অন্ধ প্ৰেম
অন্ধ প্ৰেম
কোল্ড কফির স্ট্রয়ে একটা সিপ দিয়ে মধুমিতা শেলীর দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল -"মন খারাপ করে না? কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলি?" শেলী ভ্রু কুঁচকে বললো, "ঠাট্টা করছিস? আর যদি করেও থাকিস তবে বলবো ঠিকই করছিস। ঠাট্টার যোগ্য কাজই করেছি আমি।" মধুমিতা শেলীর এইভাবে কথা বলার ধরনের সাথে বহু বছর আগে থেকেই পরিচিত। এরপরেই ঠোঁট ফুলে আর দু চোখ জলে ভর্তি হয়ে আসবে। কলেজে ঢুকে আলাপ। সেইথেকে আজ এই ত্রিশের কোঠায় পৌঁছেও সমানভাবে অটুট আছে তাদের বন্ধুত্ব।
মধুমিতা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, "আরে ঠাট্টা করতে যাব কেন? তোকে তো সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করলাম তোর কি মন কেমন করে না শ্যামলের জন্য?"
শেলী ঠোঁটটা টিপে কফিশপের উপরের প্রাচীনতম ঘূর্ণায়মান ফ্যান টা দেখতে দেখতে বলল, " মন তো অনেক কিছুর জন্যই কেমন করে। রোজ সকালে ফোনে 'সুপ্রভাত' মেসেজ, সারা দিনে দশ- বারোবার ফোন করে কি করেছে তার রুটিন বলা। আমাকে যে ভালোবাসে তা বার কুড়ি বলা সবকিছুর জন্যই তো মনটা বড় কেমন করে। হঠাৎ করে মুছে নিঃশেষ হয়ে গেল যে এইসব জীবন থেকে, সে ধাক্কা সামলে তো দুটো বছর পার করে দিলাম। তা বলে কি মন কেমন করাও মুছে গেছে?"
মধুমিতার চোখটা জ্বালা করে উঠলো। ও বুঝতে পেরেছে শেলীর কোথায় লেগেছে। কিন্তু ও আঘাত করতে চায়নি, ওর মনে হলো শেলী অনেক দূরে বসে আছে। বাইরের জানালার দিকে তাক
িয়ে শেলী বললো," তোরা জানিস যে আমি শ্যামলকে ছেড়ে দিয়েছি। না,ভুল জানিস। শ্যামল আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কারণটা লজ্জায় কাউকে বলতে পারিনি। এমনকি তোকেও না। চল একবার আমার সাথে ওয়াশরুমে।" এই বলে মধুমিতার হাত ধরে টান দিলো।
মধুমিতা বাক্যব্যয় না করে শেলীর পিছু নিলো।
ওয়াশরুমে ঢুকে টি-শার্ট টা শেলী খুলতেই মধুমিতা অবাক!!!
-" এ তো!!!!"
-" তুই যা ভাবছিস, তাই।আমার বুকের মাঝখানে প্রথমে একটা ছোট বিন্দু হিসেবেই দেখা দিয়েছিল আর আজ সেটা বেড়ে গেছে এতটা। আর কদিন পর গলার কাছে চলে আসবে, তখন তা লুকোতে পারবো না। তখন হয়তো লোকে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যাবে। যেভাবে শ্যামল চলে গেছে..." শেষের কয়েকটা কথা শেলী বলতে পারলো না চোখের জল লোকাতে গিয়ে।
মধুমিতা শেলীর চোখের জল মুছিয়ে টিশার্টটা পরিয়ে দিতে দিতে বলল," যে তোকে এই সামান্য কারণের জন্য ছেড়ে চলে গেছে তার ভালোবাসা খাঁটি ছিল না। আজ তোর অন্যকিছু হলেও এভাবেই ছেড়ে চলে যেত। শ্বেতী তোর দেহে হয়েছে কিন্তু শ্যামলের যে মনটাই শ্বেতীতে পরিপূর্ণ। কষ্ট পাস না। মনে হয় যা হয়েছে ভালই হয়েছে।"
-" না,কষ্টটা অন্য জায়গায়। আমি শ্যামলের হাতে একটা ছোট বিন্দু দেখেছিলাম শেষবার। ভাবছি এতদিনে তা হয়তো অনেক বেড়ে গেছে। এবার ও হয়তো আমার যন্ত্রণা উপলব্ধি করবে।"