আমি সাগরের বেলা 6
আমি সাগরের বেলা 6
PART 2
ভদ্রলোকের নাম শুভদীপ সাহা। বাড়ি রাজারহাটের কাছে, চিনার পার্ক অঞ্চলে। বিত্তবান পরিবারের ছেলে। নিজে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার। বয়স সাইত্রিশ। মৃতদার।
প্রথম চারটি তথ্য জানতে পারি টেবিলের ওপর রাখা তাঁর ভিজে যাওয়া যাবতীয় জিনিষের মধ্যে, ভিসিটীং কার্ডটি থেকে। পরের জিনিসে বিনা অনুমতিতে হাত দেওয়া আমার স্বভাবের বাইরে। কিন্তু আজকের ঘটনাটি যেহেতু অপ্রত্যাশিত, আগন্তুকের বেপারে খোঁজ খবর নেওয়াটা, খানিকটা নিজের সুরক্ষার উদ্দ্যেশ্যেই আবশ্যিক মনে হোল। তিনি আপাতত আমার হোটেলের রুমের বাথরুমে স্নান করছেন। আমার একটি টি শার্ট আর একটা ট্রাক প্যান্ট দিয়ে তাকে বলেছি বদলে নিয়ে ভেজা জামা কাপড় গুলো শুকোতে দিতে। মাঝে এক ফাঁকে ম্যানেজারকে ফোনে দু কাপ কড়া কফিও পাঠাতে বলে দিয়েছি। শুভদীপকে নিয়ে ঢোকার সময় ভদ্রলোক একটু সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন ঠিকই। পরে আমি তাকে ফোনে বুঝিয়ে দিয় যে বীচে বেড়াতে গিয়ে পুরনো বন্ধুটির সাথে দেখা। হাঁটতে হাঁটতে হাসিঠাট্টার মধ্যে অন্যমনস্ক হয়ে বেচারা পা পিছলে পরে গিয়ে জামা কাপরের এই অবস্থা! অগত্যা ফ্রেশ হতে আমার এখানে চলে এলো। ভদ্রলোক একটা আক্ষেপসূচক শব্দ করে বললেন জথাশিঘ্র সম্ভব কফি দুটি ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
“এখন কেমন লাগছে?” শুভদীপ বেরনোর পর আমি জিজ্ঞেস করি। তার মুখ দেখে বুঝলাম যে সে অনেকটাই প্রকৃতিস্থ, এবং তার সঙ্গে একটু অপ্রস্তুতও বোধ করছে তার কিছুক্ষন আগের ঘটানো কাণ্ডটির ফলে।
“হ্যাঁ... বেশ লাগছে এখন। ভালোই।’’ কিছুটা ইতস্তত গলায় সে বলল।
আমি তার ইতস্তত বোধ কিছুটা কাটানোর জন্য বললাম, “বোসো। একটু কফি আনালাম, খেয়ে নাও। একদম চাঙ্গা হয়ে যাবে। এই হোটেলের কফিটার ব্যাপারে আমি নিজে ভাউচ করতে পারি!”
শুভদীপ বাধ্য ছেলের মতই চেয়ারে বসে কফির কাপটা হাতে তুলে নিল। আমিও নিজের কাপটা তুলে একদৃষ্টে ওর দিকে দেখতে দেখতে
চুমুক লাগালাম।
“কি? জমল না কফিটা?” কতকটা জোর করে ওকে কথা বলানোর জন্যই যেন জিজ্ঞেস করলাম।
“না, না! বেশ ভালো।“ আবার উত্তর এলো সরু কণ্ঠে। কিন্তু এবার পরবর্তী কথাটা আপেক্ষাক্রিতভাবে আগেই এলো, “আপনি কি কলকাতার বাসিন্দা?”
“হ্যাঁ। যাদবপুর। তোমার?”
“চিনার পার্ক, রাজারহাট।“
“বাঃ! বাঃ!” আমি একটু আদিখ্যেতা করেই বাহবা দিলাম, “ওই দিকটায় অনেকদিন ধরেই একটা ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে। প্রপার্টির দাম ক্যামন যাচ্ছে এখন? খুব বেশি কি?”
“না। ঠিকই যাচ্ছে।“
“ওহ, পরিচয়টা সেরে ফেলি। আমার নাম সমন্বয়।“ বলে হাতটা বারিয়ে দিলাম। উল্টো দিক থেকে হাত এলো না, কিন্তু জবাব এলো।
“শুভদীপ।“
“তা শুভদীপ বাড়িতে কে কে আছে?”
“মা, বাবা, আমি... আর একটি আড়াই বছরের ল্যাব্রাডর।”
“বাঃ, বেশ। বিয়ে করনি তাহলে এখনো...?”
কথাটা বলা মাত্রই আঁচ করতে পারালাম যে ভুল বিষয়ের উদ্রেক করে ফেলেছি। শুভদীপের মুখের অভিব্যাক্তি নিমেশে পাল্টে গিয়ে একটা বীভৎস যন্ত্রণায় কাতর মানুষের মত হয়ে উঠল। আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সে বলে উঠল।
“আমার স্ত্রী এক বছর হল মারা গেছে। ওই... ওই যে সমুদ্র তটে আজ আমায় খুঁজে পেলেন। তার কাছেই কোথাও তার মৃতদেহ উদ্ধার হয় আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে, সবাধীনতা দিবসের দিন। আ... আমি কলকাতায় ফিরে গেছিলাম কাজের তাগাদায়... শেষবারের দেখাটাও ঠিক করে দেখা হোল না! আর হ্যাঁ, আপনার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে আপনি বেপারটা ধরে ফেলেছেন। আমার আত্মহত্যা করতে যাওয়ার পিছনের কারণও আমার স্ত্রীই। আশা করি আপনার কৌতূহল মেটাতে পেরেছি? পেঁয়াজের খোসা খুলতে খুলতে অনেক সময় লেগে যেত, তাই আপনাকে আরও প্রশ্ন করতে হয়, তার আগেই জানিয়ে দিলাম পুরোটা! আপনার সন্ধ্যাটা জমাটি করে তোলার মত খোরাক আশা করি পেয়ে গেছেন? চলি।“ বলে সে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হোল।
TO BE CONTD..