Mitali Chakraborty

Romance Tragedy Classics

2  

Mitali Chakraborty

Romance Tragedy Classics

আতঙ্কের অবসান:-

আতঙ্কের অবসান:-

9 mins
306


নিজের অফিস ডেস্কে বসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার শতপ্রচেষ্টা করেও অমৃতা কোনোভাবেই মনোযোগী হতে পারছেনা। ইদানিং তার জীবনে যা ঘটছে সেটার প্রভাব তার কোমল মনে আঘাত করছে সে তো বলাই বাহুল্য। তাই এতো দুশ্চিন্তার অন্ধকারে ঘনীভূত হয়ে আছে তার মন। কাউকে বলা, কারোর থেকে পরামর্শ নেওয়া, কারোর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করার কথা ভাবলেই সে গুটিয়ে যাচ্ছে নিজে থেকে। 

অমৃতা খুব হাসিখুশি, প্রাণবন্ত একটি মেয়ে। কিন্তু পরপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জালে আটকা পড়ে যাচ্ছে সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও। কিভাবে মোকাবিলা করবে এই প্রতিকূল অবস্থার সেটাও বুঝতে পারছেনা কারণ ঘটনাটা তার মামা শ্বশুরমশাইকে নিয়ে। বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই অমৃতা দেখছে মামাশ্বশুর বিশ্বনাথবাবু অমৃতার শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। বয়স হয়েছে ওনার, বিয়ে থা কিছুই করেননি, ওনাকে দেখার মতো কেউ নেই বলে অমৃতার বিধবা শাশুড়ি মা বাসন্তীদেবী বিশ্বনাথকে নিজের কাছেই এনে রেখেছেন। সেই থেকে তিনিও পৈতৃক ভিটেবাড়ি বিক্রি বাটা করে দিদির সংসারেই থিতু হয়ে আছেন।

অমৃতা বিয়ের পর প্রায় ২ সপ্তাহ শ্বশুরবাড়িতে থেকে আবার কর্মস্থান দেহরাদুনে পাড়ি দেয় দীপ্তর সঙ্গে। একই স্থানে কাজ করে দীপ্ত আর অমৃতা, সেই থেকেই পরিচয়। পরিচয় ক্রমে ক্রমে পরিণতি প্রায় ভালোবাসায় আর পরবর্তীতে ভালোবাসার সাগরে ডুবে থাকা অবস্থাতেই মন্ত্র পড়ে সাতপাক ঘুরে তাদের বৈবাহিক জীবনের শুভ সূচনা হয়ে যায়।

কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা অন্যরকম। সদ্যমাত্র দেহরাদুন অফিস থেকে একবছরের জন্য টেম্পোরারি ট্রান্সফার করে অমৃতাকে পাঠানো হয় এই শহরে। প্রথম প্রথম খুব খুশি ছিল অমৃতা যে বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি দুই বাড়ি মিলিয়ে আনন্দে থাকবে সে। আর দীপ্ত তো ছুটিছাটাতে আসবেই। 

***********************

কলকাতার অফিসে জয়েন করে নিয়েছে হয়ে গেলো প্রায় তিনদিন মতো। আসার পর থেকে বাবার বাড়িতেই আছে। কিন্তু তিন দিন অতিক্রম হয়ে গেলে পর সে নিজেই তার শ্বাশুড়ীর কাছে ইচ্ছে জাহির করলো ওই বাড়ি আসার, বৌমার কথায় তখন উৎফুল্ল বাসন্তী দেবী। সেদিন অমৃতার পছন্দের সব রান্না হয়েছিল ওই বাড়িতে। বাজার করেছিলেন বাসন্তী দেবী আর তার মামাশ্বশুর মিলেই। দীপ্ত যদিও কপট রাগ দেখিয়েছিল মায়ের উপর যে বৌমা পেয়ে নিজের ছেলেকে ভুলে গেছেন তিনি। কিন্তু অমৃতা তখনও অবগত ছিল না আগামীদিনের কুরুচিকর পরিস্থিতি গুলোর জন্য।

সেদিন ছিল ছুটির দিন, একটু আয়েশ করেই ঘুমোচ্ছিল অমৃতা। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হতেই আড়মোড়া ভেঙে দরজা খুলে তাজ্জব বনে যায় অমৃতা। সামনে মামাবাবু দাঁড়িয়ে আছেন চায়ের ট্রে হাতে। তার চেয়েও বেশি আশ্চর্যের তিনি শুধুমাত্র একটি টাওয়াল পরে আছেন। অমৃতার অস্বচ্ছন্দ লাগছিল ব্যাপারখানা। কিন্তু বিশ্বনাথবাবু হেসে হেসে বললেন, "বুঝলে বৌমা সকাল সকাল দিদি বেড়িয়েছে মন্দির দর্শন করতে। দিদি যাওয়ার আগে একবার আমায় চা করে দিয়েছিল, কিন্তু দেখোনা আবার কেমন চা তেষ্টা পেলো আমার। তাই তোমার জন্যেও বানিয়ে আনলাম এককাপ, চলো ভেতরে বসে শ্বশুর আর বৌমা মিলে চা-পান করা যাক কি বলো?"

একটু ইতস্তত বোধ করে অমৃতা ব্রাশ করে তৈরী হয়ে আসার অজুহাত দিয়ে ঐসময়ের জন্য ওনাকে বিদায় করে। অমৃতা এই ব্যাপারটাকে এতো গুরুত্ব দেয়নি তখন।

এই ঘটনার কিছুদিন পর একদিন সকাল বেলায় অমৃতা রেডি হচ্ছিল অফিস যাবে বলে, একটু দেরি হয়ে গেছিলো সেদিন। বিশ্বনাথবাবু একরকম জোর করেই তাকে নিজের স্কুটারে বসিয়ে অফিস অবধি ছেড়ে দিয়ে যান। এরমধ্যে এক সপ্তাহ বাপের বাড়িতে গেছিলো অমৃতা, এক সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে দেখে তার বাবা মায়ের সঙ্গে বসে খোস গল্পে মেতেছেন বিশ্বনাথবাবু। অমৃতাকে ঘরে ঢুকতে দেখে বলেন, "তোমায় দেখতে এলাম বৌমা"।

অমৃতা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে সেদিন রাতে যখন বাসন্তীদেবী জানালেন বিশ্বনাথবাবুর অমৃতার বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। অমৃতার মনে খটকা লাগা শুরু তখন থেকেই।

এরমধ্যে দীপ্ত হাজির ৩/৪ দিনের ছুটি নিয়ে। অমৃতা সুযোগ বুঝে দীপ্তকে মামাবাবুর কথাটা বললেও সে বিশ্বাস করতে চায়নি। তার মতে অমৃতা শুধু শুধু তার মামাবাবুকে দোষী সাব্যস্ত করতে চাইছে। দীপ্ত মনে মনে অমৃতার এরূপ চিন্তাধারায় মনঃক্ষুন্ন হয়। অমৃতার কোনো কথাকেই সে গুরুত্ব দেয়নি। মনে মনে অমৃতাও ভাবতে শুরু করে সে'ই হয়তো ভুল ভাবছে। সমস্তটাই হয়তো ওর কল্পনা, হয়তো বিশ্বনাথ বাবুর মনে অমৃতাকে নিয়ে কোন কুৎসিত ইচ্ছে নেই।

দীপ্ত চলে গেছে দুইদিন মতো হয়ে গেছে প্রায়। অমৃতা নিজের মনকে বুঝিয়েছে অনেক, যে হয়তো বা সে নিজেই ব্যাপারটা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবছে। এটাও ভেবেছে যে এই ঘটনাটি নিয়ে সে আর কাউকে কিছু বলবে না, কারণ সে নিজেও চায়না কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে মধুর সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে যাক।

এরই মধ্যে একদিন অমৃতার শাশুড়ি মা তাকে মামাবাবুর রুমে পাঠালেন রাতের খাবারের জন্য ডাক দিতে, অন্যসময় অমৃতা মামাবাবুর রুমের বাইরে থেকেই ওনাকে ডেকে নেয়, কারণ ওনার ঘরের দরজা হাট করে খোলা থাকে। কিন্তু আজ অমৃতা দেখলো ওনার ঘরের দরজা ভেজানো অবস্থায়। একবার ডাকার পর বিশ্বনাথবাবু আওয়াজ দেন দরজা খুলে ভেতরে আসার জন্য। অমৃতা আলতো ভাবে ভেজানো দরজাটা খুলে দেখতে পায় পুরো ঘরে অন্ধকারের পসরা। শুধু মোবাইলের অল্প আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে ওনার কক্ষে। গা ছমছম করে ওঠে অমৃতার। বিশ্বনাথবাবুকে খাওয়ার কথা বলে তৎক্ষণাৎ সে চলে যেতে উদ্যত হলে তিনি অমৃতাকে ডেকে বলেন ভেতরে প্রবেশ করতে এবং এটাও বলেন যে ভেতরে এসে যেন লাইটের সুইচটা জ্বালিয়ে দেয় সে, তিনি মোবাইলের এই অল্প আলোতে ঠাহর করতে পারছেন না। অগত্যা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই অমৃতাকে ভেতরে প্রবেশ করে লাইট জ্বালাতে হলো। অমৃতা তখন লাইটের সুইচে আঙ্গুলটা রেখেছে তখুনি এক পুরুষালি হাতের ছোঁয়ায় বিচলিত হয়ে ওঠে সে। বিশ্বনাথ বাবু অমৃতার সরু আঙ্গুলটা ধরে আছেন। চমকে ওঠে অমৃতা। সুইচে চাপ পড়ে সুইচ অন হয়ে গেলে মামাবাবুর চেহারা দেখে শিহরিত হয়ে ওঠে সে। বিশ্বনাথ বাবু তার হাতটা শক্ত করে ধরে নিঃশব্দে কুটিল এক হাসি ছড়িয়ে তার কানে কানে বলেন, "ভাগ্নে তো নেই, আমি যাবো আজ রাতে তোমাকে চরম আনন্দ দিতে?"

অমৃতা সহ্য করতে পারেনা আর। কষিয়ে এক চড় লাগায় বিশ্বনাথের গালে। কিন্তু সহসা বিশ্বনাথ বাবু অমৃতার মুখটা জাপটে ধরে বলেন, "কোন সাহসে তুই শ্বশুরের গায়ে হাত তুললি? এই দেখ ভিডিওটা...." বলে জোর করে অমৃতাকে একটি ভিডিও দেখান যেখানে দেখা যাচ্ছে স্নানের পরে নিজের ঘরে অমৃতা স্বল্প বসনে গুনগুন করে গান করতে করতে আলমারি থেকে পোশাক পরিচ্ছদ বের করছে তৈরী হওয়ার জন্য। ভিডিওটি দেখে আড়ষ্ট হয়ে পরে অমৃতা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। অমৃতার চোখে মুখে তখন আতঙ্কের ছাপ। বিশ্বনাথ বাবু বলেই চলছেন, "আমি এই ভিডিওটা যদি আমার হোয়াটস অ্যাপের সকলকে পাঠাই, তাহলে তোর ইজ্জত সম্মানটা কি আর অবশিষ্ট থাকবে?" 

***************

অমৃতার মাথা ঘুরছে বনবন করে। নিজের চোখে যা দেখে এলো এইমাত্র, সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না, সে রাতে তার গলা দিয়ে ভাতের দানা নামছিলোনা। ভয়ে উৎকণ্ঠায় অমৃতা বিচলিত হয়ে পড়ে। বিশ্বাস করতে পারছেনা যে বিশ্বনাথ বাবু এতো নিচু মনের। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। বিশ্বনাথ বাবুর এতবড়ো আস্পর্ধা দেখে অবাক হয়ে গেছে অমৃতা। তিনি নির্লজ্জের মত অমৃতার রুমে ঢুকে সেখানে গোপনে ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিলেন। অমৃতা বুঝতে পারছে সে এক গভীর চক্রান্তের শিকার।

গতরাতের এসব দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই সে আজ অফিসে এসেছে। কিন্তু আসার পর থেকে সামান্য কাজেও মনোযোগ দিতে পারছেনা। কি করবে কি বলবে কিভাবে নিস্তার পাবে এই কুরুচিকর পরিস্থিতি থেকে, সেটা ভেবেই প্রচন্ড উদ্বিগ্ন অমৃতা। কাজ পাগল অমৃতাকে আজ ঠুটো জগন্নাথ অবস্থায় দেখে তার একজন সিনিয়র জয়তী দি এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন অমৃতার কাজ না করে হাত গুটিয়ে থাকার কারণ। একটু শুকনো হাসি হেসে অমৃতা ব্যাপারটা সহজ করতে চাইলেও জয়তীর নজর এড়ায়নি অমৃতার মুখের দুশ্চিন্তার ছাপগুলো। জয়তী দি ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে জানতে চাইলে অমৃতা আর সামলাতে পারেনা নিজেকে। কান্নায় ভেঙে পরে সে। কান্না থামিয়ে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে পুরো ঘটনাটা মেলে ধরে জয়তী দির সামনে।

উনি সবটা শুনে অমৃতাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন যে ব্যাপারটা সত্যিই খুব গুরুতর, কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই যে বিশ্বনাথ বাবু এভাবে হ্যারাস করছেন তাকে। জয়তীর কথা শুনে আবার ধাক্কা খায় অমৃতা। কি করবে সে এই অবস্থায়? পথ দেখলেন জয়তী দি'ই।

সেদিন রাতে সে আবার ডাকতে যায় বিশ্বনাথ বাবুকে। গিয়ে দেখে গতকালের মতই আজও দরজাটা ভেজানো। অমৃতা তৈরী হয়েই ছিল। ওনার কিছু বলার আগেই সে বিশ্বনাথ বাবুর রুমে ঢুকে লাইটের সুইচটা অন্ করে। বিশ্বনাথ বাবু আজ আর উঠে আসেননি। ইশারায় নিজের কাছে ডাকেন অমৃতাকে। অমৃতা মনেমনে শক্তি সঞ্চয় করে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বিশ্বনাথের বিছানার দিকে। এক ঝটকায় অমৃতার হাত ধরে তাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে শিকারি বাঘের মত তার উপর হামলে পড়েন বিশ্বনাথ বাবু। আতঙ্কে সাদা হয়ে যায় অমৃতার চোখ। দরদর করে ঘামছে সে আর বিশ্বনাথ বাবু চিৎকার করে বলে ওঠেন, "এতোদিনে আজ বাগে পেয়েছি তোমায় বৌমা। আজকে যে প্রাণভরে মনের আশা মিটিয়ে নেবো..." এই বলে সেই কুটিল হাসি হাসতে থাকেন তিনি। 

"বিশ্বনাথ" বলে সজোরে চেঁচিয়ে ওঠেন বাসন্তী দেবী। চকিতে অমৃতার উপর থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ান বিশ্বনাথ বাবু। বাসন্তী দেবী এসে অমৃতাকে সামলান। বিশ্বনাথ বাবুর মুখের রং উড়ে গেছে ততক্ষনে। তিনি আশা করেননি তার দিদি একনিমেষে চলে আসবে তার ঘরে। শিকার হাত ফস্কে গেলো বলে যেমন নিশপিশ করছে তার হাত এর থেকেও বেশি উৎকণ্ঠায় আছে যে তার অভিসন্ধি প্রকাশিত হয়ে গেলো তার দিদির সম্মুখে এই ভেবে। 

*****************************

ঘরের মধ্যে বসে আছে দীপ্ত, অমৃতা, বাসন্তী দেবী, বিশ্বনাথ বাবু আর ইন্সপেক্টর অসিত সমাদ্দার। অমৃতা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তার সাথে এতদিন ধরে ঘটে চলা ঘটনাগুলির বর্ণনা দিচ্ছে। দীপ্ত মুখ নিচু করে আছে, মনেমনে নিজের উপর রেগে আছে সে। অমৃতার কথাগুলোর গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে জল আজ এতদূর গড়িয়ে গেছে। অমৃতা বলছে, "তারপর আমি আমার অফিস সিনিয়র জয়তী দির সাথে ব্যাপারটা আলোচনা করি। উনিই বুদ্ধি দিলেন যে আমি যেন আমার শাশুড়ি মাকে এই ব্যাপারটা জানাই। উনি এটাও বলেছিলেন যে হয়তো প্রথমেই আমার শাশুড়ি মা মামাবাবুর ব্যাপারে বলা কথাগুলি শুনে বিশ্বাস করতে চাইবেন না, কিন্তু আমি যেন চেষ্টা করে দেখি ওনাকে সঙ্গে করে মামাবাবুর কাছাকাছি যাওয়ার তাহলে যেন তিনি স্বচক্ষে দেখতে বা শুনতে পান বিশ্বনাথ বাবুর কীর্তি।

সেদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পর অনেক সাহস জুটিয়ে আমি কথাগুলি শাশুড়ি মায়ের কাছে বলি। প্রথমে তিনিও আমার কথায় বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না, তারপর আমি ওনাকে অনেক কষ্টে রাজি করাই আড়ালে থেকে সব কীর্তিকলাপ চাক্ষুষ করার জন্য। তিনি আমায় কথা দিয়েছিলেন যে মামা বাবুর ভুল প্রমাণিত হলে তিনি ন্যায্য শাস্তি দেবেন মামা বাবুকে। আর আমি যদি ভুল প্রমাণিত হই তাহলে আমি যেন দীপ্তর জীবন থেকে দূরে চলে যাই। তারপর ভরসায় বুক বেঁধে আমি রাতের খাবার খাওয়ার জন্য মামাবাবুকে ডাকতে গেলে ওনার কুৎসিত মনোবাঞ্ছা সম্পর্কে অবহিত হন আমার শাশুড়ি মা।

সেই রাতেই দীপ্তকে খবর দেওয়া হয় এখানে আসতে। আর আমার শাশুড়ি মা নিজেই ফোন করে আপনাদের এখানে ডাকেন।"

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে অমৃতা। বাসন্তীদেবী এসে অমৃতার মাথায় হাত রেখে বলেন, "মানুষের বিপদে মানুষকেই তো পাশে দাঁড়াতে হয়। আমি লজ্জিত, কুন্ঠিত আমার একমাত্র বৌমার এমন অনাদর আমি মেনে নিতে পারবো না। তাই তো দোষীর শাস্তি চাই, হোকনা মায়ের পেটের ভাই, কিন্তু দোষী তো দোষীই হয়। সাম্য সবার জন্য। একজন দিনের পর দিন নিপীড়িত হয়েই যাবে সেটা যে আর সহ্য করা যায়না। একজন মহিলা হয়ে কিভাবে সহ্য করবো আরেক মহিলার উপর হতে থাকা অত্যাচারগুলো। বিশ্বনাথ পুরুষ বলে আর আমার ভাই বলে তাকে শাস্তি না দেওয়া অযৌক্তিক। অপরাধে কোনো নারী পুরুষের বিভেদ নেই। অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে তা সে পুরুষ হোক বা নারী...."। 

******************

বিশ্বনাথের মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। হাতকড়া পরিয়ে বিশ্বনাথবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসন্তী দেবী মনে মনে অনুতপ্ত, লজ্জিত, কুণ্ঠিত। তিনি কষ্ট পাচ্ছেন অমৃতার জন্য। কিন্তু তার থেকেও বেশি কষ্টে আছে দীপ্ত। সে বারবার নিজেকে দোষ দিচ্ছে, তার খামখেয়ালির জন্যে ব্যাপারটা এতদূর গড়ালো। মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েছে সে। কোন মুখে অমৃতার সঙ্গে কথা বলবে সেটাই ভেবে উঠতে পারছেনা। বুক ফেটে যাচ্ছে তার। অমৃতাকে নিয়ে তার মামাবাবুর এমন কুৎসিত ইচ্ছে এই কথাটা মনে করতেই গা গুলিয়ে উঠছে দীপ্তর। অমৃতার কষ্টে দীপ্ত পারছেনা শুধু চিৎকার করে কাঁদতে।

অমৃতা দীপ্তর কাছে এসে দাঁড়ায়। দীপ্ত একবার অমৃতার দিকে তাকিয়ে পরক্ষনেই আবার চূড়ান্ত লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে। টপটপ করে অনুশোচনার অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে দীপ্তর চোখ দিয়ে। অমৃতা বুঝতে পারে দীপ্তর মানসিক অবস্থা। নিজেকে একটু সামলিয়ে নিয়ে বলে, "দীপ্ত বাইরে দেখো। অন্ধকারের কালীমা সরে গিয়ে এক আলোকজ্জ্বল দিনের শুরু.... দোষীকে শাস্তি দেওয়া হবে, আর মন খারাপ করে থেকো না। আইনের চোখকে ফাঁকি দেওয়া তো সহজ নয় বলো? আমার অধিকারের জন্য আমাকে তো লড়তেই হতো, বলো?...."

দীপ্ত ভারী গলায় হাতজোড় করে বললো, "ক্ষমা করে দিতে পারো আমায়? কথা দিচ্ছি এবার থেকে নিরপেক্ষ ভাবে সব পরিস্থিতির, সব কথার উপর দৃষ্টিপাত করবো.... আমায় ভুল বুঝোনা অমৃতা, তোমার কিছু হলে আজীবন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না"।

অমৃতা দীপ্তর জোড় করে থাকা হাত দুটোকে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো, "আতঙ্কের অবসানের পরে সাম্যের জয় হয়েছে দীপ্ত। সব ভুলে এক নতুন পথের দিশারী হবো আমরা! তুমি আমার পাশে থাকবে তো?"

অমৃতার জন্য সম্মান, ভালোবাসা এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জ্বলজ্বল করছে তখন দীপ্তর চোখে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance