Atrayee Sarkar

Romance Tragedy

2  

Atrayee Sarkar

Romance Tragedy

আরতির আলো

আরতির আলো

6 mins
113


আজ আমি হাসছি,,,, কাল কাঁদতেও পারি

এ কথা একেবারেই ভাবা যায় না

আজ আমি আনন্দিত,,, কাল ব্যথাও পেতে পারি

এ কথা কারোর মনেই ভাসে না

খারাপ কথা ভাবা একেবারেই অসম্ভব

আর ভাবনার কোন শেষ থাকে না ।

মানুষটা যে ব্যথিত হবে,,, সেছিল তাঁর কল্পনারও বাইরে। শুনি তাহলে গল্পটা,,,, কার কি কষ্ট হয়েছিল ।

অরিজিত্ সেন একজন রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার।

এই বছরটা ওনার খুবই কষ্টের মধ্যে গেছে । উনি নিজের হৃদয়টাকেই হারিয়ে ফেলেছেন ।

ওনার হৃদয়,,,,, আর কেউ নয়,,ওনার স্ত্রী আরতি সেন।

অরিজিত্ বাবু আরতিদেবীর সাথে love marriage করেছিলেন । 

অরিজিত্ বাবু যে কলেজে পড়তেন,, তার পাশের কলেজেই আরতিদেবী পড়তেন । ওনারা একই বাসে কলেজে যেতেন।

অরিজিত্ বাবু আর আরতিদেবী অনেকটা কাছাকাছিই থাকতেন।


একদিন বাসে করে বাড়ি ফেরবার সময়,, মাঝরাস্তায়ই হঠাত্ আরতিদেবীর বমি পাচ্ছিল। অরিজিত্ বাবু আরতিদেবীকে চিনতেন।

ওনার ওই অবস্থা দেখে অরিজিত্ বাবু,, বাসটাকে থামিয়ে,,, আরতিদেবীকে ট্যাক্সি করে ওনার বাড়ি পৌছে দেন।

প্রথমবার অরিজিত্ বাবুকে দেখে আরতিদেবীর পরিবার অবাক হয়ে গেছিলেন,,, ভেবে উনি কে।

পরের আরতিদেবীর মা জিজ্ঞেস করেছিলেন " আরতি ও কে?"


-- " ও পাসের কলেজ পরে,,, আর একই বাসে যাই। এইটাই সম্পর্ক। হয়তো এখানে থাকেন,, আমি জানিনা।"

আরতিদেবীর মা-- " যাই হোক,, ওকে ধন্যবাদ জানাস,, এতো বড় সাহায্য করল ।"

আরতিদেবী অরিজিত্ বাবুকে গিয়ে বলেন -- "থাঙ্কস! আপনি না থাকলে,,,, আমি বাঁচতামই না।"

অরিজিত্ বাবু-- থাঙ্কসের কি আছে,,,,,, এইটুকুও না করতে পারলে,,, নিজেকে অমানুষ লাগতো ।"

অরিজিত্ বাবু আর আরতিদেবী কখনো কখনো একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফেলতেন। তবে কেউই কাউকে কিছু বলতেন না।


মন যে কখন কাকে আপন ভাবতে থাকে,,,, তা জানা যায় না।


একদিন আরতিদেবী,,, অরিজিত্ বাবুর কাছে গিয়ে বলেন-- " মা আপনার জন্য নাড়ু পাঠিয়েছে,,, এই নিন।"

অরিজিত্ বাবু -- " সেই ওই একটাই কারণে? "

আরতিদেবী-- " না,,,,,, বাড়িতে মা করছিল,, আর আপনি এতো ভালো মানুষ,,,, তাই মাকে বলতে,,, মা দিয়েছে ।"

অরিজিত্ বাবু -- " সত্যি?? নাড়ু আমার খুব প্রিয় জানেন । আনন্দে খাব ।"

আরতিদেবী-- " 😊 "

আরতিদেবী-- " আপনার নাম জানতে পারি??"

অরিজিত্ বাবু -- " অরিজিত্ সেন । আপনার নাম যে আরতি মিত্র সেটা শুনলাম ।

আপনি না বলে,, তুমি বললেই ভালো লাগে । আমি তো আর গুরুজন নই।"

আরতিদেবী-- " আচ্ছা ঠিক আছে,,, তুমিই বলবো ।"

এইভাবে কথা বলতে বলতে ওনাদের মন একে অপরের সাথে মিলে যেতে থাকে । ভালোবাসা যে কোথা থেকে আসে,,,, জানা যায় না ।


অরিজিত্ বাবু আর আরতিদেবীর কলেজে সামনেই একটা পার্কে একটু ঘুরতেন।

মনের কথা কতো দিনই বা চেপে রাখা যায়??


একদিন অরিজিত্ বাবু,,,, আরতিদেবীকে বলেই

ফেলেন-- " আমি তোমায় ভালোবাসি।"

এই কথাটা শুনে আরতিদেবী হেসেই ফেলে।

তারপরই ওনাদের বিয়ে হয়ে যায় ।


অরিজিত্ বাবু যখন পুলিশ অফিসার ছিলেন,,, উনি সবসময় ব্যস্ত থাকতেন।

অরিজিত্ বাবুর পরে ট্রানসফারও হয়ে গেছিলে।

ওনার সাথে তাই ফোনেই কথা বলতেন আরতিদেবী।

শুধু রাতে শোয়ার আগেই নিজের স্ত্রী আরতিদেবীর সাথে অরিজিত্ বাবু একটু কথা বলতে পারতেন,,, এতোই ব্যস্ত থাকতেন উনি ।

অরিজিত্ বাবু -- " তোমার খুব একা লাগে,, তাই না। আমারও তোমার কথা খুব মনে পড়ে যানো আরতি ।"

-- " দুটো সন্তানের মা আমি,,,,,, একা লাগবে কেন?? ওরাই তো আমার জীবন।"

অরিজিত্ বাবুর,,, দুজন সন্তান ছিল,,,, অরিন্দম আর তনুশ্রী ।

পুলিশ অফিসারের ছুটি বলে তো কিছুই হয় না ।

পুজোর সময় উনি বাড়িতে আসতেন। আর এনিভার্সারির দিন গিফ্ট নিয়ে আনতেনই ওয়াইফের জন্য।

আজ অরিজিত্ বাবুর ৬৪ বছর বয়স হয়ে গেছে । এই বছর সেপ্টেম্বরেও ওনার আর আরতিদেবীর এনিভার্সারি এমন ভাবে হয়েছিল,, যেন মনে হচ্ছিল প্রথম এনিভার্সারি।

কেক কেটে,, ভিডিও করে কি আনন্দিতই ছিলেন। ওনাদের সন্তানরাও আনন্দ পেত।


কিন্তু নভেম্বরের শেষে ওনাকে যে ব্যথিত হতে হবে তা উনি জানতেনও না।


কখন মানুষ হাসবে ,,, কখন কাঁদবে,,,, জানা যায় না ।

অরিজিত্ বাবুর স্ত্রী আরতিদেবীর হার্টের রোগ ছিল। ওনাকে বাঙ্গালোরে নিয়ে গিয়ে তাই চিকিত্সাও করানো হয়েছিল।

৪ বছর ধরে উনি ভালো ও ছিলেন । কিন্তু হার্টের রোগ কখন সমস্যায় ফেলে দেয় বোঝাও যায় না।

এই বছর ওনার হার্টে খুব সমস্যা হচ্ছিল ।

যে ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ খেতেন ওনার কাছেই আরতিদেবীকে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয়।

দেখানোর পর অনেক টেস্ট হয়ে ওষুধ বারিয়ে দেয় ডাক্তার।

আরতিদেবীর খুব শাস কষ্ট হলে অক্সিজেন দেওয়া হতো ওনাকে। বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারও ছিল।

আরতিদেবীর এটাই একটা সমস্যা ছিল।

উনি বেশি dose এর ওষুধ সহ্য করতে পারতেন না।

বেশি ডোসের ওষুধ খেলে ওনার বমি এসে যেতো,, আর স্যালাইন ছাড়া থামতই না।

একদিন রাতে হঠাত্ ওনার শরীর থরথর করে কাঁপছিল আর বমি হতে শুরু করেছিল ।

Corona র জন্য ambulance পাওয়াই যাচ্ছিল না। রাত তখন ২টো বাজে ।

অনেক কষ্টে হসপিটালে উবেরে করে নিয়ে যাওয়া হয় আরতিদেবীকে। 

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর অরিন্দম,,, তনুশ্রী দুজনেই আরতিদেবীকে ভর্তি করার জন্য ছোটাছুটি করছিল ।

অরিজিত্ বাবুর নাম শুনে আরতিদেবীকে ভর্তি করে নেয় হাসপাতাল। ওনাকে তারপর ICU তে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । স্যালাইন পরতে ওনার বমি থামে ।

দুদিন বাদে ডাক্তার বলে আপনি ওনাকে নিয়ে যেতে পারেন ।

অরিজিত্ বাবু তখন বলে ওঠেন -- " এখনও তো আমার ওয়াইফ খুবই ক্লান্ত । এই সময় বাড়ি নিয়ে গেলে তো মানুষটা বাঁচবেই না। কি করে নিয়ে জেতে বলছেন??"

আরো কিছুদিন হাসপাতালে আরতিদেবীর চিকিত্সা হয়।

অনেকটাই উনি ভালো হয়ে গেছিলেন।

সেই দেখে ডাক্তার ওনাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেয় ।

অরিজিত্ বাবু,, অরিন্দম,, তনুশ্রী ,, তিনজনেই আরতিদেবীকে উবেরে করে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল।

মাঝরাস্তায় হঠাত্ আবার ওনার শাঁস কষ্ট হতে থাকে।

সেই দেখে অরিন্দম ড্রাইভারকে বলে -- " আপনি এক্ষুণি প্লিজ হাসপাতালে চলুন ।"

ড্রাইভার-- " এরম করা যায় না ।"

অরিন্দম-- " আপনার যত টাকা লাগবে দিয়ে দেব। একটু চলুন। "

অরিজিত্ বাবু ভয়ে একদম চুপ হয়ে গেছিলেন।

তারাতারি পৌছে অরিন্দম আর তনুশ্রী আরতিদেবীকে হাসপাতালে ঢোকায়।

তিনজনই ভয়ে কাঁপছিল।

কিছুক্ষণ বাদে ডাক্তার বলেন -" আপনারা আসার পরই উনি expire করে গেছেন ।"

পুরো পরিবারের চোখ তখন ছলছল করছে । যন্ত্রণায় মন ভেঙে গেছিল ।

তনুশ্রী কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাচ্ছিল।

অরিজিত্ বাবু চুপ করে ছিলেন,,,,,,,, কিন্তু চোখ দিয়ে জল পরছিল ।

  পরিবারের কারোর সাথে আর কথাও বললেন না উনি।


পরের দিন অরিজিত্ বাবুকে খাবার দিতে, উনি তনুশ্রীর মুখের ওপর চিত্কার করে বলেন -- " এ খাবার নিয়ে যা,,,, আমি খাবো না ।

দেখেছিস তোদের মায়ের অহংকার???? এতো ভালোবাসা পাওয়ার পরও ছেড়ে চলে গেল। আর আমি ডাকবও কোনদিন?? ওখানেই থাক ,,,, যেখানে গেছে।

২ মিনিটও সময় লাগল না আমায় ভুলে যেতে ।"

তনুশ্রী -- " বাবা চুপ করো। আমি জানি কষ্টে তোমার হৃদয় কাঁদছে । কিন্তু মাকে তো আর ফিরিয়ে আনা জাবেনা । একটু শান্ত হও ।"

অরিজিত্ বাবু --" চুপ কর। শুনতে পাচ্ছিসনা??? নিয়ে যা খাবার ।"

তনুশ্রী তখন বলে ওঠে-- " বেশ,, তাহল আমিও খাব না। আমিও অত্যাচার করব নিজের ওপর ।"

-- " সে তুই যা পারিষ কর।"

তনুশ্রী সত্যিই খাচ্ছে না দেখে অরিজিত্ বাবু খেতে যান। ।

আরতিদেবীর মৃত্যুর পর অরিজিত্ বাবুকে আর কোনদিন্ও হাসতেও দেখা যায়নি।

অরিন্দম বিবাহিত ছিল ।

অরিন্দমের স্ত্রী মনিকা pregnent ছিল বলে আরতিদেবীর জন্য কিছুই করতে পারেনি।

একদিন মনিকা তনুশ্রীর সাথে গল্প করতে করতে বলে -- " আমি কিরকম সেল্ফিস দেখ..... আমি কিছুই করলাম না মা''র জন্য । বসে বসে শুধু দেখলাম।"

তনুশ্রী -- " এরম ভাবে কেন বলছ বৌদি ??? তুমি তখন pregnent ছিলে ......... তোমার পক্ষে কি সম্ভব ছিল?তাও তো তুমি মাকে ঠিক সময় ওষুধ খাওয়াতে ।"

সেদিন ১ ডিসেম্ব. মনিকার পেটে যন্ত্রণা হতে,, মনিকাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় সবাই ।

ডাক্তার তারপর বলে -- " মেয়ে হয়েছে ।"

মনিকাকে বেড এ দেওয়ার পর বাচ্ছাটাকে দেয়।


অরিজিত্ বাবু -- " দেখলি,,,, বলেছিলাম,,, আর ডাকবওনা,,, যেখানে থাকার থাকো,,,, সেই শুনে তোদের মা,,, আবার চলে এসছে ।"

তনুশ্রী -- " বাবা!"

মনিকা-- " বাবা যখন এরম বল্ল,,, ওর ডাক নাম রাখব "আলো' " ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance