আমি সাগরের বেলা 9
আমি সাগরের বেলা 9
যে মানুষটাকে দূর থেকে দেখে এতদিন মুগ্ধ হয়েছি, ফেসবুকের মাধ্যমে সরাসরি তার সাথে কথা বলে একটা অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। নিনি তখন স্কুলের ফাইনাল ইয়ারে। স্বভাবতই বয়েসে বড়, কলেজে পড়া ছেলেদের প্রতি একটা সহজাত কৌতূহল তার মধ্যে কাজ করছিল সেই সময়। প্রতি রাতে বাঁধা ধরা এক ঘণ্টা ফেসবুক চাটে নানান বিষয়ে কথাবার্তা চলতে লাগলো আমাদের। বেশির ভাগ কথা আমিই বলতাম। নিনি শুনতো। কলেজের বিষয়ে, বন্ধুদের সাথে লুকিয়ে সিগারেট, গাঁজা খাওার বিষয়ে... একদিন তো বাবার গাড়ি চড়ে হাজির হয়ে গেলো আমার কলেজের বাইরে। আমার সাথে দেখা করার জন্য। আমাকে তখন দেখে কে! লাখ টাকার গাড়ি চেপে আমার বান্ধবি দেখা করতে এসেছে, এ খবর কলেজে চাউর হওয়ার পর থেকে আমার দর অন্য জায়গায় চলে গেলো বন্ধুদের মধ্যে। আর এসবের মাঝে আমিও মনে মনে বিশ্বাস করতে লাগলাম, নিনি হয়তো সত্যই আমার প্রেমে পড়েছে!
বছর ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে আমার এই স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রেম জিবনেও পরিবর্তন ঘটলো। স্কুল পাশ করে নিনি স্থাপত্য অর্থাৎ আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করতে চলে গেলো কটক। আমার মনটা হাহা করে উঠেছিল ওর চলে যাওয়ার ফলে, কিন্তু খুব একটা খোলাখুলি ভাবে সেটা প্রকাশ করতে পারিনি নিনির কাছে। আসলে নিনির সাথে সম্পর্ক টা অদ্ভুতরকম আবেগবর্জিত ছিল। কখনও একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়নি, অথচ সারাক্ষনই একে অপরের সাথে কথা হত। খাওয়া থেকে ঘুম... একে অপরের সব খবরই আদানপ্রদান চলত। আমি যে এরকম বোঝাপড়ায় খূব খুশি ছিলাম, তা নয়... কিন্তু নিনির নিষ্প্রভতার সামনে কিছু বলতেও গায়ে লাগতো।
আমি ভালোবাসা কাকে বলে কখনও অনুভব করেছি বলে মনে পড়ে না। মনে পড়ে অভ্যাসের কথা। মনে পড়ে দিনের পর দিন একটা এস এম এসের অপেক্ষা। মনে পড়ে দুপুরে খাওার আগে অপর দিকের মানুষটি খেয়েছে কিনা, সেই খোঁজটুকু নেওয়ার অভ্যাসের কথা। মনে পড়ে প্রতিটি পরবের দিন সর্বপ্রথম অভিবাদন জানানোর কথা। মনে পড়ে তার জন্মদিনের আগের দিন রাতে কবিতা লেখার কথা। এই অভ্যাসেরও এক অদ্ভুত গুন আছে। থাকাকালীন এর প্রভাবটা ঠিক বোঝা যায় না। তবে অনেক দিনের অভ্যাস হুট করে বন্ধ হয়ে গেলে জীবনটা যেন খাঁ খাঁ করে ওঠে। মনে হয় বাকি সব কিছুই মিথ্যে, অপ্রয়োজনীয়... একমাত্র সেই অভ্যাসটাই সেই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি মনে হয়!
নিনির সাথে আমার যোগাযোগ প্রথম বারের জন্য বিচ্ছিন্ন হয় যখন আমি ওর কাছে ভালোবাসার স্বীকৃতি চেয়ে বসি।