STORYMIRROR

Rima Goswami

Drama Horror Action

3  

Rima Goswami

Drama Horror Action

অলৌকিক কালভৈরব মন্দির

অলৌকিক কালভৈরব মন্দির

18 mins
332


পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার আগেই যখন করোনার কারণে সব কিছু বন্ধ হয়ে দেশ লকডাউনে চলে গেল ।  আমরা আর বাকি সাবজেক্ট এর পরীক্ষা দেবার আশায় বসে না থেকে চুপিসারে রংপুর চলে গেলাম দুটো বাইক নিয়ে । পথে পুলিশের নাকা চেকিং আটকেছিলো বটে তবে মামু পুলিশ সুপার হওয়ায় আমাদের যাত্রাপথ বেশ মসৃন ছিলো । রংপুরে যাবার কারণ বুবাই , ও আমাদের সথে হোস্টেলে পড়াশোনা করে । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য সকলে যে যার বাড়ি ফিরে যাবার আগেই একটা প্ল্যান তৈরি হয়ে গিয়েছিল । প্ল্যানটা হলো বুবাইয়ের দিনরাত ধরে ওদের রংপুর নিয়ে গালগল্প গুলোকে মিথ্যা প্রমাণিত করা । সেই মতো মাধবদাকে নিয়ে আমি রাজা , কুনাল আর ছোটকা দা চলে গেলাম রংপুর । আমার নাম রাজা দস্তিদার , আমি কুনাল আর বুবাই উচ্চমাধ্যমিক দিলাম এ বছর । মাধবদা আমাদের ফিজিক্সের প্রাইভেট টিউটর কাম শখের গোয়েন্দা , ছোটকা হলো আমাদের পাড়ার সকলের দাদা স্বভাবে ভীষণ ডাকাবুকও । বাবাই আমাদের সবসময়ই বলে ওদের গ্রামে এক কালভৈরব মন্দির আছে । সব মিলিয়ে ওদের গ্রামে বেশ কিছু রহস্য আছে যা সবার অগোচরে । এই রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে বহুলোক মারা গেছে । এক অঘোরীর প্রেত নাকি ওই অলৌকিক মন্দিরে বাস করে । আমাদের ব্যাপারটা কোনদিন হজম হয়নি । মাধব দা বা ছোটকা ওদেরও ব্যাপারটা নেহাতই বুজরুকী মনে হয় । মাধবদা বলে , অঘোরী সম্প্রদায়ের সাধকরা শৈব হন। শবসাধনা'র দ্বারা তাঁরা মহাকালের আশীর্বাদ পেতে চান। তো মহাকাল মন্দিরে কেনই বা এক অঘোরীর প্রেত বাস করবে ? হতে পারে কেউ এসব রটনা করে মন্দিরে গ্রামের লোকেদের আসা যাওয়া বন্ধ রাখতে চায় । যাই হোক নানা মুনির নানা মত নিয়ে আমরা চারজন পৌঁছেই গেলাম বাবাই দের বাড়ি । আমার মা লকডাউনে ফিরতে মানা করেছে তাই অনন্ত অবসর নিয়ে এসেছি । মা আমাদের সাথে করে পাঠিয়ে দিয়েছে কিছু দরকার খাদ্য সামগ্রী । এই যেমন পাঁচ লিটার তেল , সব ধরনের মসলা , গুঁড়ো দুধ , চিনি , বিস্কুট , ড্রাই ফ্রুটস , ময়দা , ম্যাগি , বিভিন্ন ইনস্ট্যান্ট ফুড। কারণ চার চারটে বড়ো বড়ো মানুষ এই লকডাউনের বাজারে কারো বাড়ি গিয়ে থাকা মানে খরচের ব্যাপার । বুবাই এর মা ব্যাগে ব্যাগে অত জিনিসপত্র দেখে খুব রাগ করলেন । উনি বললেন , দেখো দিদির কান্ড ! ছেলেরা আমার দুদিন এসে থাকবে খাবে বলে কি সব পাঠিয়েছে ! তা বাছা তোমরা কি আমার ছেলে নয় ? বুবাই যদি দুটো ডাল ভাত খায় তো তোমারও না হয় তাই খাবে । ওসব আমি নেবো না । তা ছাড়া আমাদের পুকুরের মাছ , পোলট্রির মুরগি , ঘরের গরুর দুধ , ক্ষেতের সবজি আর মরাই এ বাঁধা ধান । তোমার মাসীমা তোমাদের ঠিক চারটে খাওয়াবে ক্ষণ । 


আমি শুনে বেশ লজ্জিত বোধ করলাম , মনে মনে ভাবছি মায়ের না কোন বুদ্ধি নেই ? মাধব দা সামলালো সবটা । দাদা বললো , মাসিমা আপনি ঠিক বলেছেন কিন্তু কাকিমা এই সব ভালোবেসে পাঠিয়েছে তাই আপনি প্লিস নিজের মনে করে এগুলো রাখুন । না হলে কাকিমা দুঃখ পাবে । আর আমরা তো আপাতত এ মাসটা থাকবো । ব্যাপারটার নিষ্পত্তি ঘটলো ওখানেই । বাবাই কে আমি আর কুনাল পৌঁছেই ধরলাম এই কই রে তোর মন্দির ? বাবাই বললো , আছে রে আছে । খেয়ে নে তার পর নিয়ে যাবো । আমাদের পৌঁছনোর পর পরই মাসিমা আমাদের আটার গোলা রুটি আর সাদা আলু চচ্চড়ি দিয়ে টিফিন খাইয়ে পুকুরে স্নান করতে পাঠিয়ে ছিল । পুকুরে যাবার পথেই বাবাই আমাদের নিয়ে যায় ওই মন্দিরের কাছে। ছোটকা বলে , এ তো অনেক পুরোনো মন্দির ! টেরাকোটার কাজ ! চল ভিতরে যাই । বুবাই ছোটকার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে বললো , না কাকু এখন না । বাড়ি ফিরে চলুন , দুটো ভাত খেয়েই আপনাকে এক জনের কাছে নিয়ে যাবো । তার সাথে কথা বলে তবেই মন্দিরে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেবেন । মাসিমার রান্নার খুবই স্বাদ । মাথায় জল পড়ায় খিদেটা জমে উঠেছে , তাই বাবাই কে কিছু বললাম না । চলে গেলাম ওদের বাড়ি । খেতে বসে দেখি এলাহী আয়োজন ! লাল স্বর্ণ চালের ভাত , দেশী মুরগির ঝোল , সুক্ত , আলু পোস্ত , বেসনের বড়ার টক , ঘরে পাতা দই । খুব জমিয়ে খেলাম আর খাবার পরই লং জার্নির ক্লান্তি আমাদের ঘিরে ধরলো । বুবাইদের মাটির দোতলা ঘরে গিয়ে চার মূর্তি ঘুমিয়ে পড়লাম । বাবাই বললো , তোরা ঘুমা আমি বরং চার্লি কাকাকে আজ সন্ধ্যায় বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসছি । ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে গেছে । আমি আর কুনাল ঘুমিয়ে ছিলাম সেই তালে ছোটকা আর মাধবদা গ্রাম ঘুরতে পালিয়েছে । মাসিমা আমাদের একা একা আর অন্ধকারে বাইরে যেতে দিলেন না । বুবাই ও চার্লি কাকা বলে কাউকে ডাকতে গেছে এখনো ফেরেনি । অগত্যা মাসিমার গুড় দিয়ে বানানো চা খেয়ে মন শান্ত করলাম । কিছুক্ষণ পর বুবাই , মাধব দা , ছোটকা আর এক অচেনা ব্যক্তি একসাথে ফিরে এলো । অচেনা লোকটিকে মাসিমা চারুপদ ঠাকুরপো বলে সম্বোধন করলেন । আমি বুবাইকে বললাম , এই তোর চার্লি কৈ ? বুবাই বললো ওই তো যে আমার সাথে এলো .... চারুপদর ই শর্ট নেম চার্লি । আমাদের আড্ডাখানা ওই দোতলার ঘরে ঢুকে পড়লাম চার্লি কাকাকে নিয়ে । ঘরে ঢুকে আমি জিজ্ঞেস করবো যে মাধব দারা একা একা কেন গেল আমাকে আর কুণালকে না নিয়ে তার আগেই দেখলাম চার্লি কাকা খুব বকছে ছোটকা আর মাধব দাকে । ব্যাপারটা শুনে বুঝলাম , ওরা আমাদের ঘুমের সুযোগ নিয়ে ওই মন্দিরে ঢুকতে গেছিলো । চার্লি কাকা ঠিক সময়ে দেখে ওদের মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেয় আর এখানে ফিরিয়ে আনে । মাধবদা বলে , আপনি এত রিয়াক্ট করছেন কেন ? কি আছে মন্দিরে ? 

চার্লি বলতে শুরু করে , শবসাধনা আমাদের দেশে বহু প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। তন্ত্রশাস্ত্রের প্রায় প্রত্যেক সাধনাই শব সাধনা। শবসাধনা'র দ্বারা পরমার্থ বা ঈশ্বর লাভ হয় না। শবসাধনা আর কালাজাদু এক নয়। সঠিক শবসাধনা সাধকদের যেমন শক্তি বৃদ্ধি করে তেমনি ভুল আচার তার মৃত্যু ডেকে আনে । আমাদের গ্রামে সেই বছর কালভৈরব মন্দিরের বাৎসরিক পুজোর সময় এক অঘোরীর আগমন ঘটে । অনেক দিন আগের কথা , তখন বাবাই তোর ও জন্ম হয়নি । আমাদের গ্রামে জাগ্রত কালভৈরব মন্দিরে এর আগেও অনেক সাধু অঘোরীর আগমন হয়েছে তাই ব্যাপারটা আমরা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে ছিলাম । তখন আমাদের কালভৈরব মন্দির ছিল স্বাভাবিক , জাগ্রত দেবতার ভরসা তে আমাদের বাস ছিল এই গঙ্গার পাড়ের গ্রাম রংপুরের বাসিন্দাদের । ভৈরব এক ভয়ানক বা ভীষণ হিন্দু দেবতা শিবের একটি হিংস্র প্রকাশ বা অবতার, যা মৃত্যু এবং বিনাশের সাথে সম্পর্কিত। তিনি কাল ভৈরব নামেও পরিচিত। 

কুনাল জিজ্ঞাসা করলো , চার্লি কাকা শিব আর ভৈরব এক ? তা ইনি হিংস্র অবতার বলছেন কেন ? 

চার্লি কাকা বলতে শুরু করলেন , শিবের ভৈরব রূপের কাহিনিটি .....সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার আদিতে পঞ্চমুখ ছিলেন। শিবও পঞ্চানন। ব্রহ্মা শিবের থেকে অধিক গুরুত্ব দাবি করেন এবং অসম্ভব অহঙ্কার প্রকাশ করতে থাকেন। ক্রুদ্ধ শিব ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তকটি কর্তন করেন। এতে শিবের উপরে ব্রহ্মহত্যার পাপ অর্পণ হয়। ব্রহ্মা-কপাল হাতে নিয়ে শিবকে একটি দীর্ঘ সময় ভ্রাম্যমান অবস্থায় কাটাতে হয়। এই ভ্রাম্যমান শিবরূপই ভৈরব। বজ্রযানী তন্ত্রগ্রন্থগুলিতে বিপুল পরিমাণে ভৈরব-স্তুতি করা হয়েছে। বিশেষ করে ডামর শাখার তন্ত্রের প্রায় পুরোটাই ভৈরব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমাদের গ্রামের কালভৈরবের নাম অসিতাঙ্গ ভৈরব ।

‘ভূতডামর তন্ত্র’-এ স্পষ্ট বলা হয়েছে, বৈদিক দেব-দেবীদের প্রভাব কলিযুগে অস্তমিত হবে। প্রধান দেবতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন ভৈরবরা। ৬৪ ভৈরব ও তাদের সঙ্গিনী ৬৪ যোগিনী তন্ত্রমতে বিবিধ শক্তির আধার। ভৈরবরা সুপ্ত এবং দূরবর্তী আবার ভৈরবীরা সক্রিয়। তাই সাধকরা ভৈরবীশক্তিকে তুষ্ট করে ভৈরবের প্রসাদ লাভ করতে চান। 

তো এই অঘোরী যে আমাদের গ্রামে এসে হাজির হলো সে কিন্তু আসলে দেবী মধুমতী'র সাধনা করছিলো তলে তলে । 

এই দেবীর আরাধনা শব সাধনার মাধ্যমে করতে হয় । দেবী তুষ্ট হলে সফল সাধনায় সাধক নানা রতি, খাদ্য লাভ করে। সাধক দেবী'র বরে সর্বজ্ঞ, সুন্দর সৌষ্ঠবের অধিকারী হন ও সর্বত্র যাওয়া আসার ক্ষমতা লাভ করে । 

অঘোরীর উদ্দেশ্য ভালো ছিলো তো না , উপরন্তু তার সঙ্গে বিবাদে যাবার ফল আজও এই রংপুর কে ভুগতে হচ্ছে । মহাকাল অসন্তুষ্ট হয়েছেন , তাকে যদি আমরা তুষ্ট না করতে পারি তবে সব শেষ হয়ে যাবে । চার্লি কাকা এরকম কিছু ধোঁয়াশা রেখে কথা বলে গেল এক টানা । আমাদের মাথায় এক বর্ন ঢুকলো না । এটুকু বুঝলাম শিবের এক রূপ মহাকাল ভৈরব । অঘোরীর ব্যাপারটা কি জানতে চাই কিন্তু রাত হয়ে গেছে অনেক , চার্লি কাকা বাড়ি ফিরে যাবার উদ্যগ নিলো । মাসিমা মানে বুবাই এর মা এসে হাজির হলেন আর চার্লি কাকাকে দুটো খেয়ে ফিরতে জোরাজুরি করতে লাগলো । শেষমেশ চার্লি কাকা রাজি হয়ে গেলেন । আমরা মাটির দোতলা থেকে নেমে এলাম আর উঠোন পেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম । গ্রামগঞ্জ তাই এই রাত নটা বাজে তাতেই সারা এলাকা শুনশান হয়ে গেছে । বুবাই এর বোন পাপিয়া এবার মাধ্যমিক দিয়েছে । বুবাই হোস্টেল থেকে পড়াশোনা করছে কিন্তু পাপিয়া রংপুরের লোকাল স্কুল থেকে পড়ছে । পাপিয়া মেয়েটা বেশ মিশুকে , সবাই ওকে বোন বোন করে ডাকছে , আমি আর ছোটকা বাদে । ছোটকা সম্পর্কে ওর কাকা হয় ,  তাই ছোটকা নাম ধরেই ডাকছে পাপিয়া কে । আর আমি রাজা কি শুধুই নামে ? আমি রাজা মনেপ্রাণে ... তাই পাপিয়া কে আমার প্রথম দর্শনেই ভালোলেগে যায় । জীবনের প্রথম ক্র্যাশ কে বোন বলে ডাকা আমার পোষাবে না বলেই আমি ওকে নাম ধরেই ডাকছি । তো প্রসঙ্গে আসি , রাতের খাবার খেতে বসলাম ... মাসিমা আমাদের গরম গরম আটার হাতে গড়া রুটি , গুড় , ডিমের কালিয়া বেড়ে দিলেন । ওনার হাতে মনে হয় জাদু আছে , আমি যেখানে একটা রুটি খেয়েই পেট ভরিয়ে ফেলি আর খেতে চাইনা ..  এই নিয়ে মায়ের সাথেও আমার নিত্য অশান্তি .. সেই আমি টপ টপ করে চারটে রুটি সাটিয়ে দিলাম । আমি একা নই , কুশল বা মাধবদা , ছোটকা সবাই মনে হয় একটু বেশিই খেলো । চার্লি কাকা একটু একটু খুটে খেয়েই বাড়ি ফিরে গেল । বোঝাই গেলো , বাড়ি ফেরার তারা ছিল । আমরা পেট পুজো করে শুতে গেলাম । ঢালাও লম্বা বিছানা করে রেখেছে পাপিয়া আমাদের জন্য , ওপরের ঘরে । আমি , বুবাই , ছোটকা , কুশল আর মাধবদা একসাথেই শুলাম , নিচের তলার ঘরে পাপিয়া , মাসিমা আর মেসোমসাই শুতে গেল । এটা ওটা গল্প করতে করতে কালভৈরব মন্দিরের প্রসঙ্গ ফিরে এলো আবার । বুবাই বললো , রাতের বেলা যেন কেউ কোন বাইরে থেকে চেনা গলার আওয়াজ পেলেও বাইরে না বেরোয় । মন্দিরের দখল নেওয়া অঘোরীর আত্মা নাকি শিকার খুঁজে বেড়ায় রাতের বেলা । বিশ্বাস না হলেও সবাই সেফটির জন্য বুবাই এর কথা মেনে নিল । গল্পটা বাকি রেখেই চার্লি কাকা চলে গেল , মনটা উসখুস করছে বাকিটা জানতে । বুবাই কে জিজ্ঞাসা করলাম , এই চার্লি বা চারুপদ কাকার বিয়ে হয়েছে ? উনি কি করেন রে ? 

বুবাই বললো , রাজা তুই একটা হাদারাম ... উনি ব্রহ্মহচারী , দেখে বুঝতে পারলি না ? আর পেশা বলতে .. এক সময় কাকা প্রফেসর ছিলো মালদার কলেজে । তারপর সেবার মন্দিরের বাইরে ওর বাবা আর দাদার মুণ্ডুহীন লাশ পাওয়া গেল ... সেই যে কাকা এসে ঘরে বসে গেল আর চাকরি করতে মালদা ফিরেই যায়নি । গ্রামের ছেলে মেয়েদের পড়া দেখিয়ে দেয় কাকা বিনি পয়সায় । বোন মানে পাপিয়া কেও তো কাকাই পড়ায় । একা মানুষ , তাই বাড়ি দিয়ে এলে মা ওকে না খাইয়ে ছারে না । 

গল্প করতে করতে ঘুম চলে আসে , সবাই আমরা ঘুমিয়ে পড়ি একসময় । তার পর কতক্ষন পেরিয়ে গেছে জানিনা ... ঘুমে আচ্ছন্ন অবস্থাতেই মনে হয় কেউ যেন আমাকে নাম ধরে ডাকছে । উঠে বসলাম , হ্যাঁ ঠিক ! একটা মেয়েলি কন্ঠ ! রাজা রাজা বলে ডাকছে । আমি মাটির দোতলার ঘরের বাইরে একটা ছোট বারান্দা থেকে উঁকি মেরে দেখলাম , উঠোনে পাপিয়া দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে দেখতে পেয়ে বললো , রাজা নেমে এসো ... 

পাপিয়াকে দেখে আমার সব ঘুম উড়ে গেল নিমেষে । আমি দরজা খুলে বেরিয়েই আসছি এমন সময় আমার সামনে এসে হাজির হলো ছোটকা ! এক টানে আমাকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো । আমি কিছু বলবো তার আগেই আমার মুখটা চেপে ধরে ছোটকা পা টিপে টিপে আমাকে বারান্দার কাছে আড়ালে নিয়ে গেল আর উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা পাপিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো । ততক্ষণে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মায়া অদৃশ্য হয়ে গেছে । কানে এলো একটা কিছু মাটিতে ঠুকে ঠুকে এগোনোর শব্দ । বুঝলাম কেউ খিরকি নাচ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে । আমি ছোটকাকে বললাম , পিছু নেবে না ? ছোটকা বললো , ক্ষেপেছিস ? এখন সবুর কর । 


রাতটা কোনভাবে কাটিয়ে দিলাম এক অজানা উৎকণ্ঠা নিয়ে । ভোরবেলাতেই ছোটকা দেখলাম মাধবদা কে সব তল্পিতল্পা নিয়ে ফিরে যাবার জন্য বলছে । মাধবদা এই লকডাউনের সময় অতটা রাস্তা বাইকে রিস্ক নিয়ে ফিরতে চাইছে না । ছোটকার কাছে কাল রাতের ইনসিডেন্টটা শোনার পর মাধবদাও কনফিউজড । তার পর কুশল পড়লো এক বাজে মন্তব্য নিয়ে , বুবাই আসে পাশে নেই । বাথরুম সারতে নিচে গেছে দেখে কুশল বললো , দেখলে কাকা ভূত প্রেত ও বুঝে গেছে রাজার আলগা পিরিতের ব্যাপারে । দেখছো না মাধবদা কেমন পাপিয়ার রূপ ধারণ করে রাজাকে ডাকছিলো ? আমি কুশলের মুখ চেপে ধরে দুম দুম করে ওকে কত গুলো কিল দিয়ে দিলাম । ব্যাটা আমার প্রেস্টিজ পামচার করে দেবে একেবারে । এর মধ্যে বুবাই হন্তদন্ত হয়ে দোতলায় উঠে এলো ... শুধুমাত্র একটা কথা ও বললো .. পাপিয়া ... তার পর মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মাটিতে । আমরা ছুটে গিয়ে ওকে মাটি থেকে তুলে আমাদের জন্য পাতা বিছানায় শুইয়ে দিলাম । ওর মুখে চোখে একদিকে আমি আর কুশল জল দিতে লাগলাম আর ওদিকে কোন বিপদের আশঙ্কা করে মাধবদা আর ছোটকা চলে গেল নীচে । বুবাই এর জ্ঞান ফিরে আসলে ও উঠে বসলো আর আমার হাত দুটো ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো । বুবাই কাতর হয়ে বললো , ভাই আমার বোনটাকে বাঁচা । আমি ওকে শান্ত হতে বললাম আর সব গুছিয়ে আমাদের কাছে বলতে বললাম । ও যেটা আমাদের জানালো সেটার মর্ম দাঁড়ায় এটাই যে ,  পাপিয়া মিসিং । খিরকি নাচের কাছে একটা কমণ্ডল আর চাপ চাপ রক্ত পাওয়া গেছে । পাপিয়াকে আসে পাশে কোথাও পাওয়া যায়নি । আর ওই কমন্ডল আর রক্ত দেখে বুবাইয়ের মা বাবার আশঙ্কা তাদের মেয়েকে ওই অঘোরীর প্রেত তুলে নিয়ে গেছে বা মেরে ফেলেছে । সব শুনে আমরা নীচে নেমে এলাম ।  মেসোমসাই ,ছোটকা আর মাধবদা বেরিয়ে গেছে পাপিয়াকে খুঁজতে আর মাসিমা খুব কান্নাকাটি করছেন । আমরা ওনাকে শান্তনা দিতে চেষ্টা করলাম । আমরা জানি ওরা সবাই মন্দিরের দিকেই গেছে তাই আমি আর কুশল গেলাম ওই দিকেই । বুবাই ও আসতে চাইছিল কিন্তু আমি ওকে মাসিমার কাছে থাকতে বললাম । আমার ভিতরে যেন এক অজানা রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে । কাল রাতে হয়ত ওটা পাপিয়াই ছিলো ? আমার শিকার না পেয়েই কি অঘোরী তুলে নিয়ে গেল মেয়েটাকে ? কৈশোরের প্রথম ভালোবাসার জন্য অজান্তেই চোখ ভিজে একাকার হয়ে গেছে আমার । কুশল আমার মনের ভাব বুঝে আমাকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করলো । আমরা মন্দিরের বাইরে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে দেখি সেখানে ছোটকরা নেই । ওদের ফোন করে জানলাম ওরা পুলিশ চৌকিতে গেছে মিসিং ডাইরি করতে । যদিও ওসি জানিয়েছেন চব্বিশ ঘন্টা না পেরোলে ডাইরি নেওয়া যাবে না তবুও মন্দির রিলেটেড কেস বলে ওরা সদলবলে ইনসপেক্ষণ করতে আসছে । আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম ওদের আসার জন্য । এর মধ্যে কুশল বললো সকাল থেকে দানাপানি পেটে পড়েনি আর তিব্র রোদ ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে । আমি ওকে বললাম ছুটে বুবাইয়ের বাড়ি গিয়ে জল খেয়ে চলে আসতে । আর এটাও বলে দিলাম যে এই অবস্থায় মাসিমাকে যেন কোন ভাবেই খাবার চেয়ে কুশল বিরক্ত না করে । কুশল ও চলে গেল , আমি একা আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো ? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা ব্যাথা করছে । তাই চলে গেলাম মন্দিরের চাতালে বসতে । জাস্ট বসেই ছিলাম দেখলাম গর্ভগৃহের ভিতর থেকে পাপিয়া বেরিয়ে এলো । আমি ওকে সুস্থ দেখে ধরে প্রাণ ফিরে পেলাম । আনন্দে আর কোন যুক্তি তর্কে না গিয়ে ইমোশনাল হয়ে মন্দিরের কবাটের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম । আমার সারা শরীর কেমন যেন একটা হয়ে গেল পাপিয়াকে আলিঙ্গন করার সাথে সাথেই । চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসার আগে দেখলাম এক কাপালিকের মতো কেউ আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে মন্দিরের ভিতরে ঢুকে গেল । 

মাথার ভিতরটা যেন হাজার হাজার হাতুড়ি কেউ পিটিয়ে যাচ্ছে এত যন্ত্রনা । আমার চোখ দুটো কোন রকমে খুললাম । দর দর করে দুই চোখ দিয়ে জল পড়ছে , জ্বলছে হু হু করে । এখন দিন না রাত কিছুই বুঝতে পারছি না । আমার মন্দিরের বাইরে থেকে অপহরণ হবার পর কত সময় পেরিয়ে গেছে তাও বুঝতে পারছি না । এটা কি মন্দিরের ভিতর না অন্য কোন স্থান ? আমি কোন মতেটেনে হিঁচড়ে উঠে দাঁড় করলাম আমার শরীরটাকে । অন্ধকার এখন চোখে সয়ে এসেছে তাই এদিক ওদিক আবছা দেখতে পাচ্ছি । চোখের সামনে যেটা দেখলাম তাতে হার হিম হয়ে যাবার জোগাড় ! আমি এতক্ষণ কালভৈরবের মূর্তির নিচেই পড়ে ছিলাম । তার মানে এটা মন্দিরের গর্ভগৃহই ! সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুর্তির ভয়াল রূপ দেখে যে কেউ ভিমরি খাবে । অসিতাঙ্গ ভৈরবের বিশাল এক কালো কষ্টি পাথরের মূর্তি । যার ছয়টি হাতে বিবিধ অস্ত্র সুসজ্জিত আর একটি হাতে তিনটি অসুরের মুন্ড ধরা । তবে কি পাপিয়াকে আর আমাকে শেষ করে দিতেই এই রহস্যময় বন্ধ মন্দিরে নিয়ে এসেছে ওই অঘোরীর প্রেত ? কালভৈরব কি আমাদের রক্ষা করবেন ? না ওই অঘোরীর প্রেত জিতে যাবে ? 


নিজেকে বড্ড বেশি অসহায় লাগছে রাজার । আসেপাশে বাইরে যাবার কোন রাস্তাই দেখা যাচ্ছে না । এদিকে পাপিয়া ও বেপাত্তা ! মেয়েটা কোথায় গেল ? আর যে সাধুটা রাজাকে তুলে এনেছিল মন্দিরের ভিতরে সেই বা কোথায় গেল ? এদিকে ওদিকে দেখতে দেখতে একটা চৌকো গর্তের মত দেখতে পেলো রাজা । ঝুঁকে দেখে রাজা বোঝে এটা একটা নিচে পর্যন্ত যাবার রাস্তা । ওটার সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কিছুক্ষণ পর রাজা একটা কুল কুল করে শব্দ শুনতে পায় । মানে কাছাকাছি গঙ্গা বইছে তারই জলের শব্দ আসছে । সিঁড়ি যেখানে শেষ হয়েছে তার আসে পাশে বড় বড় পাথরের চাই । আর সেগুলো পেরিয়ে ঘন জঙ্গলের মত , তার পাশে বইছে গঙ্গা । এদিক ওদিক দেখতে দেখতে রাজা দেখে পাপিয়া মাটিতে পড়ে আছে যেন ঘুমন্ত অবস্থায় আছে। ওর পাশে জ্বলছে একটা ধিকধিকে আগুন । রাজা এগিয়ে যাচ্ছিলই তখনই সে দেখলো একটা জটাজুটোধারী প্রায় নগ্ন অঘোরী যার সারা শরীরে ধারণ করা আছে অজস্র রুদ্রক্ষর মালা । ওই মালা মাথার জটা থেকে নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত নেমে এসেছে । লোকটার কিন্তু ছায়া মাটিতে পড়ছে না তার মানে এ কোন জীবিত ব্যক্তি তো নয় ! হাতে একটা খড়্গ আর একটা পাত্র । রাজা দেখলো এই প্রেতের সঙ্গে একা পারা সম্ভব নয় । প্রেত ওই আগুনের হোমকুণ্ডের মত কিছু একটা তার কাছে বসে কিছু দুর্বোধ্য শব্দ উচ্চারণ করতে লাগলো । মানে এ কিছু আচার অনুষ্ঠান করে তবেই পাপিয়াকে মারবে । রাজা লুকিয়ে লুকিয়ে এদিকে ওদিক দেখতে লাগলো যদি মন্দিরের প্রধান দরজা পর্যন্ত পৌঁছানো যায় ? ওখানে নিশ্চই ছোটকা , মাধবদা ওকে খুঁজছে ? কারণ ওকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না আর এখন মনে হচ্ছে বেশ রাত হয়ে গেছে । না মন্দিরের গোপন রাস্তা দিয়ে নেমে যে এলাকায় পৌঁছেছে রাজা সেটা মূল প্রবেশ দরজার কাছে নয় । ও আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে মন্দিরে । তার পর ঘুরে ঘুরে মূল প্রবেশ দরজাটা আবিষ্কার করে ফেলে । কিন্তু হাজার ধাক্কা দিয়ে , চিৎকার করেও কোন লাভ হয়না । কোন শব্দ বাইরে পর্যন্ত যায় না কোন জাদুবলে । অথচ মাধবদার গলার আওয়াজ পাচ্ছে রাজা ভেতর থেকে । রাজা বুঝে যায় সব মায়া বলে তৈরি করে রেখেছে ওই অঘোরীর প্রেত । রাজা বোঝে এই লড়াই তাকে একাই লড়তে হবে । নিজেকে বাঁচাতে আর পাপিয়াকে বাঁচাতে । সময় নেই হাতে , যখন তখন পাপিয়াকে শেষ করে দেবে ওই শয়তান । তবে ভূত প্রেত কে জব্দ করতে যে পারে ... তাদের লাগাম টেনে রাখতে যে পারে সেই শিবসম্ভু তো আছে ? রাজার শেষ আশা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আসিতাঙ্গ ভৈরব । দীর্ঘদিন পুজো বন্ধ হয়ে থাকা ভৈরবের মূর্তির সামনে বসে রাজা একাগ্র ভাবে ডাকতে থাকে ভৈরবকে । সে বলে , এই অধম কোন মন্ত্র , তন্ত্র আচার , আচরণ জানে না প্রভু । শুধু মন থেকে প্রার্থনা জানাই ... কালভৈরব কাল বা সময়ের শাসক তাই যা প্রেত , যা ভূতপূর্ব তাকে আপনি ধ্বংস করুন । ওই অঘোরীর সমন্ধে আমার জানা নেই । সে কেন কীভাবে এই মন্দিরের পুজো বন্ধ করে রেখেছে তাও আমি জানিনা । শুধুমাত্র জানি যে এই প্রেত পাপী ।  এ কোন গোপন ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে । আপনি ছাড়া আর কারো সাধ্য নেই যে এই খেলা বন্ধ করে । তাই আপনি একে নিজে এসে ধ্বংস করুন না হলে আমার আর পাপিয়ার মৃত্যুর দায় আপনি নিন । রাজা এই পর্যন্ত বলে নিজের মাথা ঠুকতে শুরু করে ভৈরবের ওই কষ্টি পাথরের মূর্তিতে । রাজার মাথা ফেটে যায় , রক্ত বের হতে থাকে । এক সময় রাজা রক্তক্ষরনের ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । তার পর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ছোটকা , মাধবদা সবাই দেখে চারদিকে ঘোরে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে , শনশন করে জোর বাতাস বইছে , আকাশ বাতাস কাঁপানো বাজ পড়তে  লেগেছে কর কর শব্দ করে । এদিকে অঘোরীর প্রেত ও আভাস পায় কিছু একটা অত্যাশ্চর্য ঘটতে চলেছে । তার অগ্নিকুন্ড নিভে যায় । শান্ত গঙ্গা যেন নিমেষে ফুঁসতে শুরু করে । দু কুল ছাপিয়ে জলের ধারা এগিয়ে আসে আর প্রেতের তো গঙ্গা স্পর্শ চলে না । অঘোরী একটা বট গাছে উঠে যায় দ্রুত । তার সামনে থেকে পাপিয়ার অচেতন শরীরটা গঙ্গার জোয়ার টেনে নিয়ে যায় নদী গর্ভে । তার পর গাছের আসে পাশে গুম গুম করে শব্দ শুনতে পায় অঘোরী । যেন ভারী কিছু চলার জন্য একটা সাময়িক ভূমিকম্প সৃষ্ট হয়েছে । অঘোরীর চোখে পড়ে বিশাল ভৈরব মূর্তিটা যেন জীবন্ত হয়ে গেছে আর এগিয়ে আসছে তারই দিকে । অঘোরী জানে ভৈরবের থেকে লুকিয়ে থাকা সম্ভব নয় । তিনি কাল , তিনি শক্তি । অঘোরী নেমে আসে গাছ থেকে গঙ্গার জল না থাকলেও জল ছোঁয়া মাটিতে পা রাখতেই পা দুটো জ্বলতে শুরু করে তার । সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আসিতাঙ্গ ভৈরবের কষ্টি পাথরের মূর্তিটা । পলকে ওটা পরিবর্তন হয়ে গেল রুদ্রদেবে । তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত, সর্বকারণের কারণ; তিনি স্ব-স্বরূপে বর্তমান, সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি; তিনি তুরীয়, অন্ধকারের অতীত, আদি ও অন্তবিহীন। তার দুই চোখে ক্রোধাগ্নি , হাতে অস্ত্র পাশুপতাস্ত্র, ত্রিশূল, পরশু ও পিণাক । অঘোরীর আর সাধনা পূর্ন হবে না । ওই ছেলেটা পেরেছে আসিতাঙ্গ ভৈরবকে জাগাতে । সহস্র বলির দুটি অবশিষ্ট রয়ে গেছে তার । তার কাল হয়ে রুদ্র এসেছেন । এবার আর এই মন্দির বন্ধ থাকবে না । মরণকে সামনে পেয়ে সে শেষ বারের মতো উচ্চারণ করে 

অজং শাশ্বতং কারণং কারণানাং

শিবং কেবলং ভাসকং ভাসকানাম্।

তুরীয়ং তমঃপারমাদ্যন্তহীনং

প্রপদ্যে পরং পাবনং দ্বৈতহীনম্।


কুঠার নেমে আসে ছায়া মূর্তির উপরে । হওয়ায় মিলিয়ে যায় অঘোরীর প্রেত । ক্যাচ করে মন্দিরের বহু যুগ ধরে বন্ধ কবাট খুলে যায় । হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে যায় মাধব আর ছোটকা । দেখে মন্দিরের ভিতরে অজস্র ধুলো ,পোকা , মাকড়সার ঝুলের মধ্যেই বিকট কালভৈরব মূর্তির পায়ের কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় রাজা পড়ে আছে । মন্দির থেকে তাকে উদ্ধার করে লোকাল স্বাস্থ্যসেবা সদনে নিয়ে যাওয়া হয় । তার কপালে ছয়টা সেলাই পরে । প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় রাজার জ্ঞান ছিলো না আবার ধুম জ্বরও এসেছে । রাজাকে বুবাইয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় । এদিকে বুবাইয়ের বাড়ি গিয়ে সবাই অবাক ! যাকে খুঁজতে গিয়ে এত কান্ড তাকে নাকি লোকাল লোকজন পাশেই গঙ্গার পাড়ে পেয়েছে । পাপিয়া এখন সুস্থ তবে সে গঙ্গার পাড়ে ওভাবে কি করে পৌঁছছে তা ওর অজানা । রাত জেগে বুবাই এর মা রাজার সেবা করে । সকালে রাজার জ্ঞান ফিরে এলে সবাই দেখে ওই কপালের সেলাই করা জায়গাটা যেন ত্রিশূলের আকার ধারণ করেছে । এর মধ্যে চার্লি কাকা এসে রাজাকে জড়িয়ে ধরে খুব ধন্যবাদ জানায় । রাজা তো অবাক হয়ে যায় কারণ তার কিছুই মনে নেই । চার্লি কাকা বলে , দেখ বৌদি কপালে এই ত্রিশূল চিন্হ ... কালভৈরবের মন্দির খুলে গেছে আর তার চাবি আর  কেউ না এই ছেলেটা । অঘোরীর প্রেত কে বিনাশ করেছে আসিতাঙ্গ ভৈরব আর ভৈরব কে জাগিয়েছে এই রাজা । সেই জন্যই তো এর কপালে নিজের চিন্হ রেখে গেছেন ভৈরব । রাজা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । শেষে জিজ্ঞাসা করে পাপিয়া কোথায় ? তার পর দেখে পাপিয়া কাঁচের গ্লাসে এক গ্লাস দুধ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে । 



সমাপ্ত










Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama