Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Inspirational

2.5  

Debdutta Banerjee

Inspirational

হারানো সুর

হারানো সুর

4 mins
1.0K


হঠাৎ করে ওদের জীবনে এমন অন্ধকার নেমে আসবে কেকা কখনো ভেবেছিল ? সুখী জীবন,গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা সাজানো সংসার,ফুলের মতো মিষ্টি মেয়ে পিহু, অমিতের মত স্বামী কি ছিল না তার জীবনে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো !! ভগবান কিসের জন্য এত বড় শাস্তি দিল ওকে ও জানে না। জ্ঞানত কারো কোনো ক্ষতি করেনি ও। তবে কেন ?

 দিন গুলো আর কাটতে চায় না কেকার, ফাঁকা বাড়িতে পাগল পাগল লাগে। রাতের বেলায় ঘুম ভেঙ্গে ও উঠে যায় পিহুর ঘরে। খেলনা গুলো এখনো সাজানো, বইপত্র গুছানো, ছবির খাতায় গোঁজা একটা পেনসিল। এই ছবিটাই সে দিন আঁকছিল মেয়েটা। কি দরকার ছিল ওকে পার্কে নিয়ে যাওয়ার। সেদিনটা পার্কে না গেলে তো এমন হতো না। পার্কে গিয়ে পিহুকে সর্বক্ষণ চোখে চোখেই রাখত কেকা। নিপার সাথে গল্প করতে করতে একটু চোখ সরিয়েছিল কি !! কেন যে নিপার সাথে বেঞ্চে গিয়ে বসেছিল সেদিন !! নিয়তি বোধহয় একেই বলে।

 দোলনা থেকে ছিটকে পড়েছিল পিহু। কিন্তু উঠতে যেতেই ভারি কাঠের দোলনাটা ঘুরে এসে মাথার পিছনে আঘাত করেছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কেকার চোখের সামনে ঘটেছিল পুরো ঘটনাটা। পিহুকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে যেটুকু সময় লেগেছিল... ডিপ ইনজুরি, মাথায় রক্ত জমে কোমায় চলে গেছিল আট বছরের পিহু। তিন দিন সব ভুলে ওর কেবিনের বাইরেই বসে ছিল কেকা আর অমিত। না, কেকাদের খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল।

সারা বাড়িতে পিহুর চিহ্ন। ওর ছবি, ওর জামা,খেলনা স্কুল ব্যাগ!! রোজ অভ্যাস মত সকাল সাতটায় বাসের হর্ন শুনে বারান্দায় ছুটে যায় কেকা। পিহুর বন্ধুরা বাসে করে স্কুল যায়।

অমিত ও বদলে গেছে,বড্ড চুপচাপ হয়ে গেছে আজকাল। বাড়িতে ফিরতেই চায় না,সারাক্ষণ বাইরে থাকে। রবিবার গুলোও কোথায় যেন চলে যায়। একেক সময় কেকার মনে হয় অমিত কি ওকে দায়ী করছে পিহুর মৃত্যুর জন্য!!

কিন্তু যদি করেও থাকে ভুল কিছু নেই। কারণ সত্যিই সে দায়ী। চোখের সামনে মেয়েকে পড়ে যেতে দেখেছিল। কিন্তু ক্ষণিকের বিহ্বলতায় সব কেমন হয়ে গেছিল। মেয়ের দিকে না ছুটে যদি দোলনাটা আটকাত হয়তো এত বড় ক্ষতি হত না!!

*******

-''দিদি জিজু কোথায় রে? '' কেকার ভাই কৃষ এসেছিল রবিবার ওদের বাড়ি। পিহু নেই বলে আজকাল কেউ আসে না।

-''জানি না রে। ও যে কোথায় যায় , কি করে ..... কপালটাই খারাপ আমার। '' চোখ মোছে কেকা।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কৃষ ভাবে দিদিকে কথাটা বলা উচিত কিনা। এই নিয়ে দুবার দেখল ও ঘটনাটা। ধীরে সুস্থে কাপটা নামিয়ে ও মোবাইলে একটা ছবি বার করে।

-''চিনিস নাকি রে ? পিহুর বন্ধু নাকি?''

কেকা ভাইয়ের মোবাইল স্ক্রিনে দেখে অমিতের সাথে একটা আট দশ বছরের বাচ্চা মেয়ে একটা শপিং মলের বাইরে। বাচ্চাটাকে আগে দেখেছে বলে মনে পড়ে না। হয়তো অমিতের কোনো কলিগের বাচ্চা!!

-''আজ জিজুকে আবার দেখলাম আরেকটা বাচ্চাটাকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে ধর্মতলায়।একটা ছেলে, সঙ্গে এক মহিলাও ছিল। ''

মনটা কেমন কু ডেকে ওঠে কেকার। কে এই বাচ্চাটা। কয়েকদিন আগে পিহুর দুটো সবচেয়ে পছন্দর জামা হঠাৎ অমিতকে নিয়ে যেতে দেখেছিল। প্রশ্ন করেও উত্তর পায়নি সেদিন। আজ ওর দুটো গাড়ি নিয়ে গেছে কাজের মেয়ে বলেছিল। এসব কি হচ্ছে!!

অমিতকে রাতে প্রশ্ন করবে ভেবেছিল, কিন্তু ঠিক কি জানতে চাইবে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু পরের রবিবার অমিত যখন পিহুর প্রিয় বার্বি ডলের সেটটা ব্যাগে ভরছিল কেকা এসে দাঁড়ায়। বলে -''কেন এ ভাবে আমার মেয়ের সব জিনিস দিয়ে দিচ্ছ অন্যদের? আমায় ওর স্মৃতি টুকু নিয়ে থাকতে দাও। ''

অমিত ওর দিকে তাকিয়ে বলে -''আমায় বাধা দিও না, আমি যা করছি করতে দাও। ''

-''আমার মেয়ের জিনিস আমি দেব না। '' চিৎকার করে ওঠে কেকা।

অমিত ওর দিকে ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে -''প্লিজ, আমায় যেতে দাও। ''

-''আমিও তোমার সাথে যাবো তবে। কাকে দিচ্ছ এ সব? কে পিহুর সব ছিনিয়ে নিচ্ছে দেখতে চাই। ''

জোর করেই কেকা অমিতের সঙ্গে গাড়িতে উঠে বসে। সারা রাস্তা একটাও কথা বলে না অমিত। প্রায় একঘণ্টা পর ঠাকুর পুকুরের একটা বড় দেওয়াল দেওয়া বাড়িতে এসে দাঁড়ায় অমিত। গেটের উপর লেখা নবারুণ। ভেতরে ঢুকে কেকা দেখে এটা একটা অনাথআলয় মত। বেশ কিছু বাচ্চা খেলছে। হঠাৎ একটা মেয়ে ছুটে আসে, বলে -''কি এনেছ আজ আমার জন্য?''

অমিত মেয়েটাকে ডলের সেটটা বার করে দেয়। কেকা চিনতে পারে, এই মেয়েটার ফটোই ও দেখেছিল ভাইয়ের ফোনে।

মেয়ে কে হারিয়ে অমিত অনাথআলয়ে আসছে ঠিক আছে, কিন্তু একটা মেয়েকেই কেন সব দিচ্ছে। কত বাচ্চা এখানে। এই বিশেষ মেয়েটার প্রতি ওর টান কেন ? আর ঐ ছেলেটাই বা কে ছিল যাকে ভাই দেখেছিল? মহিলাই বা কে ছিল? তবে কি আজ ও এসেছে বলে অমিত ওকে এখানে নিয়ে এলো। বেশ কিছুক্ষণ পর অমিত উঠে পরে।

কেকা বলে -''কে এই মেয়েটা আমায় বলো। আর ভাই তোমায় কোনো বাচ্চা ছেলের সাথেও দেখেছে, সে কে ?''

-''চিনতে পারলে না !! অবশ্য চেনার জন্য চোখ চাই। পিহুর ব্রেন ডেথের পর ডাক্তার কি বলেছিল মনে নেই !! বলেছিল ব্রেন ছাড়া ওর শরীরের সব পার্টস সচল। আমরা চাইলে তা দান করতে পারি। প্রথমে মানতে পারিনি। কিন্তু তারপর মনে হল পিহুর চোখটা যদি বেঁচে যায়, ওর হার্ট যদি কাউকে জীবন দেয়,ওর কিডনি ওর লিভার .... কত গুলো  শিশুর মুখে হাসি ফুটবে। আমি রাজি হয়ে যাই। তোমায় দিয়েও সই করিয়েছিলাম আমি। এখন আমাদের পিহুর হৃদয় রয়েছে এই রশ্নির মধ্যে, আকাশ বলে একটি ছেলে পেয়েছে পিহুর দৃষ্টি। মালদার তন্নি পেয়েছে লিভার আর কিডনি পেয়েছে জামশেদপুর আর হায়দ্রাবাদের দুটি বাচ্চা। রশ্নি অনাথ, তাই আমি ওর সাথে দেখা করতে আসি মাঝে মাঝে। আকাশের সাথেও দেখা হয়। বাকিরা তো বাইরে থাকে পরিবারের সাথে। যোগাযোগ নেই তেমন। আমাদের পিহুর জন্য এতগুলো বাচ্চা সুস্থ হয়েছে। হাসি ফুটেছে ওদের মুখে। আমি রশ্নির কাছে এলে পিহুর গন্ধ পাই। ওর হৃদয়টাই তো পিহু। তাই পিহুর প্রিয় জামা খেলনা এসব রশ্নিকে দিয়ে আনন্দ পাই। আকাশকে দুটো গাড়ি দিয়েছি। কিন্তু সেই গন্ধ পাইনি। আসলে রশ্নির মধ্যেই রয়েছে পিহু। ''

কেকা  ঝাপসা চোখে দেখছিল রশ্নি দোলনা দুলছে, ঠিক পিহুর মত। দূর থেকে পিহুই মনে হচ্ছে। ও ধীরে ধীরে বলে -''এই পিহুকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারি না আমরা ?দেখো না যদি হয়...!! ওকে আমাদের করে নেই চলো। ''

বহুদিন পর অমিত ওকে বুকে টেনে নেয়। বলে -''তুমি যদি চাও তাই হবে। আমি ওকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো। ''


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational