Sayandipa সায়নদীপা

Drama

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

অন্যরকম বৃষ্টি

অন্যরকম বৃষ্টি

2 mins
3K


মা অসুস্থ, ছোট্ট বুধন উনুন ধরাতে গিয়ে দেখে সব জ্বালানি ভিজে একসা, তার মানে আজও খাবার জুটবে না।

   ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে, মাদুরটা একটু সরিয়ে এনে শোয় রতন মিস্ত্রি। মাথাটা যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছে, জ্বরের জন্য নাকি দুশ্চিন্তায় তা ঠিক বুঝতে পারেনা সে।

   আজ হপ্তাখানেক ধরে নদীর ধারে তাদের এই ছোট বস্তিতে এক অজানা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে সবাই, ডাক্তার দেখানোর পয়সা নেই; তারওপর মুষলধারে বৃষ্টি, নদীর রোষে পড়লে এই ছিটে বেড়ার কাঠামোটুকুও যাবে।

                                 **********

বাইকটা আর খারাপ হওয়ার সময় পেলোনা! ডেলিভারির টাকাটা  বসকে ঠিকঠাক করে দিতে হবে আজই। রাতের অন্ধকারে আপাদমস্তক কালো বর্ষাতি মুড়ে কোলের ব্যাগটাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দ্রুত ব্রিজটা পেরিয়ে যেতে চায় রাজন। কিন্তু তার আগেই কারা এসে যেন পথ আটকায় তার। অন্ধকারে মুখগুলো পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়না কিন্তু রাজনের মনটা একটা আশঙ্কায় ছটফট করে ওঠে। পেছন ফিরে পালাতে যেতেই আচমকাই যেন উল্টো দিকে থাকা মানুষগুলো পৌঁছে যায় এদিকে। গলা থেকে আপনাআপনিই ছিটকে বেরিয়ে আসে প্রশ্নটা, “কে?”

“চিনতে পারলে না বাবু আমি রামু…”

“আর আমি কাজল।”

“কে?” পরিচয়দুটো মনে আসতে গিয়েও স্মৃতিটা বেইমানি করে শেষ মুহূর্তে।

“এরই মধ্যে ভুলে গেলে? টাকার লোভ দেখিয়ে, ভুল বুঝিয়ে নদীর পাড়ের এই বস্তি থেকেই নিয়ে গিয়েছিলে আমাদের, সামিল করেছিলে তোমাদের অপকর্মে। সময় আসতে নিজেদের বাঁচাতে পুলিশের সামনে এগিয়ে দিয়েছিলে আমাদের। মনে পড়ছে কিছু?”

“তো… তোরা! কিন্তু তোরা তো…

“হুমম পুলিশের গুলিতে শেষ হয়ে গিয়েছিলাম দুজনেই। আর তাই আজ আমার ছোট্ট ছেলেটা অসুস্থ মাকে নিয়ে খিদেয় ছটফট করছে…”

“আর আমার বুড়ো বাবাটা একলা জ্বরের ঘোরে কষ্ট পাচ্ছে।”

“আ… আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও… শোনো আমি তোমাদের বাড়ির লোকের…”

“হাঃ হাঃ হাঃ…” হেসে ওঠে রামু আর কাজল দুইজনেই...

                                 

                              **********

   ব্রিজের ওপর থেকে কেমন একটা শব্দ আসতেই গুটিগুটি পায়ে বাইরে বেরিয়ে আসে বুধন, বৃষ্টিটা থেমেছে এখন। কিন্তু একি, এগুলো কি পড়ছে আকাশ থেকে! ওপর থেকে উড়ে উড়ে নেমে আসা হালকা জিনিসগুলোর একটাকে হাত বাড়িয়ে খপ করে ধরে ফেলে বুধন; তারপরেই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, “ওলে ছবাই আয় না লে… টাকার বিট্টি হচ্চে যে…”

বুধনের চিৎকারে অবাক হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে মানুষগুলো, শরীরটাকে কোনোমতে টেনে নিয়ে বেরিয়ে আসে রতন মিস্ত্রিও। তারপর দু’হাত মেলে ওরা স্নান করতে থাকে বৃষ্টিতে।  জীবনে প্রথমবার বৃষ্টি ওদের জন্য এতো আনন্দ নিয়ে আসে...”

শেষ...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama