STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Tragedy Inspirational Thriller

3  

Paula Bhowmik

Tragedy Inspirational Thriller

পুষ্পকুন্তলা

পুষ্পকুন্তলা

3 mins
271

ওগো পুষ্পকুন্তলা, তোমাকে যে অনেক কিছুই

আমার বলার ছিলো কিন্তু হয়নি বলা।

হ্যাঁ সবার কাছেই আমি মাষ্টার-দা সূর্য কুমার সেন, 

কিন্তু তোমার কাছে শুধুই কালু, "নিঠুর-কালা" ।

আমার আদর্শকে যে তুমি করতে সম্মান,

কথাটা আমি পরে লোকের মুখে শুনে জেনেছিলাম।

আমি যে ছিলাম মনে মনে এক ভবঘুরে,

ভাবতাম বিবাহিত জীবন আমাকে, 

আদর্শ ও কর্তব্য থেকে নিয়ে যাবে দূরে

তাই তো সংসার-জীবন থেকে চেয়েছিলাম পরিত্রাণ।

কোনো অসুবিধে হতোনা একসাথে থাকতে,

পতি-পত্নী না হয়ে যদি আমরা শুধুই বন্ধু হতাম ! 

পরাধীন দেশের গ্লাণি সারাক্ষণ,

হৃদয় টা যে আমার শুধুই খেতো কুড়ে কুড়ে।

একথাটা জানতাম যে রাখতে পারবোনা স্ত্রীর মান,

তাই তো নিজে থেকেই সরে গিয়েছিলাম বহুদূরে।

বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে, গুরু সতীশচন্দ্রের কাছে স্বদেশের দীক্ষা পেয়েছিলাম।

বিশ্বাস করো, কেউ শোনেনি আমার কথা, 

বিয়ে করতে চাই না,কথাটা বাড়িতে জানিয়েছিলাম ।

বোধহয় ভেবেছিল বিয়ে দিয়ে করবে থিতু সংসারে,

তাই তো বিয়েটা করে ফেলে শেষে, 

দেওয়ানবাজারে তোমায় রেখে, না বলেই পালালাম।

নাগড়খানার খন্ড যুদ্ধে আমাকে গ্রেফতার করে, 

মামলায় হেরে গিয়ে আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। 

কিন্তু টেগার্টকে হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় ধরা পড়লাম।

শুনেছি আমি সব কথাই পরে, তখন নাকি তুমি, 

আসতে চেয়েছিলে আমাদের দলে।

কিন্তু আমার অনুচরেরা যে ছিল বন্দি,আয়রন রুল, 

আমারাই তৈরী করেছিলাম নিয়মের বেড়া জালে।

হয়তো সে কারণেই টাইফয়েড বাঁধিয়ে ভেঙে পড়লে !

পরে তো সেই মেয়েদেরও দলে নিয়েছিলাম।

কল্পনা, প্রীতি ওদের অনেক অধিকারও দিয়েছিলাম।

আসলে তোমার সাথে হয়নি যে আমার কথা ! 

বন্ধু হতে গেলে খুব জরুরী মন খুলে কথা বলা,

তাহলেই বোঝা যায় একে অপরের যতো ব্যাথা।

আমার সব কথা আমি খাতার পাতায়, 

চুপিসারে "বিজয়া" তে লিখেছিলাম। 

তবে তুমি জেনে খুশী হবে, চারদিনের জন্যে হলেও, 

আমরা, ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্যরা, 

চট্টগ্রামে স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। 

তোমার সাথে কথা হলে, বন্ধুত্ব হলে, 

হয়তো সবকিছুই হতো অনেকটা অন্যরকম ! 

সকলের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারগুলো হয়তো, 

তুমি একা হাতেই সামলে নিতে একদম। 

জালালাবাদে দারুণ যুদ্ধ হলো মরণপণ, 

অনেকেই করেছিলো মৃত্যুকে বরণ। 

শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে না পেরে আবার পালালাম! 

পাঁচ থেকে বেড়ে দশ হাজার টাকা হলো মাথার দাম। 

তিন বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও

পুলিশ পারেনি আমায় ধরতে, এবারেও পারতোনা, 

যদি না খোঁজ দিয়ে দিতো ঘরের ছেলে নেত্র সেন। 

দেশমাতার কাছে বিদায় নেবার আগে, 

তুমি এসেছিলে মোর স্মৃতিপটে, আমি ভাবছিলাম। 

ফাঁসির আগে আমি তোমাদের বোয়ালখালির মেয়ে, কল্পনা দত্তের কাছে, একটা গান শুনতে চেয়েছিলাম। 

কল্পনার চিৎকারে বিনোদ আমাকে, 

কি গান শুনিয়ে ছিলো জানো ? 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " যদি তোর ডাক শুনে

কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে" 

কিন্তু আমি তো এখন জানি পুষ্প

তুমি অবশ্যই আসতে আমি ডাকলে ! 

আমিই তো ডাকিই নি তোমায়, কথাই তো বলিনি ! 

তোমার হয়েছিলো, না জানি কতটা অভিমান ! 

ফাঁসিতে ঝোলাবার আগে যখন ওরা হাতুড়ি দিয়ে, 

আমার এক একটা দাঁত ভেঙে দিচ্ছিল, 

ভাঙছিলো মজবুত হাড়,মেরুদন্ড গুঁড়োতে চেয়েছিল। 

বিশ্বাস করো, তোমার মনের কষ্টটাও

আমি কিছুটা হলেও বুঝেছিলাম ! 

যখন তুমি শুয়ে ছিলে তোমার মৃত্যুশয্যায়, 

পুলিশ পাহারায় হলেও আমি দেখতে এসেছিলাম। 

মৃত্যুর পর আগুন তোমাকে শুচি করেছিলো, 

কিন্তু আমার কপালে তো সেটুকুও জোটেনি। 

আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পরেও যে

ওদের প্রতিহিংসার শেষ হয়নি। 

মাঝ সাগরে নিয়ে গিয়ে বুকে লোহা বেঁধে, 

দিয়েছে সলিল সমাধি। 

জানি, খুব কঠিন তোমার পক্ষে কথাটা মেনে নেওয়া, 

ঠিক যেমন কঠিন আমাদের শুধুই বন্ধু হওয়া ! 

দলের সকলের কাছে খুব বেশি চাহিদা তো ছিলোনা, 

"আদর্শ ও একতা" শুধু এইটুকুই তো চেয়েছিলাম! 

আজও তাই আমি অতৃপ্ত, বন্ধু ভেবে তোমাকে, 

অনেক কিছুই তো বললাম, 

দেখি চেষ্টা করে এবার একটু ঘুম যায় নাকি পাওয়া ! 



Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Tragedy