Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Swarupa Roy

Fantasy Children

3  

Swarupa Roy

Fantasy Children

দাদুর অভিজ্ঞতা

দাদুর অভিজ্ঞতা

6 mins
230



রাতের খাবার খেয়ে আমার ঠাকুরদা যাকে আমি দাদু ডাকি, তার ঘরে এলাম। দাদু বিছানায় বসে গল্পের বই পড়ছে। দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, "কীসের গল্প দাদু এগুলো?"

"ভূতের গল্প দাদুভাই।" দাদু আমাকে হামি খেয়ে বলল।

"আমাকে বলবে?"

"এগুলো বড়দের গল্প তো। তোকে অন্য গল্প বলি আয়।" বলে দাদু বইটা বন্ধ করে পাশে রেখে দিল।

আমি ঘরের আলো নিভিয়ে দাদুকে নিয়ে বারান্দায় এসে বসে বললাম, "এবার বলো।"

"আজ তোকে ভূতের গল্প না, এলিয়ানের গল্প বলব।"

"এলিয়ান! সেটা আবার কী?" আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।

"আমাদের এই পৃথিবী যেমন একটা গ্রহ, সেরকমই মহাকাশে অনেক গ্রহ আছে। পৃথিবীতে যেমন আমরা আছি। তেমন সেইসব গ্রহেও অন্যান্য জীবরা থাকে। অন্য গ্রহের সেই জীবদেরকেই এলিয়ান বলা হয়।"

"এলিয়ান কী সত্যি আছে দাদু?"

"হ্যাঁ আছে দাদুভাই। কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক, আমি বিশ্বাস করি। কারণ, আমি নিজে চোখে তাদের দেখেছি।"

"তাই নাকি? তাহলে বলো, বলো শুনি আমি।"

দাদু বলতে শুরু করল দাদুর কলেজ জীবনের একটা ঘটনা, যখন এলিয়ানদের মুখোমুখি হয়েছিল সে।

আটচল্লিশ বছর আগের কথা, আমি তখন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তাই ভোরবেলা টিউশন পড়িয়ে কলেজ যেতাম। কলেজ থেকে ফিরে আবার টিউশন পড়াতে যেতাম। আর রাত জেগে নিজের পড়াশোনা করতাম।

একদিন রাতে সদ্য পড়াশোনা শেষ করে বইপত্র গুছিয়ে রেখে শুতে যাব, এমন সময় দরজায় কে যেন কড়া নাড়ল। বাবা-মা জেগে যাওয়ার আগেই আমি ধীর স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, "কে?"

"ভাই আমি। রাজু।" দরজার বাইরে থেকে গলার স্বর ভেসে এলো।

আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলেই জিজ্ঞাসা করলাম, "কীরে ভাই, এত রাতে? সব ঠিকঠাক আছে তো? কোনো বিপদ হয়নি তো?"

"বিপদই হয়েছে ভাই। মাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। শরীরটা খুব খারাপ করেছে। বাবার ভ্যানে করেই মাকে নিয়ে যাব। তুই কী আমাদের সাথে যেতে পারবি? আসলে বাবার তো বয়স হয়েছে। তাই ঘাবড়ে গেছে। আমি একা যদি সামলাতে না পারি! পড়াশোনাও তো জানিনা তাই।"

"আরে, এত ভাবছিস কেন? আমি যাব তোদের সাথে। তুই ভ্যানে করে কাকু আর কাকীমাকে নিয়ে যা। আমি মাকে জানিয়ে সাইকেল নিয়ে আসছি।"

"আচ্ছা ঠিক আছে।" বলে রাজু চলে গেল।

আমি তাড়াতাড়ি করে জামাপ্যান্ট বদলে মাকে জানিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম, জরুরী বিভাগে কাকীমাকে একজন ডাক্তার দেখছেন। দেখেশুনে উনি জানালেন, "ওনার শরীর খুব দুর্বল। মনে হচ্ছে, রক্তস্বল্পতাও আছে। আর কোনো কঠিন সমস্যা নেই। এখুনি ভর্তি করে দিন। রাতটা স্যালাইন চলুক। কাল রক্ত লাগলে দিতে হবে।"

আমাকে কাকু আর রাজু জিজ্ঞাসা করল, "ভর্তি করে দেবো?"

"আজকের রাতটা অন্তত ভর্তি করে দেওয়াই ভালো। এত দুর্বলতা থাকলে চিকিৎসা না পেলে আরোও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে কাকীমা। আর যদি রক্তের প্রয়োজন হয়, সেটাও দিতে হবে।" আমি বললাম।

"হ্যাঁ, রক্তটাও জোগাড় করতে হবে।" রাজু বলল।

"রক্তের কোন গ্রুপ জানিস?"

"হ্যাঁ, এ পজিটিভ।"

"ব্যস! তাহলে তো সমস্যাই থাকল না। আমারই এ পজিটিভ। আমি রক্ত দেব কাকীমাকে।"

"তাই ভাই? তাহলে এক বোতল রক্তের জোগাড় তো হয়েই থাকল। আরোও লাগলে দেখা যাবে।"

"হ্যাঁ ভাই।"

রাজুর মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে গেলে রাজু জানালো, "আজ রাতটা আমি আর বাবা হাসপাতালেই থাকব। যদি কিছু দরকার পড়ে।"

"আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে আপাতত বাড়ি যাই। সকাল হতেই আবার চলে আসব। আর কোনো দরকার পড়লে অবশ্যই জানাস কিন্তু।"

"হ্যাঁ ভাই, তুই আয়। অনেক কষ্ট করলি আমাদের জন্য।"

"আরে ধুর! কীসব বাজে কথা। চললাম আমি।" বলে আমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে স্ট্যান্ড থেকে সাইকেল নিয়ে চললাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।

আমার বাড়ি থেকে হাসপাতালটা বেশ দূর ছিল। সাইকেলে মোটামুটি পঁচিশ মিনিট মতো লাগত। পনেরো মিনিট কাঁচা রাস্তায় আর দশ মিনিট বড় রাস্তায়।

হাসপাতাল চত্তর থেকে বেরিয়ে কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে বড় রাস্তায় ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ একটা মোটরসাইকেল এসে ধাক্কা মারে আমাকে। আমি সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যাই। মোটরসাইকেলের চালক আমাকে সাহায্য করার বদলে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়।

আমি ওই জায়গায় প্রায় ঘন্টাখানেক পরেছিলাম। বড় রাস্তা, পথচলতি মানুষজন নেই, মাঝে মাঝে শুধু বড় বড় গাড়ি যায়। অনেকেই গাড়ি থেকে আমাকে পরে থাকতে দেখেছিল সেদিন, কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। আমার ডান পা ভেঙে গিয়েছিল বেকায়দা পড়ে গিয়ে। তাই উঠে দাঁড়াতেই পারছিলাম না, তারসাথে অসহ্য যন্ত্রণা।

ব্যথায় যখন প্রায় আমার অবস্থা খারাপ হঠাৎ ঝোপের ভেতরে থেকে একজন বেরিয়ে এসে আমার পাশে বসল। সে মানুষ ছিল না, না কোনো জন্তুও ছিল না। দেখতে অদ্ভুত। মুখের আকৃতি ডিম্বাকৃতি। মোট তিনটে চোখ ছিল। দুটো চোখ আমাদের মতোই, আরেকটা কপালে। আর গায়ের রঙ বেগুনি।

আমি তাকে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠেছিলাম। কিন্তু সে মুখে কিছু না বলে আমার ডান পায়ের ভাঙা জায়গাটায় হাত রাখে। অদ্ভুতভাবেই, সাথে সাথেই ব্যথা অনেকটা কমে যায়। তারপর সে আমাকে তুলে নিয়ে ছুটতে শুরু করে দেয় ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে।

আমার ব্যথা কমে গেলেও সেইসময় শরীরটা অসাড় হয়ে গিয়েছিল। মুখ দিয়েও কোনো কথা বের হচ্ছিল না। শুধু গরম না থাকা সত্ত্বেও তড়তড় করে ঘামছিলাম।

সে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল একটা খোলা মাঠে। সেই মাঠটা বড় রাস্তা থেকে অনেকটা দূরে ছিল, সেটা জানতাম। কিন্তু এটা জানতাম না যে, সেই মাঠে ঝোপের মধ্যে দিয়ে গিয়ে অত তাড়াতাড়ি পৌঁছানো সম্ভব।

সেই মাঠটায় পৌঁছে দেখি মাঠ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশালাকার যান। দেখতে খুব অদ্ভুত। একটা প্লেট উল্টে রাখার পর তার উপরে যদি একটা গোল বাটি বসিয়ে দিই, যেমন দেখতে হবে, ঠিক তেমনি। তারসাথে আবার বড় বড় চারটা চাকা। আমাকে যে কোলে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সে আমাকে নিয়ে সোজা ওই যানের ভেতরে ঢুকে যায়। ভেতরটা পুরো যান্ত্রিক জিনিসে ভর্তি। আর ভেতরে তার মতোই আরোও অনেককে দেখে আমি আরোও ঘাবড়ে যাই, "এ আমি কাদের পাল্লায় পড়লাম ভগবান!"

ওই অদ্ভুত জীবদের মধ্যে চার-পাঁচজন মিলে আমার ডান পায়ের চিকিৎসা করতে শুরু করল। আর দুজন আমার মুখের সামনে এসে আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। আমি যে ভয়ে কখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম, জানিনা। জ্ঞান ফেরার পরে নিজেকে নিজের বাড়ির বিছানায় পাই। পাশে মা বসে ছিল।

"আমি বাড়িতে কীভাবে এলাম?" আমি ছিটকে উঠে বসে জিজ্ঞেস করেছিলাম মাকে।

"আগে বল, শরীর কেমন এখন তোর?" মা আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছিল আমাকে।

আমি গতরাতের দুর্ঘটনার কথা মনে পড়তেই ডান পা নাড়িয়ে দেখি। পায়ে কোনো ব্যথাই নেই, আরামে নাড়াতে পারছি।

আমি মাকে আবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আমি বাড়িতে কীভাবে এলাম?"

"তা তো জানিনা। ভোরে উঠে দেখি বাড়ির বাইরে সাইকেল নিয়ে পরে আছিস। জ্ঞান ছিল না। কী হয়েছিল?"

"দুর্ঘটনা।"

"কী? কীভাবে? আর বাড়ির বাইরে ওভাবে পরে ছিলি কেন?"

"আমার কাছে তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই মা।"

সেদিন আমি বুঝিনি যে সেই জীবগুলো কারা ছিল। আর ওই যানটারই বা কী নাম ছিল। আমি রাজুর মাকে হাসপাতালে দেখে ওই মাঠটায় গিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনি। রাতে যে অত বড় একটা যান ওখানে ছিল, সেটারও কোনো চিহ্ন ছিল না।

আমি বাড়ি ফিরে মা, বাবাকে সব বলেছিলাম। কেউ বিশ্বাস করেনি। এমনকি অনেক বন্ধু আর কলেজের অধ্যাপকদেরও বলেছিলাম। তারাও আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। আমি কাউকে বোঝাতে পারিনি যে আমি কাদের দেখেছিলাম।

তারপর ২০০৭ সালে ইউ.এফ.ও নিয়ে কলকাতায় বেশ চর্চা হয়। তখনি আমি বিভিন্ন রিসার্চের মাধ্যমে এটা বুঝতে পারি যে, সেদিন আমি ইউ.এফ.ও দেখেছিলাম। আর ওই জীবগুলো ছিল এলিয়ান, ভিন্নগ্রহের জীব।

আমি সবার সামনে দাবী করেছিলাম যে, আমি অনেক আগেই এলিয়ানদের দেখেছিলাম। কিন্তু কেউ আমার কথা মানেনি। সবাই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল আমার কথা। আমার কাছে কোনো প্রমাণও ছিল না।

দাদুর গল্প শেষ হয়ে গেলে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "ওরা খুব ভালো তাই না?"

"ভালো তো বটেই। যখন কোনো মানুষ আমার সাহায্য করেনি, ওরা করেছিল। আর তারসাথে ওরা খুব উন্নতও। আমার চিকিৎসা করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমার ভাঙা পা সারিয়ে তুলেছিল। যেটা আমাদের ডাক্তারদের পক্ষে আজও অসম্ভব।"

"আর হ্যাঁ, ওরা তোমার বাড়িও চিনে নিয়েছিল।"

"হুম! ওরা মস্তিষ্ক পড়তে জানে বোধহয়।"

"তাই হবে।"

দাদুকে দেখলাম বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে। আমি দাদুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি দেখছ দাদু?"

"আমি এই আকাশ দেখলেই ভাবি যে, এই আকাশেরই কোনো একপ্রান্তে ওদের বাস। আমি জীবনে আরেকবার ওদের সাথে দেখা করতে চাই। সেদিনকার জন্য ধন্যবাদ দেওয়াটা বাকি থেকে গেছে।"

"আমি বড় হয়ে যখন মহাকাশচারী হবো, তখন তোমাকে ওদের কাছে নিয়ে যাব দাদু। তুমি মন খারাপ করো না।"

দাদু মৃদু হেসে বলল, "ঠিক আছে দাদুভাই।"

দাদুকে আবার দেখলাম আকাশের দিকে তাকাতে। আর আকাশে একটা কিছু হঠাৎ চমক দিয়ে হারিয়ে গেল। দাদুর মুখে হাসি। দাদুর সাথে আজও সেই এলিয়ানদের মনের যোগাযোগটা মনে হয় থেকেই গেছে। কিন্তু তা দাদুও জানে না।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy