তট-তরঙ্গ উবাচ
তট-তরঙ্গ উবাচ
তট বলে, কেন রে ঢেউ আমায় আঘাত হানিস,
একটু বুঝে দেখনা তটের বেদনা অহর্নিশ।
সারাদিনই তোর দাপটে বুকের পাঁজর ভাঙ্গে,
বালুরাশির বাঁধন কেমন আলগা হতে থাকে।
পূর্ণিমাতে দামাল ঢেউয়ের দাপট আরও বাড়ে,
ধাক্কা খেয়ে তটের বুকে প্রেম জাগবে না রে।
মাঝে মাঝেই তরঙ্গ তুই আসিস এমন তেজে,
শিল্পীর গড়া বালুকাসৌধ ভেঙে যায় জলে ভিজে।
তরঙ্গ বলে, তট কেন তুই ব্যথার কথা বলিস,
সমর্পণে ঢেউ চেয়ে যায় তটের প্রেমের হদিশ।
তোর শরীরে পায়ের চিহ্নে ঢেউ পায় বড় ব্যথা,
মুছে দিয়ে যায় কলঙ্ক চিহ্নে, শোনায় মনের কথা।
তোর শরীরের ছোঁয়া পেতে চায় তরঙ্গ ভালোবেসে,,
বারে বারে তোর খোঁজ নিয়ে যায় জলের ধারা এসে।
তট বলে, বুঝেছি আমি, তোর হৃদয়ের টান,
ভালোবাসার স্রোতে ভাসিয়ে বাড়ালি সম্মান।
নীল দিগন্ত মিশেছে বুকে, সাগরের নীল জলে;
সূর্যোদয়ের সোনালী আলোক ঢেউয়ের মাথায় খেলে।
স্থান পেয়েছে কত শত প্রাণ সাগরের নোনা জলে,
তোর বুকেতে প্রাণ ফিরে পায় মাল্লা, মাঝি, জেলে।
আমি কেমন নীরস মনে স্থাণুবৎ আছি পড়ে,
মৃত প্রাণিকুল সমাধি খোঁজে সাগরের এই তীরে।
তরঙ্গ বলে, দুঃখ কিসের, তটেরও আছে শোভা,
ঝাউ গাছেরই স্নিগ্ধ ছায়ায় প্রশান্তি মনোলোভা।
বালুকাবেলায় ঝিনুক খোঁজা, অপরূপ এক নেশা,
তোর কোলেতে প্রেমিক প্রাণে ঘর বাঁধবার আশা।
তরঙ্গকে স্থান দিবি তোর হৃদয়ের চারিপাশে,
তটের পাশেই তরঙ্গ রবে অপরকে ভালোবেসে।
