জীবনের ধারাপাত
জীবনের ধারাপাত
প্রবাসী বন্ধু: — আজ রবিবার।
চল না বন্ধু, ঘুরে আসি,
দূরে কোথাও, অনেক দূরে,
যেখানে ফিরে পাব হারানো দিনগুলো,
হোক না কিছুক্ষণের জন্য।
সেই যেখানে কৃষ্ণচুড়ার শাখায় শাখায়
আনন্দের রক্তিম বন্যা।
পলাশের সুরে, সুর তুলে নুপুরে
দৌড়ে যেত ঝরা পাতার দল।
সেইখানে, যেখানে থমকে আছে
আমাদের কলেজের সেই দিনগুলো।
মনে পড়ে তোর?
গৃহবধূ :—পড়ে তো। খুব মনে পড়ে।
তবে রবিবার মানে তো ছুটি নেই আজ।
রবিবার মানে ঝুলে থাকা অনেকগুলো কাজ,
সাথে আছে রোজকার নানা খুঁটিনাটি।
আজ যে গৃহকর্তার ছুটি।
সারা সপ্তাহভর খাটেন তিনি।
আর সন্তান! সেও যে ব্যাস্ত
সপ্তাহের ছয়টা দিনই।
একটু পছন্দের রান্না, একটু মনোরঞ্জন,
একটাদিন তো চাই।
না হলে ওরা বাঁচে কি করে বল!
আমি ছাড়া কে আছে ওদের!
প্রবাসী বন্ধু :— ঠিকই তো। আর বন্ধু, তুই নিজে!
কেমন আছিস বল ।
গৃহবধূ :— ভালো আছি, খুশি আছি আমি।
ওরা যদি থাকে ভালো,
আমিও তো থাকব ভালো,
এটুকুই চাওয়া।
প্রবাসী বন্ধু :— অনেকদিন পর দেখা।
বল বন্ধু, আছিস কেমন!
স্ত্রী, পুত্র কেমন আছে সব!
গৃহকর্তা :— পুত্র আমার বিদেশবাসী, ভালো আছে ।
স্ত্রী ও আছেন ভালোই।
তুমি কেমন আছো বন্ধু বলো।
প্রবাসী বন্ধু :— আছি ভালোই। চলো তবে,
এই রবিবার আড্ডা হয়ে যাক,
সবাই মিলে একই সাথে, সেই আগেকার মতো।
গৃহকর্তা :— না বন্ধু, ডেকো না আর আমায়।
সেদিন গুলো হারিয়ে গেছে চিরদিনের তরে।
রবিবারটা আমার কাছে ছুটির দিন তো নয়।
প্রবাসী বন্ধু :— কেন বন্ধু! অবসরের জীবন তোমার,
রসে বসে থাকার কথা এখন। হতাশ কেন এত!
গৃহকর্তা :— সারাটাদিন অনেক পরিশ্রম।
ভালো লাগে না কিছু।
মনটাও যে গেছে ভেঙে আমার।
স্ত্রী রয়েছেন শয্যা বন্দি,
রান্নাটাও তো করতে হয় আমায়।
যদিও তা নয় রোজ।
যখন তিনি সুস্থ থাকেন, করেন নানা কাজ।
তবে অসুস্থ হন প্রায়ই।
এমনিভাবেই চলছে সকল কিছু।
সুখে আছি ভাণ করে বেঁচে আছি শুধু।
বেঁচে আছি আমরা সবাই করে নানা কাজ,
ইচ্ছাতে , বা হয়তো অনিচ্ছায়।
জীবন থাকে না থেমে।
বয়ে চলে যায় তার আপন খেয়ালে ।
কেউ ভাবে চিরসুখী আমি,
কেউ ভাবে দুঃখ নিরন্তর এ জীবনে ।
এভাবেই অভ্যাসে বেঁচে থাকা শুধু।
অলক্ষ্যে থেকে কেউ রচনা করেন জীবনের ধারাপাত।