Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Moumita Ghosh

Tragedy Romance

2.5  

Moumita Ghosh

Tragedy Romance

সহবাস // মৌমিতা ঘোষ

সহবাস // মৌমিতা ঘোষ

6 mins
2.2K


মাইল খানেক বিছিয়ে থাকা জ্যোৎস্না। চরাচর ভাসিয়ে দুটো ফোলা ফোলা চোখ, আর গালের টোলটুকু জেগে আছে যেন। সে এক অলীক মেয়ে, বাস্তবের কেউ ভাবতে গেলে কেমন যেন ফর্সা গালে টোকা পড়বে মনে হয়, ছবিটা যেন নষ্ট হয়ে যাবে।অনিমেষ হাঁটতে থাকে । আজ তার ঘুম হবেনা। আজ মন খারাপ নেই, আবার কিছুতেই কেন মন ভালো করতে পারছে না বুঝতে পারছেনা। 

সম্পর্কগুলোকে চুয়াল্লিশ বছরেও নতুন করে চেনা যায়। বৃত্তের বাইরে যেখানে পৌঁছাতে পারে না সেখানে তবে জেগে থাকে অনাড়ম্বর এক অপেক্ষা? যার উচ্চকিত কোন রঙ নেই। নেই অধিকারবোধ। একটা সুগন্ধ আছে , ঠিক যেমন এই কোজাগরীর চাঁদের। হ্যা , স্নিগ্ধতার এক সুবাস আছে। শিষ দিয়ে গান গাইছে অনিমেষ। এই গানটাই কেন? ও, এই গানটাই তো ভরদুপুরে সুকন্যা গাইছিল, ও মাঝেমাঝে ধরছিল..." বাতাস আকুল হবে তোমার নিঃশ্বাসটুকু চেয়ে। "

'ব্যাথার বাদলে যায় ছেয়ে '... ব্যাথার বাদল কি করে ভরদুপুরে দুটো চোখে নেমে আসে আজ দেখেছে অনিমেষ। কেউ কাঁদলে ওর বরাবর ন্যাকামি মনে হত। অথবা অসহ্য লাগত।আজ অন্যরকম। কারো ভিজে চোখ যে ঝলমলে রোদ্দুরের শরতে ওকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে ভরা শ্রাবণে ... এর আগে টের পায়নি। চুয়াল্লিশ বছর বয়সটা অনর্থক গেল, পড়তে পারল না চোখের কাজলের নীচে লুকিয়ে থাকা শ্রাবণ মেঘকে, পারলনা 'পরম লগন ' কে চিনতে।

'কোন রাতে মনে কিগো পড়বে'? 

পড়ছেতো। ভীষণভাবে পড়ছে। ফোলা ফোলা দুটো চোখে মনে মনে চুমো খায় অনিমেষ। জ্যোৎস্না ঝুঁকে পড়ে বাড়ির কার্ণিশে।

অনিমেষ হাঁটতে থাকে।....

      

'ঠিক দুক্কুর বেলা' ঘটে গেল অঘটনটা। চাঁদ ছিলনা।মদ খায় নি, দিনের বেলায় তারা দেখার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। সুকন্যা ডেকে নিয়েছিল অনিমেষ কে... চল একটু হাঁটি। আজ অনেকদিন পর বৃষ্টির দাদাগিরি উপেক্ষা করে রোদ উঠেছিল। রোদ্দুরে পিঠ মেলে ওরা হাঁটছিল। হঠাৎ ই সুকন্যা বলল,' ইটস্ ওভার অনিমেষ'। অনিমেষের যে খুব গলা শুকিয়ে গিয়েছিল তা নয়। সম্পর্কটা গয়ংগচ্ছ ভাব নিয়েছে সেই কবে থেকে। তাই হঠাৎ হারিয়ে ফেলার ভয়ে চোখ কাঁপেনি। কর্পোরেট স্মার্টনেস এ বলে উঠেছিল 'যাহ্, তুমি ছেড়ে গেলে আমার কি হবে?'

কিছুই না, বলেছিল সুকন্যা।

আবার কিছুক্ষণ নীরবতা। পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে ব্যস্ত পার্ক স্ট্রিট। আজ অন্যদিনের চেয়ে লোক কম। যে যার বাড়ি তে লক্ষ্মীপুজোয় ব্যস্ত । অনিমেষ ভাঙল এই অস্বস্তিকর নীরবতা। বলল " তুমি কি সত্যিই ভাবো আমি তোমায় ভালোবাসি না। এই চাকরি টার কথা ভাবো। আমি কোন সময় পাই? জাস্ট সময় টা হচ্ছে না। খুব দরকার তোমার কাছে আসার, দেখো একটা স্পর্শের বড্ড দরকার, নাহলে সম্পর্ক টা ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে। মনে বিষয়টা এক ই। '

'এইসব স্পর্শটর্শর জন্য তোমার সময় আছে?'


'আছে। কিন্তু কিছুতেই পয়সাটা ম্যানেজ করতে পারছিনা। জানো তুমি ই.এম.আই দিই একচল্লিশ হাজার টাকা। মাইনে পাই সাতচল্লিশ হাজার টাকা। এখন জোড়াতালি দিতে দিতেই তো চলে যাচ্ছে...

চা খাবে? '

'এখানে নয়।আরো এগিয়ে। '

'কোথায় যাচ্ছি আমরা?'

'সামনেই। বসে চা খাব।'


ম্যাগাজিনের একটা স্টলের সামনে দাঁড়ায় সুকন্যা। অভ্যাসবশত একটু নেড়েচেড়ে দেখে। তারপর আবার হাঁটতে থাকে। অনিমেষ চুপচাপ ফলো করে ওকে।


পার্ক স্ট্রিটের মোড়েই গলির মধ্যে ঢুকে গিয়ে কফিশপ। ভিতরে এসিতে না বসে বাইরে বসল ওরা। বাইরে ছাতা টাঙানো আছে । তার নীচে দুটো করে চেয়ার পাতা । ব্যাগটা টেবিলে রেখে সুকন্যা বসল, চোখ নীচু। ওর উজ্জ্বল চোখদুটো আজ কেমন যন্ত্রণায় নীল। অনিমেষ দেখছিল ওকে। আজকাল কথা খুব কম হয় ওদের ।দেখাও হয় না। আগে ও কারণে অকারণে একবার সুকন্যা কে দেখতে ছুটত। পাশ দিয়ে হেঁটে যেতো ওকে ছুঁয়ে।এখন কেন করেনা? তবে কি আমিও অন্য সব পুরুষদের মতোই; কিছুদিন পরে ঝেড়ে ফেলতে চাই পুরোনো সম্পর্ক ?

না। আমি তো ভালো ই বাসি সুকন্যা কে।তবে? আসলে যতই পদ্য লেখা হোক ; 'হৃদয়ে কি জং ধরে পুরোনো খাপে?' দিব্য ধরে। ভালোবাসা ও খুঁজে নেয় নিজের মত একটা স্পেস, যেখানে বহুদিন ধরে রাখা যায় না তীব্রতা। কালের নিয়মে ক্লান্তি আসে। আর টাকাপয়সা র চিন্তাটা বেশ সুযোগ মতো থাবা বাড়ায়। শুধু ই এম আই আর ই এম আই যে জীবনে সেখানে মুকুলিত প্রেম? হাঃ , অঙ্কুরোদ্গম অবধিই তার দৌড়।

এসব কি করে বোঝাবে সুকন্যাকে? ভুলে যাওয়া একটা অবসর মাত্র, বিচ্ছিন্ন থেকে কিছু ধান্দা খোঁজা কোন ভাবে এ মাসে কি করে বাড়ানো যায় ইনসেনটিভ বা আরো উপায় কিছু আসে, সুকন্যা অসৎ উপায় সহ্য করতে পারে না; তবে কফিশপের পয়সা কি আমার বাবা দেবে? ওইজন্যও আজকাল হয়ে ওঠেনা। কোথাও বসতে গেলে পয়সা লাগে। আদর করতে গেলে পয়সা লাগে। তাই হয় না, সিম্পলি হয় না।


নীরবতা ভাঙল অনিমেষ।

- ''বল। তোমায় কিন্তুখুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ''


কিছু বলেনা সুকন্যা। অন্য সময় হলে এক্সপেকটেড ছিল - 'শালা, নাটক' ।

-'কি হয়েছে তোমার?' (অনিমেষ)


-'শোন অনিমেষ, আমার সত্যিই মনে হয়, ইটস্ ওভার'।

-'কিন্তু কেন?'

-'দেখ তুমি পয়সার কথা বলছ, আগে আমরা ময়দানে বসতাম, চায়ের দোকানে রোদ পিঠে দিয়ে বসতাম, আমাকে একবার চোখে দেখার জন্য কী প্রচন্ড পাগলামির! আর এখন দিনের পর দিন কথাও হয় না। যেন অপরিচিত। আমি ঠিকই লিখতাম :যে আসে , সে যাওয়ার জন্য ই আসে।'


-'হ্যাঁ মানছি, হয়ে ওঠেনি। মানছি তীব্রতা টা কমে গেছে। কিন্তু শেষ হয়ে যায় নি। দেখ, আবারও বলছি আমাদের জীবনে স্পর্শের ও খুব দরকার, সম্পর্কটাকে বাঁচিয়ে রাখতে, তীব্রতা টা বাঁচিয়ে রাখতে। গড়ের মাঠে তো এই বয়সে চুমু খাওয়া যায় না। বা, আমি চাইলেও তোমার প্রবল আপত্তি। আমার তো ভর্তি মেট্রোতেও তোমায় চুমু খেতে ইচ্ছে করে। তুমি আমার বদ ইচ্ছে জানো বলেই দূরে দাঁড়াও। একটা নিভৃত কফিশপ খুঁজে পেয়েছিলাম, হুক্কা র গন্ধে তোমার দম আটকে আসে। এই অঞ্চলে হুক্কা ছাড়া কফিশপ ই নেই। পয়সা নেই হোটেল ভাড়া করার। সবসময় একটা ভয়, অফিসের কেউ দেখে ফেলল? কেবল ই সরে যেতে হয়, তাড়া খাওয়া হরিণের মত। এত ভিড় আমার ভালো লাগে না সুকন্যা। এই যে এখানে বসে আছি, তাও তোমাকে ভয় পেতে হবে কেন? দুটো মানুষের ভালো থাকায় কেন অন্যদের এত নজরদারি?'


 সুকন্যা সোজাসুজি তাকায় অনিমেষের দিকে। তারপর ফোনটা ঘুরিয়ে দেয়। দেখো, গতবছর ঠিক এই দিনে লিখেছিলাম-


 "এতদিন ভাবতাম সবই ক্ষণস্থায়ী। ভাবতাম সময়ের নিয়মে যে আসে , তাকে যেতে ও হয়। সম্পর্কের দীর্ঘসূত্রীতা ক্লান্তি আনে দিনে দিনে, ফিকে হয় উত্তেজনা। এমন ই তো স্বাভাবিক। যেমন স্বাভাবিক একদিন দোষারোপ.. সময় বা মানুষ টা ভুল ভেবে হেঁটে চলে যাওয়া । তারপর রাগ পুষে রাখা। ক্ষত বিক্ষত হওয়া নিজের মধ্যে। তারপর একদিন সেটাতেও ক্লান্তি আসা।এতদিন ভাবতাম এইসব।।যতদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি। কাছে আসিনি।


 আজ ভাবি, এবার থেকে এমনটাই বিশ্বাস করব যে ধারণার ওপারে ও আরেকটা ভরসার পৃথিবী আছে। শুধু হাত বাড়াতে হয়...


পুনশ্চ: এটা কবিতা নয়। একটা চিঠি, উপলব্ধি র রঙীন সাতকাহন।"


অনিমেষ পুরুষসুলভ চেষ্টায় চোখের জল লুকিয়ে ফেলে । মুখে একটা জোর করে হাসি এনে বলে,

- 'ভুল লেখোনি কিছু '


- 'তবে?' (সুকণ্যা বলল)


-'ভরসা রেখো যে ধারণার ওপারের ভরসার পৃথিবীটা আছে। হ্যাঁ কিছু যতিচিহ্ন জেগে আছে, সে সব সম্পর্কেই থাকে।'


সুকন্যার হাতটা ধরে অনিমেষ। তাকিয়ে থাকে। সুকন্যা খেয়াল করে ওদের এই কান্নাকাটি, ইমোশনাল কথাবার্তা পাশের টেবিলের লোকেরা বেশ এনজয় করছে। একটু অস্বস্তি হয়। ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করে

- 'অর্ডার টা দেবেন ম্যাডাম ' ।


 তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে নেয় সুকন্যা। 'দুটো ক্যাপুচিনো'।

-'এনি স্ন্যাকস ম্যাডাম?'


-'না '।

অনিমেষ বলে

- 'পয়সা আজ তোমাকেই দিতে হবে'।


-'ঠিক আছে ।


কফি শেষ করে বিল মেটাতে যায় সুকন্যা। সেখানে ও আরেক বিপত্তি। কার্ড নিচ্ছে না কিছুতেই। নেটওয়ার্ক সমস্যা। একে দেরী হয়ে গেছে। অফিস থেকে ফোন এসে গেছে আরো তিনবার। সুকন্যা বিরক্ত হয়ে চেঁচাচ্ছে


- ' এরকম মেশিন রাখেন কেন? এই লাস্টটাইম। এরপরে আমি না দিয়েই চলে যাব।'


অগত্যা অনিমেষ ক্যাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে। সুকন্যা প্রশ্ন করে, 

- 'এই যে বললে , তোমার কাছে নেই। '


-'নেই ই তো। শেষ সম্বলটুকু দিলাম।'


-'শোন, আমি বাসে উঠব।'


-'এই একটা স্টপেজ? হেঁটেই চল না।'

সুকন্যা কটমট করে তাকায়।


-'ভাগ্যিস, কলিযুগ। সত্যযুগ হলে এতক্ষণে আমার নেংটি পড়ে থাকত। আমি ভস্ম হয়ে যেতাম। '


-'ন্যাকামি ক'রনা। দেরী হয়ে গেছে, জানো না?'


-'হোক আজ। আজ না হয় একটু বেনিয়ম "হয়ে যাক"?


-'এই "হয়ে যাক" বলবে না তো। যত সুড়সুড়ি দেওয়া বিজ্ঞাপন, দেখলে মাথা জ্বলে যায়। '


বাসে না উঠে হাঁটতে থাকে ওরা। রোদটা ভালো লাগছে। হঠাৎ সবকিছু ফুরফুরে লাগছে। সুকন্যা র চুলের উপরে খেলা করছে হাওয়া, শান্তিনিকেতনে ওর বোঁজা চোখ, আর ঈষৎ ফাঁক করা ঠোঁট দুটো মনে পড়ল অনিমেষের। কতদিন যাওয়া হয় না। না , দোষ আমার ই। সুকন্যা ওর দিকে তাকালো। কত্তদিনের ক্লান্ত কলকাতায় যেন একটা রামধনু উঠল। ভীড়ের কলকাতা, ঠেলাঠেলি র কলকাতা, দখলদারির কলকাতা, প্রতিযোগিতা র কলকাতা, কর্পোরেট হাঁসফাঁসের কলকাতা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। বুড়ো হয়ে যাওয়া সবজান্তা চুয়াল্লিশ বছরটা গান গেয়ে উঠল। 


তুমি খুব ভালো সুকন্যা। নাহলে আজকের এই ট্যানজ্যাকশনাল সম্পর্কের জগতে কেউ এভাবে ভালোবাসে? আমার সব ধ্যানধারণার বাইরে তুমি।এক অপার স্নিগ্ধতা।চাঁদের দিকে তাকায় অনিমেষ। জ্যোৎস্নায় অলীক গান ভাসতে থাকে। একলা হাঁটার রাস্তাটা কেমন রূপকথা মনে হয়।সেখানে শাঁখ বাজছে। উলু দিচ্ছে কারা, আর দুটো চোখ জ্যোৎস্না র মত আলো ছড়াচ্ছে মনে, পথের রূপকথা য়।এভাবেই থেকো তুমি আমার সাথে।


 হঠাৎ মনে পড়ে, অরুণিমা বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর জোগাড় করে বসে আছে। ওর জন্যে মন খারাপ করে ওঠে অনিমেষের । তাড়াতাড়ি রূপকথা থেকে বাড়ির দিকে পা চালায় ও।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy