STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Romance Thriller

4  

Apurba Kr Chakrabarty

Romance Thriller

অজানা পথে পর্ব -৪

অজানা পথে পর্ব -৪

3 mins
283

বেলা তখন নটা চল্লিশ বিনয় খুব উদ্বিগ্ন হয়ে বর্ধমান চার নম্বর প্লাটফর্মে ময়নার কথা মত অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ তার মোবাইল ফোনে রিং বাজতেই বিনয় ধরল।অন্য প্রান্ত থেকে ফোনে ময়নার কথা শোনা গেল,

"আপনি এখুনি যেকোন ট্রেন ধরে পালান। নচেৎ বিপদে পড়বেন।"


"তোমার খবর কী!কোথা থেকে বলছ!"


"আমার কথা ছাড়ুন, আমি মরি বাঁচি কিছুই এসে যায় না।"


"তুমি কি কোন সমস্যায় পড়েছ!"


"আমার কোন সমস্যা নেই,আমি তো মরেই আছি আর কীসের ভয়।" বলেই ফোন কেটে দিল।


বিনয় বুঝল বেশ সমস্যার মধ্যেই সে আছে মনে হচ্ছিল কেউ বা কারা তাকে নজর করছে।

বিনয় আর অপেক্ষা করেনি।সামনে ট্রেনে উঠে পড়ল।কর্ড লাইন হোক, ময়না যে বলল,তার আর স্টেশনে থাকা নিরাপদ নয়!বিপদ হতে পারে তা চেয়ে বরং ট্রেনে চেপে শক্তিগড় পর্যন্ত যাই। তার পর নির্ধারিত মেন লাইন ট্রেন শক্তিগড়ে বদল করে ব্যান্ডেল হয়ে নৈহাটি সেখানে ট্রেন ধরে কৃষ্ণনগর চলে যাব।


নিজের কথা ভাবা তার খুব দরকার তার মা মরা ছেলেটার জন্য। তাই আর বর্ধমান স্টেশনে দাঁড়ায় নেই। কিন্তু ময়না মেয়েটার জন্য তার মনের মধ্যে ভীষন উদ্বিগ্নতা যেন গ্রাস করেছিল। মেয়েটার আবার কোন বিপদ হল না তো! রাতে সব ঘরে আবার গোপনে সি সি ক্যামেরা বা অডিও টেপে তাদের সব কথা আবার রেকর্ড হয় না তো!


গোলমেলে হোটেল, আবার পুলিশের সাথে যোগাযোগ আছে।এরা সব গভীর জলের মাছ। এতে রাজনৈতিক নেতা জড়িত থাকে।শহরের নামী দামী সচ্ছল ঘরের বৌ স্বামীরা পদস্থ অফিসার বা কর্মী যেমন থাকে তেমন উচ্চ শিক্ষিত ঘরের কত সব তথাকথিত অভিজাত্য ঘরে ইউনিভার্সিটির বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের উপার্জনের পথ।সেই সঙ্গে পুলিশ হোটেল মস্তান যোগ, ও তাদের রক্ষাকর্তা কত সব রাজনৈতিক নেতা জড়িত। এইসব কীর্তি ফাঁস হবার ভয় থাকলে ওরা মানুষ খুন করতে পারে । চরম নির্যাতন করতে পারে ।গোপন ঘরে এই নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে মরতে পারে আত্মহত্যা করতে পারে ।সে ক্ষেত্রেও তার মৃত শরীর গুম করে দিতে পারে ।এমন এদের লবির জোর আর নেটওয়ার্ক। 


বিনয় কিছুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিল না। সেই তো ঐ মেয়েটার যত বিপদের কারণ আর সে এখন ওকে একা বিপদের ফেলে কাপুরুষের মত পালাবে!নিজের প্রতি চরম ধিক্কার দিচ্ছিল। 

অজানা শত্রুর বাসায় থাকা আবার বোকামি ঠিক কী সিদ্ধান্ত সঠিক,তা নিতে মাথায় এই মুহূর্তে যেন কাজ করছিল না।


একটা সময়ে নেশার ঘোরের মত বিনয় শক্তিগড় সেখান থেকে ব্যন্ডেল নৈহাটি হয়ে দুপুর তিনটের পর কৃষ্ণনগরে তার বাড়ি পৌঁছানোর পর নিজের নিরাপত্তার সুনিশ্চিত হলেও মনের মধ্যে একটা চরম দুশ্চিন্তা আর অস্বস্তি বোধ ছিল।


মায়না তার আসল পরিচয় না দিক তার ব্যাবহার তার নম্রতা ভদ্রঘরের মেয়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না সে বাধ্য হয়ে এই যন্ত্রণাময় জীবন থাকছে। সে কিন্তু এ নরক জীবনে অভ্যস্ত নয় ।নেহাত পেটের জ্বালা আর মালিক মস্তান দের ভয়ে থাকতে হয়। তাই তো একদিনের পরিচয়ে সে তার কাছে আশ্রয় পেয়ে পুত্রের কেয়ার টেকার হতে রাজী! না ছিল কামনা বাসনা, না কোন বেতন বা ভবিষ্যত সুরক্ষার নিশ্চয়তা। 


বাড়ি ফিরে বিনয় স্নান করল। কিছুই খেতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। মনটা খুব খারাপ একা একা কেমন বুকচাপ লাগছিল ।বিকালে শ্বশুর বাড়িতে গেল ছেলেটাকে নিয়ে আসবে। এখন স্ত্রীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়ি যেতে তার বুকটা ফেটে যায়।যার জন্য এই সম্পর্ক সেই আজ নেই।ছেলেটার জন্য একটু যোগাযোগ রাখতে হয়।বিনয়ের মা বাবা জীবিত নেই ।বিনয় বাবা মায়ের সব চেয়ে ছোট ছেলে। একটু বেশী বয়সের সন্তান ।চার দাদা দিদি চার দিকে ছড়িয়ে তেমন আর যোগাযোগ নেই। বাড়ির সমান্য জমি সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিরাট সব নিজেদের মধ্যেই অশান্তি। যে যার মত থাকে।দাদা মিলিটারীতে দুরে দুরে তার পোষ্টিং,এখন যে দাদা কোথায় আছে বিনয় তাই জানে না।দুই পুত্র কন্যা আর স্ত্রীকে নিয়ে সুখেই আছে। দুই দিদিদের একই অবস্থা মিলিটারি নয়, প্রাইভেট চাকরী দুজনেই একই জায়গাতে থাকে ।দুই বন্ধুর সাথে দুই বোনের বিয়ে হয়।বিনয় রাজ্য সরকারের পুলিশ বিভাগে থাকে। তবে তার কাজ একটু অন্য রকম গোয়েন্দা বিভাগে আছে।


ছেলেকে নিয়ে কাটোয়া থেকে বিনয় পরদিন কৃষ্ণনগর ফিরেছিল। স্থানীয় এক আধ বুড়ী মহিলা ছেলের দেখভাল করে।বিনয়ের সমস্যা তার চাকরীর কোন ডিউটির নিয়ম নেই।কখন খুব হালকা, কখন খুব জটিল বাইরে থাকতে হয় দিনের পর দিন ।সেই সময়ে ছেলেকে শ্বশুর বাড়িতে রাখা ছাড়া উপায় নেই। বাড়ি চাবি দিয়ে ছেলেকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসে।


দিন তিনেক পর রাত তখন দশটা।কাজের মাসী রাত আটটার পর বাড়ি চলে যায়।এত রাতে ময়নার ফোন !

বিনয় ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে বলে "ময়না কেমন তুমি আছো!"


"আছি এক রকম, আমি কৃষ্ণনগরে স্টেশনে একটু গাইড করবেন আপনার বাড়ি ঠিক কোন দিকে!"


"আমি কী স্টেশন যাব!"


              ক্রমশ



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance