা খুলে তিলোত্তমার যা কিছু ব্যাগ ,বাক্স ছিল ছুড়ে ছুড়ে রাস্তায় ফেলতে লাগল,"কাল সাপ পুষেছি,কী করে তোকে বিদায় করতে হয় আমার জানা আছে,বের হ বেশ্যা খানকী ! মা বাপকে খেয়ে এবার আমার ছেলেকে খাবি! ডাইনী মাগী !" বলেই, নারকেল কাঠির শক্তপোক্ত মুরো ঝাঁটা তিলোত্তমার শরীরে মারতে লাগল নির্দয় বিরামহীন ভাবে।
তিলোত্তমা ভয়ে কাঁপছিল, যন্ত্রণায় চোখ দিয়ে জল ঝরলেও কান্নার শব্দ বের হচ্ছিল না,অসহায় আত্মীয়স্বজন হীন নিরীহ স্বভাবের তিলোত্তমার মনে হচ্ছিল সে মরে যাবে। এতো রাতে বাড়ির বাইরে যেতে চায় না। এক স্থানে স্থির দাঁড়িয়ে সে ঝাঁটা মারার যন্ত্রণা ভোগ করছিল।অভি এতক্ষণ লজ্জা সরমে কেমন উদভ্রান্ত ছিল । আট দশ বার তীব্র জোরে ঝাঁটার আঘাত আর সহ্য করতে পারে না ,সদ্য মা হারা, নার্ভাস তিলোত্তমা যন্ত্রণায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে প্রায় অচেতন হয়ে পোড়েই যাচ্ছিল ।
অভি ছুটে এসে এবার তাকে আগলে ধরে, মাকে বলে, "আমাকে মারো,ওর কোন দোষ নেই, সব দোষ আমার। "
মা তীব্র ভৎসনায় বলে "তুই কার সাথে কী বলছিস জানিস !"
"হ্যা জানি! তিলোত্তমাকে আমি ভালোবাসী ওকে বিয়ে করব।"
এবার ভারতী তীব্র ভৎসনায় অভিকে বলে" ঐ বস্তির জাত কুলহীন ভিখারী মেয়েকে তুই বিয়ে করবি! তুই পাগল হয়েছিস!"
"হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল ! তবে বিয়ে ওকেই করব।"
এবার ভারতী ক্ষোভে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে চিৎকার করে বলে," তবে শুনে রাখ, বংশের সম্মান ইজ্জত যদি মনে করিস মাটিতে মেশাবো ,তুইও বাড়ি থেকে বিদেয় হ, জানব আমার ছেলে অভি মরে গেছে।এ বাড়ীই দরজা তোর জন্য চিরকাল বন্ধ। ঐ ডাইনী মোহ মুক্তি যদি কোন দিন হয়, প্রায়শ্চিত করে বাড়ী ঢুকতে পারিস। না হলে তুই আমাদের কাছে আজ থেকে মৃত। "
এবাড়ি সব আইন চলে ভারতীর কথায়। অভি তা জানে , তার বাবা যত বড় সেনা অফিসার হোক, বাড়িতে তার একমাত্র বস ভারতী।
দুঃখে অভিমানে অভি ,বিধস্ত আহত তিলোত্তমাকে নিয়ে বাড়ী থেকে চলে আসে, বাবা মা বাড়ি সম্পদ সব সম্পর্ক ছেদ করে। তিলোত্তমার ব্যাগ ও ছোট বাক্সে তার উপার্জনের কিছু টাকা, কিছু পোষাক সঙ্গে নিয়ে, ভোড়ের ট্রেন ধরে হাওড়া হয়ে তার শিয়ালদহের মেস ।সেখান থেকে কিছু তার কিছু পোষাক আর নিজস্ব সার্টিফিকেট বই ম্যাগাজিন নিল। কম ভাড়ায় একটা বস্তির মত এলাকায় ঘর নেয়, কালীঘাটে তিলোত্তমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিল।
তিলোত্তমার সারা দেহে ঝাটার আঘাতের দাগ, ব্যাথা, অভি তার কষ্ট যন্ত্রণা জন্য ট্যাবলেট আনব বললে ,হেসে উড়িয়ে দেয়,বলে
"আমার কোন ব্যাথা নেই! কিন্ত তোমার এ কী সর্বনাশ হল! "
তার চোখে জল, নিজের শরীরের ব্যাথা যন্ত্রণায় নয়,অভির অনিশ্চিত ভবিষ্যত চিন্তায় ।
অভির মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশা যন্ত্রণা ফুটে উঠছিল কিন্ত হেসে বলল,"ও নিয়ে ভেবো না! তোমার জন্য আমি সব সহ্য করতে পারি।"
সামান্য সঞ্চয়ে আর কদিন চলবে! স্ত্রীর উপার্জনের খাওয়া সম্মানের নয়, চাকরীর বেশ কিছু পরীক্ষা অভি দিয়েছিল, রেজাল্ট কবে বের হবে, সাফল্য পাবে কীনা সেই ভরসা না করে, তিলোত্তমার কিছু টাকায় কিছু বই ম্যাগাজিন কিনে ট্রেন হকারী শুরু করল।
তিলোত্তমার হাজার ওজর আপত্তি সে মানল না। তিলোত্তমাকে কোন অসম্মানজনক কাজ করতে দেবে না,এটাই তাদের বংশে রীতি।
আয় হত নামমাত্র, কিন্ত সারাদিন অকান্ত পরিশ্রম আর খাবারে অনিয়ম, ধনীর দুলাল অসুস্থ হয়ে পরছিল, কিন্ত অসুস্থ শরীরেই জেদী অভির হকারী চলল,। একরাতে খুব বাড়াবাড়ি শ্বাসকষ্টে ছটছট করছে গায়ে জ্বর, প্রান সংশয়।
পরদিন তিলোত্তমা তাকে অভির ইচ্ছার বিরুদ্ধেই নামী ডাক্তার দেখালো।বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা ও তার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার কিছু মেডিসিন লিখে দিলেন, বললেন হয়ত কটা দিন রিলিফ পাবে, কিন্ত হার্টের অপারেশন খুব জরুরী, সময় নষ্ট না করে এখুনি কোন হার্টে সার্জেন সাথে যোগাযোগের পরামর্শও দিলেন।এবার বাড়াবাড়ি হলে অভির প্রান সংশয় এমন সতর্ক করলেও লাখ লাখ টাকা খরচ করে তার অপারেশন সাধ্য অভি আর তিলোত্তমার ছিল না।
সামান্য মেডিসিন ট্যাবলেট কিনতেই তিলোত্তমার গচ্ছিত সম্বল দিয়ে হয় না,শেষ সম্বল তিলোত্তমার কানে আড়াই আনা সোনার রিং। তারপর কল্পতরু সুন্দরীর সাধক ধনকুবের আবীরের দেখা।
আবীরকে এবার তিলোত্তমা এদিনের সব ঘটনা বলে। তাকে এবার থেকে বোনের চোখে দেখত, হাতে ধরে কাতর অনুরোধ করে।
আবীর লজ্জিত হয়, সহমত পোষণ করে।পরদিন তার ফ্ল্যাটে এসে অভির কাছে ক্ষমা চাইতে এল।তিলোত্তমা তখন ডিউটিতে।
অভি বলে ," আপনার চারিত্রিক দোষের বিচারে আমি যাবো না ,পুরানে দেবদেবী সাধু ঋষিদের এমন কীর্তি কত নেবেন! তবু তারা কর্মগুনে মহান, আপনিও মহান ।"
আবীর একটু দুঃখ আর আফসোস নিয়ে বলল "আমি ব্যক্তিগত জীবনে সুখী নয় । আমি অনেক নারীর সান্নিধ্যে এসেছি।কিন্তু তিলোত্তমা যেন অন্য রকম,শুধু সুন্দরীই নয়, চরম বুদ্ধিমতী, বাস্তববাদী।আর তোমায় প্রানের অধিক ভালোবাসে, সঙ্গে এক অকৃত্রিম স্নেহ করে।
তুমি যেদিন খুবই সংকটাপন্ন ভেন্টিলেশেনে, কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল , কিছু খাচ্ছিল না,কেমন যেন হুমকি সুরে আমাকে বলল, "অভি মারা গেলে ,আমিও আত্মহত্যা করব,কেউ রুখতে পারবে না।" কিছুক্ষণ পর মরিয়া হয়ে কেমন পাগলের মত বলল, "আমি আপনার আজীবন রক্ষিতা থাকব, শুধু আমার অভিকে ফিরিয়ে দিন।" তারপর কী ভীষণ কান্না ! আমাকেও সে হয়ত সন্দেহ করেছিল, কিন্ত আমি তোমার চিকিৎসার ব্যপারে একশভাগ আন্তরিক ছিলাম, ঈশ্বর সাক্ষী।
একটু থেমে বলে,সত্যি দাদার মতই যদি আচরণ করতাম, তোমাদের কাছে আজ সংকোচ লাগত না। যাইহোক এ ফ্ল্যাটটা তিলোত্তমার নামে লিখে দিয়েছি।আমার নার্সিংহোমে একটা কাজ দিয়েছি। তুমি সুস্থ হলে তোমাকে আমার বন্ধুর এক স্কুলে কাজ দেবো।তোমরা সুখী হও।বিপদে বা যেকোন দরকারে আমাকে পাবে।