Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Moumita Chakraborty

Classics

2  

Moumita Chakraborty

Classics

অনুস্থতা

অনুস্থতা

6 mins
392


   কোর্ট চত্বর আজ ভিড়ে থিকথিক করছে। অন্যদিনের তুলনায় মানুষ অমানুষ প্রত্যেকের ভিড়ই একটু বেশি। বেশ উঠতি নামকরা নেতা দালালদের দেখা গেল। তাদেরকে ঘিরে ভিড় করে আছে কিছু তাদেরই পোষা মানুষরূপী হিংস্র প্রাণী। চোখেমুখে তাদের জয়ের আনন্দ যেন হাটবাজার আইন আদালত আর সকল মানুষের বিশেষ করে মেয়েমানুষের শরীর তারা কিনে নিয়েছে নিলামের জোরে। আর হবে নাইবা কেন...... আজ তাদের সাগরেদ বিশু, আব্বাসরা যে ছাড়া পাচ্ছে। ধর্ষণের মামলায় ওপর মহলের হাত ছাড়া জামিন তো এত সহজে পাওয়া যায় না ..... আর যদি তাতে মাত্রা বাড়াতে খুন যোগ করা যায়। বিশুদের তেমন কোনও অসুবিধে হয়নি । এইতো .... যেদিন ঘটনা ঘটলো মানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ...সোমবার দুপুর....এইকদিনই যা শ্রীঘরে কাটাতে হল। তাওতো যত্নআত্তির কোনও ঘাটতি ছিল না। সেঁকা মুরগি থেকে বিলেতি... সবই এসেছিল তাদের চাহিদা মতো। তবু বাইরে বেরোনোর একটা আলাদা স্বাদ আছে। পাটভাঙা সাদা পাঞ্জাবি পায়জামায় নিজেকে ঢেকে অতি পরিচিত নরেনের দোকানের এক কাপ চা খেতে খেতে নেতা বিকাশ পোদ্দার দেখলেন বিশু বুকের ছাতি ফুলিয়ে কোর্টের সিড়ি বেয়ে নেমে ওনার দিকেই এগিয়ে আসছে। ----‘’নে এক কাপ চা খা বিশু, যা গেল এই কদিন তোদের ওপর’’ বলে বীর বিশুকে একটা ধোঁয়া ওঠা চায়ের ভাঁড় এগিয়ে দিলেন। 

      বিশু সাহা ....বয়স বছর ত্রিশেক হবে। লম্বা দোহারা চেহারায় এখন মানানসই দাড়ি গজিয়েছে । নাহ... , কাটা দাগটাগ যেমন মাস্তান দের থাকে আর কি,.... তেমন কিছু অলংকার নেই। লম্বা টিকালো নাকের দৃপ্ত চেহারাটা বছর ছয়েক আগে এমন নৃশংস আকার নেয়নি। বাবা সাধন সাহা মারা গেছেন বছর পনেরো হবে। তখন বিশু মাধ্যমিকও দেয়নি। সেই থেকে কাজের ধান্দায় জল এপাত্র ওপাত্র গড়িয়ে বিকাশ পোদ্দার এর কাছে গিয়ে পড়েছে। লেখাপড়ায় যে খুব খারাপ ছিল তা নয়। কিন্তু ওই যে বলে না ..সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ .... কথাটা তাকেও ছাড় দেয়নি। মন্টু, লাধু, আব্বাস পাপাই, আলিম ...যে সব ছেলেচক্র তার বন্ধু ছিল, খুব অল্প বয়সেই সবকটা নেশার কবলে পড়ে। বছর ষোল যখন, তখন থেকে ছোটখাটো কাজ দিয়ে হাতে খড়ি এই অপরাধ দুনিয়ায়। যখন পঁচিশ .... তখনই প্রথম হাত রাঙ্গা হয় টাটকা রক্তে। ব্যাস, তারপর থেকেই চলছে কতকটা প্রয়োজনে, কতকটা অপ্রয়োজনে। আগে যারা "বিশে", "বিশা" ... এই ধরনের সম্বোধন করতো, তারা এখন "দাদা" বলে এক কাপ চা খেতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করে। পাড়ায় একটা রেসপেক্ট হয়েছে ওর।

   বিশুর মা বড় কষ্ট করেই মানুষ করছিল দুই ছেলেমেয়েকে। বাপটা মরার পর লোকের বাড়ি ঝি এর কাজ করেই চলছিল। মেয়ে যখন বছর বারো , একদিন স্কুল গেল তো গেলই। আর ফিরলো না। অনেক খুজেছে মা বেটায় । প্রভাব প্ৰতিপত্তিহীন মানুষদের যে এমন কত কাছের মানুষ হারিয়ে যায়, পুলিস খুজেও পায়না । কিংবা ওমন হাভাতে মানুষদের যে পৃথিবী আছে, তাদেরও আত্মীয় পরিজন থাকতে পারে এমন কথা ঠিক ঠাওর করতে পারে না। বিশু ‘দাদা’ য় রুপান্তর হওয়া থেকে নিয়তি কমবার বলেনি বীথির সন্ধান করতে, ও চেষ্টাও করেছিল কিছু। লাভ হয়নি । স্মৃতি বলতে সেই কোন কিশোরীকালের সাদাকালো ছবি একটা ..... দুই ভাইবোনের। সাধন বেঁচে থাকতেই কটা ছবি উঠেছিল নিষ্কলঙ্ক অভাবী পরিবারটার। দুই ভাই বোনের ছবি সাঁটা দুটো লকেটও শখের খিদেয় গড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু খিদে পেলে পাকস্থলী যখন ঘুরপাক খায়, তখন মানুষ,শখ, বস্তু সবই নিজের অস্তিত্ব হারায়। 

পর্ব ২  

   সেদিন ছিল বৃহষ্পতিবার। আসলে প্রতি বৃহস্পতিবারেই বিশু বিকাশ পোদ্দারের সারের ব্যবসার টাকা তুলতে যায় গ্রামে গঞ্জে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। বাড়ি ফিরতে সেদিন মাঝ রাত হয়। গত বৃহষ্পতিবার নেশাটাও যেমন একটু বেশি হয়ে গেছিল,তেমনিই মেজাজটাও বেশ খাট্টা ছিল পথে এক জনের সঙ্গে অযথা বচসার কারণে। রাত প্রায় ন’টা হবে। বিশুর বাইক চলছিল ফাঁকা রাস্তাকে ফালাফালা করে, পিছনের সীট এ আব্বাস। নেশায় আছন্ন চোখে দেখলো একটা মেয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। রাস্তাটা আজ যেন বেশিই শুনসান। মাথায় নোংরা প্রবৃত্তি ভড় করতেই নেমে দাড়ালো বাইক থেকে। এক হিঁচকা টানে মেয়েটাকে ফেলে দিল পথ পাশে পড়ে থাকা পাথুরে স্তূপে। কোলের ছেলেটাকে ছুড়ে দিল ওই স্তূপের মধ্যে। নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান করছে তিনটে শব্দ....... অসহায়ত্বের গোঙানি, বছর দুয়েকের শিশুর মা হারানোর চিত্‍কার আর একটা পাশবিক উদ্দামতার গর্জন। পড়ে থাকা পাথর কুচি কোথাও অমৃত সুধাধারায় সাদা হয়ে যাচ্ছে কোথাওবা রক্তিমসিক্ত। আর অমৃত আধার পশুর নখ দাঁতে ছিন্নভিন্ন। ব্যাস .... কতইবা সময়, কুড়ি মিনিটের তাণ্ডব.....তারপর আব্বাসের সুযোগ এলো। বিশুর সুখ হলেও শান্তি যে হলো না .....তাই হাতের মদের বোতলখানা ঢোকানোর চেষ্টা যখন বেশ দাপটে সফলতার মুখে , এই বুঝি এখনই জননাঙ্গ বেয়ে পাকস্থলী পৌঁছবে ,ঠিক তখনই রসভঙ্গ করলো মেয়েটির মৃত্যু। একটা গলা ফাটানো চিত্‍কার.....ব্যাস এটুকুই, সব শেষ। বিশুর মুখে তখন একগাদা বিরক্তি, যেন ভাবছে এটুকু সহ্য করতে পারে না এ কেমন মেয়ে মানুষ...তাই একদলা থুথু ছিটিয়ে দিয়েছিলো অতৃপ্তির যন্ত্রনায়। আব্বাস টেনে তুলে বাইকের পিছনে চাপিয়ে হুহু শব্দে পালিয়ে গেল। ততক্ষণে কিছু লোক ছুটে আসছে ওদিকেই। তাই এগোতে পারলো না ওদের বাইক বেশিদূর। পুলিস নিয়ে গেল হাতকড়া পড়িয়ে। তারপরই তো সেই খাতির যত্ন.......... । না, বিশু, আব্বাসের কোনো শাস্তি হয়নি। ওদের মাথার ওপর কোনসব অদৃশ্য উপরমহলের হাত আছে নাকি। তার ওপর আবার দেহ শনাক্ত হওয়ার পর জানা গেছে মেয়েটি নাকি যৌনকর্মী। এ শরীরের তো বহুমালিকানা। আসলে এ সমাজে নারী শরীর আর পরিচয়ের মালিকানা তার আয়ত্তাধীন নয়, তা সে নারী যে অবস্থানেরই হোক না কেন...।

পর্ব ৩ 

   অনেকদিন পর বাড়ি ফিরলো বিশু। এর আগেও বেশ কবার জেলে থেকেছে কিছুদিন করে। নিয়তি রাগ দেখায় বটে, কিন্তু আবার এক থালা ভাত বেড়ে মুখের সামনে ধরে। অপত্য স্নেহ যে চর্মচক্ষুকে অন্ধ করে দেয়। রাত প্রায় ন’টা বাজে....এত তাড়াতাড়িই মা শুয়ে গেল, নাকি শরীর খারাপ হল!.... কোর্ট থেকে সোজা বিকাশ পোদ্দারের বাড়ি গেছিল ওরা। যতই হোক কৃতজ্ঞতা বলে তো একটা জিনিস আছে! তাই বাড়িটা আর তাড়াতাড়ি আসা গেল না। কোথাও কোনও আলো পর্যন্ত জ্বলছে না। কেমন যেন গা কাঁটা দিলো পাষাণ প্রাণটার। 

     নিয়তির ঘরে ঢুকে আলো জ্বালালো। দেখল খাটে শুয়ে আছে, ঘুমোচ্ছে বোধহয়... এই ভেবে সে চলে যেতে যাবে এমন সময় নিয়তি বলে উঠলো..’’.বীথির খোঁজ পেয়েছি। ‘’  

-------কবে মা, কোথা থেকে পেলে? কোথায় বোন......

  আনন্দে উদভ্রান্ত বিশুর চোখদুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো। 

--------সে আর নেই রে। আশৌচ রে আমাদের , তাই তো হাড়ি চড়েনি। 

নিয়তি বড় শান্ত কন্ঠে কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে গেলেন। দ্বিতীয়বার বোনকে হারানোর যন্ত্রনায় বিশুর দুচোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে তখন। 

----------এই দেখ বাবা, লকেট টা দেখ তো চিনতে পারিস কিনা! তুই যেদিন পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিল সেদিনই দারোগাবাবু আমায় খবর দেন। থানাগুলোয় যে সন্ধানের জন্য বীথির ছবি দিয়ে রেখেছিলি রে বাবা.....মেয়েটার গলা থেকে ওরা উদ্ধার করেছে। এখন তো কেউ এমন কালো কার বাঁধা লকেট খুব একটা পড়েনা। মেয়েটা কেন যে পড়তো কে জানে, হয়তো নিজেকে খুঁজে পেতেই.....।খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছিস না রে!!

 একি শুনছে বিশু। ওর হাত পা অসাড়। চোখ থেকে যেন রক্ত ঝরছে....কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছে না ও, আর কিচ্ছু শুনতে চায় না। ছুটে বেরিয়ে গেলো । আর কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এলো আব্বাসকে নিয়ে। থতমত আব্বাস কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরপর চারখানা গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে আর বিশু.... ঘরবন্ধ করে নিজেকে সবকটা বোতলের এলকোহল ঢেলে স্নান করালো। বন্ধ ঘরের ফাঁকফোকর গলে ধোঁয়া বেরোচ্ছে আর দমফাটা চিৎকার, যদিওবা এতে বাঁচার আর্তি ছিলনা। স্বেচ্ছামৃতুতে এমন থাকেনা।

   

   নিয়তি তার কষ্টক্লিষ্ট শরীরটা নিয়ে শুয়ে থেকেই চামরা পোড়ার গন্ধ পাচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। আজ আর কোনো কিছুতেই বাঁধা দেবে না সে। মানুষ গড়তে ব্যর্থ নিয়তি, অসফল নিয়তি, মা শব্দের অনুপযুক্ত নিয়তি। সে যেন ঘোরের মধ্যে আছে... চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে ছেলের সেই ছোটবেলার কথা, সেই গানটা ... খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়লো বর্গী এল দেশে....আর খোকা কেমন তাকে চেপে ধরে ঘুমচ্ছে,উঠতে দিচ্ছে না একবারও......ও যে একা ঘুমোতে বড় ভয় পেতো। এসব ভাবতে ভাবতে নিয়তি হারিয়ে যেতে লাগলো। বীথির নরক যন্ত্রনা তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। নিয়তি হারিয়ে যেতে লাগলো সুখের দেশে.... মৃত্যু দেশে। তখনই পাশের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজে মৃত্যু উপত্যকায় ঢলে পড়া চোখ দুটো আবার কে যেন জোর করে টেনে খুললো। ঘোলাটে দৃষ্টি দিয়ে দেখলো....রাত শেষ, ভোর হয়ে গেছে। অবসন্ন পা দুটোকে ছেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলো বীথির ছেলেকে....... পুলিশ কাস্টোডি থেকে সমস্ত ভরণপোষণ এর দায়িত্ব নিয়ে বাড়ী এনেছে নাতিটাকে। পাপ আর যন্ত্রণার ফসল হলেও ও যে নিষ্পাপ। এবার এই অসফল হাত দিয়েই মানুষ গড়ার পালা। এক খন্ড রোদ জানালা গলে ওদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 


Rate this content
Log in

More bengali story from Moumita Chakraborty

Similar bengali story from Classics