পাতা
পাতা


পাতা সব অক্ষত আছে,
শুধু খেই হারিয়ে ফেলেছি আমি ;
বারান্দার ছোট্ট কোণে আজকাল
একটা বটপাতা উঁকি দেয়,
চিকন দেহে চিকচিক করে রোদ,
ও জানে না এ বাড়ির কত গভীরে
জড়িয়ে গেছে ওর অস্তিত্ব, আমার মতই
ওই কচি পাতা খেই হারিয়ে ফেলেছে।
গল্পের একঘেয়ে ছাঁচ বুনতে বুনতে
মুড়ে রাখা পাতা ভাসিয়ে দিয়েছি
কোন এক অতল গহ্বরে ;
সিমেন্ট, ইট, লোহা ভেদ করে
আর একজনও যে তল খুঁজে চলেছে,
বুঝিনি তখন। বহুদিনের ধুলো ঝেড়ে
ভাবলাম, পাতা হয়তো বা একই আছে,
বিবর্ণ অক্ষরে হলদে কাগজ ভয়ানক
দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরতে লাগলো, চেয়ে দেখি
বাড়ি ঢেকে গেছে তার একচ্ছত্র শাসনে ;
শাখাপ্রশাখা মাঝে রাজেশ্বর দাঁড়িয়ে,
চারপাশে তার ধ্বংসলীলার চিহ্ন ছড়িয়ে।
খুব সাবধানে পাতা ওল্টাচ্ছিলাম,
স্মৃতির কবর খুঁড়তে গিয়ে পেলাম তাকে,
শুকনো, ফ্যাকাশে শরীর কৈশোর, যৌবন
পেরিয়ে তখন পুরোনো সঙ্গীর অপেক্ষায়।
মৃত্যুর স্পর্শ ফিরে গেছে তার কাছে হেরে গিয়ে,
ভাঙাচোরা অস্তিত্বে মনে রেখেছে আমার প্রিয় পাতা,
পাতার মধ্যে পাতা!
আলসের ধার বেয়ে তার রোদস্নানের দিনে
আমিই বসে থাকতাম সেখানে,
মন দিয়ে পড়তাম পাতার পর পাতা,
ভেবে দেখিনি , ও ও বসে থেকেছে,
বেড়ে উঠেছে প্রকৃতির আপন খেয়ালে ;
শুধু নিজের স্বার্থে ছিঁড়ে নিয়েছি
একটা একটা করে , চিহ্ন সাজিয়ে রেখেছি
আমার পাতার মাঝে, সে নীরবে মেনে নিয়েছিলো।
ঝুল পড়া সময় ভরে গেছে এর মধ্যে,
সে আজও অপেক্ষা করেছে,
যতক্ষণ না রাজার অধিকারে
ছাদ নেমে এসেছে পলক ফেলার আগে,
কাছে, ভীষণ কাছে, এক্কেবারে মাথার উপর!