203 তম জন্মবার্ষিকী
203 তম জন্মবার্ষিকী
'' বাবা ! বাবা গো ! , তুমি আমাদের বাঁচাও !
বৈধব্যের যন্ত্রণা যে আর সইতে পারি না !
বাবা ! বাবা গো ! ও বাবা ! .....''
স্বপ্ন দেখে উঠে পড়তেন তিনি । প্রতিটি রাত তাঁর কাটতো বিনিদ্র । দিনের বেলায় স্কুল , কলেজ সেরে তাঁকে বহু জায়গায় যেতে হতো সমাজের বিভিন্ন উন্নতির জন্য । যেখানেই যেতেন সেখানে অল্পবয়সি বিধবা , না খেতে পাওয়া বৃদ্ধ , বৃদ্ধার কান্না শুনতে পেতেন । তাঁর হৃদয় ডুকরে উঠত।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ' বিধবা বিবাহ '
আইন পাশ করাবেনই। ভাগ্যের দোষে কেউ যদি
অল্প বয়সে বিধবা হয়েও যায় তবে সারা জীবন সে যন্ত্রনা ভোগ করবে কেন ? সমাজ কেন তাকে দূরে ঠেলে রাখবে ? সমাজের কি কোন দায় থাকবে না তার উপর ? এই রকম হাজার প্রশ্ন তাঁকে কুরে কুরে খেত । কচি কচি
মুখ গুলো একাদশীর নির্জলা উপবাস করছে
শুনলে কান্না তিনি চেপে রাখতে পারতেন না ।
অথচ সমাজের বেড়া ভাঙ্গার মতো ইচ্ছা, শক্তি
থাকলেও তৎকালীন হিন্দু সমাজ, পণ্ডিত সমাজ
পুরোহিত সমাজ তাঁকে বাধা দিচ্ছিল।তাঁর নামে
কুৎসা রটাচ্ছিল কিন্তু তিনি ছিলেন অদম্য , জেদী । বিধবা বিবাহ আন্দোলনে তিনি সনাতন হিন্দু শিবিরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন । ভোগ করেছিলেন অশেষ অপমান । এমন কি শারীরিক আক্রমণও !
অনেক লড়াইয়ের পর তিনি বাস্তব বুদ্ধিতে বুঝেছিলেন ধর্মীয় বিধান না মিললে সমাজ ব্যাপারটা মানবে না । আইনও পাশ হবে না । তিনি দিন রাত নাওয়া খাওয়া ভুলে গ্রন্থাগারে পুঁথি ঘেটেছেন । বেদ , বেদান্ত ঘেটেছেন অবশেষে পরাশর শাস্ত্রে অনুকূল বিধান পাওয়ার পর বিজয় সূর্যের উজ্জ্বল আলোর আভাস পান এবং উদ্ধৃতি তুলে লিখিত ভাবে জানান , '' বিধবা বিবাহ সম্পূর্ণ ভাবে শাস্ত্র সম্মত '' ।
তখনকার ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় ভারতবর্ষের সকল বিচার ব্যাবস্থায় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ বৈধ করা হয়েছিল । একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রচেষ্টায় তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং আইন প্রনয়ন করে বিধবা বিবাহ কে আইনি স্বীকৃতি দেন। লর্ড উলিয়াম বেন্টিং এর দ্বারা সতীদাহ বিলুপ্ত করারপর এই টিই প্রথম বড় সমাজ সংস্কার আইন।
যার পুরোধা ছিলেন শ্রদ্ধেয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় । 203 তম জন্মদিবসে তাঁর প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও প্রণাম !
'' সংগ্রহ থেকে ''
