চারিদিক শুধুই ধর্ষণময়
চারিদিক শুধুই ধর্ষণময়
শর্মিষ্ঠা মুখার্জী🔥 অগ্নিশিখা
( ১৭ / ১২ / ২০২১ )
রাস্তার সেই ছেলেটি - মেয়েটিকে মনে পড়ে ?
মনে পড়ে সেই কাকু -কাকীমা,জ্যেঠু - জ্যেঠীমা ,পিসিমা - পিসেমশাইকে ?
আচ্ছা মনে পড়ে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া
অথবা পঞ্চাশ - ষাট - সত্তরের চৌকাঠে পা রাখা ঠাকুরদা - ঠাকুমা, দাদু - দিদিমাকে ?
মনে পড়ে বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক বা
কলেজের সেই প্রফেসরকে ?
বাড়িতে বা কোচিং সেন্টারের সেই শিক্ষক
অথবা আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
ভদ্রতার মুখোশধারী নোংরা দৃষ্টি মনে পড়ে ?
সেই যে বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি,
আহাঃ ! ধূর ! তোমার বাড়ি - আমার বাড়ির
মতো সুন্দর নিজ নিজ ভাবনা মনে পড়ে ?
যাদের দ্বারা আমাদের প্রতিনিয়তই চলছে
গাত্র ধর্ষণ , মন ধর্ষণ , শিক্ষা ধর্ষণ ,
আত্মা ধর্ষণ , চিন্তা ধর্ষণ , স্বাধীনতা ধর্ষণ
চারিদিকে শুধুই ধর্ষণ আর ধর্ষণ !
নোংরা দৃষ্টিতে দর্শনেই ধর্ষণ
কটূক্তির দ্বারা মন ধর্ষণ ।
মেয়ে সন্তান এতো পড়ে কি হবে শুনি ;
সেতো শেষ পর্যন্ত হেঁসেল ঠেলবে আর
গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চার জন্ম দেবে !
এরূপ নীতিবাক্যের দ্বারা শিক্ষা ধর্ষণ ।
গায়ের রং কালো না ফর্সা !
সতীত্ব আছে না সতীপর্দায় ফাটল ধরেছে !
বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে না বন্ধ্যা !
বাবার আর্থিক সামর্থ্য আছে না দরিদ্র !
এসকল চিন্তাধারায় আত্মা ধর্ষণ ।
আমি বাবা - মায়ের ছেলের সমান কিন্তু
ছেলেই শুধু বংশেরপ্রদীপ , মেয়েতো নয় ! শ্বশুর - শ্বাশুড়ীর দায়িত্ব পুত্রবধূকে নিতে হবে
কিন্তু বৌয়ের বাবা - মায়ের দায়িত্ব ?
" তোমার বাবা - মা, তুমি বুঝবে " !
" ও তোমার বাবা - মা তোমার কাছে বেশি আর আমার বাবা - মা ফেলনা ? "
এইধরনের উন্নতমানের চিন্তার আঁচড়ে
প্রতি মুহূর্তে চলে চিন্তা ধর্ষণ ।
মেয়ে সন্তান তাই তোমরা পরজীবী ;
মেয়ে সন্তান তাই তোমার জন্য গাঁথা রয়েছে
ভিন্ন ভিন্ন ভারী ভারী নিয়ম - রীতির মালা ,
তুমি দিনে মেয়ে , দুপুরে মা , বিকালে বোন, আবার সারাদিনের ক্লেদাক্ত ক্লান্ত শরীর নিয়ে
রাতে পুরুষ সিংহের বিছানায় প্রেয়সী ।
তুমি নারী তাই বিধির বিধানে তুমি
শতাক্ষী - শতরূপিনী - সর্বংসহা ,
তোমার শরীরে ক্লান্তি - দুঃখ - যন্ত্রনা নিষিদ্ধ
এহেন বিধানের কঠোরতায় স্বাধীনতা ধর্ষণ ।
এছাড়াও শরীরের ভাজে - ভাজে সর্বত্র
দূষিত চোখের আনাগোনা ,
চোখের মধ্যে থাকা ঈশ্বর প্রদত্ত
অত্যাধুনিক এক্সরে মেশিন দ্বারা ;
নারী দেহের ইঞ্চি ইঞ্চি জরিপ করার মাধ্যমে
দিনে দিনে বাড়তে থাকা উৎকৃষ্ট মানের
কার্যকলাপের দ্বারা দর্শনেই ধর্ষণ ।
স্বামী বা প্রেমিক দ্বারা জোর করে
বস্ত্রহরণ করে আঁচড়ে - কামড়ে - রক্তাক্ত করে
যৌনপিপাসার পরিতৃপ্তির ভালোবাসার
নামও ধর্ষণ ।
আমার চোখে ধর্ষণ শুধুই শারীরিক নির্যাতন
অথবা পাশবিকতার ভয়াবহতা নয় ,
আমাদের চারিদিক শুধুই ধর্ষণময় ।