অন্যরকম সংসার
অন্যরকম সংসার
অরিন্দমের বাড়ির ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে রয়েছে রুনু। কাজের মেয়ে সুফি এসে বলে ম্যাডামকে ভেতরে বসতে। স্যার আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বেন। মিনিট পনেরোর মধ্যে অরিন্দম এসে ঘরে ঢোকে। তারপর খুব ঠান্ডা গলায় বলে, "রুনু তুমি? এখানে?" পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় রুনু। ইস! একি চেহারা হয়েছে ওর। একেবারে রোগা হয়ে গেছে রুনু। চোখের নীচে চড়া করে কালি পড়েছে। গালের চামড়ায় বয়সের ভাঁজ।
অরিন্দমের পা জড়িয়ে ধরে রুনু। আজ খুব কাঁদছে ও। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায় অরিন্দম। "আমায় ক্ষমা করে দাও অরিন্দম। আমি তোমায় ঠকিয়ে জীবনে কখনো শান্তি পাইনি। আমার দ্বিতীয় বিয়েতেও ডিভোর্স হয়ে গেছে। বিশ্বাস করো আমি বুঝেছি তোমার চেয়ে ভালো আমাকে কেউ কোনোদিন বাসেনি। আমি জানি আমি তোমার কাছে যদি কোনো দাবী নিয়ে আসি, তুমি আজও আমাকে ফেরাবে না। আগের মতোই উজাড় করে দেবে।" অরিন্দমের পা দুটো ধরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলতে থাকে রুনু। অরিন্দম খুব শান্তভাবে ওকে বলে, "তুমি আমার কাছে এক্সাক্টলি কি চাইতে এসেছো?"
"একটা সংসার কারণ আমি জানি তুমি আজও সংসারী হওনি।" অরিন্দম রুনুকে দুহাত দিয়ে তুলে দাঁড় করায় তারপর বলে, "পারবে আমার জীবনের ওই কটা বছর ফিরিয়ে দিতে উজ্জ্বলের সঙ্গে প্রেম করার জন্য যা তুমি নষ্ট করে দিয়েছিলে? তোমার চোখে ছিল অনেক বড়ো হবার আকাঙ্খা। তখন এই সাধারণ মধ্যবিত্ত স্বামী তোমাকে যা দিতে পারেনি তা দিতে পেরেছিল উজ্জ্বল কিন্তু দেখো স্বামী হবার সাথে সাথে সেও হয়তোবা বদলে গিয়েছিল তাই তাকেও আজ ছাড়তে হলো তোমায়।"
"বেশ অরিন্দম ক্ষমা না করো আমায় কিন্তু আমাকে একবার বলো আমাদের ছেলে এখন কোথায়? ওকে একটিবারের জন্য দেখতে চাই আমি।" অনুতপ্ত রুনু জিজ্ঞাসা করে অরিন্দমকে। অরিন্দম রুনুকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় তার বাড়ির বাগানে। তারপর বছর চোদ্দ বয়সের একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলে, "ওই দেখো আমার ছেলে সুব্রত। আর ওর সাথে রয়েছে আমাদের কত সন্তান। এরা প্রত্যেকেই এখন আমার ছেলেমেয়ে।" রুনু দূর থেকে দেখে সুব্রত খেলছে চার পাঁচটা কুকুর ছানার সঙ্গে। সুব্রত আর এই পোষ্যরা এখন অরিন্দমের সন্তান, ওরাই এখন ওর সংসার। অরিন্দম রুনুকে বলে, "সুব্রত এখনো জানে না যে ওর মা অন্য কারোর হাত ধরে চলে গিয়েছিল। ও জানে ওর মা মৃতা। হ্যাঁ তুমি মৃতা আমাদের কাছে। এক সন্তানকে মেরে ফেলেছিলে নিজের গর্ভে আর আজ?..." এবার একটু স্মিত হেসে অরিন্দম বলে, "আজ আমি এরকম অনেক অবলা সন্তানদের বাবা। শুধু পোষ্য নয়, অনেক অবলা, অনাথ শিশুরাও আজ থাকে আমার এই বাড়িতে। সুব্রতর সঙ্গে ভাইবোনের মতন বড়ো হচ্ছে ওরাও। জীবন আমাকে অন্য ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে। আমিও আজ সংসারী তবে অন্যভাবে। তুমি এসো রুনু। আমার এই খুশির সংসারে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই।" রুনু সেদিন বরাবরের মতন প্রস্থান করে অরিন্দমের সংসার ছেড়ে।
