বেলাশেষে
বেলাশেষে
পার্কের বেঞ্চে বসে আশিতিপর
তরুণ মনের দুই যুবক যুবতি-
এক সুখী দম্পতি-
লিখতে বসেছি তাদের জীবন কাহিনী-
আমার লেখনি লিখছে তাদের
জীবনী।
প্রথম দেখার সেই মহেন্দ্র ক্ষণ
আজও হৃদয়ে গাঁথা,
প্রথম মিলনের সেই শুভক্ষণ
আজও হৃদয়ে আঁকা।
একে একে কত বসন্ত গেছে পেরিয়ে,
কত ঝড়-তুফান বয়ে গেছে জীবনে,
কত চলেছে মান-অভিমানের পালা,
কত ঝরেছে অভিমানের অশ্রু!
হতে হয়েছে কত সমস্যার সম্মুখীন-
তবুও স্বর্গীয় প্রেম-প্রীতির পর্ব
অক্ষুণ্ণ ছিল প্রতিদিন।
পয়সার অনটন-অভাবের সংসার,
কত রোগ-শোক,
কত ঘাত-প্রতিঘাত!
তাও ছিল বিশ্বাস-ছিল নির্ভরতা,
তাও ছিল একে অপরের
মন বোঝার মানসিকতা।
সুখের সংসার নির্মাণে
নিজেদের দিয়েছিল উজার করে-
বেঁধেছিল ঘর স্নেহ-
ভালবাসার ডোরে-
কখনো চলেছে মান অভিমানের খেলা,
কখনো বা মানভঞ্জন এর পালা।
সন্তানের জন্ম থেকে তার প্রতিপালন-
সংসারের ছোট-বড় সব দায়িত্ব
একসাথে পালন-
সব হয়েছে একে অপরের সহযোগিতায়,
পুরো সংসার বাঁধা ছিল
একে অপরের সহমর্মিতায়।
দেখতে দেখতে কত বসন্ত গেছে পেরিয়ে,
যৌবনের সেই কোমল কলেবরে
আজ দেখা দিয়েছে বার্ধক্যের বালিরেখা,
শরীর হয়েছে শিথিল-
কিছু রোগ বাসা বেঁধেছে তাতে,
হয়েছে ভুলে যাওয়ার নতুন ব্যাধি,
কিন্তু মন আজও একই আছে,
দিনে দিনে বেড়েছে সহযোগিতা, সহমর্মিতা,
দিনে দিনে বেড়েছে স্নেহ ভালবাসা, নির্ভরশীলতা।
বেড়েছে নিবিড় সান্নিধ্য
দৃঢ় হয়েছে অটুট বন্ধন।
এভাবেই বুঝি কেটে যাবে জীবনের শেষবেলা।
কিন্তু জীবনের বেলাশেষে এসে
মনে বড় ভয় বেঁধেছে বাসা,
কার জীবনদীপ আগে হবে নির্বাপিত-
কে হয়ে যাবে একেলা!
হতাশায় ঘিরে ধরেছে চিত্ত
মনে একাকিত্বের বড় আতঙ্ক!
সময়ে সবই যায় সয়ে-
মেনে নিতে হবে প্রকৃতির নিয়ম,
নশ্বর দেহ থেকে প্রাণপাখি যাবে ঊড়ে-
মহাশূন্যে-মহাকাশে হবে
দুজনের মিলন অন্তমিলে।