মেয়ে,কোনটা তোমার নিজের ?
মেয়ে,কোনটা তোমার নিজের ?
"বলি ও শুনছ মেয়ে,
তোমার তো বাপু জন্মটাই হয়েছে
পরের বাড়ি যাওয়ার জন্য,
এটা কি তোমার নিজের বাড়ি ?
ওটাই তো তোমার আসল বাড়ি ।" -
জন্ম হল যে বাড়িতে, শৈশব কাটল যে বাড়িতে
যৌবন আসতেই সেই বাড়িটা হঠাত আর নিজের বাড়ি নয় ।
বিয়ের পর থেকে প্রায়ই শুনতে হয়, " শোনো বৌমা, এটা তোমার শ্বশুরবাড়ি,
এখানে বাপের বাড়ির কোনো নিয়ম চলবে না ।"
মেয়ে আমার প্রশ্ন তোলে, " মা, এটা তোমার শ্বশুর বাড়ি, ওটা তোমার বাপের বাড়ি,
তবে তোমার বাড়ি কোনটা ?"
মেয়ে আমার বড়ই ছোটো, সবে মাত্র ছয়,
সমাজের এই ঘেরাটোপ ওর মাথাতে কি রয় ।
জমে থাকা যত রাগ আর অভিমান
যেন বেড়িয়ে এল ওর কথা শুনে,
কথায় কথায় এখন প্রশ্ন জাগে ওর মনে ।
"আমি আছি তাই আমার বাড়ি, বাবা থাকে তাই বাবার বাড়ি,
পিসি,দাদু, তুমি থাকো তাই তোমাদেরও এটা বাড়ি"-
মেয়ে গিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলে ঠাকুমার কাছে
মা'র যদি বাড়ি না হয় এটা, তবে মা কেন এখানে আছে ?
উত্তর খুঁজে না পেয়ে ঠাকুমা বকা দিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয় চকলেট,
উত্তর দিতে পারলেই যে হবে সমাজের মাথা হেট ।
সত্যিই সমাজের কি অদ্ভুত নিয়ম, তাই না?
যেটা সবসময় তোমার তোমার করতে সেটা আসলেই তোমার নিজের নয়,
আর যেটা তুমি কখনই চিনতেও না, বিয়ের আগে থেকেই সেটাই তোমার নিজের হয় ।
তোমার চেনা বাড়িতেই তুমি কেমন হঠাত
দু তিন দিনের অতিথি হয়ে পড়ো তখন
আবার দেখো যখন কেউ প্রশ্ন করে, "বাড়ি কোথায় ?"
উত্তরে আসে, "বাপের বাড়ি এই জায়গায়, শ্বশুরবাড়ি ঐ জায়গায় ।"
তখনও যায় না বলা "নিজের বাড়ি এই জায়গায় !"
দিন যায় বয়স বাড়ে স্বামীর বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি
পরিবর্তিত হয় ছেলের বাড়িতে,
বাপের বাড়ি, স্বামীর বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, ছেলের বাড়ি -
এই করতে করতে আমার আমিটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়,
খুঁজতে খুঁজতে কত সময় পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না ।
শুধু মানুষগুলোকে আপন করার চেষ্টায় সহ্য করতে হয় কত কিছু,
চিরকালই সমাজ আর সামাজিকতার ঘেরাটোপে বন্দী থেকে যায় মেয়েদের জীবন ।
আসলে একটা মেয়ের গোটা জীবনটাই তো কেটে যায়,
এইভাবে মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে
সেটা হোক বাপের বাড়ি বা শ্বশুর বাড়ি
কিংবা ছেলের বাড়ি ।
