Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sonali Basu

Drama

4.8  

Sonali Basu

Drama

তুমি ভালো থেকো

তুমি ভালো থেকো

7 mins
5.5K


হরিদ্বারে কয়েকদিনের ছুটি কাটাতে এসেছেন সুনীল সস্ত্রীক। এখানে এসেছেন স্ত্রী আরতির আগ্রহে, ওনার অতও পুণ্যি করার বাতিক নেই। উনি নাস্তিক নন তবে ঠাকুর বিশ্বাস করেন বলে তীর্থে তীর্থে ঘুরে ইহলোক ছাড়ার আগে পুণ্যি সঞ্চয় করতে হবে এটা মানেন না। তবে ওনার ভাবনাধারার সাথে স্ত্রীর ভাবনা না মিললেও ওর কোন কাজে উনি বাধা দেন না। কারণ ওর তীর্থ দর্শন হয় আর ওনার নতুন জায়গা দেখা হয়। ওনার ভালো লাগে নতুন নতুন জায়গা দেখতে নতুন লোকের সাথে পরিচিত হতে।

আজ সকালে ঋষিকেষ যাওয়ার উদ্দেশ্যে সুনীল সস্ত্রীক বেরলেন হোটেল থেকে। কিন্তু গাড়িতে ওঠার মুখে বিভ্রাট। গাড়িতে উঠতে গিয়ে আরতি স্লিপ করে পড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু একজনের কারণে আছাড় খাওয়া থেকে বেঁচে গেলো। সুনীল আগেই উঠেছিলেন বাসে তাই আরতি যে পড়তে পড়তে বাঁচলো সেটা বুঝতে পারলেন পরে যখন একটি মেয়ের সাহায্যে আরতি খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে সীটে বসলো। খানিক অবাক হয়েই স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন “খোঁড়াচ্ছ কেন? হোঁচট খেলে নাকি?”

আরতি মাথা নাড়লো তবে সাথের মেয়েটি বলল “কাকিমা স্লিপ কেটে পড়েই যাচ্ছিলেন আমি পেছনে থাকায় ধরে ফেলতে পেরেছি” সুনীল এবার ব্যস্ত হলেন “কেটে ছড়ে যায়নি তো ভালো করে দেখো নাহলে তো ব্যাথা বাড়বে”

আরতি এবার বলল “না না ব্যাপারটা বাজে হতে পারতো কিন্তু ওর জন্য হল না”

সুনীল ওর মুখের দিকে তাকালেন, মুখশ্রী ভারি মিষ্টি, জিজ্ঞেস করলেন “তোমার নাম কি মা?”

“আঁখি”

“বাহ খুব সুন্দর নাম” আরতির মন্তব্য।

“বেড়াতে এসেছ?”

“না, এখানেই থাকি”

“ও”

বাসের চালক হর্ন দেওয়া শুরু করেছে, গাড়ি এবার ছাড়বে তাই আঁখি বলল “আমি এবার গিয়ে বসি, কাকিমা” ওরা দুজনেই মাথা নাড়াতে ও এগিয়ে গিয়ে সীটে বসলো।

যথা সময়ে বাস গিয়ে পৌঁছালো তার গন্তব্যস্থলে। সবাই বাস থেকে নেমে পড়লো। এবার সুনীলরা সব ঘুরে ঘুরে দেখবেন। আঁখি বাস থেকে নেমে এগিয়ে এসে বলল “কাকাবাবু আপনাদের ঘোরা হয়ে গেলে এখান থেকে চলে যাওয়ার আগে একবার যাবেন আমাদের বাড়ি”

সুনীল বললেন “চেষ্টা করবো”

“এই নিন আমাদের বাড়ির ঠিকানা” বলে আঁখি একটা কাগজ এগিয়ে ধরলো “কোন অসুবিধা হবে না ঠিকানা খুঁজে বার করতে যাকেই জিজ্ঞেস করবেন সেই দেখিয়ে দেবে আত্রেয়ী ভবন”

দুজনেই হাসলো। “আসি তাহলে” বলে আঁখি এগিয়ে গেলো।

দুদিন হোটেলে থেকে সব দর্শনীয় স্থান দেখার পর সুনীলরা ঠিক করলেন আঁখিদের বাড়ি একবার যাবেন, অত করে যখন মেয়েটা বলল তাছাড়া অবাঙালিদের মাঝে একজন বাঙালি খুঁজে পেলে মনটা আনন্দিত হয়। কিন্তু যেদিন যাবেন ঠিক করলেন তার আগের দিন রাত থেকে আরতির গা ম্যাজম্যাজ মাথা যন্ত্রণা শুরু হল। স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে এসে সুনীল ঠিক করলেন যাবেন না কোথাও। স্ত্রী সুস্থ হলে বাড়ি ফিরবেন কিন্তু আরতি বলল “তা কেন? আমি যেতে পারছিনা বলে তুমিও যাবে না এটা ঠিক নয়। ও অত আশা করে বলেছে ঠিকানা দিয়েছে, যাওয়ার আগে নাহয় শুধু তুমিই দেখা করে এসো আর আমার অবস্থাটা বুঝিয়ে বলো”

আরতির উৎসাহে সুনীল ঠিকানা মিলিয়ে পৌঁছালেন আত্রেয়ী ভবনে। ভারি সুন্দর ছোট্ট একতলা বাড়ি সামনে ছোট একটা বাগানে সেই মুহূর্তে আঁখি ফুল তুলছে। সুনীল মনে মনে ভাবলেন মেয়েটি খুব ভক্তিমতি। গেটের হুড়কোটা খুলতেই আঁখি দেখতে পেলো ওনাকে, হাসি মুখে বলল “আসুন আসুন... তা কাকিমা কোথায়?”

গেট থেলে ঢুকতে ঢুকতে সুনীল উত্তর দিলেন “শরীরটা ভালো নেই তো তাই আসতে পারলো না”

“কি হয়েছে?... আসুন আসুন আগে ভেতরে এসে বসুন তারপর কথাবার্তা হবে”

ভেতরে এসে বেতের চেয়ারে বসে উনি সব বললেন। আঁখি বলল “এ মা কাকিমার এই সময়েই শরীরটা খারাপ হল! আমি কত আশা করেছিলাম উনি আসবেন” তারপর আওয়াজ উঠিয়ে বাড়ির ভেতরে থাকা কাজের মেয়ের উদ্দেশ্যে বলল “চাঁদনী চা নিয়ে এসো” তারপর কাকাবাবুর উদ্দেশ্যে বলল “আপনি একটু বসুন। আমি এটা রেখে আসছি” বলে ফুলের ঝুড়িটার দিকে ইঙ্গিত করলো।

সুনীল বললেন “হ্যাঁ মা যাও। পুজো সেরেই এসো, আমি বসছি”

আঁখি হাসলো “না কাকাবাবু ফুলটা আমি পুজো করার জন্য তুলিনি। আজ আমার মায়ের জন্মদিন তাই মাকে দেবো”

“তোমার মা বাড়িতে আছেন ... কই দেখলাম না তো ... আলাপ করাবে না?”

“আলাপ করতে চান তো! আসুন আসুন ভেতরে আসুন। মায়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেবো” আঁখির পেছন পেছন সুনীল ভেতর বাড়িতে এলেন। একটা বন্ধ দরজা ঠেলে যে ঘরে ঢুকলেন ওরা, সেখানে ঢুকতেই সুনীলের দৃষ্টি দেয়ালে আটকে গেলো। দেওয়াল জুড়ে এক মহিলার প্রতিকৃতি। এক দেখায় সুন্দরী বলা যাবে না তবে চেহারায় যে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে আছে তার কারণে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু ভালো করে তাকিয়ে দেখতে গিয়েই সুনীলের মনে হল মহিলাটা ওর খুব চেনা, কতদিনের পরিচিত! ঠিক সেই মুহূর্তে আঁখি বলল “কাকাবাবু এই আমার মা, আত্রেয়ী” তারপর মায়ের সাথে সুনীলের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল “মা ইনি সেদিনের পরিচিত কাকাবাবু, নাম সুনীল দত্তগুপ্ত”

নামটা শুনেই সুনিলের মন এক লহমায় পিছিয়ে গেলো কলেজের দিনগুলির সময়ে। কলেজের সেই দিনগুলোয় ওর মনটা যেন পাখী হয়ে আকাশে উড়াল দিয়েছিলো। চেহারায় সাধারণ হলেও কথাবার্তায় চৌখস ছিল ও যার কারণে অনেকেই আকর্ষিত হতো ওর দিকে। কলেজের দাদারা ওর এই বাগ্মিতাকে কাজে লাগাতে চাইলো আর সেই কারণেই ও ছাত্র রাজনীতিতে নাম লেখালো। এর মাঝে ওর জীবনে বসন্তের ফুল ফুটলো আত্রেয়ীকে দেখে। সেও ওই কলেজেরই ছাত্রী তবে এক বছরের সিনিয়ার। দু একবার কথা হয়েছিলো ওই চাঁদা চাইতে গিয়ে। সম্পর্কটা দানা বাঁধল একটা ঘটনার মাধ্যমে।

কলেজে ইলেকশন হবে তাই নিয়ে দুই দলের প্রচার চলছিল। হঠাৎ কি নিয়ে (বিষয়টা আজ আর মনে পড়ে না) দুই দলে প্রথমে বচসা শুরু হল তারপর হাতাহাতি মারামারি। ওর মাথায় কারো হকি স্টিকের বাড়ি পড়েছিলো। ব্যস তারপর তো আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে, সামনে একটা টুলে আত্রেয়ী বসে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে দু সপ্তাহ লেগেছিল। কলেজের সুহৃদরা ওকে সেরকম দেখতে না এলেও আত্রেয়ীর আসার কামাই ছিল না। দেখাশোনা কথাবার্তা এগোতে এগোতে মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গেলো। সময় বেশ এগিয়ে চলল। সুনীল ভাবলেন এবার প্রেমকে পাকাপোক্ত করা যাক তাই এক বিকেলে শহরের এক দামি ক্যাফের কেবিনে পর্দার আড়ালে আত্রেয়ীর হাত দুটো ধরে বললেন “আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই আত্রেয়ী” কথাটা শুনে আত্রেয়ী কিছুক্ষণের জন্য ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বলল “সেটা হয় না সুনীল”

ও প্রেমিকার কাছে এই উত্তর আশা করেনি তাই বলল “কেন হয় না আত্রেয়ী? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?”

“খুবই ভালোবাসি কিন্তু তবু বলছি এ বিয়ে সম্ভব নয়। আমার অতীত সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই”

বাধা দিয়ে সুনীল বললেন “অতীতের চিন্তা করি না, তুমি আমার বর্তমান এটাই আমার কাছে সব”

“তবু সবটুকু আমি জানাতে চাই। আমি আমার মায়ের সন্তান, একজন জন্মদাতা বাবা ছিল তবে আমাদের কোন ভার নিতে অস্বীকার করায় আমরাও আর যোগাযোগ রাখিনি। এরকম এক মেয়েকে তোমার বাড়ির লোকেরা পুত্রবধূ করতে রাজি হবেন না কারণ এরকম পরিবারের চরিত্রের দিকে মানুষের আঙুল তাক করাই থাকে। আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমার ভবিষ্যৎ আমার জন্য নষ্ট হোক এটা চাই না”

সুনীল আবেগের সাথে বলেছিলেন “না না আমি কোন কথা শুনতে রাজি নই প্রিয়তমা আমার। আমি যেটা স্থির করেছি সেটাই করবো। তুমি শুধু আমাকে সপ্তাহ খানেকের সময় দাও। মাকে সব বলেছি তোমার ব্যাপারে, বাবাকে বলা বাকি। বাবা শহরের বাইরে তাই। এই সপ্তাহেই তিনি ফিরবেন”

আত্রেয়ী মৌন ছিল আর সেটাকে ও সম্মতি ভেবে নিয়েছিলো। কিন্তু সপ্তাহ পেরোনোর আগেই ও জানতে পারে আত্রেয়ী তার মাকে নিয়ে কোথায় চলে গেছে। কেউ কোন খোঁজ দিতে পারেনি।

তারপর যা হয় আর কি, আত্রেয়ীকে মনে করে বিয়ে করবে না এই সংকল্প টিকে থাকেনি। বাড়ির লোককে কারণটা বোঝাতে পারেননি। যথারীতি পাত্রী বাছাই পর্ব শেষে আরতির সাথে বিয়ে আরে তারপর এতোগুলো বছর পার। ছেলে শায়ন কর্মরত আর মেয়ে শর্মিষ্ঠার বিয়ে হয়েছে এই বছর ঘুরতে চলেছে।

আঁখি আত্রেয়ীর ছবিতে মালা পড়াতে পড়াতে বলল “জানেন কাকাবাবু মা ভালোবাসার কাছ থেকে পালিয়েছিল বলেই হয়তো ভালোবাসাও অভিমান করে মায়ের থেকে দূরে সরে রইলো। পড়াশোনা শেষ করলো ভালো চাকরি পেলো উঁচু পদেও উঠলো সময়মত কিন্তু সুখ পেলো না”

সুনীল হাঁ করে ছবির দিকে চেয়েছিল, মনে হচ্ছিলো আত্রেয়ী কোন বিশেষ কারণে আজ এতো খুশি। হাসি চল্কে পড়ছে চোখ দুটো থেকে। এখানে এসেই ওনার আবার আত্রেয়ীর সাথে দেখা হয়ে যাবে তা তিনি আগে কল্পনাও করেননি। কোনমতে প্রশ্ন করলেন “কবে মারা গেছেন?”

“তাও বছর দশ হতে চলল”

“তোমার বাবা?”

“মা মারা যাওয়ার পর তিনিও হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন একদিন...... প্রচুর খোঁজ করেছি কিন্তু হদিশ পাইনি”

“তুমি জানলে কি করে যে আমি তোমার মাকে...”

“মায়ের আলমারিতে দিদুনের তাকে একটা বাক্স ছিল তার ভেতরে একটা চিঠি আর একটা ছবি পাই। চিঠিটা আপনার উদ্দেশ্যে আর ছবি আমার জন্য আপনাকে চিনে নিতে। মা বোধহয় চায়নি বাবা এটার সন্ধান পাক তাই দুটোই দিদুনের জিনিসপত্রের তলায় রেখেছিলো। চিঠিটা আমি পড়েছি তাই অফিসে যাওয়া আসার রাস্তায় এখানে আসা সব ভ্রমণার্থীদেরকেই আমি খুব মন দিয়ে দেখি যদি ছবির সাথে মিলে যায়। দু একজনকে এর আগেও আসতে বলেছি কিন্তু তারা আসার পর বুঝতে পারি তাদের সাথে ছবির মিল নেই”

“চিঠিটা দেখতে পারি?”

“হ্যাঁ, আনছি” আঁখি চিঠিটা নিয়ে এলো। সুনীল বসে বসে চিঠিটা পড়ছিল। এবারেরটা ধরলে ও চতুর্থবার পড়ছে চিঠিটা। মোবাইলের যুগে কেউ চিঠি পড়ে না কিন্তু ওর মনে হচ্ছে আত্রেয়ী ওর সামনে বসেই ওর মনের কথা ওকে বলে চলেছে।

ওদিকে আঁখি বলে চলেছে “আপনার ভালোবাসা ছেড়ে মা সংসার করলো ঠিকই কিন্তু শান্তি পেলো না। বাবা মায়ের ব্যাপারে ভীষণ পজেসিভ ছিল ভালো যেমন বাসতো তেমনই কিছু শুনতে পেলে মায়ের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করতো না। এই অদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার হয়ে আবসাদে ভুগে ভুগে শেষ অব্দি মা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল”

আঁখির কথা থেকে মন সরিয়ে সুনীল চিঠিতে আবার চোখ রাখল। আত্রেয়ী লিখেছে,

সুজন আমার,

আশা করি ভালো আছো। সুখে সংসার কর এই আমার কামনা। ভেবেছিলাম তোমার থেকে দূরে গিয়ে তোমায় ভুলতে পারবো কিন্তু পারলাম না। বিয়ে যার সাথে হল সে আমাকে মানবী নয় জিনিসপত্রের সাথে তুলনা করতো তাই ওর মতের একটু এদিকওদিক হলেই সমস্যা গভীর হতো। খুব চেষ্টা করেছিলাম বাধ্য বৌ হতে কিন্তু... এই জগৎ ছেড়ে চললাম, তাতে দুঃখ নেই কিন্তু তোমাকে শেষ দেখা দেখে যেতে পারলাম না। এটাই যা আফসোস রয়ে গেলো। তাই মেয়েকে দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি তোমার সাথে দেখা হলে একবার যেন তোমায় আমার সামনে নিয়ে আসে। ওর ওপর আমার খুব ভরসা। ও পারবে।ভালো থেকো, ইতি- আত্রেয়ী

চিঠিটা শেষ করে সুনীল তাকালও ছবির দিকে। আত্রেয়ী মুখে তৃপ্তির হাসি, ওর আশা পূর্ণ হয়েছে। ও ফিসফিস করলো “তুমিও ভালো থেকো!”


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama