অটোয়া
অটোয়া
2019 এর শেষে গুজ গুজ রে মৌমাছির চাকের মতো আলোড়ন শুরু হয়েছিলো সারা পৃথিবী জুড়ে। 2020 র জানুয়ারিতে করোনা দল বেধে এলো। মার্চে ভারতে লকডাউন শুরু হলো। ব্যস এতদিনের স্বপ্নের ম্যাপল পাতা আর টিউলিপের দেশে যাওয়ার প্ল্যানটা আবার মুলতুবি রয়ে গেল।
অগ্নেশ অস্হির হয়ে কটা মাস ঘরেই কাটালো। ফেসবুক, ট্যুইটারে এই প্রথম এ্যাকাউন্ট খুললো। জনা কয়েক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব পাতালো। কিন্তু কাউকেই কি আর মনে ধরলো ! দু চার দিন কথা বলেছে বটে কিন্তু ঠিক আনন্দ পায়নি। অবশ্য কোনোদিনই কেউ ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেনি।
শুধুমাত্র এ কারণেই বোধহয় বিয়েটা আর করা হয়ে ওঠেনি। এগ্রিকালচারের রিসার্চ পেপার লিখতে লিখতে আর ছাত্র পড়াতে পড়াতে কবে যে বিয়ের সময় পার হয়ে গেছে ঠিক খেয়াল হয়নি। বাবা মা অবশ্য পি. এইচ. ডি. টা কমপ্লিট হবার পর মনে করিয়েছিলো কথাটা। কিন্তু তখন অতটা গুরুত্ব দেয়নি।
এখন যে তাই বলে আপশোস হয় তা কিন্তু মোটেও নয়। বরং নিজেকে বেশ স্বাধীন বলে মনে হয়। বছরে একবার দূরে কোথাও ঘুরে আসতে পারে স্বচ্ছন্দে।
কোনো পিছুটান না থাকলে যা হয়। তবে নতুন একটা শখ ইদানিং হয়েছে। তা হলো যেখানেই ঘুরতে যায়, মোবাইলে তার কিছুটা রেকর্ড করে নেয়। নিজের ইউটিউব চ্যানেল এ পোষ্ট করে দেয়। না, লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের লোভে নয়।
আসলে একথাটাই মনে হয় যে কতো মানুষের তো কতো জায়গায় যাবার ইচ্ছে হয়, অথচ তারা পারেনা। ওর বানানো ভিডিও গুলো যদি মানুষকে এতটুকু আনন্দ দিতে পারে তাই বা কম কি!
আর নিজেরও মাঝে মধ্যে ভিডিওর এ্যালবামের এই স্মৃতি গুলো ঝালাই করে নিতে বেশ লাগে।
কুড়ি সাল পার হয়ে একুশ এলো। আনলক শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনা এখনও রয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর এ তাই ইচ্ছে করেই গেলনা অটোয়া। অটোয়া কানাডার রাজধানী হলেও টরন্টোর নামটাই বেশী পরিচিত ছিলো এতদিন। এবারে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে যাবে জুন মাসে। তার আগে গেলে শুধুই বরফ দেখতে হবে। সাদা রঙ পছন্দ হলেও শুধুই সাদা মন টানেনা ততটা।
অটোয়া এসে সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছে ঐ মাকড়সা দৈত্যটাকে। আশ্চর্য এত সব সুন্দর দুর্গ, চার্চ নানারকম টিউলিপ এর সমারোহের মধ্যে কেন যে এমন পছন্দ! বলিহারি বটে!
বাঁম্প ( BNAFF) এর পার্কটা অবশ্য অবাক করেছে অনেকটাই! এ নাকি ওদের পার্ক! দেখে তো মনে হয় কয়েক খানা পাহাড়ি দেশ একসাথে সহাবস্থান করছে। নায়গ্রাকে যেমন ভেবেছিল ছবি দেখে দেখে তার চেয়েও নেক বেশী বড় আর ভালো লাগলো।
একদিন লুইস লেকের বোটে প্যাডেলও করেছে অন্যদের সাথে।
সবচেয়ে মজা হলো আপেল বাগানের ঐ হে রাইড দেখে। কনডাক্টেট ট্যুরের লোকজনেরাই নিয়ে গেল গাড়ি করে এক আপেলের বাগানে। টিকিট কেটে আর থলে কিনে ঢুকলো ওরা আপেল পিক করতে।
একটুখানি রাস্তা নাকি হে রাইড করতে হবে। হে মানে তো খড় কিন্তু এই "হে রাইড" আবার কি জিনিস! একথাটা মনে মনে ভাবতেই হাজির হলো এক ট্রাক্টর। যার সাথে লাগানো রয়েছে এক ট্রলি। আর সেই ট্রলিতে মোটা গদির মতো খড় রয়েছে বিছানো।
আপেল তুলেছিল সকলেই থলে ভরে, খেয়েছে দু একখানা। কিন্তু গাছের তলে শয়ে শয়ে আপেল পড়ে থাকতে দেখে ভারতবাসী ভাইয়েদের কথা খুব মনে পড়ছিলো। গরীব মানুষ আপেল কিনে খেতে পারেনা, আর বড়লোকেরাও মোম পালিশ করা আপেল কতো দামে কেনে!
অটোয়াকে খুউব ঝকঝকে লেগেছে দেখতে। আর ভালো লেগেছে এ্যালপাইন আর তার প্রচুর লেক।
নাম গুলো সব মনে নেই, সুন্দর সুন্দর দৃশ্যের স্মৃতি গুলো রাখা থাক মনেই।
