Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Sonali Basu

Romance

3  

Sonali Basu

Romance

ফাগুন স্মৃতি

ফাগুন স্মৃতি

4 mins
7K


চৈত্রমাস শুরু হতেই বড় বড় দোকানগুলোতে সেল বোর্ড ঝুলে গেছে। সারা মাস ধরেই এই ছাড়ের মরশুম চলবে আর মহিলাদের দল সংসারের প্রয়োজনে বা শখের কারণে বিপুল উদ্যমে কেনাকাটি করবে। পুতুলও নিজেকে সেই দলের থেকে আলাদা কিছু দেখে না। আজ সকালে ও তাড়াতাড়ি রান্নাবান্না সেরে নিয়েছে বাজার যাবে বলে। বড় মেয়ে দোলা আসবে পয়লা বৈশাখে নাতি বিট্টুকে নিয়ে। ওদের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে। ছোট মেয়ে মিলি বৈশাখের শেষের দিকে আসবে, কিছুদিন থাকবে, ওর পরীক্ষা আছে। ওকেও কিছু দিতে হবে। তারপর বিছানার চাদর বালিশের ওয়াড় আরও কিছু কিনতে হবে। বাস ধরে আধঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে ও বাজারে এসে নামলো। ঘুরেঘুরে কেনাকাটা যখন শেষ প্রায় তখন হঠাৎ চোখে পড়লো একটা দোকানে পাতিলেবু রঙের তাঁতের শাড়ি ঝুলছে। রঙের সাথে সুতোর কাজও দারুণ। শাড়িটা দেখেই ওর মনে পড়ে গেলো বাইশ বছর আগেকার এক বিকেলের কথা।

সুজিত, পুতুলের মামাতো দাদা অনিরুদ্ধর বন্ধু, নিয়ে এসেছিলো এই রঙের শাড়ি ওর জন্য উপহার হিসেবে। তার দিন দুয়েক আগেই সুজিতের সাথে ওর পরিচয় বই মেলায়। সুজিত বুদ্ধদেব গুহ’র একটা বই কিনছিলো আর ও সেই লেখকের’ই অন্য একটা খুঁজছিল। দোকানদার জানায় বইটা আপাতত দোকানে নেই, তবে আনিয়ে দেবে ওরা। বইয়ের আলোচনায় সুজিত হঠাৎই যোগ দেয় তারপর দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হয়। মেলার আলাপ মেলার মাঠেই শেষ হতে পারতো, কিন্তু হয় না।

পুতুল আর ওর বোন পাপিয়া মামাবাড়িতে এসেছে কিছুদিনের জন্য। ওর মা এসে ওদের রেখে দিয়ে গিয়েছে। কদিন ছুটি কাটিয়ে আবার ফিরে যাবে। এক সকালে সুজিত হঠাৎই এসে উপস্থিত ওদের বাড়ি। পুতুল তখন বাড়ির বাইরে মামীর পুজোর জন্য ফুল তুলে দিচ্ছে। গেট ঠেলে ছেলেটাকে ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হয়েছিল ও। ছেলেটাই প্রথমে প্রশ্ন করে “বুদ্ধদেব গুহ’র বইটা পেয়েছেন?” পুতুলের মনে পড়ে মেলার কথা। কিন্তু সেখানে আলাপ হওয়া অচেনা ছেলেটা আজ ওদের বাড়ি কি মনে করে এটা সম্পর্কে প্রশ্ন করার আগেই সে প্রশ্ন করে “অনি আছে?” ও মাথা হেলায় “হ্যাঁ” “একটু ডেকে দেবেন?” ডাকার আগেই দাদা বেরিয়ে আসে আর আস্তে আস্তে জানা হয় ও দাদারই বন্ধু। তারপর থেকে সুজিতের ঘনঘন আসা শুরু ওদের বাড়িতে। মামা মামী দুজনেই ওকে এমনিতেই পছন্দ করতো ছেলের বন্ধু হিসেবে তাই সেই একসাথে বসে গল্প খাওয়াদাওয়া চলতে থাকে ওদের। এর ফাঁকে কখন যে সুজিত ওকে ভালবেসেছিল পুতুল বুঝতে পারেনি।

পুতুল তখন সন্তোষের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সন্তোষ ওদের গ্রামের কালিমাসির ছোট ভাইপো। বাবা মা মারা যাওয়াতে সে কালিমাসির বাড়িতেই থাকতো। পিসির আদরে সে যথেষ্ট বাঁদর বখাটে হয়ে উঠেছিল। এইরকম ছেলের প্রেমে পড়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল পুতুল। যখন ব্যাপারটা ওর মা জানতে পারলো দৌড়ে গিয়েছিলো কালিমাসির বাড়ি। মাসি কোন কথাই শোনেনি সোজা রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলো। পরিস্থিতি সামলাতে মা ওদের দুই বোনকেই মামাবাড়ি রেখে গেলো। ওখানে পরিস্থিতি সামলে আবার এলো এখানে। তার মাঝে মামীর খোঁজ নিয়ে আসা হাতুড়ে ডাক্তারের চেম্বারে টেনে নিয়ে গেলো ওকে। পুতুল মানা করতে পারেনি। হাতুড়ে ডাক্তার অবাঞ্ছিত ভ্রূণ সরাতে গিয়ে ওর মা হওয়ার পথটা একেবারেই বন্ধ করে দিলো। কুমারী মেয়ে বলে ও ডাক্তারের কাছে এর কৈফিয়ত চাইতে পারেনি। মাও পরিস্থিতির ফাঁদে পড়ে কোন কথা তোলেনি।

এর মাঝে এলো দোল, সবার আনন্দের রঙের খেলা। সুজিত এলো মামাবাড়িতে ওদের সাথে রঙ খেলতে। সারাদিন হেসে খেলে বিদায় নেওয়ার পূর্বে সুজিত ওকে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়ে শাড়িটা উপহার দিতে চেয়েছিল। পুতুল তখনও ওর অতীতের কালো ছায়ার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এরপর আর কি ভাবে ও সুজিতের ভালোবাসা স্বীকার করবে। তাছাড়া ততদিনে ভালোবাসা নামের শব্দটার ওপর ওর সবরকম আকর্ষণ উবে গেছে।

আলোকের সাথে যে ওর বিয়ে হয়েছে সেটা অনেকটা প্রয়োজনের তাগিদে, ভালোবাসার আকর্ষণে নয়। আলোক বাইরে চাকরি করতো, বিয়েও করেছিলো তবে স্ত্রী থাকতো গ্রামের বাড়িতে শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে। ছুটিতে মাঝে মধ্যে আলোক বাড়ি আসতো। দুটি মেয়ে হয়েছিলো ওদের। ছোটটি যখন দেড় বছরের তখন হঠাৎ কুসুম মারা যায় অসুস্থ হয়ে। আলোকের বাবা ততদিনে মারা গেছে। অসুস্থ মাকে আর দুই ছোট মেয়েকে নিয়ে ও তখন আতান্তরে। তাই দ্বিতীয় বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ, শর্ত একটাই নতুন স্ত্রী আর কোন বাচ্চা নিতে পারবে না যে দুটি আছে তাদেরই আপন করে নিতে হবে। পুতুলের তো আগেই মা হওয়ার পথ বন্ধ হয়েছিলো তাই এই বিয়ের সম্বন্ধ আসাতে আপত্তি করেনি।

তবে আলোক স্বামী হিসেবে ভালো মানুষ, স্বামীর দায়িত্ব কর্তব্য সব করেছে ভালোও হয়তো বাসে ওকে তবে প্রকাশ নেই। কি মনে হতে আজ পুতুল একটা পাঞ্জাবী কিনলো ওর স্বামীর জন্য। পয়লা বৈশাখের উপহার।

বাড়ি ফিরে আবার সংসারের কাজ। সন্ধ্যায় আলোক যখন ফিরলো তখন ওর হাতে একটা প্যাকেট দেখে একটু অবাক হল পুতুল, তবে প্রশ্ন কিছু করলো না। হয়তো মেয়েদের বা নাতির জন্য কোন উপহার এনেছে। হাত মুখ ধুয়ে ঘরে এসে বসার পর পুতুল দুজনের চা নিয়ে এলো। আলোক ওর হাতে প্যাকেটটা তুলে দিয়ে বলল “এটা তোমার, পয়লা বৈশাখের সকালে পোড়ো”

প্যাকেট খুলে পুতুল দেখে সেই পাতিলেবু রঙা শাড়িটা, যেটা ও সেই দোকানে দেখেছিলো। আলোকের মুখের দিকে তকিয়ে আজ ও প্রথম ওর প্রতি অনন্ত ভালোবাসা টের পেলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance