শিক্ষার রেখা
শিক্ষার রেখা
শিক্ষার রেখা (prompt – 19)
মানিক চন্দ্র গোস্বামী
গতকাল সন্ধ্যাবেলা,
বৃষ্টি হলো এক পশলা,
গুমোট গরম বাড়লো রাতের দিকে;
সাহা বাবু সাহস করে,
খোলা দরোজার ঈষৎ আড়ে,
রাত কাটালেন সদর আগলে রেখে।
সকাল বেলা আঙ্গিনা মাঝে,
কাদা পায়ের ছাপটি ভিজে,
বুঝতে পারেন এসেছিলো কেউ ঘরে;
এমন কেন নিদ্রা গভীর,
আচ্ছন্নতায় মগ্ন শরীর,
দুষতে থাকেন শুধুই আপনারে।
কাল রাতে এসে চোরে,
নিয়ে গেছে চুরি করে,
দুশ্চিন্তায় চুপ সাহা বাড়ি।
নিয়েছে কি মালপত্তর,
খুঁজে দেখো অতি সত্বর,
চুরি গেছে শুধুই টাকা কড়ি?
ঘুম ভেঙে লোকে জেনে,
ছোটে সাহা বাড়ি পানে,
সহানুভূতির কথা বলে খাসা।
কেউ বলে পুলিশ ডাকো,
কেউ বলে চুপ থাকো,
স্তম্ভিত সাহা বাবুর চোখে হতাশা।
হৈ চৈ করে লোকে,
গমগমে চতুর্দিকে,
চিৎকারে মুখরিত ভোরের বাতাস।
কেউ বলে ইস, আহা,
কেউ বলে 'ওগো সাহা,
গেছে কতটুকু তার করেছো নিকাশ ?
চিন্তা, শোকে মুহ্যমান,
সাহা কর্তা ছুটে যান,
খোঁজ নেন, কত গেছে চুরি;
অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে,
সাহা কর্তা বলেন ধীরে,
স্বস্থান হতে কিছু যায় নাই সরি।
শুনে সবে দিশাহারা,
যায় নাই কিছু হারা,
তবে কেন সাহার মন ভারী ?
বিনা কাজে লোক ডেকে,
ব্যস্ত করে একে, ওকে,
বলে কিনা হয় নাই চুরি।
উপহাস কেউ করে,
কারো মুখে ক্রোধ ভরে,
ফিরে যায় ধীরে ধীরে সবে;
চোর তবে এলো কেন,
আবার আসবে জেনো,
খোঁজ খবর নিয়ে গেলো তবে।
স্বস্তি পেয়ে নিজ মনে,
সাহা বাবু যান স্নানে,
পাঠশালাতে যাবার এলো ক্ষণ।
আনতে গিয়ে হাতের ছড়ি,
সাহা কর্তার আওয়াজ ভারী,
বুঝে যান হারিয়েছে কোন ধন।
বার্তা শুনে আসে ছুটে,
লোকজন বাড়ি হতে,
জানতে চায়, কি গিয়েছে চুরি;
সাহা বাবু হেসে কন,
জেনেছি যে এতক্ষন,
চুরি গেছে মোর শক্ত ছড়ি।
বুঝে গেছি কাজ কার,
পথ নেই পালাবার,
ধরবো তাকে হাতেনাতে আজ।
মার খেতে ভয় পায়,
সরিয়েছে ছড়ি তাই,
দুষ্টমতি হরার এই কাজ।
কোনোদিন কক্ষে হরা,
পারে না বলিতে পড়া,
মার খায় শুধু হাত পেতে;
শিক্ষকে মারে কেন,
নিষ্কৃতি পায় যেন,
চুরি করে ছড়িটারে, এসে কাল রাতে।
কক্ষে গিয়ে খোঁজ লন,
হয়েছে কি আগমন,
শাস্তি তোকে পেতে হবে হরা।
হরা এসে করে স্বীকার,
মাফ করে দিন স্যর,
রাতে গিয়ে চুরি করি ছড়া।
মার খেয়ে প্রতিদিনে,
ভেবেছিনু মনে মনে,
যদি করি ছড়ি আমি চুরি;
পড়বে না পিঠে মার,
কাঁদবে না হরা আর,
বেত্রাঘাত শিক্ষকে দেবেন বুঝি ছাড়ি।
সাহা তাকে ডেকে কন,
মন দিয়ে হরা শোন,
শাস্তি তোকে ইচ্ছে করে আমি দিইনে;
পড়াশোনায় তোর মন, নেই কোনোদিন,
ফাঁকির প্রাধান্যে তোর স্মৃতি যে মলিন,
প্রতিদিনে শাস্তি তাই পেলি নিজগুনে।
ভয় যদি এতো তোর মাস্টারের মারে,
প্রতিদিন তুই শুধু আসবি পড়া করে,
জেনে রাখ মাস্টারে মারে না ইচ্ছা করি;
প্রতিজ্ঞা করবি তুই, এখন নিজ মনে,
চুরি করা মহাপাপ বলবি প্রতিদিনে,
পড়া আমি করবো ঠিক, করবো না আর চুরি।
শপথ নিয়েছে হরা,
প্রতিদিন করবে পড়া,
জীবনে কোনোদিন করবে না যে চুরি;
আনন্দিত সাহা শুনে,
বলেন, হরা তোর গুনে,
ছুটি পেলি, যা চলে আজ বাড়ি।