স্মৃতি
স্মৃতি
: তোমাদের যেমন গণপতি বাপ্পা । আমাদের তেমনি
দুর্গা মা ।
: তাই ?
: একদম । কাঁটায় কাঁটায় । তোমাদেরও দশ দিন ।
আমাদের ও সামনে পিছনে মিলে দশ দিন ।
: সামনে পিছনে মানে ?
: আমাদের ওখানে মহালয়া থেকে পুজো উদ্বোধন
শুরু হয় এখন ।
: মহালয়া.....মানে ?
: মহালয়া বোঝ না ?
: আরে বলই না ।
: সে না হয় বললাম । মহালয়া হচ্ছে পিতৃ পক্ষএর
শেষ । আর দেবী পক্ষ এর শুরু । পুজা দেবী পক্ষে
হয় । তুমি কলকাতার দুর্গা পুজো কখনও দেখনি ?
রোজি বললো -- না ।
সম্পন্ন বললো -- নাহ । এবার চলো তোমাকে আমাদের ওখানের পুজো আমি দেখাবো । সম্পন্ন
সত্যিই রোজিকে নিয়ে এসেছিল ওদের বাড়ি ।
আলাপ করিয়ে দিয়েছিল ওর বাবা , মা আর বোন
ডেজির সাথে ।
সকালের টিফিন সেরে বোন ডেজী আর রোজিকে
নিয়ে বেরিয়ে ছিল গাড়িতে । নিজেই ড্রাইভিং কর-
ছিল । বেশ কয়েকটা মন্ডপ দেখিয়ে দিল । রোজি
অবাক ! ডেজী বললো -- দিনের বেলাতেই তোমার
এই অবস্থা ! রাতে কি করবে রোজি দি ।
রোজি বললো -- কেন ? রাতে কি আলাদা কিছু ..!
ডেজি বললো -- রোজি দি তোমার তো কোন ধারনা
নেই । অবশ্য থাকার কথাও নয় । কারণ তুমি এই
প্রথম । সেটা রাত এলেই বুঝতে পারবে ।
রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি । সন্ধ্যা রাতেই
রাস্তায় জন সমুদ্র । পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে । সম্পন্ন
গাড়ি নিয়েই বেরিয়ে ছিল রোজির জন্য । ওর তো
অভিজ্ঞতা ভালোই । শুধু রোজিকে দেখানোর জন্য।
মন্ডপ থেকে অন্তত এক কিমি দূরে গাড়ি রেখে পায়ে পায়ে হেঁটে ঠাকুর দর্শন করে যখন আবার গাড়ীর কাছে ফিরে এলো তখন আড়াই ঘন্টা কাবার ।
রোজি মাথায় হাত দিল । বললো -- আর ঘুরতে হবে না । বাড়ি চলো । ......এই ডেকরেসন !
মুম্বাই কোথায় লাগে !
সম্পন্ন বললো -- এখন ই বাড়ি যাবে ? আজ তো
সারা রাত ঠাকুর দেখা । কোন মন্ডপ কোন কোন
মন্ডপ কে টেক্কা দিল সেটাই তো নোট করার বিষয় ।
রাত বারোটায় জন সংখ্যা কত? রাত একটায় জন
সংখ্যা কত? রাত দুটোয় জন সংখ্যা কত ? ........
সমস্ত রিপোর্টিং কাল কাগজে বের হবে । সারা রাত
নির্বাচিত বিচারক মণ্ডলী প্রতিটি মন্ডপে যাবেন।
প্রতিটি বিষয় খুটিয়ে দেখবেন । এর ওপর পুরস্কার
নির্ভর করবে । স্বাস্থ্য বিষয়ক নীরাপত্তা , দমকল ,
এম্বুলেন্স , ডাক্তার । পরিচ্ছন্ন তা এবং সর্বোপরি
কি ভাবে দর্শক বৃন্দকে মেনটেন করছো সেটাও
দেখা হয় । বড় বড় নামী কোম্পানি পুরস্কারের
টাকা সাজিয়ে রাখে । রোজি অবাক হয়ে গেলো!
ঘুরবো না ঘুরবো না করেও রাত আড়াই টা পর্যন্ত
ঘোরা হয়ে গেলো ।
যখন বাড়ি ফিরে এলো তখন সাড়ে তিনটা বাজে ।
রোজি তখন আর রোজিতে নেই । বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে বেরিয়ে ছিল । কাফেতে ওরা খেয়েও
ছিল । কিন্তু অতো রাতে রোজির খাওয়া অভ্যেস
নেই । ফলে শরীর ভালো নেই । সেই যে ফিরে এসে
রোজি শুয়েছে -- পরের দিন বিকেল তিনটে পর্যন্ত
বিছানায় । সাড়ে তিনটের সময় ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসতেই সম্পন্নর মা ছায়া দেবী জিজ্ঞাসা
করলেন - কেমন ঘুরলে - মা কাল ?
রোজি হাসতে হাসতে বললো , মাসিমা - আমার
কোন ধারণাই ছিল না । সত্যিই নজর কাড়া ।
মন কাড়া । হৃদ্য় কাড়া । এক কথায় অনুপম
বলা যায় । মাসিমা জিজ্ঞাসা করলেন , আজ কে ....?
ওনার কথা শেষ হবার আগে রোজি বললো - না না। আমি ।
দশমীর দিন মsatisfiedন্ডপে সিন্দুর খেলা দেখলো রোজি ।
সন্ধ্যয় গঙ্গার ঘাটে বিজয়ার দৃশ্য মনে রাখার মত ।
কবি , গায়ক , গায়িকা , গিটার বজিয়ে , বাঁশিওয়ালা সব একাকার । পাগলের মতো বিদায়
বেলায় মেতে গিয়ে 'মা ' কে বিদায় জানাচ্ছে !
আর একটা দিন থেকে কলকাতাকে বিদায় জনিয়ে
রোজি ফিরে এলো মুম্বাই । দুর্গা পূজার স্মৃতি
সকলের সাথে ভাগ করে নিল নিজের অফিসে ।
..............................................................

