অজানা প্রেমের গল্প
অজানা প্রেমের গল্প
সব প্রেম হয়তো বিছানায় সিমাবদ্ধ থাকে না। কিছু প্রেম হয়তো বিছানার থেকে অনেক দূরে কিন্তু হৃদয়ের অনেকটাই কাছে থাকে, সেরকমই একটি প্রেমের গল্প আজকে বলতে চলেছি আপনাদের। সুদর্শন আর কাজলের গল্প। তাহলে এবার আসাযাক মূল গল্পে।
একই পাড়াতে বড়ো হয়ে ওঠে সুদর্শন আর কাজল একদম ছোট বয়স থেকেই একই সাথে তাদের সব কিছু, সব কিছু বলতে স্নান, পড়াশুনা, খাওয়া - দাওয়া, খেলা ধুলা সবটাই। অর্থাৎ তারা একে অপরের সাথে সাদা কাগজের মতো পরিষ্কার তবে যখন লজ্জা নামক বস্তুটির সাথে তাদের পরিচয় ঘটলো তার পরথেকে নিজেদের একটু সচেতন করেতুলেছিল দুজনায়। বলা চলে যখন কাজলের প্রথম মাসিক দেখাদেয় তখন থেকে তার নিজেদের একটু গুটিয়ে নেয়। তবে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে পেরেননি সয়ং যমরাজ। প্রেমযে এতটা গভীর হতে পারে এদের গল্প না শুনলে উপলব্দি করতে পারবেন না। কাজল সুদর্শনের চাইতে দুই বছরের ছোট ফলে একজন উচ্চমাধ্যমিক আর একজন মাধ্যমিক দেবে। ততদিনে তারা হয়তো বুঝে ফেলেছিল তারা একে অপরকে ভালোবাসে। কোন একদিন দুজনে দুজনার মনের কথাও একে অপরকে জানায়। তারপর পড়াশুনার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও করতে থাকে তারা। দেখতে দেখতে সুদর্শন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে আর কাজল উচ্চমাধ্যমিকের দোর গোরায় এসে পৌঁছায়। কাজলের পরীক্ষা মাত্র একমাস বাকি হঠাৎ তার দারুণ জ্বর। ডাক্তার ঔষধ কিছুতেই কিছু হয় না। অবশেষে কিছু টেষ্টের পর ধরাপরে কাজল ব্লাডক্যান্সারের আক্রান্ত। সময় খুব একটা নেই তার হাতে। বিষয়টা সুদর্শনের কানে পৌঁছায়। সুদর্শন কাজলকে বুকে জড়িয়ে বলে তোরজন্য আমি কি করতে পারি? কাজল বলে বিয়ে করবি আমাকে। সুদর্শন বলে এটুকুই চল আজি তোর বাড়িতে কথা বলবো। কাজল বলে না কাওকে কিছু জানাবার দরকার নেই তুই ঠাকুরের সামনে আমার মাথায় একছিটা সিন্দুর দিলেই আমার শান্তি। সুদর্শন বলে আমি তোকে কোথাও যেতে দেবনা আর যেতে হলে আমিও তোর সাথে যাবো এই আমি তোকে কথা দিলাম। কাজল সুদর্শনের মুখ চেপেধরে বলে এধরনের কথা বলবিনা কখনো তোকে অনেকদিন বাঁচতে হবে। সুদর্শন বলে তোকেছাড়া আমার অস্তিত্ব কি? কাজল বলে তোকে থাকতে হবে আমার তোর সকলের পরিবারের জন্য। বিষয়টাকে এরিয়ে গিয়ে সুদর্শন বলে সময় আসলে দেখা যাবে এখন চল তোকে বিয়ে করবো। কাজল বলে ধুস আমিতো মজা করছিলাম যতদিন আছি তুই সুধু আমার পাশে থাকিস। সুদর্শন বলে আমি সত্যি বলছি আমি তোকে বিয়ে করবো আর একটা কথা তোকে বলে রাখছি যমেরো ক্ষমতা নেই আমাদের আলাদা করে। তারপর তারা একটা মন্দিরে মায়ের সামনে সুদর্শন কাজলের মাথায় সিন্দুর পড়িয়ে দেয় কাজল বলে আমার আর মরতে কোন ভয় নেই বন্ধু।
দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে যায়। সময়ের সাথে সাথে কাজল দূর্বল হয়ে পড়তে থাকে। হসপিটালে ভর্তি করা হয় তাকে। দিন রাত এক করে সুদর্শন পড়েথাকে হসপিটালে। অবশেষে ডাক্তাররা বস্যতা শিকার করে নেয়। কাজলের বাবা ঔষধ আনতে গিয়েছিলেন মা সকালে বাড়িতে গিয়েছেন প্রায় পাঁচদিন পর। তিনি কাজলের জামাকাপড়গুলোকে ওয়াস করে বিকালে নতুন কাপড় নিয়ে ফিরবেন। দুপুর তখন বারোটা দশ ডাক্তার কাজলের বাড়ির লোককে ডেকে পাঠায়। তখন সেখানে সুদর্শন একা। কাজলের বাবাকে একটা ফোন করে সে পৌঁছায় কাজলের কাছে। হাতটা বাড়িয়ে দেয় কাজল। সুদর্শন তার হাত বাড়িয়ে কাজলের হাতটা ধরে। কাজল চেপে ধরে সুদর্শনের হাত একটা গভীর কষ্ট, সব কিছু ছেড়ে যাবার মর্মান্তিক অনুভূতি। কিছু বলতে চায় সে কিন্তু দু চোখবেয়ে জল ছাড়া কিছুই আসেনা। সুসর্শনের হাতটাকে দু হাতে চেপে ধরে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয় কাজল। এক ছায়া মূর্তির মতো কাজলের হাত ধরে বসে আছে সুদর্শন। মেশিনের স্কেল সমন্তরাল হয়ে যেতে নার্স ডাক্তারকে ডাকে ডাক্তার ছুটে এসু সুদর্শন কে সরতে অনুরোধ করে, কোন সারা মেলেনা। নার্স তাকে সরাতে যেতে পড়েযায় সুদর্শন। ডাক্তার চেক করে দেখে সুদর্শন আর নেই ইতিমধ্যে কাজলের বাবা উপস্থিত হয় সেখানে। ডাক্তার তাকে সবটা জানিয়ে বলে ছেলেটির বাড়িতে একটা খবর দিন।
হসপিটাল থেকে দুটো বডি বার হয়। তাদের পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় এদের দাহ করবেনা তারা। কাজলদের বাড়ির পূর্ব প্রান্তে বেশ কিছুটা ফাঁকা স্থান রয়েছে সেখিনেই সমাধিস্থ করাহয় দুজনকে। তার উপর লাগান হয় একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। পরিবারের গুরুজনেরা সকলেই চলে গিয়েছে কিন্তু ঐ গাছটি আজো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সুদর্শন আর কাজলের প্রেম গাথাকে আজও বয়ে চলেছে সে। গ্রামের বহু মানুষ আজও ঐ গাছটিকে দেখিয়ে সুদর্শন আর কাজলের প্রেমের গাঁথা শোনায় নতুন জেনারেলের ছেলে - মেয়ে দের।

