Samman Roy

Drama

3  

Samman Roy

Drama

আমি সাগরের বেলা 4

আমি সাগরের বেলা 4

2 mins
11.6K


আমি আমার চটিদুটো বালির উপর জড়ো করে তার উপর এই বসে পড়লাম। সামুদ্রিক হাওয়ায়ে প্রাণটা যেন জুড়িয়ে আসছে। তন্দ্রাভাব অনুভব করছিলাম একটা। শেষবার এই সমুদ্রতটে যখন এসেছিলাম, পায়ে চটিটা অবধি ছিল না... কেমন পাগলপ্রমান অবস্থায় এই বালির পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতেই সেই পড়ন্ত বিকেলে, সর্বগ্রাসী সমুদ্রের দিকে...

“আরে! ও-ওটা কি?”

দূরে সমুদ্রের মধ্যে প্রায় একশো মিটার দূরত্বে, কি যেন একটা নড়ছে! আমি উঠে গিয়ে একটু ভাল করে দেখার চেষ্টা করলাম। কি যেন দুটো জিনিষ জলের ওপর উঠে উঠে উঁকি মারছে। কি ওগুলো...? কারোও... কারোও হাত নাকি...? তক্ষুনি দেখলাম একটা মাথা জলের ওপর উঠে শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করে উঠল! সর্বনাশ! একজন পুরুষ জলে ডুবে যাচ্ছে যে! কি করব বুঝে উঠতে পারলাম না। আশেপাশে কোনও নুলিয়া নেই... হোটেল টাও তো প্রায় পাঁচশো মিটার পিছনে। ওখান থেকে কাউকে ডেকে আনতে আনতে তো লোকটা তলিয়েই যাবে! কি করি, কি করি!

তারপর যেই কাজটা করলাম, তাঁর কোনও অজুহাত বা ব্যাখ্যা হয় না! একজন স্ত্রী-সন্তান-সংসার সম্পন্ন, দায়িত্ববান পুরুষ মানুষ এর এমন বেপরোয়া কাজ সাজে না! আমার মোবাইল ফোন র ঘড়ি টা খুলে চটির ওপর রেখে আমি দৌড়ে নেমে গেলাম সমুদ্রে। একটা মানুষ এর বিপদ দেখে আর সামাজিক দায়িত্ব, কর্তব্যের কথা মাথায় থাকলো না। মনে আছে, স্কুলে পড়তে সাঁতারের প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কারটা আমার গলায় ওঠেনি, এরকম দৃষ্টান্ত বোধয় হাতের একটা আঙ্গুল দিয়েই গোনা যাবে। সেই গুনটা ঠিক সময় কাজ না লাগালে, একটা প্রান বাঁচানোর কাজে না লাগালে সেটা আর কিসের গুন? লোকটা বোধয় অগ্যান হয়ে গেছিলো, না মারা গেছিলো আমি জানতাম না। তাঁর শরীরে কোনও সাড় ছিল না। আমি তাঁর মাথাটা ধরে, জল এর ওপর রেখে, কোনোক্রমে পাড়ের দিকে এগোতে লাগলাম। ঢেউ এর প্রকোপ তখন বেশ বেড়েছে। ভরা জোয়ার। ছোটবেলার নাকানি চোবানির ঘটনাটার উল্লেখের কারণটা আশা করি একটু স্পষ্ট এখন। উত্তাল সমুদ্রে, ঢেউদের থেকে বেঁচে কীভাবে সাঁতার কাটতে হয়, সেই প্রক্রিয়াটি শিখেতে বাধ্য হয়েছিলাম সেই ঘটনার পর। মিনিট পাঁচ-সাতেক সেই উত্তাল সমুদ্রের সাথে সংঘর্ষের পর পাড়ে পৌঁছলাম। প্রথমেই নাক এর নিচে হাত দিয়ে দেখে নিলাম। বেঁচে আছে। বরাত করে জন্মেছে বটে... রক্ষে আমি সেই সময় ছিলাম পাড়ে! নাহলে এমন নির্জন জায়গায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কেউ বাঁচে? কিন্তু লোকটা জলে নামলোই বা কখন? চোখে পড়ল না তো!

“শুনছেন? আপনি কি ঠিক আছেন?” ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠানোর চেষ্টা করলাম লোকটাকে। তখনই গন্ধটা আমি পেয়েছি। মদের গন্ধ। বুঝতে পারলাম কোন অপদার্থতার ফলে অঘটনটা ঘটিয়ে ফেলছিলেন ভদ্রলোকটি। হ্যাঁ, ভদ্রলোক না বলে তো উপায় নেই। পরনে রিতিমত দামি সাদা শার্ট র তাঁর ওপর কালো সুট-প্যান্ট! মুখ দেখে মনে হয় বয়স আন্দাজ আমার থেকে ২-৩ বছর কম হবে। দাড়ি কামানো, সুথাম চেহারা। দেখে তো শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত মনে হয়... আথচ কি সাংঘাতিক কাণ্ডগ্যানহীন!

TO BE CONTD...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama