অভিশপ্ত স্মৃতি
অভিশপ্ত স্মৃতি
আকাশের বুকে ভাসমান ক্লান্ত বালুকা কণা গুলো যখন শরীর এলিয়ে দেওয়ার জন্য গহীন বনানীর সবুজ পাতা খোঁজে,
তখন ত্রিকাল সন্ধ্যা।
মৃত ধুলা রাশি দু পায়ে সরিয়ে অনবরত মৃতের সন্ধানে ব্যস্ত দুই বন্য শৃগাল।
আজও স্মৃতির স্তরে গভীর খনন করলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পূর্ব স্মৃতির খণ্ড চিত্র।
পশ্চিমের আকাশে সূর্য্যের এঁকে দেওয়া সীমা রেখা যেন জানান দিতে চায়,
এই চাতাল কেবল নরসিংহের বিচরণ স্থান। অন্যের প্রবেশ নিষেধ।
শুধু নরসিংহ'ই পারে মুক্তির পথ দেখাতে।
আপ্রাণ শুনবার চেষ্টা করলাম সেই চাতালের বুকে অবিরাম ঘটে চলা সূর্য্যের বিস্ফোরণের শব্দ।
শুভ অ'শুভের তুমুল লড়াই, অপেক্ষা শুধু জয়ের।
উত্তেজিত শরীরটার শিরা উপশিরা ও ধমনী ফেটে, বেরিয়ে আসতে চায় উত্তপ্ত রক্ত লাভা।
সেই রক্ত স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়, মৃত্যু উপত্যকার পচা গলা ফ্যাকাসে শরীর গুলোকে।
বাঁচাও, বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকারে , মুখরিত আকাশ বাতাস। উড়ন্ত সারসের না দেখার ভান।
উল্লাসে মুখরিত, নর খাদকের সেন্যদৃষ্টি হুঙ্কার ছাড়ছিলো মৃত্যুর আলিঙ্গনে।
ক্রন্দনরত ভগিনীর, বাঁচবার আপ্রাণ চেষ্টা। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলে মৃত্যু উপত্যকার গহ্বরে।
অসহয়তার নির্মম প্রাচীরে আঘাতের পর আঘাতে, ভয়ার্ত জঙ্গল রাজ ছুটে চলে ডুবন্ত নৌকার যাত্রীদের নিরপরাধ মাংসের খোঁজে।
ভ্রূক্ষেপ নেই শঙ্খ চিলের, নৃশংস নখের আঁচড়ে খুবলে খায় মৃত্যু উপত্যকার পচা গলা লাশ।
তীব্র আর্তনাদ, ত্রিকাল সন্ধ্যার আকাশে বাতাসে প্রলয় সৃষ্টি করেছিল যুবতীর লজ্জাভরণে।
হাত-পা বাঁধা ভগিনীর জীবন্ত শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে নগ্নতার পাথর।
অসহায় ভাইয়ের করুন আর্তি, ছুঁড়ে ফেলছিল অবলীলায় মৃত্যু উপত্যকার সুদীর্ঘ চাতালে।
নির্লজ্জ, নিষ্পাপ চোখ সেদিন সাক্ষী হয়েছিল অনুর্ধ আঠারো বছর বয়সী ভগিনীর, উলঙ্গ শরীর দেখতে।
উল্লাসে মেতে ওরা।
বাঁচবার ও বাঁচাবার করুন আর্তির
টানাটানি চলছিল মৃত্য উপত্যকার গহীন অরণ্যে।
রক্ত স্নাত দেশ মাত্রিকা, ভেসেছিলো লালসার চোরা স্রোতে।
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন সূর্য্যের অণু পরমাণু যুদ্ধে লিপ্ত,সৃষ্টির ইতিহাসে। অমরত্বের আশায়, মৃত্যু যন্ত্রণাকে বরণ করা শ্রেয়।
শেষ আর্তি,না শোনার ভান করে, স্বমহিমায় অপকর্মের কীট গুলো ব্যস্ত , কবরে শেষ মাটির চাপা দিতে।
ভাইয়ের চোখে পলক পড়ে না। সাগরের বালুরাশি উড়ে এসে মৃত্যু উপত্যকায় খিল্লি উড়িয়ে বালির প্রাচীর তৈরি করে,অপকর্ম ঢাকতে।
প্রায় দশ বছর পর,অভিশপ্ত স্মৃতির তাড়নায়, আবির্ভুত হলাম সেই মৃত্যু উপত্যকায়।
কবরের আনাচে কানাচে ছড়ানো ছিটানো পাথরের গায়ে স্পর্শ করে, চেয়ে দেখি সেই ত্রিকাল সন্ধ্যা আবার ঘনিয়ে।
ভয়ে ধুকপুক, হৃদয় দুয়ারে আগুনের লেলিহান শিখা,দুর্ধর্ষ স্পর্ধার সামনে হয়তো কেউ আবার পুড়ে ছাই হবে।
বহু প্রতীক্ষার পর, সূর্য্যের হাতে আঁকা, সভ্যতার সীমারেখার লম্বা প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসেন মৃত্যু দূত।
আকাশে বাতাসে ন্যায়ের আস্ফালন। ন্যায়দন্ড ধরা নরসিংহ সংহারে ব্যস্ত ফাঁসির মঞ্চে।
ভগিনীর আত্মার শান্তি কামনায়,
এত বছর পর,সেই অভিশপ্ত স্মৃতি পথে ফিরে এসে,
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, ধন্যবাদ জানাই এক গোছা রজনীগন্ধার সুবাস জড়ানো অতীত ভুলে,
উঠেছিলাম সূর্য্যের আঁকা বিরাট চাতালে।
প্রফুল্ল মনে দেখেছিলাম, নগ্ন সভ্যতার শেষ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি।
মৃত্য উপত্যকার নোংরা প্রাচীর ভেঙে খান খান।
সভ্যতা ভুলে যেতে চায় পুরোনো স্মৃতির কলঙ্কিত অধ্যায়।
পশ্চিমের শান্ত সূর্য সেদিন ডুবেও যেন ডুবলো না।
মৃত্য উপত্যকার প্রাচীরে লেখা, বড় বড় হরফে, ধর্ষণে মৃত্যু দণ্ড।
এই উপত্যকায় ধর্ষণকারীকে স্বাগত।