অম্লমধুর
অম্লমধুর


পুরো সিঁড়ি নামতেও পারেনি শ্রীময়ী এরই মধ্যে বার পাঁচেক ডেকে ফেলেছেন লাবণিদেবী অর্থাৎ তার শ্বাশুড়ি!!
"আসছি রে বাবা আসছি!" কোনোমতে বলেই দাঁত কিড়মিড় করে সে,
"বুড়ি একেবারে জ্বালিয়ে দিলে, কবে যে উপরপানে যাত্রা করবেন!!"
নীচে নামতেই বকা শুরু করলেন লাবণিদেবী..
"কতো দেরী করে ওঠো বলোতো বৌমা, ওইজন্যে তো তোমার সব কাজে অমন লেট হয়ে যায়। কতোবার বলেছি বৌ মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হয়, তা কথা শুনলে তো! বলি আজ যে বাড়িতে পুজো সে কথা ভুলে গেলে নাকি? কতো যোগাড়যন্ত্র এখনো বাকি বলোতো? লক্ষ্মী তো একবার মুছে গেছেই, তবুও পুজো আর একবার তো মুছতে লাগে নাকি?? নাও নাও মুছে আমি নিয়েছি.. তুমি আল্পনাটা দিতে শুরু করো!!"
গজগজ করে ওঠে শ্রীময়ী
"এ: বলছে দেখো, যেন ওনার বাবার চাকর!!"
"কি বললে বউমা?"
"না বললাম এইটুকু ঘর, সে আর আল্পনা দিতে কতোক্ষণ লাগবে? এখনি করে দিচ্ছি মা!"
মুচকি হেসে সরে যান লাবণিদেবী।।
শ্রীময়ীর স্বামী লাবণিদেবীর পুত্র অভিরূপ ব্যাংককে চাকরীসূত্রে গেছে কদিন হল। তবে থেকেই এই মহিলা তার নাকে দম করে রেখেছে! উফফফ আর পারা যায় না!!
পুজোর যোগাড় প্রায় সম্পূর্ণ। লাবণিদেবী এতোক্ষণে নিশ্চিন্ত হয়ে বসেছেন। স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকেই তার মেজাজ আরো বেশী খরখরে হয়ে গেছে, কিন্তু মনটা যে কি সেটা যারা তাকে জানেন প্রকৃত অর্থে তারাই জানেন! পুরোহিত মশাই বসে পড়েছেন আসনে। শ্রীময়ী শ্বাশুড়ির কথামতোন রূপের দেওয়া লাল হলুদ ঢাকাইটা পড়ে বসেছে, দারুণ দেখাচ্ছে তাকে! লাবণিদেবী তাকে অবাক করে দিয়ে তার কপালে দুটো চুম্বনও দিয়েছেন। দুজনে মন দিয়ে পূজারীর মন্ত্রপাঠ শুনছেন, পুজো সম্পন্নপ্রায়। এমত অবস্থায় পূজারী জিজ্ঞেস করলেন পুজো কার নামে দেওয়া হবে?
লাবণিদেবী বললেন,
"আমার কন্যার নামে।"
"কন্যা?"
"হ্যাঁ, শ্রীময়ী।"
দুটো চোখ অবাক বিস্ময়ে তার দিকে চেয়ে রইল!!
পুজো খুব ভালভাবেই সমাপ্ত হল। প্রতিবেশীদের কথা অনুযায়ী,, পরে শ্রীময়ীকে প্রায় লাবণিদেবীর কোলের কাছে বসে কিছু ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করতে দেখা গেল।