আমি সাগরের বেলা 2
আমি সাগরের বেলা 2
পুরি পৌঁছে অবস্থাটা কিছুটা স্বপ্নভঙ্গ এর মতই হোল। পনেরো বছরে আমার মধ্যে জায়গাটার যে ছবি টা সজত্নে আগলে রাখা ছিল, ষ্টেশনে নামা মাত্র যেন সেটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। দোকান, বাজার, গাড়ির ছরাছরিতে শহর টার পুরো রঙটাই যেন বদলে গেছে। গাড়ির হর্ন আর লোকজনের কোলাহলে যেন সেই চিরপরিচিত সমুদ্রের গরজনের আওয়াজটাই চাপা পড়ে গেছে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো কিরকম... মন খারাপ জিনিসটাও বড় অদ্ভুত! যে কোনও কারন এই হোক না কেন, মন বাবাজি একবার খারাপ হওার গন্ধ পেলে যেন বাকি কারন গুলকেও ডেকে আনে। বিভিন্ন সব না বলা, না মনে করতে চাওয়া বেদনাগুলো কালবৈশাখীর মেঘের মতো একসাথে ছুটে আসে...
একরাশ বিরক্তি নিয়ে একটা রিক্সায় উঠলাম।
“হোটেল নির্জন সৈকত। কত?”
নির্জন সৈকত। বড়ো সুন্দর লেগেছিল হোটেল এর নামটা। পরে জানতে পারি এক পুরনো বাংলা ছবির থেকে নামটা টোকা! আগের বার যখন এসেছিলাম, নামটার জন্যই এই হোটেলটায় ওঠার সিদ্ধান্ত নিই। লাভবানই হয়েছিলাম সিদ্ধান্তটার ফলে। স্বর্গদ্বার থেকে মাইল দেড়েক দূরে অবস্থিত হোটেল টা... সত্য সত্যই বেশ নির্জন একটা এলাকায়। আশে পাশে বসতী বলতে দু একখানা চা-সিগারেট এর দোকা
ন। সেগুলোও সন্ধ্যের পর বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য এই বর্ণনাটি পনেরো বছর আগের। বর্তমানে জায়গাটা কতটাই বা আর নির্জন থাকবে... নিজের মনকে কতকটা প্রস্তুত করেই নিয়েছিলাম স্মৃতিতে আগলে রাখা হোটেলের সেই ছবিটা আর দেখতে পাবো না ভেবে।
তবে শেষমেশ পেলাম! ছবিটা আদপে পাল্টায় নি খুব একটা। আসলে কারন টাও বুঝতে পারলাম খুব শিগগির; স্বর্গদ্বার এর যে দিক টা গত পনেরো বছরের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং বানিজ্যের জোয়ারে গা ভাসিয়েছে, আমাদের হোটেলটি তার বিপরিত দিকের অঞ্চল এ। এদিকটায় জনবসতি এখনো বেশ কমের দিকেই। সুতরাং রিক্সা থেকে যখন নামলাম, যাত্রায় প্রথম বার যেন মন টা পুলকিত হয়ে উঠল! পান বিড়ির দোকান গুলো এখন পরিপুষ্ট মুদির এবং বিবিধ জিনিষ এর দোকানে পরিনত হয়েছে। কয়েকটা খাবারের দোকানও গজিয়ে উঠেছে। আমাদের নির্জন সৈকতে আবাসটিও নতুন রঙ হওার ফলে এবং একটা নতুন উইং এর সংযোজন এর ফলে বেশ ঝকঝকে দেখতে হয়ে উঠেছে! নেমে ম্যানেজার ভদ্রলোক কে দেখে আরেক চমক! আগেরবারের পরিচিত মানুষটিই বটে। আমাকে চিনতেও পারলেন তিনি। অবশ্য পারারই কথা... যে কাণ্ডটা বাঁধিয়েছিলাম, কজন টুরিস্টই বা সেরকম কাজ করে...?
TO BE CONTD...