স্মৃতিপটে শাশুড়ী "মা"
স্মৃতিপটে শাশুড়ী "মা"
মায়ের ধাক্কায় কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে একপ্রস্থ নিতে গিয়ে মনে পড়ে গেল আজ তো আমার জীবনের সেই দুর্দিন৷ঘড়িতে তখন সবেমাত্র ভোর ৪টে বাজে,জীবনে এই প্রথম হয়ত সূর্যোদয় দেখবো৷শীতকাল, ফেব্রুয়ারী মাস,শিলিগুড়িতে বেশ ঠান্ডা,তখন গরম লেপের তলা থেকে বের হওয়াটা কেবল কষ্টকরই না, অত্যাচারও বটে৷
কোনোমতে নিজের রাগটা সম্বরণ করে মায়ের সাথে লেপ ছেড়ে সোয়েটার-শাল গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে নীচে নেমে দেখলাম গোল হয়ে বাড়ির অন্যান্যরা আমার অপেক্ষা করছে৷আমাকে নামতে দেখেই উলু দিতে শুরু করল তার মধ্যে আমার কাকিমা বলে উঠল,
— "ওকে কেউ শাড়িটা পড়িয়ে দে"৷
দিদি-বউদিদের মধ্যে তৎপরতা লেগে গেল, কে আগে জবাইয়ের পাঁঠা-কে সাজাবে! সবাইকে হারিয়ে মামাতো বউদি সেই চান্সটা পেল৷মা ওর হাতে শাড়িটা দিয়ে পড়িয়ে সাজিয়ে আনতে বলল৷
লাল পেড়ে অসহ্য মার্কা একটা শাড়ি পড়িয়ে,লাল টিপ কপালে গুঁজে,ছোট চুলগুলোকে কোনোমতে ক্লিপে গুঁজে একটা খোঁপা বানিয়ে লক্ষ্মী হবু বউমা-টি সাজিয়ে দধিমঙ্গল,অধিবাস পর্ব সারা হল৷আমি আবার গিয়ে নিজের ঘরে লেপের তলায় গুটি মারলাম৷রাগে দুঃখে খুব লেপে মুখ ঢেকে কাঁদলাম৷২২বছরের মেয়েকে বিয়ে দেওয়াটি কি খুব জরুরী? সবে মডেলিং এর কোর্সটায় ভর্তি হয়েছি,সাথে ফ্যাশন ডিজাইনিং টাও৷ সুন্দরী হিসেবে যথেষ্ট নাম ডাক যে মেয়েটার,যে অনায়াসে নাম করা মডেল বা সিনেমার হিরোইন হতে পারে,তার স্বপ্নগুলো বিয়ে নামক পাথরে ভেঙে দিয়ে কি-যে আনন্দ পেল মা-বাবা বুঝলাম না৷
আরো রাগ হচ্ছে হবু বর নীলাদ্রির ওপর৷দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে আমাকে পছন্দ করার কি ছিল?রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে শ্বশুরের নামটি নীলকান্ত না ওটা ভ্যাবলাকান্ত আর শাশুড়িটি কি আদিখ্যেতার নাম সুলক্ষনা,আমার জীবনের কুলক্ষনা৷
চোখটা একটু লেগে এসেছে আবার হৈ-চৈ করে ঘরে সবাই চলে এল৷একটু পরেই বরের বাড়ির লোক চলে আসবে বরকে সাথে করে৷কোলকাতায় শ্বশুরবাড়ি তাই ওরা আগেরদিনই রওনা দিয়েছিল৷সন্ধ্যা লগ্নে বিয়ে আমাদের৷আবার আমাকে নিয়ে সবাই পড়লো গায়ে হলুদের সাজ সাজাতে৷পেটটা কেমন চন্ চন্ করে উঠল খিদেতে৷এই সময় রোজ ব্রেকফাস্ট করা হয়ে যায়৷এত বিরক্তি ভরে বিয়ে মনে হয় এর আগে কেউ করেনি৷যে ফিলিংস আজ আমার হচ্ছে৷
১০টা নাগাদ বরের বাড়ির সব চলে এল৷ একে একে গায়ে হলুদ,বিয়ে সব পর্ব সমাপ্ত হয়ে কনকাঞ্জলী দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে পাড়ি দিলাম শ্বশুর বাড়ির দিকে৷ মা-বাবাকে ছাড়ার কষ্টে কাঁদছি না নিজের স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্টে কাঁদছি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা৷
শ্বশুরবাড়ি পৌঁছালাম৷ শাশুড়ি একটু বেশী আতিথেয়তা দেখাচ্ছে৷ আদিখ্যেতা যত্তসব৷প্রথমদিন তাই এত মাথায় চড়াচ্ছে,দুদিন গেলেই আমার মাথায় চাপাবে কাজের পাহাড় প্রমাণ ফিরিস্তি৷আজগুবি সব স্ত্রী আচারের খেলা খেলিয়েই যাচ্ছে,আর কতক্ষন যে মুখে জোর করে অভিনয়ের হাসিটা ধরে রাখতে হবে ভগবানই জানেন!
কয়েকটা খেলার পর ক্লান্তিতে আমার মুখটা গোমড়া হয়ে এল,শাশুড়ি মা সেটা লক্ষ্য করে,
"বউমারা ওদের এবার ছেড়ে দাও দেখি"
বলে আমার দুটো কাঁধে হাত দিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে ঢাকা খুলে সব দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো "বল তো এসব কি দেখছিস"?শুনে এত বোকা বোকা লাগলো, বললাম "কি আবার খাবার"!
আশেপাশে দাঁড়ানো মহিলারা এমন ভাবে হেসে উঠল যেন কোনো জোকস্ শুনছে৷শাশুড়ি পাশ থেকে ফোড়ন কেটে বলল,
"বল আমার ভরা সংসার দেখছি"৷
তোতাপাখির মত সেটাই আওড়ে দিয়ে অবশেষে ছাড়া পেয়ে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে শাশুড়ি বলল "এটা আজ থেকে তোর ঘর" বলে চলে গেল৷শান্তি করে খাটে গিয়ে বসলাম৷কোলকাতায় তেমন ঠান্ডা অনুভব হচ্ছেনা৷সেই সাথে এই বাড়ির একটা লোককেও এতটুকু ভালো লাগছে না৷আবার শাশুড়ির উদয়,কাজের লোকের হাতে গরম জলের বালতি, ঘর সংলগ্ন বাথরুমে সেটা রাখতে বলে আমাকে ওই জলে জল মিশিয়ে পরিস্কার হয়ে নিতে বলে নিজেই শাড়ি-ব্লাউজ-তোয়ালে বাথরুমে রেখে গ্যাঁট হয়ে বসে পড়ল বিছানায়৷ পরিস্কার হয়ে কোনো রকমে শাড়িটা পেঁচিয়ে বেরিয়ে দেখলাম খাটের উপড় বসেই আছেন৷শাড়িটা ভালো পরা হয়নি দেখে মুচকি হেসে ভালো করে শাড়িটা পরাতে পরাতে বললেন—"আমি জানতাম শাড়ি পরতে পারিসনা তাই এতক্ষণ বসেছিলাম,চল খেয়ে লম্বা ঘুম দিয়ে নে,কাল আবার অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে তোকে, অতিথিদের না যাওয়া অবধি"৷
খেয়ে এসে শোওয়ার তোড়জোড় করছি,মা-র কড়া হুকুম শাড়ি পরেই যেন থাকি৷একটা নাইট ড্রেস অবধি পাঠায়নি সঙ্গে৷হালকা চাদরেই শীত মানবে৷
(নতুন বউ সবে শুয়েছে এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল৷বিরক্তি ভরে দরজা খুলে দেখল শাশুড়ি দাঁড়িয়ে)
"তুই আর আমি আজ এই ঘরে শোবো"৷
সর্বনাশ করেছে! একটা রাত ভাবলাম শান্তিতে ঘুমাবো সেটাও গেল৷ভাগ্যিস নাইটি আনিনি ওটা পরা দেখলে নিশ্চয় অশান্তি পাকাতো নয়তো জ্ঞানের ঝুড়ি নিয়ে বসত৷এইসব সাত পাঁচ ভাবছি এমন সময় শাশুড়ি বললেন—
"কিরে নাইটি পড়িস নি এখনও?"
"আমি আনিনি,মা বলেছে শাড়ি ছাড়া কিছু না পরতে৷ এই নে পরে ফেল,বাচ্চা মেয়ে শাড়ি পরে থাকতে পারিস নাকি?"
বলে শাশুড়ি নাইটিটা হাতে গুঁজে দিল৷আরেব্বাস! এতো মেঘ না চাইতেই জল৷নাইটিটা পরে শাশুড়ির পাশে শুয়ে পড়লাম৷ জীবনটা আমার জলাঞ্জলী দিয়ে এখন মাখন লাগানো হচ্ছে৷এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম৷ঘুমের মধ্যে খুব কাশি উঠল,
"মা, ওমা একটু জল দাওতো"৷
চোখের সামনে দেখলাম মায়ের বদলে শাশুড়ীর হাতে জলের গ্লাস আর মাথায় ষাট ষাট করে চাপরাচ্ছে,ফুঁ দিচ্ছে৷জলের গ্লাসটা নিয়ে জল খেয়ে মনে মনে বললাম যত্তসব ন্যাকামি৷বলে পাশ ফিরে শুয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম৷
পরেরদিন বউভাত পর্ব মিটলো৷উফ! এবার এই নীলাদ্রি গামবাটটার সাথে এক ঘরে থাকতে হবে৷শুরু হল আমাদের বিবাহিত জীবন৷ নীলাদ্রির কাছে টানাকে কিছুদিন উপেক্ষা করতে পারলেও বেশীদিন তা করা গেলনা৷সহজাত প্রক্রিয়ায় বন্ডিংটা হয়েই গেল৷তার ফলে বছরও ঘুরলোনা জানতে পারলাম প্রেগনেন্ট৷
সবে মাত্র তেইশে পা দিলাম এর মধ্যে মা হওয়া৷এই ভেবে দিন দিন ভেঙে পড়তে লাগলাম। সব মেয়েদের মা হওয়া নিয়ে কত আনন্দ থাকে আমার ক্ষেত্রে তার উল্টো হল৷একবার তো শাশুড়িকে বলেই দিলাম,
"এখন মা হওয়া আমার পক্ষে জাস্ট অসম্ভব৷আমার কল্পনার বাইরে"৷
বাচ্চা নষ্ট তাও করতে পারছিনা,যত বারই ভাবছি মন থেকে কে যেন আমাকে ধিক্কার জানাচ্ছে৷সব মিলিয়ে মিশিয়ে আবার এক চোট শাশুড়িকে নিলাম,
"কেন আমাকে আপনি পছন্দ করেছিলেন?আপনার ষড়যন্ত্রে সব শেষ হল আমার, না হল মডেলিং কোর্স করা, না হল মডেল হওয়া, না নায়িকা হওয়া,না ফ্যাশন ডিজাইনিং করে বুটিক খোলা হল, কিচ্ছু আশা পূরণ হলনা"৷
শাশুড়ী মাথায় হাত রেখে "শান্ত হ" বলে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
"তোকে কথা দিলাম। তুই শুধু যে আসছে তাকে কষ্ট করে এই পৃথিবীর আলো দেখা,তারপর সব দায়িত্ব আমার"৷
সব মুখে বলছেন কিন্তু কিচ্ছু করবেন না৷সব আমাকেই করতে হবে, কাঁথা কাচা,খাওয়ানো সব৷ শাশুড়ী "পাগলি" বলে যতদূর সম্ভব আমাকে বোঝানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেন৷
সাধ পর্ব মিটে গিয়ে যথারীতি প্রসবের দিন এগিয়ে এল৷রাত থেকে প্রসব যন্ত্রনা উঠতে নীলাদ্রি সহ বাড়ির সবাই মিলে আমাকে নার্সিংহোমে নিয়ে গেল৷মাথার কাছে শাশুড়ী বসেই আছেন৷শিলিগুড়ি থেকে আমার মা-বাবা তখনও এসে পৌঁছাননি৷
একটু পরেই আমাকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হবে৷এই হয়ত আমার শেষ দিন৷আর হয়ত কাউকে দেখতে পাবোনা৷লেবার রুমের কাছে দেখলাম নীলাদ্রি- শাশুড়ী-শ্বশুর-মা-বাবা সবাই দাঁড়িয়ে৷নীলাদ্রি দৌড়ে মাথার কাছে এল,
"কোনো ভয় নেই। "
বলে মাথায় আমার চুমু দিল৷সবাই ভয় নেই বলছে শুনে 'আর ফিরবো' না ভয়টা বেশীই গ্রাস করে নিচ্ছে আমাকে৷ শাশুড়ীও যে মা হয় সেটাও এতদিনে বুঝে গেছি, শুধু ঠুনকো ইগোর বশে প্রকাশ করতে পারিনি৷আর পারবো কিনা জানিনা৷যতদূর চোখ যায় দেখে নি সবাইকে৷লেবার রুমে ঢুকে সব কেমন ধোঁয়াশা লাগছে৷কিছুক্ষণ পরে কানে এল—"দেখুন কি হয়েছে.... ছেলে!"
দেখে আমি আবার ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম৷যখন জ্ঞান এল দেখলাম বেডে শুয়ে মাথার কাছে মা আর শাশুড়ী মা দাঁড়িয়ে৷তোয়ালে জড়ানো ছোট্ট একটা প্রাণকে হাতে ধরানো হল৷আনন্দে সারা শরীর শিহরণ দিয়ে উঠল৷নার্স ওকে ফিড করাতে বলে চলে গেল৷ফিড করানোর পর ও ঘুমিয়ে যেতে শাশুড়ী মা ওকে আমার কোল থেকে নিয়ে বেবিকটে শুইয়ে দিয়ে নাড়াতে লাগলো৷ বেবি কটে শুয়ে থাকা আমার ছেলেকে বারবার দেখছিলাম তন্দ্রা কাটিয়ে,ওর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো! নিজের সব কষ্ট ভুলে গেছি৷কত ভয়, শারীরিক কষ্ট,ফিগার নষ্ট সব ভুলিয়ে দিচ্ছে এই মায়া ভরা মুখটা৷মনে হচ্ছে ওকেই খালি দেখে যাই৷শরীরেএকটা নতুন অনুভূতি৷
চারদিন পর আজ আমার ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম৷ ঘরে ঢুকতেই শাশুড়ী মা দুহাত তুলে বললেন—
"দে এবার আমার কথা রাখার পালা,ওর সব দায়িত্ব এখন থেকে আমার"৷
শাশুড়ীমা-র কথা শুনে মনে হচ্ছে কিসব পাগলের প্রলাপ বকছে! আমিও প্রবল ইগোর বশে ভাঙবো তবু মচকাবোনা৷মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে ছেলেকে শাশুড়ীমা-র কোলে দিলাম৷ গুটি গুটি পায়ে দরজার আড়াল থেকে দেখলাম নাতিকে নিয়ে ঘরে গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মত স্নান করাতে বসলেন৷ আমার ছোট্ট ছেলেটা হাত-পা একটু একটু করে নাড়ছে,ঠাকুমার আদরে যেন কত স্বস্তি পাচ্ছে! নাকে ভেসে আসছে বেবি পাউডারের গন্ধ৷হঠাৎ কেঁদে উঠল,স্নান করে ওর খিদে পেয়ে গেছে৷নিজেকে ওর কান্না শুনে আর আড়ালে রাখতে পারলামনা,
"মা ওকে দাও ফিডিং য়ের সময় হয়েছে তাই ও কাঁদছে"৷
"থাক না ওকে কৌটোর দুধই একটু গুলে দিয়ে দেব,চিন্তা করিসনা"৷
কথাটা মনে কাঁটার মত বিঁধছে৷বাঁধ ভাঙা কষ্টের ধাক্কায় মনের ভীতটা কেঁপে উঠল৷অতীতে বলা সব কথা স্মরণে এসে ভীড় জমিয়েছে৷ কান্নায় যার নিষ্পত্তি ঘটিয়ে শাশুড়ী-মা কে জড়িয়ে ধরলাম,
"তুমি ঠিক ছিলে মা, এ সুখ অপার্থিব"৷
"পাগলি মেয়ে আমার, আমি জানতাম যেদিন মা হবি সেদিন তোর আমাকে আর ভুল মনে হবে না৷তোর কি মনে হয় আমি ১৮ বছরে বিয়ে করে এসেই এতটা পরিণত ছিলাম? না রে! নীলাদ্রি আমাকে ধৈর্য্যশীলা-পরিণত মা করেছে। তুইও আজ তাই হলি৷ ধর তোর ছেলেকে"৷
কোলে এসেই ফোকলা দাঁতে একটা হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিল আমি কত বোকা ছিলাম৷
সেই ছোট্ট ছেলেটার রাত পোহালেই বিয়ে৷আমার নিশান এখন ২৮ বছরের যুবক,প্রতিষ্ঠিত৷এই নাম টাও আমার মায়ের(শাশুড়ী)রাখা৷ নীলাদ্রি-শাওন থেকে নিশান৷আস্তে আস্তে শাশুড়ী মা আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠেছিলেন৷ আমার বুটিক খোলার স্বপ্নটাও পূরণ করেছিলেন৷ নিশান যখন বছর দুয়েক হয়ে কিন্ডারগার্টেন যেতে লাগল মা আমাকে আবার ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্সে ভর্তি করে দিলেন,তারপর বুটিক খোলা সব স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন৷ বুটিক থেকে ফিরেই হোক বা কোন অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে হোক ফিরে সব গল্প মাকে(শাশুড়ী)না বললে আমার শান্তি হতনা৷আমার শাশুড়ী মায়ের মুখে শুনেছিলাম ওঁর মেয়ের খুব শখ ছিল৷ নীলাদ্রির পর শারীরিক অসুবিধার জন্য দ্বিতীয় সন্তান ধারণ করতে পারেননি৷তাই ছেলের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়েছিলেন সেই শখ পূরণ করবেন বলে৷আমাকে মেয়ে ছাড়া বউ কোনদিন ভাবেননি৷ঠাম্মির কথায় নিশানের চোখের কোনা আজও ভিজে যায়৷দশ বছর হল নিশান তার ঠাম্মিকে হারিয়েছে আর আমি মা সম শাশুড়ী মা-কে৷ মানুষ চিরস্থায়ী হয়না,কর্ম ফলেই তারা সবার মনে বেঁচে থাকেন চিরকাল, যেমন আমার শাশুড়ী মা৷
স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে শাওন নিশানের টেবিলে রাখা শাশুড়ী মায়ের ছবির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে,দুগাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে৷ ঘুমন্ত নিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো চুমু দিয়ে— "মা আমাকে আশীর্বাদ করো আমিও যেন তোমার মত ভালো ধৈর্য্যশীলা শাশুড়ী হতে পারি"৷ বলে আস্তে আস্তে নিশানের ঘর থেকে বেরিয়ে আলতো করে দরজাটা ভেজিয়ে দিল৷৷
(সমাপ্ত)