অনুমতি!
অনুমতি!
সেদিন রাতে সাতটিপাক ঘুরে,
মালাবদল ও সম্প্রদানের পরে,
গয়নাগাটি, বেনারসী শাড়ি ছেড়ে।
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত বারোটার ওপারে।
পরনে ছিল একটা লাল তাঁতের শাড়ি
হাতে মোটে দুটো সোনার চুড়ি।
আসলে যে হালকা থাকতেই ভালোবাসি,
গয়না-গানটি, বেনারসী বড্ড ভারি বেশী !
সারাটা দিন নির্জলা উপোস করে,
উঠছিলো যে মাথাটা আমার ঘুরে।
মাঝারি মাপের একথালা পায়েস ভরে,
কেউ খেতে দিয়েছিলো সামনে ধরে।
কিন্তু খাবার আমার ছিলনা অনুমতি,
শেয়াল তো আর নই, বসে রইলাম শান্ত হয়ে অতি।
অবশেষে এলেন আমার পতি,
অবশ্য হয়নি তখনও সিঁদুর দানের অনুষ্ঠান ।
সোনার আংটি দিয়ে পায়েস টাকে ভাগ করলেন,
চারটি ভাগ ই মোটামুটি সমান।
দিলেন আমায় খেতে পারমিশন !
ছোটোবেলা থেকে সব বিয়েতেই দেখেছি এমন ঘটন।
কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি রীতি কেন এমন !
পেটে বোধহয় ছিল আমার অনেকটাই খিদে,
বাঁচেনি একটি ভাগও, সমস্তটাই গেছে এই পেটে।
"পেটে খিদে মুখে লাজ " কথাটা যদিও জানি !
ঐ সময় আর অতটা লজ্জ্বা পাইনি।
বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি এসে দেখি পাল্টে গেলো সব,
খিদে পেলেই খেয়ে নিতে হবে, এটাই হলো হুকুম।
মুশকিল টা হলো খিদেটা আমি যে বুঝতেই পারিনা,
এ্যাসিডে ভুগে যখন তখন পাকাই গন্ডগোল,
শ্বশুর মশাই বলতে থাকেন সদাই " খেয়ে নাও না মা"!
কি আর করি মন খারাপ হলেও খেতেই হয়,
উনি না খেয়ে ছেলের জন্যে বসে থাকেন।
আমাকে দোকান পাটে না যেতে হয় ভেবে,
লাল, হলুদ, গোলাপী, কমলা রঙের, কয়েকটা শাড়ি,
পছন্দ করাতে দোকানটাই বাড়িতেই নিয়ে আসতেন।
এভাবেই বছর আটেক ধরে আমাকে এসব বলে, খাবার কথা মনে করানোর পর,
অবশেষে একদিন আমাদের ছেড়ে চলেই গেলেন।
এরপরেও বুঝতে বুঝতে কেটে গেছে কিছু বছর,
এখন আমি একটু একটু বুঝি কথাটা সেই খিদের,
অবশ্য মাঝে মাঝে ভুলেও যাই আবার !
পারমিশনটা অবশ্য আছেই আগে খাবার।