Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Gopa Ghosh

Drama

5.0  

Gopa Ghosh

Drama

অভিনয়

অভিনয়

7 mins
982


অটোগ্রাফের খাতা টা হাতে নিয়ে নয়ন মেয়েটির দিকে তাকায় । বছর বারো বয়স। কোঁচকানো চুল, সুন্দর করে ক্লিপ দিয়ে বাঁধা। চকচকে ত্বক, গোলাপী লিপস্টিকে রাঙানো পাতলা ঠোঁট কাঁপছে তির তির করে। বোধ হয় উত্তেজনায়। স্বপ্নের নায়ক কে কাছ থেকে দেখার একটা তীব্র উত্তেজনা তো থাকবেই। নয়ন কুমার এখন সিনেমা জগতের পয়লা নম্বর হিরো। তাকে একটিবার দেখার জন্য ভক্তদের কত না আগ্রহ। নয়নের ফান ক্লাব থেকে তার বিশাল বোর্ডের ফটো তে মালা দিয়ে মিছিল করে এসেছে প্রথম শো দেখতে । আর তাকে এত সামনে থেকে দেখে উত্তেজনা হওয়াই স্বাভাবিক। নয়ন মেয়েটির সুদৃশ্য অটোগ্রাফ বইটিতে সই করতে করতে জিজ্ঞেস করে "তোমার নাম কি? "মেয়েটি এবার ঠোঁটে হাসি এনে খুব মিষ্টি গলায় বলে,

"রিনা সেন"

এরপর আর কথা বলার সুযোগ মেলেনি। দলে দলে মানুষ ঢুকে পড়েছে হলে। সিকিউরিটি নয়নকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে তবেই নিস্তার। নয়ন এর প্রাইভেট সেক্রেটারি বিপুল গাড়িতে উঠলেই স্টার্ট নেয় গাড়ি। এই ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। নয়নের জীবনে এখন এটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আজ একটা সিনেমার প্রিমিয়ার শো ছিল। সেখানেই এই কান্ড। সামনের সীটে বসা বিপুল পেছনে ফিরে

"দাদা তুমি কি বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসবে? আর আধঘন্টা হাতে আছে সন্তানের শুটিং আরম্ভ হওয়ার।"

ঝিমুতে থাকা নয়ন এবার টানটান হয়ে বসে

"না না সোজা স্টুডিও চল, এই শুটিং সেরে আজ অনেক কাজ "

ড্রাইভার সোজা স্টুডিও রাস্তা ধরে। বিপুল অনেকদিন ধরেই নয়নের কাছে কাজ করছে। আসানসোলে বিপুলের বাড়ি। অভাবের সংসার। এখন কলকাতায় মাকে এনে রেখেছে বিপুল। মা আর ছোটো বোন লতা ওর জগৎ। বোনের পড়াশুনা শেষ হলেই ওর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে বলে কথা দিয়ে রেখেছে নয়ন। লতার গানের গলা শুনে এক সঙ্গীত পরিচালক তো সেদিন বলেই ফেললেন

"বাহ, খুব মিষ্টি তো তোমার গলা, দাদা কে বলো আমার সাথে পরে যোগাযোগ করতে"

লতার তো আনন্দে কিছুক্ষণ কথাই বেরোলো না। কতদিনের স্বপ্ন গান গাওয়ার। তাও কাঁপা কাঁপা গলায় জানালো দাদা এলেই জানাবে। বিপুল পরে সব শুনল কিন্তু কোনো উত্তর দিল না। লতা খুব নিরাশ হলো কিন্তু বিপুলকে দ্বিতীয় বার আর বলল না। আসলে লতা জানে বিপুল যা করবে সেটা ওর ভালোর জন্যই। ও এটাও জানে বিপুলের মতো দাদা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

নয়নের গাড়ি স্টুডিও পৌছতেই সহকারি পরিচালক রবিদা ছুটে আসে। নায়ক যতক্ষণ শুটিংস্পটে না পৌঁছায় ততক্ষণ সবই অনিশ্চিত। আর নয়নের মতো এক নম্বর নায়ক এর তো কথাই নেই।নয়ন সোজা মেকআপ রুমে গিয়ে ঢোকে। খুব বেশিক্ষণ সময় লাগে না । এবার দৃশ্য বোঝার পালা। রবিদা তার ফাইল হাতে নিয়ে হাজির হয় নয়নের কাছে। এই সিনেমায় নয়ন এক বিধবার সন্তান। নাম প্রীতম। খুব ছোটবেলায় বাবা মারা যান এক দুর্ঘটনায়। মা সরলা খুব বেশি লেখাপড়া না জানায় কয়েকটি বাড়িতে রান্নার কাজ করে মানুষ করে প্রীতমকে। পড়াশুনায় মেধাবী প্রীতম এখন চব্বিশ বছরের যুবক।। মা অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে বর্তমানে এক জটিল অসুখে শয্যাশায়ী। অপারেশন করা অত্যন্ত জরুরী। প্রীতম একটা প্রাইভেট ফার্মে টাইপিস্টের কাজ করে সংসার চালায়। অনেক কষ্ট করে মায়ের অপারেশনের টাকা জোগাড় করেছে প্রীতম। প্রাইভেট ফার্মে কাজ করার সাথে সাথে সরকারি চাকরির জন্যও চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রীতম । যেভাবে হোক মাকে ও সারিয়ে তুলবেই। এটা ওর প্রতিজ্ঞা বলা যেতে পারে। প্রীতম ভাবে যে মা তার জন্য সারাটা জীবন দিয়ে দিয়েছে সেই মায়ের জন্য ও এটুকু করতে পারবে না? মায়ের কষ্ট ও খুব বেশি করে অনুভব করে। আজকের দৃশ্য হলো প্রিতমের একটা চাকরির চিঠি এসেছে। সামনের সপ্তাহে তাকে জয়েন করতে হবে বিশাখাপত্তনম এ অবস্থিত একটা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ কালকে রওনা দিতে হবে কিন্তু সরলা দেবীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রীতম যেতে রাজি নয়। সরলা দেবীর অপারেশনের দিন অনেক দিন থেকেই ঠিক হয়ে আছে। আর তিন দিন পর অপারেশন। অর্থাৎ প্রীতম এই মুহুর্তে এখান থেকে চলে গেলে সরলা দেবীর অপারেশন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু মাকে কে বোঝাবে? সরলা দেবী বারবার অনুরোধ করছেন ছেলেকে এই চাকরিতে জয়েন করতে। অবশেষে দৃশ্যগুলো শুরু হলো

সরলা - " প্রীতম তুই অমত করিসনি বাবা তো সরকারি চাকরি।"

প্রীতম - "না মা আমি কিছুতেই এই অসুস্থ অবস্থায় তোমাকে ফেলে যেতে পারবো না"

সরলা -"আমি আর কদিন বাবা তোর জীবন তো তোকেই বুঝে নিতে হবে বল"

প্রীতম -"তাই তো বলছি আমার দায়িত্বটা আমাকেই বুঝে নিতে দাও, আমার মাকে সুস্থ করার দায়িত্ব তো আমারই তাই না?"

সরলা -"পাগল ছেলে আমার জন্য তুই এত বড় সুযোগ ছেড়ে দিবি, লোকে কি বলবে?"

"প্রীতম -"আমার জন্য তো তুমি সারা জীবনটা দিয়ে দিয়েছো। আর তোমার জন্য আমি জীবনে একটা মাত্র সুযোগ ছাড়তে পারবো না?"

সরলার কণ্ঠস্বর ধরে আসে কান্নায়। তাও বলে,"বাবা তোর মতো ছেলে পেয়ে আমি সারা জীবনের সব দুঃখ ভুলে গেছি রে"

প্রীতম মায়ের পায়ে মাথা রেখে বলতে থাকে "আমাকে আশীর্বাদ করো মা আমি চিরদিনই যেন তোমার সেবা করতে পারি"

দৃশ্য শেষ। নয়ন চোখের জল মুছতে মুছতে মেকআপ রুমে গিয়ে ঢোকে। নয়নের অভিনয় দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সত্যি যে কোন চরিত্রের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ওর আছে। ইতিমধ্যেই তিনটি পুরস্কার ওর ঝুলিতে। কান্নার জন্য গ্লিসারিনের প্রয়োজন হয় না নয়নের। চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে পারলে সব আপনাআপনি হয়।

আজ আর কোনো শুটিং রাখেনি বিপুল। কাল সকাল সাতটায় নয়নের ফ্লাইট। সুইজারল্যান্ডে শুটিং আছে। ধনী ব্যবসায়ী মেহেতা সিনেমার প্রযোজক । এই শুটিং এর কোন নড়চড় করার সাধ্য নয়ন কুমারের নেই। বড় বড় হিরোদের স্বপ্ন থাকে মেহেতার প্রযোজিত সিনেমায় অভিনয় করার। আর প্রায় বিনা চেষ্টায় তার কাছে অফারটা এসেছে। আসলে মিস্টার মেহেতার মেয়ে অশ্বিনীর সাথে এক পার্টিতে আলাপ হয়েছিল নয়নের। অশ্বিনী বাবাকে রাজী করায় পরের সিনেমায় নয়নকে নায়ক করার জন্য। অশ্বিনীও ওদের সাথে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছে। নয়ন ঠিক করে রেখেছে মনের গোপন ইচ্ছাটা সময় সুযোগ হলে অশ্বিনী কে বলেই ফেলবে। অশ্বিনী কে নয়ন খুব ভালবেসে ফেলেছে। ওর মনে হয় অশ্বিনিও বেশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পরেছে ওর উপর। তাই ও আর দেরি করতে চায় না।

"দাদা তোমায় একটা কথা বলার ছিল"

চোখ খুলেই দেখি বিপুল দাঁড়িয়ে। বাঁ হাতে টুল টা এগিয়ে দিয়ে বলে

"বস এখানে"

আরামকেদারায় শুয়ে ঝিমোচ্ছিল নয়ন।

"বল কি হয়েছে? কেউ ফোন করেছিল"

বিপুল খুব আস্তে করে বলল

"জ্যাঠাইমা ফোন করেছিল, তখন তুমি শুটিংয়ে ছিলে তাই দিতে পারিনি, শরীর খুব খারাপ, আজি তোমাকে একবার দেখতে চাইছেন"

"না না আমি তো কাল থেকে থাকবো না, বরং এসে যা হয় করবো"

"কিন্তু তোমার ফিরতে তো তিন মাস লাগবেই, অতদিন বোধহয়,,,,,,,,"

বিপুল থেমে যায়। থেমে যাওয়ার কারন টা বোঝে নয়ন। নয়নের মা রেবতীর ক্যান্সার ধরা পড়েছে। দুবার অপারেশন হয়ে গেছে। আর তিন মাসের বেশি নয়। ডাক্তারের তাই মত। ওদের আসানসোলের বাড়িতে নার্স আর পরিচারিকা পরিবৃত হয়েও শান্তি নেই তার। সবসময়ই একমাত্র ছেলেকে একটু চোখের দেখা দেখবেন বলে কাঁদেন। নয়ন আগে আসানসোল থেকে কাজ করত। কলকাতায় এলে হোটেলে উঠত। বছর পাঁচ ফ্ল্যাট কিনে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় বাস করছে। আগে প্রতি মাসে দুবার করে আসানসোল যেত। এখন শুটিংয়ের চাপে তা আর হয় না। প্রয়োজন পড়লে তবেই যায়। ফোনে যোগাযোগ থাকে। মাকে এনে কলকাতায় রাখতে চায়নি নয়ন। রেবতী আসানসোলের বাড়ি থেকে চলে এলে ওখানে জমিজমা বাড়ি বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। রেবতী ও আসতে চাইনি, শুধু ছেলেকে কিছুদিন পরপর দেখার জন্য চঞ্চল হয়ে ওঠে খুব। সারাদিন ছেলের কত গল্প করে নার্সদের কাছে।নয়ণ কিন্তু কোনদিন তার বাবাকে দেখেনি। ন মাস বাচ্চা পেটে নিয়ে বিধবা হয়েছিল রেবতী। নদীতে চান করতে গিয়ে ডুবে মারা যান নয়নের বাবা। বাপের বাড়ি থেকে আবার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নয়নের মুখ দেখে রেবতী আর নতুন জীবন চায় নি। বাড়ি ভাড়ার টাকায় আর বাপের বাড়ির সাহায্যে নয়ন কে বড় করে তোলে। মামার বাড়ির দাদু দিদা আজ আর নেই। থাকলে নয়নের এই সাফল্যে খুব খুশি হতো তারা। নয়ন তার পাশে রাখা মোবাইলের সুইচ টিপে

"হ্যালো জয়ন্ত কাকু মায়ের অবস্থা কি খুব খারাপ?"

জয়ন্ত কাকু হল রেবতীর চিকিৎসক।

"হ্যাঁ নয়ন পরশুদিন শেষ একটা কেমো দেবো ভাবছি তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো"

"শোনো কাকু আমার কাল ফ্লাইট, সুইজারল্যান্ড যাব, এর ডেট পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, দেখছি কি করা যায়"

ফোন কেটে মাকে ফোন করে নয়ন। বিপুল নির্বাক শ্রোতা হয়ে বসে থাকে।

"মা তুমি কেমন আছো"

"ভালো নয় বাবা তুই একবার এসে দেখে যা, আমি আর বেশিদিন নেই"

"কি সব বলছো? ওসব চিন্তা করো না তো। কাল আমি একটা কাজে যাব, খুব প্রয়োজনীয় কাজ, মানে আমার জীবনের সেরা কাজ বলতে পারো। এসেই সোজা তোমার কাছে যাবো"

মা একটু চুপ থেকে আবার বলে

"কতদিন লাগবে তোর ফিরতে?"

"আড়াই তিন মাসের মধ্যেই ফিরব"

"তাহলে আর তোকে দেখা আমার হবে না রে, এটা কি তুই আরো কিছুদিন পিছিয়ে দিতে পারিস না?" মায়ের গলা কান্নায় বুজে আসে।

"না মা তাহলে আমাকে সুযোগটা ছেড়ে দিতে হবে, তুমি চিন্তা করে দেখো এতদিন কষ্ট করে নিজের যে জায়গাটা করেছি তা কি আরো এগিয়ে নিয়ে যাব না?

রেবতী আর কথা বলে না। ফোনটা কেটে গেল। হয়তো রেবতী কেটে দিয়েছে। কান্না চাপতে এছাড়া তার আর অন্য কোন উপায় ছিল না।

এবার বিপুলের দিকে তাকিয়ে নয়ন বলে

"বল বিপুল, এটা মায়ের বাড়াবাড়ি নয়? মা তো চলে যাবে কিন্তু আমার কাজ তো থেমে থাকবে না"

বিপুল কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে। বিপুলের চোখে ভাসছে প্রীতম। যে নিজের জন্য সরকারি চাকরি অপেক্ষা করছে তার মায়ের অপারেশনের জন্য। এই চরিত্রের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল নয়ন। সিনেমা টা বের হলে নয়নের অভিনয় সবার প্রশংসা পাবে। পুরস্কার ও জুটবে। ওর অভিনয় দেখে সিনেমা হলে কেঁদে ভাসবে কতজন। নয়ন চিয়ারে ঠেস দিয়ে চোখ বোঝে।

বিপুল এবার খোলা বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আকাশে ঝিকমিক করছে অগুনতি তারা। যেন পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে কি সব বলাবলি করছে নিজেদের মধ্যে। বিপুলের মনে হয় তারা যেন পৃথিবী রঙ্গমঞ্চের নাটক দেখতে আসা দর্শক। প্রতিটি মানুষই অভিনয় করে সারা জীবন ধরে। মৃত্যুর সাথেই তার যবনিকা পড়ে। নয়ন অন্যের পরিচালনায় প্রীতম সেজেছে। যার কাছে নিজের কোন কাজই গুরুত্বপূর্ণ নয় মায়ের চেয়ে। আবার বাড়িতে নয়ন সেজেছে যার কাছে মায়ের চেয়ে অনেক বড় নিজের সফলতা। তবে এর পরিচালক সে নিজে, পার্থক্য শুধু এখানেই। বিপুল পিছন ফিরে দেখে গভীর ঘুমে চেয়ারের এক দিকে হেলে পড়েছে নয়ন।


Rate this content
Log in

More bengali story from Gopa Ghosh

Similar bengali story from Drama