Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Classics

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Classics

অন্ধ ভালোবাসা

অন্ধ ভালোবাসা

4 mins
236


অন্ধ ভালোবাসা মানুষের জীবনের এক ধরনের অসুস্থতা - যা মানুষকে তাঁর সুস্থ মানসিকতা রক্ষা করতে দেয় না। হয়ত ভালোবাসার নিরাপত্তার অভাব - মানুষকে বাধ্য করে যে কোন অসুস্থ পথ বেছে নিতে। হয়ত প্ৰেম অন্ধ তাই এসব ঘটে।

আর কোনো উপায় ছিল না অভিজিৎ - এর কাছে। অভিজিৎ মানে অভিজিৎ বাসু । কলকাতার নামকরা মনোচিকিৎসক। মানুষ কতটা বিকৃত হতে পারে সেটা তিনি জানেন।অতএব কাউকে সহজে বিশ্বাস তিনি করেন না। তাই বোধ হয় বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-সজ্জন নেই বললেই চলে। বিয়ে করেছেন। ছেলে মেয়ে হয়নি। মিথ্যে সংখ্যাবৃদ্ধি করে কোন লাভ নেই, ছেলে পুলে হলে টাকা পয়সার শ্রাদ্ধ হবে। এতো আগেকার জমানা নয়। এখন ছেলে মেয়েরা বাপের পয়সায় ফুর্তি করে। আর বাপ বুড়ো হলে লাথি মারে। বিয়েটাও তিনি অনেক লেট করেছেন। ছোকরা বয়েসে বান্ধবী টান্ধবী ছিল। কিন্তু চল্লিশের ঘরে যখনি পা দিলেন, তখনি বুঝলেন যে সে সব আর কপালে জুটবে না। হঠাৎ এক দিন তার ইন্টার্ন সৌমির প্রেমে পড়বার ভান করলেন । সৌমিও ভান করলো। তারপর বিয়ে করে নিলেন। কিছুদিন একাকিত্ব কাটল। সৌমি কিন্তু মিডলাইফ ক্রাইসিসের মোক্ষম ওষুধ। রাত্রি অনেক ঘনিয়ে এসেছে। অভিজিৎ সাধারণত এই সময় ঘুমিয়ে যায়। শীতের মৌসুমে লেপের মুড়ি তার ভীষণ প্রিয়। কিন্তু আজ তার মন ছুটে যাচ্ছে সেই দিনে। বছর তিনেক আগে অধিরথ সরকার ঢুকেছিলো তার হাসপাতালে। গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায়, চোখে মুখে একটা বুদ্ধির ছাপ। সৌমির সাথে বন্ধুত্বও পাতিয়ে ফেললো ছেলেটি। আসলে সৌমি একদম সেকেলে নয় , অভিজিতের জীবনে অসংখ্য মেয়ে এসেছে গেছে। সৌমি এই অবাধ আনাগোনার হিসেব রাখেনি। তা ছাড়া অধিরথ আর সৌমির মধ্যে বন্ধুত্বের বিস্তার কতদূর ছড়িয়েছে সে তো নিজেও জানেনা। তাই এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে জল ঘোলা করা যায়না |কিন্তু ঈর্ষার আগুন যে জ্বলে উঠেছে। সেই ঈর্ষার আগুনে ঘি ঢালছে সন্দেহ। অধিরথের গৌরবর্ণ চেহারা, দীর্ঘকায় দেহ সব যেন হিংসের ইন্ধন। নাহ, বেপারটা তাকে জানতেই হবে। ডিটেক্টিভ, টিকটিকি, খোঁচরের এ কাজ নয়। মিছিমিছি অর্থ ব্যয়, এবং লোক জানাজানি। তাকেই কিছু করতে হবে| ঠিক তখনি মনে পড়েছিল ফ্রান্সের স্ট্রাসবোর্গ শহরের সেই ওয়ার্কশপের কথা। তখন অভিজিৎ ফ্রান্সেই তার পোস্ট গ্রাডুয়েশন কমপ্লিট করছিল, মনোচিকিৎসক অভিজিৎ বাসুর জন্ম হয়নি। সাইকোটিক হিপ্নোটিজমের ওপর ওয়ার্কশপ, কলেজেই হচ্ছিলো বলে এটেন্ড করেছিল। সাইকোটিক হিপ্নোটিজমের মূল সিদ্ধান্ত হলো ট্রান্সফার অফ কোন্সসিয়াসনেস। যিনি হিপ্নোসিস করেন, তিনি নিজের কোন্সসিয়াসনেস অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন। যিনি হিপ্নোসিস করেন তার শরীর থেকে চেতনা লোপ পায় কিন্তু অবচেতন মনে রয়ে যায়। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় যেন তিনি গভীর নিদ্রায় মগ্ন, কিন্তু আসলে তার চেতন মন কোন অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করেছে। তার শরীর সব অনুভূতিই এই নতুন চেতনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।


সাইকোটিক হিপ্নোসিসের পদ্ধতি খুব একটা কঠিন নয়। মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে সব থেকে দুর্বল। তার চেতন মন তখন নিষ্ক্রিয়, কিন্তু তার অবচেতন মন সব কিছুশুনতে পারে, বুঝতে পারে। সেই সময় মানুষের কানে ফিসফিস করে হিপনোটিক আফিরমেশন বলতে থাকলে তার চেতন মনে প্রবেশ করা যায়। নিজের শরীর তখন আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কাজ শেষ হয়ে গেলে নিজের শরীর মধ্যে একই রকম ভাবে ফিরে যাওয়া যায়।


অসংখ্য বার, অসংখ্য রোগীর সাথে এই হিপ্নোটিজমের খেলা খেলেছিলেন। রোগীর জীবনের অজানা তথ্য, কালো সত্য না জানলে কি আর প্রপার ট্রিটমেন্ট হয়। কিন্তু সেদিন বেপারটা অন্যরকম ছিল, মানুষের সম্মতি ছাড়া হিপ্নোসিস করা আনএথিক্যাল। ডাক্তারি পেশার সাথে বেয়াদবি। কিন্তু তাকে যে এটা জানতেই হবে। তার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে তার একবার হার্ট স্ট্রোক হয়েছে। সৌমির ব্যাপারে সব কিছু না জানলে যে তিনি মারা যাবেন।


সেদিন শনিবার। সৌমির ছুটি, রাত্রে বেলায় বন্ধুদের সঙ্গে বেরোবে। এই অজুহাত দিয়ে বেরোয়, তার পর চলে যায় সে অধিরথের কাছে। পুরোটা অনুমান, কিন্তু কিছু অনুমানের প্রমাণ লাগে না। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো অভিজিৎ কিছুক্ষণ। বিছানায় ঘুমিয়ে, শান্ত চেহারা । এটাই কারেক্ট টাইমিং, যা ভাবা তাই করা। পারফেক্ট এক্সেকিউশন।


আজ দু দিন হল অভিজিৎ সৌমির শরীরে। না কিছুই সন্দেহ জনক লাগেনি। ইতিমধ্যে তিনবার দেখা হয়েছে অধিরথের সাথে। কিন্তু সে অভিজিৎ - এর অনুপস্থিতে প্রেম নিবেদন রাখেনি। সে তো বলেছে জয়তীর কথা। জয়তীর সঙ্গে তার খুব অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। জয়তী মেডিকেলটা পাশ করলেই তারা বিয়ে করবে। শুধু শুধু সন্দেহ করেছিল অভিজিৎ তার ভাবতেও লজ্জা করে। না এবার ফিরে যেতে হবে নিজের দেহে। 


নিজের দেহটি সোফায় পড়ে আছে। ঠিক যেমন ছেড়ে এসেছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থায়, কানে কানে ফিসফিস করে কিছু আফিরমেশন দিলেই জেগে উঠবে। নিজের দেহের কানের কাছে হাটু গেড়ে বসলো সৌমির দেহে অধিষ্টিত অভিজিৎ । আফিরমেশন ফিসফিস করতে লাগলো। সময় একটু বেশি লাগছে, সে লাগতেই পারে। কিন্তু অভিমন্যুর দেহ বিন্দুমাত্র প্রত্যুত্তর দিচ্ছে না। অভিজিৎ দেহটার হাতটা ধরল। হাতটা এতো ঠান্ডা কেন। অভিজিৎ নাকের কাছে হাত নিয়ে গেল। না এ হতে পারে না। আরেকবার ভালো করে দেখে নিল, না এবার আশঙ্কা নেই। অভিজিৎ - এর দেহের মৃত্যু ঘটেছে। সে আর কোনোদিন ফিরে যেতে পারবে না। সৌমির নারী শরীর সেদিন যেন চক্রব্যূহ।অভিজিৎ -এর এই অবস্থা মনে করাচ্ছে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মহারথী অভিমন্যুর চক্রব্যূহের ভিতর অসহায় অবস্থার কথা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy