আত্মবলিদান
আত্মবলিদান
সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়তেই
পূর্বাকাশে উঠে এলো
শুক্লা চতুর্দশীর নিটোল চাঁদ।
তার বিকশিত জ্যোৎস্নায় --
ধীরে ধীরে সন্ধ্যাতারা হল ম্লান।
শিরীষ গুঁড়ির রঙমাখা সন্ধ্যা
ডুবে গেল
চন্দ্রলোকের রুপোলি সমুদ্রে।
সারা বিকেল ধরে মা-হরিণী
আর তার দুই শাবক মিলে
পেট ভরে খেয়েছে
কচি কচি সবাই ঘাস।
বিপদের আভাস পেয়ে উৎকর্ণ হয়ে উঠল সে।
জলাশয়ের পাশে জ্বলজ্বল করছে
শ্বাপদের দু-তিনজোড়া চোখ !
ঘাসলতা আর ধুলার বুকে
হুইসেল বাজিয়ে --
মা-হরিণী শুরু করল ম্যারাথন রেস।
মাইল দুয়েক দৌড়েই বুঝে গেল মা
তিন-তিনটি চিতার কাছে
সন্তানরা তার অসম প্রতিদ্বন্দ্বী।
উৎসাহের ডানায় সন্তানদের ভাসিয়ে
নিজেকে নামিয়ে এনে কূর্মের গতিতে
প্রস্তুত হল মা তখন আত্মবলিদানে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজয় মেনে নেওয়া
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সামিল।
দ্রুতগামী চিতার দল তখন
কিঞ্চিৎ বিহ্বল।
সেই অবকাশে হরিণ-শাবকরা
পৌঁছে গেল দিগন্তরেখায়।
জ্যোৎস্নাপ্লুত চাঁদের দিকে চেয়ে
সাক্ষী মানলো তাকে মা-হরিণী --
উড়তে উড়তে থমকে গেল জোনাকির দল
ঝিঁঝিঁ-রা থামিয়ে দিল ডাক।
তার মৃত্যুভয়লেশহীন চোখে
তখন বিদ্রুপের তীব্র কশাঘাত।
দৃঢ়চিত্তে সে
নৃশংস মৃত্যু-কে
দৃপ্তভঙ্গিতে জানালো রণ-আহ্বান।
------------