Silvia Ghosh

Tragedy

1.3  

Silvia Ghosh

Tragedy

অনন্ত আকাশ

অনন্ত আকাশ

2 mins
1.2K



অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথটা বড্ড জ্যাম থাকে অয়নের, তাই রোজ অফিস ছুটি হবার পর গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসে সে। অন্ততঃ পক্ষে ঘন্টা খানেকের জন্য। বৈদেহীর সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পর সন্ধ্যেতে বাড়ি ফিরতেই ইচ্ছে করেনা অয়নের। রোজ রোজ বারে যেতেও মন চায় না। প্রথম একমাস খুব মস্তি করেছিল অয়ন, ইচ্ছে মত খাওয়া দাওয়া, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো , ড্রিঙ্কস , ফুলস্পীডে লঙ ড্রাইভ, জিম জাঙ্ক । কিন্তু এরপর আস্তে আস্তে এতেও ক্লান্তি আসতে থাকে। বন্ধুরাও সময় দিতে পারে না আর। 

  ব্রেকাপ যে মানুষের মনে এমন একটা একাকীত্ব আনতে পারে তা বুঝতেই পারেনি অয়ন। বৈদেহী মনের এতটা জুড়ে ছিল তা টের পাচ্ছে সে আজ ছয়মাস ধরে। তিনমাস ধরে অফিস ফেরত এই গঙ্গার ঘাট, ডুবন্ত সূর্য, আসেপাশের বস্তির ছেলে মেয়েগুলোর খেলা , মাঝে মধ্যে দু একটা জাহাজের দেখা একটু হলেও অয়নের শৈল্পিক মনকে একাকীত্বের ঘেরাটোপ থেকে বের করে আনত। প্রচুর ছবি তোলে অয়ন । সেগুলোকেই এডিট করা, কালার সেপারেশন করা ছিল অয়নের অবসর সময়ের কাজ। 

   আজও এসে বসেছে অয়ন ঘাটের কাছে বেঞ্চে। পাশাপাশি বেঞ্চে বসা সিনিয়র সিটিজেনের একটি গ্রুপ। দেখে এবং শুনে বোঝা যাচ্ছে প্রত্যেকেই এখানে আসেন নিজেদের একাকীত্ব দূর করতে। বেশীর ভাগই বিবাহিত, কেউ কেউ বিপত্নীক, ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে ঝাড়া হাত পা কেউ বা বিদেশে থাকা ছেলে মেয়ের প্রতীক্ষারত। কথা বার্তা শুনতে শুনতে অয়ন ভাবে শুধু ব্রেকাপই মানুষকে একা করে না সংসারের মধ্যে থেকেও প্রতিটি মানুষ নিজের নিজের কাছে ভীষণ ভাবে একা। সেই কবে বাপীর হাত ধরে স্কুলে যেত, তখন বাপীকে ছাড়তে চাইতো না শক্ত করে হাতটা ধরে থাকতো অথচ বাপীই নিজে হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো কবে! সেই সময় মায়ের লড়াইটা অয়নের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তৈরি করে। 

অয়ন চাকরী পাওয়ার পরের বছর মায়ের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুটা অয়নকে নিঃসঙ্গ করে তোলে। তখনই তো বৈদেহীর আগমন ঘটে ওর জীবনে এবং জীবনমুখী করে তোলে অয়ন কে। তাই তো বৈদেহীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চয়েজ করতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। জীবন তো ভালোই চলছিল। কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল... 


 নাহ! এবার থেকে সে আর বিষন্ন হবে না। কতদিন সে এভাবে হেলাফেলা করে জীবনটা কাটাবে! দরকারে সে একটা এন.জি.ও জয়েন করবে, নিঃসঙ্গ, অপারগ মানুষগুলোর জন্য যদি কিছুটা সময় দেওয়া যায়, তাহলে তারও আর একা একা লাগবে না, এই গোটা শহরে। পরের দিন অয়ন এসে দাঁড়ালো "অনন্ত আকাশ" নামক বৃদ্ধাশ্রমের গেটের কাছে। যোগাযোগ করেছে আগেই  এখানকার সুপার সুতপা দির সাথে।  হঠাৎ ই হাতের মধ্যে একটি হাতের স্পর্শ  অনুভব করায় আনমনা অয়ন যখন ফিরে তাকলো, দেখলো এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক তার হাতটা জাপ্টে ধরে বলছেন,

---- বাবা একটু জল দেবে? খাবো! দেবে? অয়ন ভালো করে তাকিয়ে দেখে বৃদ্ধ বসে আছেন হুইল চেয়ারে। হাতটা শক্ত করে ধরতেই অয়নের মনে হলো বাপীকে যেন স্পর্শ করে আছে। 


শহরটা যে এত সুন্দর, এত ভালো তা আগে কখনও মনে হয়নি। আজ মনে হচ্ছে শহরে যে এত লোকজন আছে, তা ভালো করে কেন তাকিয়ে দেখেনি কেন! হাত বাড়িয়ে দিতেই 'অনন্ত আকাশের' দরজাটা খুলে গেল তার সামনে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy