Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Soumya Ghosh

Horror Others

4.0  

Soumya Ghosh

Horror Others

নিছক ভূতের গল্প নয়

নিছক ভূতের গল্প নয়

6 mins
594



       বাড়ি থেকে মায়ের ফোন। আমার জন্য সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে । মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্যই মায়ের নির্দেশ । কলেজ স্ট্রিটের কাছাকাছি একটা মেসবাড়ীতে বাড়ি থাকি । সরকারি কেরানী । সেদিন অফিস শেষে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম । অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি, খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে অফিসের পর বাবা মার জন্য কিছু উপহার ও মিষ্টি কিনে নিলাম । মেসবাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে বেরুতে বেরুতে একটু দেরি হয়ে গেল । শিয়ালদা স্টেশনে এসে দেখি হাসনাবাদ লোকাল রাত আটটা পঁয়তাল্লিশে । যাইহোক জানলার দিকে একটা সিট খুঁজে বসে পড়লাম । বারাসাত স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে দু'চারজন প্যাসেঞ্জার ছিল , একটা হকারও মেঝেতে বসে । সম্ভবত সেও তার বাড়ি ফিরছে । একদৃষ্টে হকারের দিকে তাকিয়ে ভাবতে শুরু করি :‌‌ সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করে সে গৃহমুখী । সেও একজন পরিবারভুক্ত মানুষ । হয়তোবা তার ছেলেমেয়েরা অপেক্ষায় আছে কখন বাবা বাড়ি ফিরবে!


         ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গিয়েছিল জানিনা ।আমিও সারাদিনে ক্লান্ত। শ্রান্ত। হঠাৎ ট্রেনে একটা ঝাকুনিতে তন্দ্রা কেটে যায় । ট্রেনে কোন প্যাসেঞ্জার নেই। লাইট গুলো দু-একটা ছাড়া জ্বলছে না । একটা আবছা আলো আঁধারিতে খোলা জানালার ঠান্ডা বাতাস মোহময় হয়ে উঠেছিল। ঠিক একটা রোমান্টিক বাতাবরণ। কোন্ স্টেশনে? আপন মনে নিজেকে প্রশ্ন করি নিজেকে । দরজা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ভাসিলা স্টেশন ছাড়িয়ে ট্রেন হাড়োয়ার অভিমুখে । দরজার দিকে আসতে দেখলাম, ট্রেনে আমি একা নই । ‌আরো একজন রয়েছেন । জনৈকা মহিলা । সালোয়ার-কামিজ পরিহিতা কাঁধে একটা লেডিস ব্যাগ ঝোলানো । গায়ে একটা হালকা কার্ডিয়ান জড়ানো মাথায় ঘোমটা মতো দিয়ে । নিজের সিটে এসে ভাবলাম, এত রাতে ট্রেনে এমন একজন উনিশ কুড়ি বছরের বয়সের তন্নী ? ওর স্বামী কি করে ওকে একা ছাড়লো ? যদি কোন বিপদ হয় ! ও: হাঁ ! ভদ্রমহিলাকে কেন জানিনা আমার বিবাহিত বলে মনে হয়েছিল । সে যাইহোক ফুরফুরে শীতল হাওয়ায় আলো-আঁধারিতে ট্রেন ছুটে চলেছে । অকস্মাৎ মনে হলো, ও মেয়ে কোন ডাকাত বা ছিনতাইকারী দলের নয়তো ? ব্যাস ! এরপর থেকেই ভয় ভাবনা জেঁকে বসলো । এই ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যে কপালে ঘাম ফুঁটে উঠছে, বেশ বুঝলাম । আমার সঙ্গে আছে টাই বা কি ? বাবা মার জন্য কেনা জামা কাপড় মিষ্টি আর সঙ্গে কিছু টাকা । ওতে ডাকাতদের পোষাবে না । "ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করবে না ওরা " একটা সাহস এলো মনে। কিছু তেমন না পেয়ে যদি খুন করে ? সেরেছে ! আবার ভয় জেকে বসলো । একটু ভয় লাগছিল। জড়োসড়ো হয়ে চুপ করে বসে আছি আড় চোখে লক্ষ্য রাখছি ওনাকে । ট্রেন হাড়োয়া স্টেশন ঢুকলো । নড়েচড়ে আবার ছুটতে শুরু করে দিলো মালতিপুর স্টেশনের অভিমুখে ।



            আজ যেন ট্রেন অনেক সময় নিচ্ছে । দেরি করে শিয়ালদা আসার জন্য নিজেকে দোষ দিচ্ছিলাম । ট্রেনের গতি ধীর হয়ে আসছে। ঘোড়ারস স্টেশনে ঢুকছে ।" ঘোড়ারস" প্রকৃত নাম নয় । অপভ্রংশ । আসলে "ঘোড়ারাশ" । কথিত আছে , সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহ ঘোড়ায় চড়ে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে পুবের দিকে যাত্রা করাকালীন এই গ্রামে এসে ঘোড়ায় রাশ টানেন । দীর্ঘ পথযাত্রা ক্লান্তি ও ধকল সইতে না পেরে এখানেই অস্থায়ী শিবির গড়েন । সৈন্য-সামন্তদের পানীয় জলের অভাব মেটাতে একটা বৃহৎ ঝিল খনন করেছিলেন । আজও স্থানীয় মানুষদের এই মহাঝিল প্রাত্যহিক ও অর্থনৈতিক জীবনের সহায় হয়ে আছে। ট্রেন হেলে দুলে উঠলো। ঘোড়ারস স্টেশন ছাড়লো ।জানলার দিকে মুখ করে অন্যমনষ্ক হয়ে গিয়েছিলাম। অকস্মাৎ লক্ষ্য করি সেই নারী আমার সিটের ঠিক উল্টো দিকে বসে আছে। কখন এলেন? টের পেলাম না !আবছা আলোতে তার মুখটা এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । বেশ ফর্সা ।স্লিম চেহারা । মুখে হালকা শ্রী আছে ।উজ্জ্বল মুখে লাবণ্য ছড়িয়ে পড়ছে ।চোখ দুটোতে কেমন মায়া মাখানো । অনাবিল ।বোধহয় কোন নামী পারফিউম মেখেছে । বেল ফুলের সুবাস ট্রেনে ভরে উঠলো । বসার ভঙ্গিতে বেশ একটা ব্যক্তিত্ব ও দৃঢ়তা ফুঁটে উঠেছে। মানুষের অঙ্গভঙ্গির মধ্যে তার ভিতরের ব্যক্তিসত্তা প্রকাশ পায় । যেমন আমি, একটা আস্ত ভিতুর ডিম । ভয়ে সিঁটিয়ে বসে আছি ।



          " আমি স্নিগ্ধা ।" 

          নিজের পরিচয় দিয়ে উনি বাক্যালাপ শুরু করলেন । একটু সাহস এল মনে । বললাম, "আমি বাবু । বাবু ঘোষ " এটা কার গলার স্বর ? নিজের ? কুনোব্যাঙের মতো স্যাঁতসেঁতে ক্ষীণ স্বর বেরুলো আমার । উনি কথা বলছিলেন ।আমি হ্যাঁ হুঁ চালিয়ে যাচ্ছিলাম ।মাঝে মধ্যে টুকটাক একটা- আধটা কথা বলছিলাম । টাকি গভমেন্ট কলেজ থেকে এবছর স্নাতক । কিন্তু এত রাতে ট্রেনে কেন ? তাও একা ? সে প্রশ্নের জবাব দিলেন না। মৃদু হেসে এড়িয়ে গেলেন ।‌ আবছা আলোয় বেলফুলের সুঘ্রাণ মন্দ লাগছিল না ।ভেতরের সমস্ত সাহসকে একত্রিত করে বললাম , " আপনি কি বিবাহিত ? "

  

 একটা প্রবল অট্টহাসিতে সারা ট্রেন ঝাঁকিয়ে কেঁপে উঠলো । আমিও । এমন ভয়ঙ্কর বীভৎস অট্টহাসি আমি জীবনে শুনিনি । পা থেকে মাথা পর্যন্ত হিম হয়ে গেল । কোন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না । উনিও নিশ্চুপ । একটা ভয়ধরা থমথমে পরিবেশ । উনিই আবার নিস্তব্ধতা ভাঙলেন । বললেন , "ট্রেনে আলো একটু কম । আমার কাছে মোমবাতি আছে, জ্বালাই ।" কোনরকমে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম । উনি ব্যাগ থেকে একটা মোমবাতি বার করে জ্বালিয়ে দিলেন। আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো । বিস্ময়ে অবাক হয়ে দেখতে থাকি, এত বাতাসেও মোমবাতির শিখা একটুও কাঁপছে না । মোমবাতি থেকে একটা মৃদু নেশাতুর গন্ধ ছড়াচ্ছে ।



        টিকিট কালেক্টরের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে গেল । উনি বললেন , " বসিরহাট এসে গেছে নামুন " ।পরিচিত মানুষ । দীর্ঘদিন এদিকে কর্মরত। জিজ্ঞাসা করলাম আমার সঙ্গে যে মহিলা ছিলেন উনি নেমে গেছেন । "আপনার সঙ্গে তো কেউ ছিলনা । সান্ডিলা থেকে আপনি একাই ছিলেন।" কিন্তু আমার সঙ্গে যে ওই মহিলা ছিলেন ! টিকিট কালেক্টর বলে চলেছেন, " আপনি একা আছেন দেখে মাঝেমধ্যে উঁকি দিয়ে যাচ্ছিলাম জানলা দিয়ে । দেখছিলাম আপনি যেন কার সঙ্গে কথা বলছেন কিন্তু কেউ সেখানে ছিল না ।তাই ভাবলাম মোবাইলে কথা বলছেন ।"


          ঘোর বিস্ময় কাটেনি । মোমবাতির নেশাতুর গন্ধে আবিষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । কিন্তু সবই কি আমার স্বপ্নের কল্পনা!সব মায়াময় ! তবে এখনও যে ট্রেনে আধপোড়া মোমবাতিটা রয়েছে ।




         বাড়ি ফিরে পরের দিন গেলাম মৈত্রী পাড়া । মেয়েদের বাড়ি ।ওদের ড্রয়িং রুমে বসে আছি। বাহুল্য নেই ।আতিশয্য নেই। কিন্তু ছিমছাম রুচিসম্পন্ন ।অল্পের মধ্যেই একটা মার্জিত সম্ভ্রান্ত। একদিকে কবিগুরুর ফটো ।দেওয়ালের মাঝ বরাবর মা দুর্গার ছবি বাঁধানো । ঘরে কোনো ফুলদানি নেই । ছোট্ট সেন্টার টেবিলে কুরুশের সেলাই করা টেবিল ক্লথের উপর পাথরের বাটিতে জলের উপর বেশকিছু সদ্য ফোঁটা বেলফুল । হাল্কা সুঘ্রাণ । একসময় মেয়ে এলেন, তার ছোট বোনের সঙ্গে । জোড়হাত করে নমস্কার করে উল্টো দিকের সোফায় বসলেন । প্রতি নমস্কার করে ওনার দিকে তাকাতেই ভয়ঙ্কর চমকে উঠি । এতো সেই স্নিগ্ধা । সেই মায়ামাখা চোখ । দৃঢ় ভঙ্গি । আমার শরীর যেন অসাড় হয়ে আসছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে । সেই বেল ফুলের সুবাস ।কোনক্রমে জিজ্ঞেস করলাম , আমাদের কি আগে দেখা হয়েছে কখনো? উনি সরল কণ্ঠে বললেন , "নাতো"। কখনো ট্রেনে দেখা হয়েছিল কি ? সেই নির্মল গলায় , "না " । ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, উনি কি গতকাল রাতে ট্রেনে করে ফিরছিলেন একা ? মেয়েটির বাবা জানালেন, " না। তাছাড়া ও একা কখনও কোথায় যায় না । হয় আমি থাকি, নয়তো ওর মার সঙ্গে থাকে । " বিস্ময়ের ঘোর কিছুতেই কাটতে চাইছে না । জিজ্ঞেস করলাম , আপনার নাম কি ?        


         " মেঘমালা বসু ।"




          এরপর ইছামতী দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে । অনেক সুন্দর ভোর কলি হয়ে ফুটেছে । স্বর্ণালী চাঁদ তার হলুদ জোছনা দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে অনেক মোহময়ী রাতকে রোমান্টিকতায় । আজও এমনই এক ভরা পূর্ণিমা। জোৎস্নার উদ্ভাসিত প্রভায় ভেসে যায় দিগন্ত, চরাচর ।‌ একটা সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই ।



         বিছানায় আমাদের তিন বছরের আদুরে পুত্র কে কোলে নিয়ে স্বামী সোহাগে সিক্ত মেঘমালা ঘুমোচ্ছে । 

        মেঘমালা ঘোষ।

        

       নাকি সে আমার প্রথম প্রেম ---- স্নিগ্ধা ।।



Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Horror