STORYMIRROR

SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Inspirational Others

4  

SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Inspirational Others

আলোতে অন্ধকার / ১৪/০৭/২০২২---

আলোতে অন্ধকার / ১৪/০৭/২০২২---

3 mins
324

আলোতে অন্ধকার- (কঠোরভাবে প্রাপ্ত-বয়স্কদের জন্য-- )


আলোতে অন্ধকার 


 ডা: সত্যব্রত মজুমদার


 অখিল দাস, বয়স প্রায় আঠাশ, বাবা রিক্সা চালিয়েই কোনো রকমে চার ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী সাথে বৃদ্ধ মা কে নিয়ে শহরতলীর বস্তির ভাড়া বাড়িতে থাকত। মদের নেশা ছিল। অভাবের সংসারে অখিল ক্লাশ এইট পর্যন্ত্য পড়াকালীন কাজে লেগে পড়ে। এক  বন্ধুর সহায়তায় শহরের এক গ্রীল কারখানায় কাজ শিখতে শুরু করে।

বেপোরোয়া স্বভাবের , মারকুটে অখিল অল্প সময়েই মধ্যেই ওয়েল্ডিংয়ে কাজ ভালো রপ্ত করে ফেলে। লম্বা, চওড়া চেহারার অখিল পয়সা রোজগারের সাথেই বন্ধু- বান্ধব, মদ, দামি জামাকাপড় এই সবে মত্ত হতে থাকে। ছোটো থেকেই অভাবের মাঝেই বড়ো হওয়া, সংসারের মাঝে স্নেহ ভালোবাসা কি কখনো তা উপলব্ধি করতে পারেনি। কিন্তু তার ফলে অখিলের মনে একটা অতৃপ্ত খেদ থেকেই গিয়েছিল, বিশেষত: মেয়েদের ভালোবাসার প্রতি। যে কোনো মেয়েকে কথার মায়াজালে চট করে আপন করে নিতে পারতো, সরল মনে তার জন্য পয়সা খরচ করতে কার্পণ্য করতো না। সেই মুহূর্তে অখিল নিজের ভূত ভবিষ্যতের কথাই ভুলে যেত।

 অখিল একদিন এক বন্ধুর সাথে এক বারে মদ্যপান করে , সেখান থেকে মাঝরাতে এক পতিতা পল্লীতে গিয়ে হাজির হলো। অখিল আর তার বন্ধু এক চেনাশোনা দালালের মাধ্যমে সদ্য এই লাইনে আসা দুটি অল্পবয়সি মেয়ের ঘর নিল।  দালাল টাকা পয়সা ঠিক করে দিল মাথাপিছু চারশ টাকা। অখিলের সামনে এক অল্পবয়সি সুন্দরী ফুলের মতন মেয়ে কামনার অগ্নিতে থাকা দেহে মনের চাহনিতে কাছে আসার তুমুল আহ্বান ।

তোমার নামটি বলো? আমার নাম আলো, তুমি তো নতুন খোকা মনে হচ্ছে , আগে কখনো তুমি এসেছিলে এখানে? এই কথা বলে আলো মুচকি হাসতে থাকলো।

আমি আজই প্রথম এসেছি, আলো তোমাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে, একটু নেশা করেছি আলো, কিন্তু তুমি খুব সুন্দর, একটু জল খাওয়াবে আলো ? নিশ্চয়ই জল দেবো, আর দেবো কন্ডোম, তোমার ভালোর জন্য, জানো তো কত রকম মানুষ আসে আমাদের কাছে আনন্দ নিতে, তাদের কত রকমের গুপ্ত রোগ থাকে, আমরা তো টাকার জন্য না করতে পারি না।

অখিল আলোর দেওয়া জল খেয়ে দেখতে লাগলো, এযে এক অন্য জগৎ , অখিলের মনে

আর দেহে উত্তেজনার পারদ চড়তে লাগলো, আবার মনে কিছুটা ভয় আর দ্বিধা দেখা দিতে লাগলো। এই খেলায় পোক্ত হয়ে ওঠা আলো নিজের দেহ থেকে উপরের আবরণি খুলে উন্মূক্ত ফরসা শরীর অখিলের সামনে রেখে আহ্বান করতে লাগলো, অখিল দেখতে লাগলো আলোর 

লাল উন্মূক্ত স্তনযুগলের সৌন্দর্যতা, ধীরে ধীরে আলো নিজের পরিহিত জিনস্ প্যান্ট খুলে ফেলতেই , অখিল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না; চোখের সামনে শুধু বিকিনি পরিহিত আলোর যৌন আকর্ষণ তাকে সাময়িক পাগল করে তুললো। 

আলোকে নিমেষে কাছে টেনে জাপটে ধরে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে তুলতে লাগলো, গাল, লাল ঠোট, কপাল, নরম স্তন যুগল অখিলের চুম্বনে, চুম্বনে আলো অস্হির হয়ে উঠলো, দুইজনেরই যৌন আর কামোত্তেজনার আগুন চরমে যেতে লাগলো, 

আলো তুমি আজ শুধু আমার, তুমি কি চরম সুখ দিলে আলো, এতো আনন্দ, শারিরীক সুখ আগে কখনো জানতাম না , পাইও নি।

অখিল এক যৌন আনন্দ সুখের এই উত্তেজনায় খেলায় জীবনের প্রথম স্বাদ পেলো, আলোর বিকিনির ভিতর হাত দিতেই , অখিলকে টেনে বিছানার উপর নিয়ে এলো, অখিল আলোর দেহের উপর চেপে শুয়ে তাকে মুহূর্মুহু চুম্বনে ভরিয়ে দিতে লাগলো, তুমি কন্ডোমটা পরে তারপর সঙ্গম করো, আমার কথা শোনো, 

না না আলো; আমি আর থাকতে পারছি না, কন্ডোম ছাড়াই আমাকে তৃপ্তি নিতে দাও, তোমার মতন সুন্দর নারীর সুখ পরিপূর্ণ ভোগ করতে দাও আলো, শুধু একটি বার, শুধু একটি বার আলো। আমি বার বার তোমার কাছে আসবো, তোমাকে আমি ভুলতে পারবো না , যত টাকা লাগবে তোমার প্রয়োজনে আমি দেব আলো, আমাকে ভুলবে না আলো, আমার আলো । এই সঙ্গম  ক্রিয়া শেষ হতে ভোর হয়ে এলো।  ভোরের আলোয় ঘর্মাক্ত শরীরে অখিল আর তার বন্ধু  বাড়িতে এলো, অখিল তাড়াতাড়ি স্নান করে শুয়ে পড়লো। শুয়েও অখিলের ঘুম আসে না, শুধু মনে পড়তে থাকে গত রাতের ছবি, আলোর যৌন উত্তেজক পোষাক, আর তার রূপ আর কথার জাদু।  

 সপ্তাহখানেক পরেই একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই  অখিল খেয়াল করে তার মুখ চোখ ফুলে উঠেছে, শরীরে প্রচন্ড ব্যথা, বেলা বাড়তেই জ্বর বাড়তে লাগলো । পরের দিন প্রস্রাব কমে গেল, লিঙ্গ ফুল কপির মতোন ফুলে বিষাক্ত সংক্রমণ দেখা দিল ।  অখিল বুঝতে পারলো, যে সে কি নেশার ঘোরে মারাক্তক ভুল করে ফেলেছে। আলোর কথা শুনলে আজ এই সর্বনাশ  ঘটতো না, লজ্জায় ভয়ে কাউকে এই কথা বলার মতোন নয়। অখিল বন্ধুকে ফোনে এই পরিস্হিতির কথা বলতেই বন্ধু বললো আমি কিন্তু এই ভুল করি নাই, সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম। তুই মারাত্মক ভুল করে ফেলেছিস।

এতোটা বেপোরোয়া হওয়া ভালো না। ঠিক আছে আমি দেখছি, এর পর অখিলকে নিয়ে বন্ধু তার এক পরিচিত ডাক্তার বাবুর কাছে নিয়ে গেল ।

অখিল যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পড়লো, এই কষ্ট সহ্য করার মতো নয়। ডাক্তার বাবু আমাকে বঁ1চান, আমি আর পারছি না । 

 ডাক্তারবাবু সব শুনে আর পরিস্হিতি বিবেচনা করে চিকিৎসা শুরু করলেন। অনেক ভুল করেছো অখিল, এখন অনেক সহ্য করতে হবে, দীর্ঘ চিকিৎসা চালাতে হবে, প্রচুর অর্থ লাগবে, কারণ অখিল  তুমি গণোরিয়ায়  আক্রান্ত হয়ে পড়েছো, এই জীবাণু ঘটিত রোগটি সুন্দরের মাঝেই অবস্হান করে, বোঝা যায় না, নিসেরিয়া গনোরিয়া, এটি একটি গনোকক্কাস সংক্রমণ, গ্র্যামনেগেটিভ জীবাণু , আর কি জানো তো , স্ত্রীলোকের গণোরিয়া প্রায় অর্ধেকের বেশী ক্ষেত্রে কোনো এর বাহ্যিক প্রকাশ থাকেনা।আর এও জেনে রাখো মেয়েদের সিফিলিস সংক্রমণের ইতিহাস দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে, এটির সংক্রমণ এক থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্হায় থাকতে পারে। সিফিলিস মেয়েদের ভবিষ্যতে মারাত্মকভাবে জীবন নাশ করতে পারে আর তার ফলে সাবধানতা অবলম্বন না করে যে ঐ সুন্দরের মাঝে মধু খেতে যাবে, তারই এই রকম বিপদ আসতে পারে। আক্রান্তের রক্তকোষে এই রোগের জীবানু সুপ্ত অবস্হায় থেকেই যায় আজীবন আর তা থেকে ভবিষ্যত প্রজণ্ম ক্ষতিগ্রস্হ হয়ে থাকে কখনো  কখনো।

অখিল আলোর কথা চিন্তা করতে থাকে, ভুল আমি করেছি, বেপরোয়া জীবনের এই ফল, 

সাময়িক আনন্দের মোহে আমার ভবিষ্যৎ  আমি অনিশ্চিৎ করে তুললাম, অখিল কঁ1দতে থাকে, 

না না অখিল ভয় পাওয়ার কিছু নেই, চিকিৎসা করলে নিশ্চয়ই ভালো হয়ে  যাবে, এই ছেলেমানুষি বয়সে অনেকেই ভুল করে, ডাক্তার বাবু অখিলের মাথায় হাত রেখে বললেন আমি আছি তোমার পাশে , আমার নির্দেশ মতোন চলো, আর ভুল পথে চলো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। অখিল , এই সমাজে, এই দেশে কত জন  যে এই অন্ধকার জগতে সাময়িক উত্তেজনার মোহে , নেশার ঘোরে এই সর্বনাশ নিজের জীবনে ডেকে নিয়ে আসে , তা খুবই ভয়াবহ।

অখিল আর তার বন্ধু ডাক্তারবাবুর কথাগুলো শুনে বুঝতে পারে এই ভাবে তারাও তো ভুল আলোতে নেশার ঘোরে, সাময়িক উত্তেজনায় কামনার আগুনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ তৈরী করে ফেললো, অখিলের দুই চোখের জলের ধারা বইতে থাকলো দেহের কষ্ট  মনকে যেন রুদ্ধ করে তুলতে লাগলো। এই জ্বালা সহ্য করা খুবই কঠিন মনে  হতে  থাকলো অখিলের  কাছে , কারন এই জ্বালা তো সমাজে কাউকে বলা  যায়  না, মুখ  বুজেই  সহ্য  করতে  হয় ।


 ডা: সত্যব্রত মজুমদার---


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy