The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Mausumi Pramanik

Romance

3  

Mausumi Pramanik

Romance

অন্তরালে

অন্তরালে

4 mins
811


পড়াশোনা শেষে চাকরীর অপেক্ষায় ছিলাম। অখণ্ড অবসর। কিভাবে কাটাবো ভাবছিলাম।এমনিতে আমি ছবি আঁকতে ভালোবাসি।পাড়ার শুম্ভুদার একটা এনজিও আছে। দুস্থ, অসহায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে সামলম্বী হতে সাহায্য করে ঐ সংস্থা। আমি সেখানেই জয়েন করলাম।

স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম আমার। বাবা কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসার। মা স্কুল টিচার। দু পক্ষের দাদু ভাই'ই অগাধ সম্পত্তি রেখে গেছেন। আজকের দিনে কলকাতা শহরে তিন তিনটে বাড়ি আমাদের। আমি আর আমার বোন একমাত্র উত্তরাধিকারী। তবুও কেমন যেন হাঁপিয়ে উঠতাম শহুরে জীবনে। মানুষের সামান্য কষ্ট চোখে জল এনে দিত। কতবার নিজের টিফিন পথশিশুদের খাইয়ে দিয়েছি। সে এক অনাবিল আনন্দ। জন্মদিনে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম গণ্ড গ্রামে কিংবা বস্তিতে। ছোট বড় বাচ্চাদের চকলেট, জামাকাপড়, খাতা পেন বিলি করে সারাটাদিন ওদের সঙ্গে হৈ চৈ করে তারপর ঘরে ফিরতাম। স্কুলে পরীক্ষার খাতায় সেই আনন্দ উজাড় করে দিয়ে রচনা লিখতাম। "আমার স্মরণীয় দিন"। বাবা-মা কখনো বাধা দেন নি। আদ্যপান্ত বামপন্থী ছিল আমার পরিবার। গরীব মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কখনো কার্পণ্য করেন নি। হয়তো সেই কারণেই আমার মনটাও ওদের জন্য উদাস হয় মাঝেমধ্যে।

ছোটবেলা থেকেই আমি খুব অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় আর ছবি আঁকা আমার প্যাশান। যতোই ব্যস্ত থাকি না কেন রাতে অন্তত একবার আমার প্রিয় তুলিতে রঙ না মাখালে আমার ঘুমই আসে না।

শম্ভুদা জানতো। খুব ভালো করেই চিনতো আমাকে। তাই বুঝি উত্তর কলকাতার বেশ ক'জন দেহ-ব্যবসায়ীর সন্তানদের ভবিষ্যতের ভার তুলে দিয়েছিল আমার হাতে। আমি সপ্তাহে দুদিন সে পাড়ায় তাদের পড়াতে যেতাম।

যাতায়াতের পথে রোজ তাকে দেখতাম আর মুগ্ধ হতাম। মনে হতো তার মত রূপসী আর একজনও নেই। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতো সে সেজেগুজে। তবে তার সাজের মধ্যে কোন উগ্রতা ছিল না। চাঁদের আলোর মত স্নিগ্ধতা তার সারা শরীর জুড়ে। অন্যদের থেকে সে যেন অনেক আলাদা। দূর থেকেই তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। হ্যাঁ। সেটা প্রেমই ছিল, মোহ নয়। তা নইলে কেন মনে হতো যে তাকে নিয়ে পালিয়ে যাই; দূরে বহুদূরে। যেখানে গেলে সে স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারবে, সেখানে তাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। যেমন করে মানুষ খাঁচার পাখিকে নীল আকাশে উড়িয়ে দেয়, ঠিক তেমনিভাবে।

সেও কি আমায় পছন্দ করতো? নাহলে সেদিন ডাকলো কেন? অবশ্য আমি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম। ভয়ও লাগছিল। কি জানি তার দিকে অমন করে চেয়ে থাকাটা ভয়ঙ্কর অপরাধ হয়ে গেছে কিনা। দালালগুলো জেনে ফেললে তো রক্ষে নেই আর। ওদের অনুমতি ছাড়া ওখানকার কোন মেয়ের সঙ্গে কেউ রাত কাটাতে পারে না। আমি তো রাত কাটাতে যাই না। আটটা নটার মধ্যেই বেরিয়ে আসি ঐ এলাকা ছেড়ে।

তাই সে যখন নিজের এঁদো ছোট্ট ঘরটাতে আমায় নিয়ে গিয়ে বসালো, আমি বোকার মতো প্রশ্ন করলাম।

" ওরা কিছু বলবে না তো?"

"বীরপুরুষ দেখছি!" বলেই খিল খিল করে হেসে উঠলো সে। আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে বসে থাকলাম।

"ছবিবাবু, রাগ করলে?"

আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়লাম।

"আমার একখানা ছবি এঁকে দাও দিকি?"

সে আর্ট পেপার রঙ তুলি সব এনে দিল।

আমি তো অবাক!

"তুমি কি করে জানলে আমি ছবি আঁকি?"

"ঐ দেখ আবার বোকার মতো প্রশ্ন করে। আমি তো এও জানি যে তুমি আমায় খুব ভালোবাসো..."

আবার হাসতে লাগলো সে। তবে এবার ওর হাসির মধ্যে কি যেন একটা মিশেছিল। কান্না কিংবা বেদনা। হুম। তাই হবে। চোখের কোনে জল চিকচিক করছিল।

নিমেষের মধ্যে সে নিজেকে উলঙ্গ করে ফেলল। বিশেষ ভঙ্গিমায় খাটের উপর আধশোয়া হয়ে বসলো। স্তন, পেট, নিতম্ব, শরীরের প্রতিটি খাঁজ, প্রতিটি ভাঁজ এতটাই আকর্ষনীয় ও পারফেক্ট যেন কোন বড় শিল্পীর হাতে তৈরী মূর্তি। খাজুরাহে যেমনটা দেখেছিলাম। এমনকি কালো, লাল তিলগুলো যেন তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতেই গজিয়েছে জায়গায় জায়গায়। একঢাল কালো চুল, সঙ্গে কপালের উপর এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা লকসগুলো পুরাতন হিন্দী সিনেমার নায়িকার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। যে কোন পুরুষ ঐ সময়ে আদিম রিপুর তাড়নায় তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। কিন্তু কেন জানিনা আমার সে ইচ্ছা জাগে নি মনে। সেদিনও আমি মুগ্ধ চোখে দেখছিলাম তাকে আর আমার শিল্পী স্বত্তা রঙ-তুলির ছোঁয়ায় আর্ট পেপারের স্কেচটাকে ক্রমশ জীবন্ত করে তুলছিল।

আমি তাকে স্পর্শ না করে আমার ছবি শেষ করলাম। কি মনে হল আবার ছিঁড়ে ফেলে দিলাম। সে অবাক হল। আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো খানিকক্ষন। তারপর তার ছোট্ট কাঠের আলমারি থেকে একখানা লাল পাড় দেওয়া ঘিয়ে রঙের শাড়ি পরে বসল আমার সামনে। চুল বেঁধে খোপায় গন্ধরাজের গোছা লাগালো। আমি মুচকি হেসে সুন্দরী বঙ্গ ললনার ছবি আঁকলাম।

সেও নিজের অমন প্রতিচ্ছবি দেখে খুশী।

"বা! অপূর্ব! "

"ধন্যবাদ।"

খিলখিল করে হেসে উঠলো সে।

"তোমাকে পুরস্কার স্বরূপ কিছু তো দিতেই হয়। আচ্ছা কি খাবে বলো? কি ভালোবাসো?"

"কিছু না। শুধু এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা।"

ভোর হয়ে আসছিল। ক্লান্তও লাগছিল। তাই চা খেয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।

তারপর চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ক'দিন ওপাড়ায় যাওয়াই হলো না। কিন্তু প্রতিদিন রাতে আমি স্মৃতি রোমন্থন করতে ভুলি নি। ছটফট করতো মনটা কবে আবার তাকে দেখতে পাবো।

কিন্তু তারপর তাকে আর দেখি নি। ভাবলাম হয়তো শরীর খারাপ। এক সপ্তাহ কেটে যাবার পরও যখন সে গলিতে দাঁড়ালো না, আমি নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না। তার নামটাও তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি। নাহলে ফুলের দোকানে খোঁজ করতাম।

যাইহোক সাহস করে একদিন চলেই গেলাম তার ঘরে। দরজাটা ঠেলতেই খুলে গেল। প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র সব কিছুই মজুত সেখানে। এমনকি তার শাড়ি জামাকাপড়ও। শুধুমাত্র সেই নেই। এঁদো ঘরটার শৃন্যতা আমায় ঘিরে ধরলো। আমার ভিতরটা চিল চিৎকার করে বলছিল,

"কোথায় তুমি? কেন চলে গেলে? ফিরে এসো..."

ভয় হলো কেউ তাকে মেরে গুম করে দেয় নি তো? কিন্তু কি করে জানবো? কাউকে প্রশ্ন করলে আমাকেই উল্টে মার খেতে হবে। খুব অসহায় বোধ করলাম। মাথার চুল টানতে টানতে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পড়লাম।

চোখ চলে গেল খাটের তলার দিকে। কাজল দিয়ে লেখা এক টুকরো কাগজ পড়েছিল। বোধহয় আমারই জন্য। সেদিনের সেই ছিঁড়ে ফেলা ছবিটার অংশ।

কৌতূহলী হয়ে হাতে তুলে নিলাম।

"তোমার চোখদুটি বড়ো নিষ্পাপ,ছবিবাবু। ভয় হয়, যদি ভালোবেসে ফেলি। তাই চলে যাচ্ছি অন্তরালে..."

বুঝলাম। সে চলে গেছে। কোথায় গেছে জেনে লাভ নেই। কারণ সে ধরা দেবে না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance