Rima Goswami

Romance Others

3  

Rima Goswami

Romance Others

অবশেষে প্রেম পেলাম

অবশেষে প্রেম পেলাম

8 mins
218


একটা প্রেমের গল্প বলবো শুনবেন ? না না শুনতেই হবে আমার ফাঁদে পড়ে বগা কাঁদে টাইপের গল্প । তো আমার পরিচয় দিয়েদি প্রথমে । আমি কল্যাণী মুখোপাধ্যায় , বয়স ষাট , সদ্য রিটায়ার করেছি পূর্তভবন থেকে । আচ্ছা এত অধৈর্য হলে চলে বলুন ? এটা ভাবছেন তো যে বুড়ির আবার প্রেমের গল্প কি হতে পারে ? বুড়ো বয়সে ভীমরতি । না না তেমন কিছু না বুঝলেন । বুড়ো বয়সে প্রেমের কথা বলছি না , বলছি অনেক বছর আগের কথা । না না তার জন্য ফ্ল্যাশব্যাকে যাবার ও প্রয়োজন নেই একদম । একটু রোসো সব বলছি । তো আমরা কোথায় ছিলাম ? হ্যাঁ আমি কল্যানী কলকাতার মেয়ে , না না সরি বুড়ি আর বর্ধমানের নিবাসী । কর্তা দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় আর একটি মেয়ে মনিমালাকে নিয়ে সংসার । তো কি হলো দুম করে মেয়ের মাস্টার্স করতে করতেই বিয়ে হলো লন্ডনে । ছেলে আকাশদীপ ইঞ্জিনিয়ার , সপরিবারে ওখানেই থাকে । ছেলের বাবা অসুস্থ হওয়ায় বিয়ে দিতে বা পাকা কথা কোনটাতেই আসতে পারেননি তাই বেয়ান ও জামাই দেখেই মেয়েকে বিয়ে দিলাম । মেয়ে চলে গেল শশুড়বাড়ি লন্ডনে । মেয়ের বাড়ি কর্তা ঘুরেও এলেন একা আমার সঙ্গে যাওয়া হয়নি কারণ তখন রিটায়ারের মুখোমুখি এসে কামাই করতে চাইনি । কর্তার তো অখন্ড অবসর কারণ উনি বছর দুই আগেই রিটায়ার্ড । কর্তা মানে দেবাশীষ লন্ডন থেকে ফিরেই তো আমাকে খুব হম্বিতম্বি করলেন যে পুরো পরিবারের মুখ না দেখে আমি কেন বিয়ে দিলাম মেয়ের ? আমি বুঝলাম না কি হলো ! মেয়ে তো কোনদিন কোন অভিযোগ করেনি তাহলে ? আর দেখিনি মানে কি ? এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হলো যে বেয়াইকে দেখার জন্য সুযোগ হয়নি । আর সত্যি বলতে উনিও ভিডিও কল বা ফোনে যোগাযোগ করেননি আমারও করা হয়নি । তার জন্য দেবাশীষ এত রাগ করছে কেন ? বুকটা মুচড়ে উঠলো তবে কি মেয়েটা আমার বিদেশ বিভুঁই তে গিয়ে ...


দেবাশীষ তো আর কিছুই বললো না খুলে । তবে বুঝলাম বেয়াই তার পছন্দ হয়নি । মেয়ে মনিকে ফোন করলাম ও কিন্তু হেসেই উড়িয়ে দিলো । বললো বাবার সবেই বাড়াবাড়ি । আমি বুঝলাম মাঠে নামতে হবে আমাকেই । মে মাসে রিটায়ার করেই দেবাশীষকে বললাম চলো লন্ডন যাবো । উনি তো বললেন মেয়ের শশুড়বাড়ি যাবার নাকি প্রশ্নই ওঠে না । আমি কি অসহায় ? একাই ফ্ল্যাইট নিয়ে পৌঁছে গেলাম মেয়ের বাড়ি । টেমস নদীর কাছেই মনিদের আবাসন । পৌঁছেই এতদিন না দেখতে পারার সব কষ্ট ঝরে পড়লো মেয়েকে বুকে জড়িয়ে । বেয়ান আর জামাই সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে আমাকে ভিতরে প্রবেশ করালেন । তবে সেই ব্যক্তিটি কোথায় মেয়ের ছুতোয় যাকে দেখতে এলাম এত দূর ? মেয়েতো পাগলের মতো বকেই যাচ্ছে , ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফ্ল্যাট দেখাচ্ছে । তারপর একটু কফি খেতেই বেয়ান বললেন অনেক দূর থেকে এসেছি তাই একটু রেস্ট করে নেওয়া দরকার । কথাটা ঠিক শরীর আর টানছে না তবে সে কোথায় যাকে দেখতে এলাম ? বেয়ানকে জিজ্ঞাসা করলাম বেয়াইকে দেখছি না । বেয়ান বললেন উনি রুটিন চেকআপে গেছেন কাছেই সেন্ট পিটার্স হসপিটালে । সেখান থেকে ফিরবেন সেই বিকালে । আমি গেস্ট রুমে ঢুকে পড়লাম । চেঞ্জ করে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে যখন উঠলাম সূর্যদেব পাটে বসেছেন । ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি , আকাশ এখনো গাঢ় নীল । পশ্চিম দিগন্তে লালিমার ছড়াছড়ি । কমলা একটা মায়াবী আলোয় ভরে গেছে সারা পৃথিবী । ব্যালকনি থেকেই টেমস দৃশ্যমান । ঝিরঝির করে হওয়া বইছে লন্ডনের বুকের উপর । কেমন যেন হারিয়ে গেছিলাম এই একান্ত সময়ে । সম্বিৎ ফিরলো মেয়ের ডাকে । মেয়ে দরজা পিটিয়েই যাচ্ছে অনবরত । দরজা খুলে দিতেই ভিতরে ঢুকে গেল মনি । কলকল করে উঠলো , এত ডাকছে তবু কেন দরজা খুলছি না । খাওয়া দাওয়া করতে হবে না ? সত্যি তো ! পেটে তো ইঁদুর দৌড়াচ্ছে , ভুলেই গেছিলাম । ডাইনিংয়ে এসে বসলাম , অসময়ে লাঞ্চ করা ঠিক নয় তাই ভাবলাম মেয়ে নিশ্চয়ই স্ন্যাকস কিছু দেবে । আমাকে অবাক করে দেখলাম মেয়ে এক থালা ভাত , জলের মতো পাতলা মুসুরির ডাল , আলু ভাজা আর ডিমের ডালনা দিলো । বেয়ান নাকি সন্ধ্যা জপ করছেন আর জামাই বেরিয়েছে বাবাকে হসপিটাল থেকে আনতে । মনিকে বললাম এই অসময়ে ভাত ! মনি জানালো মা আসবে জেনে সে ভাতের চাল নিয়েছিলো । শশুরের কড়া নির্দেশ এবাড়িতে ভাত নষ্ট করা চলে না । ওর শশুড়মশাই রাগ করবেন তাই আমাকে এই অবেলায় ভাত গুলো উদ্ধার করতেই হবে । খেলাম , কিছু করার নেই । বুঝলাম দেবাশীষ কেন ক্ষুদ্ধ ।


আমার মনে হলো এটা এমন কোন ইস্যু নয় যে মেয়ের বিয়ে এখানে দেওয়া যেত না । খেয়েদেয়ে বেয়ানের কাছে যাচ্ছিলাম মেয়ে বারণ করলো । ভাত খাওয়া কাপড়ে ঠাকুর ঘরে ঢোকা যাবে না । একটু বিরক্ত লাগলো তবে কিছু বললাম না । বেয়ান নাকি রোজ দুইবেলা তিন সাড়ে তিন ঘন্টা ঠাকুরঘরেই কাটান । বেয়াই নাকি ঠাকুরের পুজোয় কোন অবহেলা পছন্দ করেন না । নিজের ঘরে ঢুকতেই যাবো এমন সময় কলিং বেলের শব্দ । মনি মনে হয় রাতের ডিনারের জন্য কিচেনে ছিলো । আমি দরজাটা খুলে দিলাম । দরজা খুলে সামনে যাকে পেলাম তাকে দেখে আমি ফিরে গেলাম পঁয়ত্রিশ বছর আগে ....


রাজদীপ কলেজের ইউনিয়নের লিডার । আমার বা আমার মত বহু মেয়ের ক্র্যাশ । গম্ভীর স্বভাবের ছেলে তবে কলেজের জন্য খুব খাটে , রেজাল্ট ও ভালো । মন দিয়ে ফেলেছিলাম একটু একটু করে । তখন তো হাতে হাতে মোবাইল ফোনের রমরমা ছিলো না যে টুক করে একটা ছবি তুলে নেবো প্রাণপুরুষটির । মনের ক্যামেরাতে বন্দি করেছিলাম তাকে । এত পাগল ছিলাম ওর জন্য যে ..যেদিন যেদিন রাজদীপকে দেখতাম ক্যালেন্ডারে লাভ চিহ্ন দিয়ে রাখতাম । এভাবেই কেটে গেল তিনটে বছর । এর মধ্যে রাজদীপ ও শুনেছিলাম ভালো চাকরি পেয়েছে । বাবাকে লজ্জার মাথা খেয়ে বলেছিলাম রাজদীপের বাড়ি সমন্ধ নিয়ে যেতে । রাজদীপের কাছে বলার সাহস ছিলোনা যে ওকে ভালোবাসি । বাবাকে ধরেবেঁধে পাঠালাম ওর বাড়ি । বাবা ফিরে এলো থমথমে মুখ নিয়ে বললেন বিয়ে পাকা করেই এসেছেন উনি তবে রাজদীপের সঙ্গে নয় , আমার জামাইবাবুর ভাইয়ের সঙ্গে । কেন ? কোন উত্তর দিতে বাবা পারেনি সেদিন । হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলো । হাতদুটো ধরে বলেছিলো আমি একদিন বুঝবো বাবার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না । দিদির কাছে শুনেছিলাম রাজদীপ আর ওর পরিবারের লোকেরা কুকুরের মত তাড়িয়ে দিয়েছিল বাবাকে । কারণ আমরা জাতে মুচি । সেই রাগ থেকে বাবাও জামাইবাবুকে অনুরোধ করে দিদির সাথে তার প্রেমের বিয়ে হলেও এবার বাবা নিজে ইচ্ছুক ওনার ছোট মেয়েকে এই বাড়িতে বউ করে পাঠাতে । দিদি ব্রাহ্মণ ছেলে বিয়ে করেছিল আর বাবা রাজদীপের বাড়িতে জাতের কারণে অপমানিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন মেয়ের বিয়ে তিনি এবার ব্রাহ্মনের ছেলের সঙ্গে দেবেন । আমার অমতে বিয়েটা হলো , মানা করতে পারিনি কারণ কার জন্য মানা করতাম ? সে তো আমাকে বিয়ে করতে রাজি না কারণ আমি মুচি । তারপর আর রাজদীপের খবর রাখিনি , দেবাশীষকে বিয়ে করে কলকাতা থেকে বর্ধমান শিফট করে গিয়েছিলাম । এর মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে । মেয়ে হয়েছে , দেবাশীষ আমার প্রেম হয়েছে কি না জানিনা তবে রাজদীপকে ভুলে গেছি । বাবা গত হয়েছেন , দিদি জামাইবাবু ও চলে গেছেন কয়েক বছর আগে একটা এক্সিডেন্টে । আমি ভাবতে পারিনি যার গলায় মালা দিতে আমি এতটা ডেশপারেট হয়েছিলাম একদিন আজ তারই ছেলের গলায় আমার মেয়ে মালা দিয়েছে ।


দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে রাজদীপ আমার এককালের প্রেম । সেও আমাকে চিনতে পেরেছে বুঝলাম কারণ মুখ যে মনের আয়না । তবে রাজদীপের বাইরের ব্যবহার সেটা বুঝতে দিলো না । ভিতরে ঢুকেই সে বেয়ান বলে আমাকে সম্বোধন করে আর কুশল বিনিময় করেই ভিতরে ঢুকে গেল । জামাই বললো হসপিটালের জামাকাপড় পড়ে ঘরময় ঘুরতে তার বাবা নাকি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না । জামাই ও বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল । বুঝলাম মেয়েকে বিয়ে কোথায় দিয়েছি । ইউথ লিডার হয়েও যে আমি মুচির মেয়ে বলে আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে , সে যে কতটা নিম্নমানের মানুষ সেটা দেবাশীষও দুদিন এখানে বেড়াতে এসে বুঝে গেছে । মেয়ের শশুড়বাড়ি এসে বুঝলাম এই পরিবারের কর্তাটি একটি ভীষণ কৃপণ , বদরাগী , অসভ্য , সূচিবাইগ্রস্থ মানুষ । তার ইশারায় এই পরিবারের সদস্যদের চলে । মেয়েকে আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কি এই বিয়ে শেষ করতে চায় ? তাহলে অবশ্যই সে ডিভোর্স করতে পারে আমরা আপত্তি করবো না । মেয়ে হেসে উঠলো , মেয়ে জানালো সব মানুষ তো এক হয়না । ওর শশুড় রাজদীপও না । তাকে এতদিন কেউ পরিবর্তন করতে পারেনি কারণ তারা চেষ্টা করেনি । বাধ্য হয়ে রাজদীপকে মেনে চলেছে মাত্র । তবে মনি তার শশুড়কে বদলাবে , তাকে শেখাবে পরিচ্ছন্নতা এক জায়গায় আর সূচিবাইগ্রস্থতা এক জায়গায় । হিসেবে গুছিয়ে চলা একরকম আর কৃপনতা করে চলা অন্যরকম । তাকে এই সুক্ষ পার্থক্য গুলো মনি নিশ্চই বোঝাবে আর তার জন্য মনিকে রাজদীপ মানে তার শশুরের বিশ্বাস আর ভালোবাসা অর্জন করতে হবে । এই কারণেই মনি ভুল জেনেও আপাতত অনেক বিষয়ই মেনে নেয় যেগুলো মানা হয়ত উচিতই না । আমি বুঝলাম মেয়ে বড়ই হয়নি আমার বুদ্ধিমানও হয়েছে খুব । তবে খারাপও লাগছে বাবা আমাকে এই মানুষটির হাত থেকে বাঁচিয়ে গেল আর সেই মানুষটার বাড়িতেই আমার মেয়েটা এসে হাজির হলো । হায়রে এই জন্যই সেদিন বাবা বলেছিল যে একদিন আমি বুঝবো বাবার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিলো । যাইহোক কি করবো একটা একতরফা প্রেমের গল্পর এই পরিণতি হবে সত্যি আমি বুঝতে পারিনি । বারান্দাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি কে ? কে আমার মনের দোসর এই বিশাল জীবনটাতে ? টুং করে ফোনে একটা এস এম এস ঢুকলো , দেবাশীষ মেসেজ করেছে ... আমার ডিনার হলো কি না জানতে চেয়ে । ওখানে এখন সকাল , নিশ্চই বাগানে জল দিচ্ছে ? তবুও খেয়াল আছে এখানে এখন ডিনার টাইম । কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর ভার্চুয়ালই হয় , এই যেমন আমার দোসর কে তার উত্তরটাও পেলাম । আমার মনই উত্তরটা দিয়ে দিলো আমাকে । কয়েকদিন জেলখানার মত জীবন যাপন করে মেয়ের বাড়ি থেকে বিদায় নিলাম । মেয়ে কথা দিলো পরের বার এসে আমি অন্য বেয়াইকে দেখবো । জানিনা মনি আমার মেয়ে শশুরের মনোভাব আর স্বভাব পাল্টাবে না শাশুড়ির জন্য নতুন স্বামী আনবে । তবে ফেরার সময় রাজদীপের কান ঘেঁষে বলে এলাম , ' মনে আছে বেয়াই মশাই একদিন আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অপমান করে ? কারণ আমরা মুচি । আজ সেই মুচির মেয়েই আপনার ঘরে বৌমা হয়ে এসেছে । '

বেয়াই ধীর গলায় বললেন , ' মনির বাবা কিন্তু বেয়ান ব্রাহ্মণ ' । আমি বললাম মনির জন্ম কিন্তু সেই মুচির মেয়ের পেট থেকেই হয়েছে । কথা আর বাড়লো না কারণ ফ্ল্যাইটের সময় হয়ে গেছে । আমাকে ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি কারণ এত বছর পর আমি আমার দোসরকে চিন্তে পেরেছি । দেবাশীষ আমি আসছি ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance