Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

sonjoy sharma

Tragedy Classics

4.0  

sonjoy sharma

Tragedy Classics

জলাঙ্গিনী

জলাঙ্গিনী

3 mins
65


আবর্জনা স্তূপে ভরা এই ময়লার রেল লাইন

হয়তো একদিন ছিল স্বচ্ছ সরোবর,

হয়তো প্রকৃতির অমূল্য মূল্যবান অলংকারে

সজ্জিত ছিল অপার অহংকারে,

হয়তো তাকে দেখতে আসতো

প্রকৃতিপ্রেমী হাজার কবি,

কিন্তু মানুষের নির্মমতায় আজ সে পরিণত

নর্দমার কালো বিষাক্ত উচ্ছিষ্ট জলাঙ্গী ।


হয়তো এককালে কলকল জলধারা বয়ে চলত এই পথে,

হয়তো গৃহিণী গৃহে যাওয়ার পথে,

হয়তো তাতে নেয়ে আসতো পথে,

একবার নামতো তৃষ্ণা মেটাতে ।

হয়তো পাখি তেষ্টা মেটাতো

জলাঙ্গীতে জলখেলা খেলে,

হয়তো হংসী মুক্ত ভাসতো

সাদা সুন্দর ডানা মেলে,

হয়তো মৎস্য খেলতে আসতো

সুদূর থেকে প্রিয়ার ডাকে,

হয়তো কখনো গর্জন উঠতো

পাশের কোনো বন থেকে,

ভয়ে হংসী, সকল প্রাণী

লুকাতো জলাঙ্গীতে ।


জলাঙ্গী

আজও আছে বেঁচে,

কিন্তু নেই তার সেই অপরূপ রূপ

যেন সে বৃদ্ধা হয়ে গেছে ।


যৌবন ফুরিয়ে গেছে,

যৌবনের সেই অপরূপ সৌন্দর্য

এখন আর নেই বেঁচে,

সবকিছু হারিয়ে গেছে ।

মানবতাহীণ মানব সমাজের কাছে

সে পরিণত হয়েছে উচ্ছিষ্ট নর্দমায় ।

যার রূপ-লাবণ্যে মুগ্ধ হয়ে

বহু ক্রোশ পাড়ি দিয়ে

যাকে দেখতে আসতো হাজারো সৌন্দর্য পিপাসু,

সে আজ শুধুই এক উচ্ছিষ্ট

তার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না ।

ভুল করে যদিও কেউ একবার তাকায়

জগতের সকল ঘৃণা যোগ করে থু-থু ফালায়,

এরপর...

এরপর নাক চেপে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি পালায়,

যেন পালিয়েই বাঁচি ।

নষ্ট নর্দমার বিষাক্ত গন্ধের ছোঁয়া থেকে

পালিয়ে বাঁচি ।

এটাই যেন তার একমাত্র পণ |


আজ...

আমি কবি তাকিয়ে আছি

একান্ত মানবতার স্বার্থে,

অপরূপ রূপহীণ জলাঙ্গীর দিকে

মানবতার গভীর দৃষ্টিতে ।


অনেকক্ষণ পর...

হঠাৎ যেনো আমি দৈব কণ্ঠে শুনছি

কে যেন বলছে আমাকে

আকুল কণ্ঠে ব্যথিত হৃদয়ে,

"এসেছো তুমি -

দেখে যাও, কেউ দেখে না আমাকে ।"


সত্যি বলছি

আমি বলতে চাই নি

চাই নি তাকে কষ্ট দিতে,

কিন্তু নিজের অজান্তেই আমি বলে ফেলি -

"ওগো রূপসী,

তোমার যে আজ যৌবনের রূপ নেই

নেই তোমার মাঝে সেই সুগন্ধ,

তুমি যে আজ পরিণত বৃদ্ধা ।

তোমার বর্ণে আজ অমাবস্যার মলিন ভাব

তোমার গন্ধে আজ পচা মাংসের ঝাঁজ

তোমার দেহে আজ উচ্ছিষ্টের নেই অভাব,

তাইতো তোমার দিকে কেউ তাকায় না ।

দূরে সরে যায় তোমার কাছ থেকে

পাছে ছোঁয়াচে রোগ বাসা বাধে ।

এতে তাদের কি দোষ বল ? "


সে হয়তো আমার এতটা কথা আশা করে নি

তবুও নীরবে শুনছিল,

স্পষ্ট দেখতে পেলাম

তার কপোল বেয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল,

তবুও সে আমাকে আবার বলল

হয়তো মনের কথা বলার মতো কেউ নেই আর,

তাই অশ্রু মুছে

দুঃখ আবেগে ভরা কম্পিত ঠোঁটে

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল -

"তাদের কি কোনো দোষ নাই ?

আমার আজ এই অবর্ণনীয় দুর্দশার পেছনে

তাদের কি কোনো হাত নাই ?

আজ আমি উচ্ছিষ্ট নর্দমা,

এই আমি কি আমি হয়েছি

এর পেছনে তাদের কোনো ভূমিকা নাই ?

মানবতাহীণ মানব সমাজের

কান্ডজ্ঞানহীণ কাজ

এর পেছনে কি এতটুকুও সক্রিয় নয় ?

আমার এই কালো কুৎসিত রূপ

তাদের ফেলে দেওয়া

নষ্ট উচ্ছিষ্টের কারণেই কি হয়নি ?

তারা কি পারত না

তাদের উচ্ছিষ্ট আবর্জনা নির্দিষ্টে রাখতে ?

তারা কি পারত না

সেই উচ্ছিষ্টকে কল্যাণের কাজে লাগাতে ?

মানুষ চেষ্টা করলে কি পারে না ?

তবে কেন আমার ওপর অকারণ নির্যাতন ?

বল তুমি বল,

আর কেউ না হোক, তুমি তো মানবতাবাদী

বল তোমার উত্তর ।

তোমার মানবতাবাদী হৃদয়

কি উত্তর দেয়,

শুনতে বড় ইচ্ছে করে ।

নিরাশ কর না কবি

বল তোমার উত্তর,

শুনে আমি ধন্য হই ।


আমি তারাহীণ আকাশের একা চাঁদ

স্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছি

নিস্তব্ধ রাতের একা ভাস্কর্যের মতো

নির্বাক হৃদয় কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না,

চাইলেও কিছু বলার মতো নেই

আজ স্তব্ধ হয়ে গেছে

চিন্তা, চেতনা, নিউরন রাশিমালা ।

কি বলব আমি,

মানবতাহীণ মানবের মাঝে আমি একা

নিস্তব্ধ রাতের একা ভাস্কর্যের মতো

চারিদিকে শুনি শুধু কান্নার ধ্বনি,

ফেলে দেয় তবু কেউ দেয় না কাউকে

মৃত্যু যাত্রী জেনেও দু-মুঠো অন্ন ।

নির্বাক হৃদয়ে,

কি বলব আমি ?

ওগো জলাঙ্গী

আমার যে বলার কিছু নেই ।


"তবু কিছু বল.."

ভেবেছিলাম ছুড়ে আসবে এই প্রশ্ন,

কিন্তু চারদিক নিস্তব্ধ ।

আমার মনে হল,

শেষ মৃত্যুর আগে জলাঙ্গিনী আমার সাথে

কথা বলে গেল ।।


প্রকৃতির বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে

আমারও কাঁদতে ইচ্ছে করল -

কিন্তু,

আমার চোখে এক ফোটাও অশ্রু নেই ।

মানবতাহীণ মানব সমাজের ভিড়ে

কখন যে অশ্রু ফুরিয়ে গেছে

বুঝতেই পারি নি !


কয়েক মুহূর্ত পর

পশ্চিমের আকাশে সূর্যাস্তের শেষ কিরণ দেখা গেল,

মনে হল

আকাশটা যেন আজ ভিন্ন রঙ্গে রাঙ্গিত,

কোথায় যেন ধ্বংসের শেষ আভাস দেখা দিচ্ছে ।

মানবতাবাদী মন তখন উতলা হয়ে উঠল,

ঠিক তখনি হঠাৎ

যেন দিব্য কর্ণে শুনতে পেলাম,

চারদিকে এক করুণ হাহাকার ধ্বনিত হচ্ছে -

"মারছ না আমাকে,

মারছ তুমি তোমাকে ।

মানবতাহীণ মানব সমাজ ।।"


আমি স্তব্ধ দাড়িয়ে একা চেয়ে রইলাম

মৃত রূপবতী জলাঙ্গিনীর দিকে ।

বলতে ইচ্ছে হল-

"এইতো তাকিয়ে আছি তোমার দিকে ।

পল্লীবধু ।

বুড়িগঙ্গা ।

যুদ্ধদিনের বারাঙ্গনা ।

এইতো তাকিয়ে আছি তোমার দিকে ||"


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Tragedy