আমি সাগরের বেলা -1
আমি সাগরের বেলা -1


প্রায় পনেরো বছর পর পুরি’র পথ এ পা বারিয়েছি। মাঝের বছর গুলো যে খুব ব্যাস্ততার কারনে এদিকে আসা হয়নি তা বললে মিথ্যে বলা হবে। আসা হয় নি, কারন আমি নিজেকে আসতে দিতে চাই নি। অনেক গুলো পুরনো বেদনাদায়ক স্মৃতির মধ্যে নিজেকে আবার তলিয়ে যেতে দিতে পারি নি। পুরি তো কখনও আমার অচেনা, অপরিচিত ছিল না। বরং ছোটবেলা থেকে আমার সবচেয়ে প্রিয় ভ্রমন এর গন্তব্য ছিল। প্রথম যখন এখানে আসি, তখন আমার বয়স মাত্র তিন! তারপর থেকে কম করে হলেও বার সাতেক তো ছুটি কাটাতে আসা হয়েইছে। শেষ বার যখন আসি... তখন আমার বয়স চব্বিশ কি পঁচিশ। অবশ্য সেবারের আসাটাকে ঠিক ছুটিতে আসা বললে চলে না...
পনেরই আগস্ট এ বছর শুক্রবার পড়ায় তিন দিনের একটা ছোট ছুটি পাওয়া গেলো। আমার স্ত্রি ও পাঁচ বছর এর ছেলে ঘণ্টু গেলো আমার স্ত্রি এর বাপ এর বাড়ি, অর্থাৎ লিলুয়া তে। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেদের সাথে কোন কালেই বনে না... কেমন যেন একটা কলকাতা বিদ্বেষী, অথচ অত্যাধুনিক ভাবসাব। আমি জীবন এ অনেক কালই বেশ আপুশে প্রকৃতির মানুষ ছিলাম। তবে একটা বয়স এর পর, “ধুর শালা, সবাই চুলোয় যাক – তুমি চলো তোমার পথে!” দর্শন টাই জিবনের মূল মন্ত্র মেনে নিই, এবং তারপর থেকেই দেখেছি, জিবনের সকল সমস্যার জট গুলোও যেন নিজে থেকেই খুলে যেতে লাগল। আমার বিয়ে হয় বছর আটেক আগে। ততদিনে আমি আমার জিবন এর এই উধ্রিত মতাদর্শটিতে যারপর নাই ভাবে মগ্ন। তাই শ্বশুরমশাই এবং তার সহযোগী দের চোখে চিরকালের জন্যই যেন আমি একটা প্রতিবাদি ভাবমূর্তির স্বরূপ হয়ে উঠেছি।
এই সব বিভিন্ন কারনের ফলেই ঠিক করি বউ ও বাচ্চা কে তিন দিন এর জন্য লিলুয়া রেখে নিজে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসবো। কোথায় যাবো, সেটা কিন্তু শেষ মুহূর্ত অবধি ঠিক করে উথতে পারি নি। শুনে অবাক লাগছে, জানি। হয়তো এটা পর্যন্ত ভাবছেন, “ধুর! এ আবার হয় নাকি? বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ও ঠিক করে বেরোয় নি লোকটা, যে কোথায় যাবে? এ স্রেফ গল্পে চাঞ্চল্য যোগ করার জন্য গুল মারছে!” কিন্তু বিশ্বাস করুন... হঠাৎ যখন দুই নম্বর প্লাটফর্ম এ আনউন্সমেন্ত হোল, “পুরি গামি ধউলি এক্সপ্রেস ৬ টা বেজে পঁচিশ মিনিট এ প্ল্যাটফর্ম এ ঢুকছে...” নিজেকে যেন আর সামলে রাখতে পারলাম না... বিদ্যুতবেগে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে একটা পুরির টিকিট করিয়ে নিই।
আগের বারও কতক টা এরকম ভাবেই আসা... ধউলি তেই। সেবার টিকিট করিয়ে ওঠা হয়নি। কোনওক্রমে জেনারেল এ দুটো সিট পেয়ে গেছিলাম। আমি আর আমার বন্ধু বিকাশ। বিকাশ কে ভুলবো না কখনও। বন্ধুর জন্য নিজের সব কাজ ফেলে এক কথায় রাজি হয়ে গেছিলো যাওয়ার জন্য। অবশ্য একটু খতিয়ে দেখতে গেলে বোঝা যায়, যে সেই সময় বিকাশ এর বিশেষ কাজ ও কোনও ছিল না। রিসেশন এ সমস্ত ভারতবর্ষ তখন কাহিল। কলেজ শেষ করে বেকার হয়ে বাড়িতে বসে ছিল। একটার পর একটা চাকরির ইন্টার্ভিউতে প্রত্যাখান। তাই ঘুরতে যাওয়াটা একরকম উত্তম প্রস্তাবনাই ছিল তার কাছে। আর আমি... আমি সেই সুদূর বাঙ্গালোর থেকে কেমন পাগলের মতো ছুটে... থুরি, উড়ে এসেছিলাম কলকাতায়... সুধুমাত্র একটি মানুষের জন্য...
TO BE CONTD...