অন্য চড়ক
অন্য চড়ক


"বাবা তুমি এমন করে বসে আছো কেন?" চটজলদি গামছার খুঁটে চোখ মোছার চেষ্টা করল মাধব। কিন্তু ছোট্ট মিনির নজর এড়ালো না বাবার চোখের জল, "তুমি কাঁদছিলে কেন বাবা?" "নারে, চোখে কি যেন একটা পড়ে গিয়েছিল।" সামাল দেওয়ার চেষ্টা করল মাধব। মিনি বলল, "আমি জানি বাবা, এ বছর চড়ক হবেনা। তাই তুমি মন্দির মেরামতিও করতে যাচ্ছনা।" আজ চৈত্র সংক্রান্তি। শিব মন্দির চত্বর ফাঁকা। নেই ভোক্তাদের আগুন সন্ন্যাস, নেই জিভ-ফোঁড়, নেই ভক্তদের সমাগম। গোটা গ্রাম যেন খাঁ খাঁ করছে। মাধবের বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছে। তার বাইরের ঘরেই পড়ে রয়েছে মন্দির মেরামতির জিনিসপত্র। সব ব্যবস্থাই হয়ে গিয়েছিল, তবু কিছুই আর হলনা। "ঠাকুর আমি মন্ত্র বলতে জানিনা কিন্তু শোনো না তুমি দয়া করে সব ঠিক করে দাও। আবার সব আগের মত করে দাও ঠাকুর।" ঠাকুর ঘরে শঙ্খ তুলে নিয়ে সজোরে ফুঁ দিল মিনি। একটু পরেই গ্রামের সব ঘর থেকে একের পর এক ভেসে আসতে লাগলো কাঁসর, শঙ্খের আওয়াজ। যে যার ঘরে প্রার্থনারত। চমকে উঠল মাধব। চড়কের দিনে গ্রামে জাতপাত ভুলে সব মানুষ একসঙ্গে শিব ঠাকুরের পুজোয় মাতত। কিন্তু ওই দুষ্ট ভাইরাসের অত্যাচারে যদিও তারা এবার মন্দিরে জড়ো হতে পারেনি, কিন্তু দানবটা তবে শেষমেশ তাদের এক হওয়া আটকাতে পারল না! দু'হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বিড়বিড় করল মাধব, "ঠাকুর সবাইকে ভালো রেখো।"