আমি সাগরের বেলা 3
আমি সাগরের বেলা 3
“এখন কেমন আছ ভাই...?” সস্নেহে জিগ্যেস করলেন ভদ্রলোক।
“বেশ আছি দাদা। বিয়ে করেছি। পাঁচ বছরের একটা ছেলেও আছে।“
“বাঃ! বাঃ! তো তাদের সঙ্গে নিয়ে এলে না কেন?”
“তিন দিনের ছুটি পেয়ে মামাবাড়ি গেছে। সচরাচর যাওয়ার সুযোগ পায় না। কলকাতা থেকে আর বারবার যাওয়া হয়ে ওঠে না আসলে... বুঝতেই পারছেন।“
“আছছা, আছছা। ভালো। তা এবার আর তোমায় চোখে চোখে রাখতে হবে না আশা করি...?”
আমি লজ্জায় জিব কেটে বললাম, “কি যে বলেন দাদা!”
ভদ্রলোক ম্রিদু হেসে, বেয়ারা কে ডেকে আমার লাগেজ নিয়ে ঘর দেখিয়ে দিতে বললেন।
আমার ঘরের পিছন দিক টায় আর কোনও জনবসতি নেই। সুধু সমুদ্র আর ঝাউবন। পৌঁছতে পৌঁছতেই প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেছিলো। হাতমুখ ধুয়ে, একটু ভাত আর ডিম এর ডালনা খেয়ে যখন একটা সিগারেট ধরিয়েছি, তখন পড়ন্ত বেলার আলোয় সমুদ্রের জল এর ওপর সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ দেখে মন কে আর ধরে রাখতে পারলাম না। বেরিয়ে পরলাম সমুদ্রতটে একটু হেঁটে আসতে। দিগন্ত বিস্তৃত বালিতট... তার ওপর দিয়ে লাল লাল সব কাঁকড়ার সারি দৌরে বেড়াচ্ছে। কখনও গর্তে ঢুঁকে যাচ্ছে, কখনও বা মরা কচ্ছপের দেহাবশেষের ওপর হামলা করছে। সমুদ্রের ঢেউ ঘনায়মান সন্ধ্যার সাথে সাথে যেন ধীরে ধীরে উত্তাল, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। পুরির সমুদ্রের যে জিনিষটা আমায় সব থেকে বেশি টানে, সেটা হল তার জলের আকাশসম নীল রঙ। পশ্চিম বঙ্গের সমুদ্রের মত ঘোলাটে, ময়লা রঙ নয়... এ একেবারে খাঁটি আকাশি রঙ! এবং তার সাথে সাথে সমুদ্রের ভীষণ তেজ! ছোটবেলায় পুরির সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে ঢেউ এর আক্রমনে খুব বিশ্রীভাবে নাজেহাল হয়েছিলাম। কলকাতা ফিরে বন্ধুদের কাছে গল্প করেছিলাম যে এক একটি ঢেউ প্রায় দোতলা উঁচু! ছেলেবেলার কল্পনায় যেটা দোতলা মনে হতো, সেটা হয়তো এখন অতটাও উঁচু লাগে না, কিন্তু তাও সমুদ্রের পাড়ে বালির ওপর এসে যখন আছড়ে পড়ছে, কেমন যেন এক শেকল বাঁধা শয়তান এর মত ভয় সঞ্চার করছে মনে...
TO BE CONTD...